সুস্থ জীবনের ক’টি টিপস
বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও দমনে বিভিন্ন খাবারের কথা এ বইয়ে ইতিপূর্বে বিভিন্নভাবে বলেছি। কিন্তু কোন্্ রোগে কী খাবার অথবা কোন্ খাবারে কী উপকার তথা অত অত খাদ্যদ্রব্যের কথা কি সাধারণের পক্ষে মনে রাখা সম্ভব? সুবোধ পাঠকের এ প্রশ্নের সাথে আমি নির্দ্বিধায় একমত। আসলেই মনে রাখা ভীষণ মুশকিল। কিন্তু ব্যালেন্সড লাইফ-স্টাইল ও ব্যালেন্সড ডায়েট এ সমস্যা কোথায়? তাই অত অত হারবাল বা অর্গানিক খাদ্য-পথ্যের কথা মনে রাখার পাশাপাশি অপকারী বা ক্ষতিকর খাদ্যদ্রব্যের কথা মনে রাখা মুশকিল হলেও অন্তত সুখী-সমৃদ্ধ দীর্ঘ জীবনের জন্য সামান্য ক’টি বিষয় মেনে চলা খুব কঠিন নয়; যা ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে প্রয়োগ করে আমি প্রভূত ফল পেয়েছি।
কোন্ খাবার বেশি খাবেন
শাক-সব্জি, ফলমূল তথা উদ্ভিদজাতীয় খাদ্য; মধু, ননীবিহীন দুধ, পরিমিত ডিম, প্রাকৃতিক দই (টক দই), তাজা ফলের রস বিশেষত ডাব-লেবু-কমলা ও আঁশজাতীয় ফলের রস, ভাপে দেয়া বা সেদ্ধ করা সব্জি, হোয়াইট টি এবং গ্রিন টি, দৈনিক অন্তত ১০ গ্লাস তথা আড়াই লিটার পানি, লাল চাল, লাল আটা।
যে ফল ও শস্যদানা যে মৌসুমে যে অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন, সে এলাকায় সে ঋতুতে সেরূপ ফল ও ফসল দিয়ে থাকেন স্রষ্টা। তাই মৌসুমী ফল ও শাক-সব্জি যত বেশি পারেন খেতে থাকুন।
কম খাবেন
বিরিয়ানি, পোলাও, রোস্ট, তেলে বা ঘিয়ে ভাজা খাদ্য, মিষ্টি দই, কোক-ফান্টা, চর্বি বা ফ্যাট জাতীয় খাদ্য, ফ্রিজে রাখা খাবার।
না খাওয়ার চেষ্টা করবেন
ফাস্ট ফুড, গরু-খাসী তথা সকল প্রকার রেড মীট, চিংড়ি, সাদা চিনি, কেমিক্যাল বা রং মেশানো পানীয় অথবা অনুরূপ খাদ্যদ্রব্য, ডীপ ফ্রিজের খাবার, আইসক্রিম, দোকানের মিষ্টি, কনফেকশনারী আইটেম যেমন চীপস, চকলেট ইত্যাদি।
একেবারেই খাবেন না
পঁচা খাবার, অতিভোজ, ধূমপান, মদ্যপান।
অন্যান্য জরুরি পালনীয়
দৈনিক ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম, রাতে ১২টার পূর্বে ঘুমানো এবং সকাল ৭টার পূর্বে শয্যাত্যাগ; প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট দ্রুতগতিতে হাঁটা অথবা কিছু না কিছু ব্যায়াম করা। হাঁটা ও ব্যায়াম সুস্থ দেহ-মনের জন্য অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যক।
খাবার গ্রহণ করবেন পরিমিত ও স্বাস্থ্যসম্মত। খাবারের ক্ষেত্রে স্বাদের দিকে না তাকিয়ে স্বাস্থ্যগুণের দিকে বেশি নজর দেবেন। জিহ্বায় টেস্টের চেয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষার চিন্তায় এবং আবেগী চিন্তার চেয়ে যৌক্তিক চিন্তায় অধিক মনোযোগী হবেন এবং গ্রহণকৃত খাবারে টেস্ট তৈরি করে নেবেন চিন্তার মাধ্যমে। দৈনিক খাদ্যাভ্যাস এমনভাবে তৈরি করবেন সকালে খাবেন রাজার হালে, দুপুরে মধ্যবিত্তের ন্যায়, আর সন্ধ্যায় খাবেন গরিবি হালে।
টিভি কম দেখবেন, সেলফোন কম ব্যবহার করবেন। ধৈর্য ও ক্ষমাশীল হবেন। পরনিন্দা, পরচর্চা, ঝগড়া, রাগ, ক্ষোভ, হতাশা, দুঃখবোধ, অস্থিরতা থেকে দূরে থাকুন। প্রফুল্লতা, হাসি-খুশি ভাব, সন্তুষ্টি ও আত্মতৃপ্তি ধরে রাখুন।
তাছাড়া নিয়মিত ধর্মকর্ম করা, সর্বক্ষেত্রে ভালোকে হ্যাঁ এবং মন্দকে না বলার চর্চাও জরুরি। সর্বোপরি ইয়োগা বা যোগব্যায়াম, আকুপ্রেশার, মেডিটেশন এবং প্রোএকটিভ-পজিটিভ এটিচিউডের চর্চা নিরোগ-সুস্থ ও দীর্ঘায়ু জীবনের অব্যর্থ ঔষধি কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।
॥পর্ব ২॥
শেষ হয়েও হলো না শেষ
প্রিয় পাঠক, নিজের সাথে নিজে কথা বলে কঠিন রোগও যে ভালো করা যায় এ বিষয়ে আমার মায়ের ওপর প্রয়োগকৃত পদ্ধতির আলোচনায় স্বাস্থ্য বিষয়ক এ বই ইব ণড়ঁৎ ড়হি উড়পঃড়ৎ এর শুরু। অর্থাৎ রোগমুক্তি ও সুস্থ থাকার জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক চর্চা ও কৌশলই এ বইয়ের মূল উপজীব্য বিষয়। এসব চর্চায় অতীব সহজ ও তাৎক্ষণিক কার্যকর দু’টি কৌশলের একটি হচ্ছে চৎবঃবহফ বা ভান করা এবং অন্যটি হচ্ছে অঁঃড়ংঁমমবংঃরড়হ বা নিজের সাথে নিজে কথা বলা।
মানবদেহে কঠিন রোগসমূহের উৎপত্তি যে অস্থিরতা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, ক্লান্তি ও হতাশা থেকে, সে উৎকণ্ঠা বা হতাশা একেবারে ঝেড়ে ফেলা কিন্তু ঔষধে সম্ভব নয়। ঔষধ পারে রোগের সাময়িক উপশম করতে অথবা রোগকে অবদমিত করে রাখতে। দার্শনিক এরিস্টটলের ভাষায় ডাক্তার রোগ দমন করে, আর প্রকৃতি তা ভালো করে দেয়। তাই রোগ ঝেড়ে ফেলতে হলে প্রাকৃতিক চর্চায় আসতে হবে, চৎবঃবহফ বা ভান করতে হবে অথবা নিজকে অঁঃড়ংঁমমবংঃরড়হ দিতে হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে সমূলে রোগ উৎপাটনের অন্যতম পথ এটি।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষের এ যুগে উন্নত বিশ্বের সুউন্নত মানুষরা এ বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো রপ্ত করে এখন আর গবেষণাগারে বসে নেই; পথে-ঘাটেই চর্চা শুরু করে দিয়েছে চৎবঃবহফ আর অঁঃড়ংঁমমবংঃরড়হ টেকনিকের। তেমনই একটি সংবাদ দেখলাম পত্রিকায়।
১৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে দৈনিক সমকালের শেষ পৃষ্ঠার শীর্ষে হেডিং ছিল ‘অভিনব ব্যবস্থা’। তাতে লেখা ছিল চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে বেড়েছে ব্যস্ততা, বেড়েছে যাত্রীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সেই উৎকন্ঠা লাঘবে বা হতাশা মুক্তির জন্য পাতাল রেল কর্তৃপক্ষ নিয়েছে এক অভিনব ব্যবস্থা। মেট্রো স্টেশনে বসানো হয়েছে বিশালাকৃতির পডিঞ্চ ব্যাগ। সেই ব্যাগে চীনা ভাষায় বড় বড় করে লেখা আছে, ‘প্রতিবছর আপনাকে অন্তত ১৮২৪ মিনিট ব্যয় করতে হয় বাস, ট্রেন বা অন্যান্য যানবাহনের অপেক্ষায়। এতে আপনার জীবনের মূল্যবান সময় অপচয় হচ্ছে। আপনার মানসিক উদ্বেগ ঝেড়ে ফেলতে এ ব্যাগে আঘাত করুন হাত অথবা পা দিয়ে; নিঃসন্দেহে আপনি হালকাবোধ করবেন।’ তারা একে মানসিক চাপমুক্তির পিল বা ঔষধরূপে গ্রহণ করেছেন।
ঝেনগ্লয়ঙ্গা নামে এক যাত্রী বলেন, সত্যি এগুলো উৎকণ্ঠা দূর করার জন্য খুবই কার্যকর। আমার মনটা যখন ভারাক্রান্ত থাকে, মানসিক উদ্বেগ কাজ করে, কারও সঙ্গে সমস্যা নিয়ে কথা বলা হয়ে ওঠে না তখন আমি মেট্রো স্টেশনে আসি; ঝেড়ে লাথি দিই পডিঞ্চ ব্যাগে। এভাবে আমার মন হালকা হয়ে যায়।
সুধী পাঠক, চীনা যাত্রীদের শরীরে সৃষ্ট উদ্বেগ ও হতাশার সাথে কিন্তু উপরোক্ত পডিঞ্চ ব্যাগের কোনো সম্পর্ক নেই। আসলে পডিঞ্চ ব্যাগে ঘুসি বা লাথি দেয়ার মাধ্যমে যাত্রীরা ভান করে যে কর্তৃপক্ষ রেল চালনায় বিলম্ব করে আমার যে ক্ষতি করেছে, কর্তৃপক্ষের স্থাপিত পডিঞ্চ ব্যাগে লাথি দিয়ে সে ক্ষতি পুষিয়ে নিলাম। অর্থাৎ রেলের ঐ ব্যাগে লাথি দিয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিশোধের ভান করার মাধ্যমে তার দেহ থেকে ক্ষোভ ও হতাশাজনিত ক্লান্তি বা অবসাদ দূর করতে সচেষ্ট হয়।
পডিঞ্চ ব্যাগের মতো বস্তুগত কোনো কিছুর সাহায্য নিয়ে যেকোনো উদ্বেগ বা হতাশা দূর করলে একে বলা যায় ঢ়ৎবঃবহফ; আর বস্তুগত কোনো সাহায্য ছাড়া কেবল নিজের ব্রেনকে নিজেই বলে বলে হতাশা বা অসুস্থতা দূর করলে সে কৌশলকে বলা হয় অঁঃড়ংঁমমবংঃরড়হ.
অন্যের কোনো কিছু নিজের অপছন্দ হলে বা অন্য কারুর বিষয়ে নিজের মধ্যে রিএকশন দেখা দিলে সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ মুক্ত মনে ক্ষমা করে দিতে পারা নিজের সুস্থতার জন্যই প্রয়োজন। এরূপ সুঅভ্যাস তৈরি করতে পারলে অর্থাৎ ক্ষমার আদর্শে মুহ্যমান হতে পারলে তাও এই অঁঃড়ংঁমমবংঃরড়হ এর মতোই কাজ দেবে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণার পর বলেছেন মন সেরা ডাক্তার আর মানবদেহ সবচেয়ে সেরা ফার্মেসী। যেকোনো ঔষধ কোম্পানির চেয়ে মানবদেহ অধিক ভালোভাবে পেইন কিলার, এন্টিবায়োটিক ইত্যাদি তৈরি করতে পারে এবং সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় তা ব্যবহার করতে পারে।
প্রকৃতই যারা রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগে, তারা সহজেই রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে যারা রোগ নিয়ে ভাবার সময় পায় না, তাদের স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকে। আর যারা আত্মশক্তিতে বিশ্বাস ও নির্ভর করে এবং সর্বদা পজিটিভ চিন্তা করে, তারা রোগ-শোক-দুঃখ-গ্লানি ও হতাশা প্রতিরোধী প্রাকৃতিক শক্তি লালন করছে বলে প্রতীয়মান। এ বিষয়ে এই বইয়ের ১, ৬, ১১ নং অধ্যায়ে বিভিন্নভাবে বলা হয়েছে।
ব্যক্তি হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই স্বাধীন এবং বিশ্বব্যাপী দিনদিন জোরদার হচ্ছে এই ব্যক্তি-স্বাধীনতা। এতদিন শুধু হল্যান্ডেই এরূপ চরম ব্যক্তি-স্বাধীনতা ছিল যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময়ে মরে যাবার সিদ্ধান্ত নিতে এবং ডাক্তারের সাহায্যে তা কার্যকর করতে পারে। অর্থাৎ হতাশ ব্যক্তি যদি ডাক্তারের কাছে লিখিতভাবে বলে, ও ধিহঃ ঃড় ফরব.., তাহলে এরূপ টহফবৎঃধশবহ পাবার পর ডাক্তার তাকে মৃত্যুর ইনজেকশন পুশ করে দিলেই এ রঙ্গিলা ভুবনের খেলা শেষ। স্বেচ্ছামৃত্যুর এরূপ ব্যক্তি-স্বাধীনতা এখন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষত সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গে রয়েছে। ব্যক্তির এই ইচ্ছাকে কোথাও বলে উবধঃয রিঃয ফরমহরঃু, কোথাও বলে ঊঁঃযধহংরধ.
তাই আপনি কি মরে যেতে চান, নাকি বেঁচে থাকতে চান; আপনি অসুস্থ জীবনের অধিকারী হতে চান, নাকি সুস্থ-সবল ও দীর্ঘজীবন কাটাতে চান এরূপ সিদ্ধান্ত এককভাবে আপনারই। আশপাশের মানুষ বা স্বজনরা আপনাকে কেবল বলতে পারেন বা পরামর্শ দিতে পারেন; কিন্তু তারা আপনাকে বদলাতে পারবেন না। আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার বা ক্ষমতা কোনোটিই কারুর নেই। আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার বা বদলানোর ক্ষমতা কেবল আপনারই। ণড়ঁ ধৎব রহ পড়সসধহফ নু ুড়ঁৎংবষভ. ণড়ঁ ধৎব ঃযব সধংঃবৎ ড়ভ বাবৎু ংরঃঁধঃরড়হ রহপষঁফরহম ঃযব পযধহমব রহ ুড়ঁৎংবষভ.
দেখুন না, আপনার বহুদূরের এই আমি এতদিন ধরে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো-মন্দসহ জীবনযাপনের কৌশলের অনেক কিছুই শেয়ার করেছি। কিন্তু এর কতটা আপনি গ্রহণ করেছেন এবং কতটা বাস্তবে কাজে লাগাতে সক্ষম হচ্ছেন তা আপনার ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা অনিচ্ছার ওপরই নির্ভর করে, আমার ওপর নয়।
কিছুদিন আগে অপরিচিত সেল নাম্বার থেকে আমার সেলফোনে একটা ঝগঝ আসে। তাতে লেখা ছিল ও ধিহঃ ঃড় ফরব. ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ঐ মেসেজটার দিকে তাকিয়েছিলাম অপলকনেত্রে অনেকক্ষণ ধরে। তারপর সাহস করে লিখলাম
ণড়ঁ ধিহঃ ঃড় ফরব!
তাতে আমার কিছু করার নাই।
ইঁঃ রভ ুড়ঁ ধিহঃ ঃড় ষরাব,
ও যধাব ংড়সবঃযরহম ঃড় মরাব.
অর্থাৎ স্বর্গ ও নরক দু’টিই আপনার অনতিদূরে অবস্থান করছে। এখন আপনি সিদ্ধান্ত নিন যে আপনার গন্তব্য নরকের দিকে, নাকি স্বর্গের দিকে। যদি নরকে যেতে চান, তাহলে আমি কীভাবে ফেরাব? আর যদি স্বর্গে যেতে চান, তাহলে আলোর জগতের নুড়িনাড়া মানুষ হিসেবে আমি আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।
পাঠক সুহৃদদের স্মরণ করাতে চাচ্ছি যে আপনার যা কিছু অমঙ্গল বা দুঃখকষ্ট, তার সবই কিন্তু আপনার সৃষ্ট, অন্যের সৃষ্ট নয় এ ট্রাজিক সত্য উপলব্ধিতে আপনি নিশ্চিত থাকুন। সেজন্য পূর্বেও বলেছি মানুষ নিজের মধ্যে বিভিন্নভাবে রোগ তৈরি করে, আর মানুষ চাইলে তা ভালো করে দেন স্রষ্টা। এ সূত্রটির প্রমাণ পাবেন আপনার আশপাশে সুস্থ ও সুঠাম দেহের বয়োবৃদ্ধদেরকে ভালো করে প্রত্যক্ষ করলে।
বয়োবৃদ্ধ বিভিন্ন মানুষের সাথে মিশে তাদের লাইফ-স্টাইল সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে জেনে আমি এরূপ ধারণা পেয়েছি যে সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু লাভের পেছনে অন্যান্য ব্যক্তিগত সুঅভ্যাসের পাশাপাশি ৩টি সাধারণ বা ঈড়সসড়হ অভ্যাস জরুরি। এক স্বাস্থ্যসম্মত, পরিমিত ও নিয়মিত আহার; দুই নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা-চলা বা দৈহিক পরিশ্রম; তিন আনন্দ, হাসি-খুশি, প্রোএকটিভ ও পজিটিভ এটিচিউড লালন। অর্থাৎ পেটের জন্য ভালো খাবার, শরীরের জন্য ব্যায়াম এবং মননের জন্য শিথিলায়ন বা জবষধীধঃরড়হ এই ৩টি সুঅভ্যাস ছাড়া কোনো শতায়ু মানুষ আমি দেখিনি। এক কথায় জীবনযাপনের সর্বক্ষেত্রে সুঅভ্যাস তৈরি ও কুঅভ্যাস ত্যাগ শতায়ু লাভের পূর্বশর্ত।
কিন্তু দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশের মানুষ কথা বলা পছন্দ করে, বাংলাদেশের মানুষ ঔষধ খাওয়া পছন্দ করে। এখানকার হাসপাতাল-বাণিজ্য, চিকিৎসাঙ্গনে দালাল-বাণিজ্য, এম্বুলেন্স ভোগান্তি, পেটের ভেতর গজ-ব্যান্ডেজ রেখে সেলাই বিড়ম্বনা, ভেজাল ঔষধ, ডাক্তারের উচ্চ ফি, প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় টেস্ট, সর্বত্র ভেজালের জাল এসব থেকে পরিত্রাণে এবং নির্ঝঞ্ঝাট সুস্থ জীবনের জন্য প্রথম ও উত্তম পদক্ষেপ হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনে প্রাকৃতিক চর্চা ও চিকিৎসার সংস্কৃতি এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা।
অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় উন্নত স্বাস্থ্যের জন্যও চাই শিক্ষা। ব্যায়ামের দ্বারা শরীরের যেমন উন্নতি হয়, তেমনি পড়াশোনার দ্বারা চিন্তা, মনন ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটে। তাই শিক্ষাই প্রকৃত জীবন। অর্থাৎ ঊফঁপধঃরড়হ রং ষরভব. বেগম রোকেয়া বলেছেন সুশিক্ষা স্বর্ণমণি, যাকে স্পর্শ করে সেই সুবর্ণ হয়ে যায়।
তবে শিখলে বা জানলেই রোগমুক্ত হয়ে যায় না। এক্ষেত্রে শিক্ষার প্রায়োগিক দিকটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। অহ ড়ঁহপব ড়ভ ঢ়ৎধপঃরপব রং নবঃঃবৎ ঃযধহ ধ ঢ়ড়ঁহফ ড়ভ ঃযবড়ৎু.
তাই স্বাস্থ্যবিষয়ক এ বইয়ে স্বাস্থ্য চর্চার যেসব বিষয় বলা হয়েছে, তার ৬০% নিয়মিত চর্চা করলেও আপনি মোটামুটি সুস্থ জীবনের স্বস্তি পাবেন; ৮০% চর্চায় অত্যন্ত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে যাবেন; আর ৯০% চর্চায়তো আপনি উন্নততর বিশেষ মানুষরূপে অন্যদের অনুকরণীয়, স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন।
সুধী পাঠক, আসুন সর্ববিষয়ে নিজের সাথে নিজে ভালো ভালো কথা বা পজিটিভ ও প্রোএকটিভ কথা আওড়াতে থাকি এবং সমাজ-সংসারের নানা প্রতিকূলতা ও নেতিবাচকতা থেকে তৈরি আপন ভুবনের সকল ঘৃণা-খেদ-কালিমার বরফ গলিয়ে দিই, নতুনরূপে জন্মলাভ করি নিজের মধ্যে নিজেরই সৃষ্ট অনুপম প্রেম-ভালোবাসার কবোষ্ণ পরশে।
আসুন, জীবনকে উপভোগ করি; তবে যাচ্ছেতাইভাবে নয়, সতর্কভাবে। আপনার প্রতি আপনি নিজেই সতর্ক না হলে আমার এসব লেখাতো দূরের কথা, ডাক্তার-ঔষধ কিংবা দেহরক্ষী কেউই আপনাকে বাঁচাতে পারবে না।
নিজের ভালো আপনি না চাইলে স্রষ্টাও বা চাইবেন কেন? আপনার ভালো থাকা কেবল আপনার জন্যই নয়, আপনার বংশধরদের জন্য এবং আমাদের প্রিয় দেশ বা জাতির সবার জন্যই বিশেষ দরকার। তাইতো রোগ নির্ণয়ের অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডাক্তার রোগীকে জিজ্ঞেস করেন আপনার বাবা-মা’র ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, হাঁপানি বা অনুরূপ রোগ ছিল কিনা। এ প্রশ্নের কারণ হচ্ছে বাবা-মা’র থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে অনেক দোষ ও গুণ বংশপরম্পরায় ছড়িয়ে পড়ে সমাজে ও জাতিতে; যে বিবর্তন প্রক্রিয়াকে অস্বীকার বা প্রতিরোধের উপায় নেই, আত্মোপলব্ধি ও আত্মসংশোধন ছাড়া।
তাই আসুন প্রিয় বংশধর, পরিবার-পরিজন এবং দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য আত্মশুদ্ধির অভিযানে এবং আত্মোন্নয়নের অনুশীলনে নেমে পড়ি। আমাদের অবর্তমানে আমাদেরই বংশধরদের ভবিষ্যৎ অভিযোগ-অনুযোগ থেকে আত্মরক্ষার্থে এবং সুস্থ সমাজ, সমৃদ্ধ জাতি ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে আমাদের প্রয়াস জোরদার করি। এখন থেকে সর্ববিষয়ে ভালোকে হ্যাঁ, মন্দকে না বলি। আসুন সবাই স্বাস্থ্য সচেতন হই, ব্যালেন্সড দেহ-মন তৈরি করি, সুস্থ থাকি, দীর্ঘজীবী হই এবং শতায়ু লাভের এ সুন্দর পৃথিবীতে মাঙ্গলিক দীপশিখা জ্বালাই!
মন-মন্দিরে দীপ জ্বালাবার সেই দেশলাইয়ের কাঠিও আমারই হাতে। আমিই সেই বারুদ, আমিই সেই শক্তি। আমি মানে আমার এই মৃত্যুঞ্জয়ী আত্মা যার কোনো ক্ষয় নেই, লয় নেই। আমি অসীম, বাধা-বন্ধনহীন, অপ্রতিরোধ্য দুর্বার এক শক্তি। আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারি, আমার যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। আমিই পারি। আমি পারি পারি পারি...।
সুপ্রিয় পাঠক, অবশেষে এ লেখা থেকে চোখ ঘুরিয়ে নিজের দিকে তাকাই এবং উচ্চকিত উচ্চারণে সারাজীবন সর্বদা বলতে থাকি আমি যা চাই, তাই হয়। এ মস্তিষ্ক, এ মন-প্রাণ, এ দেহের মালিক আমি তথা আমার আত্মা। আমার মস্তিষ্ক ও মনসহ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আমারই আদেশ-নির্দেশে চলে, এরা সম্পূর্ণ আমারই নিয়ন্ত্রণে। সকল বদভ্যাস ও বদচিন্তা দূর করে সুঅভ্যাস, সুচিন্তা ও সুস্বাস্থ্যে জীবনমান বদলে দিতে আমিই পারি। রোগ-শোক, হতাশা-গ্লানি পর্যুদস্ত করে আমিও পারি সুস্থ মনে ও সবল দেহে শতায়ুলাভ করতে।
এই বীরভূমে আমি হতে যাচ্ছি শত বছরের বীর। নিজের শততম জন্মদিনের অনুষ্ঠান কেবল পালনই নয়, আয়োজনেও আমি সক্ষম। আমি পারি, আমি অবশ্যই পারি।
আমি এ মহাবিশ্বের মহাবিস্ময়, আমি সৃষ্টির সেরা; আমি সবই পারি, পারি পারি পারি...