একজন চাকরিপ্রত্যাশীর কাছে ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকার বরাবরই একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তবে সঠিক পূর্বপ্রস্তুতি এবং ইন্টারভিউ চলাকালীন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখলে আপনি খুব সহজেই এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে পারবেন। চলুন জেনে নিই এমন ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ইন্টারভিউ চলার সময়ে এড়িয়ে চলা উচিত।
১. দেরিতে উপস্থিত হওয়াঃ যথাযথ সময়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত হওয়া আপনার সময়নিষ্ঠতার পরিচায়ক। এজন্য দেরিতে উপস্থিত হলে ইন্টারভিউ গ্রহণকারীদের নিকট প্রথমেই আপনার একটি নেতিবাচক ধারণা জন্মাতে পারে। চেষ্টা করুন হাতে একটু সময় নিয়ে যাত্রা শুরু করার, যাতে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আপনি ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত থাকতে পারেন।
২. যথাযথ পোশাক পরিধান না করাঃ ইন্টারভিউ এর সময় যথাযথ এবং মার্জিত পোশাক পরা খুবই জরুরি একটি বিষয়। দৃষ্টিনন্দন এবং মানানসই পোশাক পরিধান না করলে আপনি নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাসী এবং দৃঢ় মনোভাব ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হবেন, যা পুরো ইন্টারভিউ জুড়ে আপনার দুর্বলতার প্রকাশ ঘটাবে।
৩. দৃষ্টিকটু অঙ্গভঙ্গি করাঃ ইন্টারভিউয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল মার্জিত, ভদ্র এবং নম্র স্বভাব বজায় রাখা। ইন্টারভিউ চলাকালীন আপনার চলাফেরা এবং অঙ্গভঙ্গি সাবলীল এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ হওয়া আবশ্যিক। তাই ইন্টারভিউয়ের সময়ে এমন কোন অঙ্গভঙ্গি করা যাবে না, যা দেখতে দৃষ্টিকটু এবং অভদ্রতার সামিল।
৪. সঠিকভাবে প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া বা আমতা আমতা করাঃ প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালীন সময়ে প্রার্থী হিসেবে আপনাকে দৃঢ়টার সাথে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আপনার উত্তর হওয়া চাই স্পষ্ট, সাবলীল এবং যুক্তিসঙ্গত। উত্তর দেওয়ার সময় আমতা আমতা করা কিংবা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে না বলতে পারা আপনাকে অন্য প্রার্থীদের তুলনায় পিছিয়ে রাখতে পারে কয়েক ধাপ।
৫. প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়াঃ প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন কখনো এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। চেষ্টা করতে হবে সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার। প্রশ্নটি সম্পর্কে যতটুকু ধারণা আছে সেটুকুকেই সাবলীল এবং স্পষ্টভাবে গুছিয়ে বলতে পারলে আপনার আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ়তার গুণটি প্রকাশ পাবে। কোন প্রশ্নের উত্তর একদমই জানা না থাকলে ‘Sorry, I don’t know’ অথবা ‘দুঃখিত, আমি জানি না’ বলে উত্তর দিতে হবে।
৬. বর্তমান বা পূর্বের চাকরী সম্পর্কে নিন্দা করাঃ ইন্টারভিউ এর সময় কোন অবস্থাতেই বর্তমান কিংবা পূর্বে কর্মরত কোন চাকরী বা চাকরীদাতার নামে নিন্দা করা উচিত নয়। বরং চাকরী ছাড়ার একটি যুক্তিসঙ্গত কারণ উল্লেখ করা প্রার্থীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৭. অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখানোঃ একজন প্রার্থী হিসেবে ইন্টারভিউ বোর্ডে অবশ্যই আপনাকে আত্মবিশ্বাসী এবং দৃঢ় ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিতে হবে। তবে কোন অবস্থাতেই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস প্রদর্শন কাম্য নয়। এতে প্রশ্নকর্তার আপনার প্রতি বিরূপ ধারণা জন্মাতে পারে।
৮. মিথ্যা বলা বা ভুল তথ্য প্রদান করাঃ ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা, ব্যক্তিগত বিষয়, পূর্ব কর্মসংস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে মিথ্যাচার করা বোকামির সামিল। এসব বিষয়ে ভুল তথ্য প্রদান পরবর্তীতে আপনার সুনাম এবং ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
৯. বারবার ক্ষমা চাওয়াঃ ইন্টারভিউ চলাকালীন ঘন ঘন ‘sorry’ বা ‘দুঃখিত’ শব্দটি ব্যবহার করা আপনার সামগ্রিক মূল্যায়ন এবং গ্রহণযোগ্যতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া নিজের অভিজ্ঞতা কিংবা যোগ্যতায় কোন ঘাটতি থাকলে সেটি সম্পর্কে বারবার ক্ষমা চাওয়া বা নিচু মনোভাব প্রকাশ করা আপনার দৃঢ় ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
১০. প্রশ্নকর্তার কথা ঠিকমতো না শোনা অথবা তাকে কথা বলার মাঝখানে থামিয়ে দেওয়াঃ প্রশ্নকর্তার কথা মনোযোগ দিয়ে না শুনলে অথবা তাকে কথা বলার মাঝে থামিয়ে দিলে প্রশ্নকর্তা আপনার প্রতি বিরক্তিকর মনোভাব প্রকাশ করতে পারেন। ইন্টারভিউ চলাকালীন একজন প্রার্থীর উচিত প্রশ্নকর্তার সকল কথা মনোযোগের সাথে শোনা এবং তার কথা পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর উত্তর দিতে শুরু করা।