॥ সাবা ইকবাল ॥
একাকীত্ব শব্দটার সাথে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। শব্দটার ভেতর কেমন জানি একটা দৃঢ়তা ও কঠিন-কট্টর ভাব কাজ করে। আবার অন্য পাশে কাজ করে ভয়!
একা থাকাটা কি আসলে ভয়ের কিছু? নাকি আমরাই ভয় পাই। আমার পরিচয় আছে এমন অনেক মানুষের সাথে, যারা মানুষের ভীড়েও একাকীত্ববোধ করে -যাদের মনের ভেতর রয়েছে গভীর এক গর্ত অর্থাৎ নিম্নবিস্তারী নিবিড় এক খাদ, যেটা যত কিছু দিয়ে পূরণ করা হোক না কেন সেটা অসম্পূর্ণই রয়ে যায়। মনের ভেতরের এই একাকীত্ব দূর করা বড়ই কঠিন।
কখনো কি আমরা খেয়াল করে দেখেছি যে, মানুষ কেন একাকীত্ববোধ করে? কি কারণে সে নিজেকে গুটিয়ে রাখে বা নিজেকে সিমাবদ্ধ করে রাখে? বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন কারণে। কিন্তু মানুষতো সামাজিক জীব। আমরা কি পারি একা থাকতে? আমরা কেউ কি পারব পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ছাড়া একা একা থাকতে? কারো সাথে কথা না বলে না মেলামেশা করে থাকতে?
সেটার জবাবে বেশ কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিবেদনে পড়েছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের চার জনের মধ্যে একজনের একা বসবাস। সেই দেশের বেশ কিছু বড় বড় শহরগুলোতে এই শতাংশটি অনেক বেশি। এত বড় একটি দেশে এত জনবহুল থাকা সত্ত্বেও মানুষ নিঃসঙ্গবোধ করে। বেপারটা কেমন শোনালেও, গভীরভাবে চিন্তা করার পর ভাবলাম এটা কি স্বাভাবিক? আর শুধু যুক্তরাষ্ট্রে কেন, পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশেওতো একই অবস্থা, একি পরিস্থিতির শিকার মানুষ।
এসব নিয়ে গবেষণা চলে আসছে বহুদিন ধরে। গবেষকরা তুলে ধরেছেন যে, মানুষ দু’টি সময় একা হয়- যখন যুবক থাকে ও যখন বৃদ্ধ হয়ে পড়ে। আমরা জীবনের এই দু’পর্যায়ে কেন একা হয়ে পরি, তা বুঝে গেলে পরবর্তীতে জীবন পরিচালনা করতে আমরা আমাদের সহায়তা করতে পারি। যেমন- ৮০% যারা ১৮ বছরের নিচে ও ৪০% যারা ৬৫ বছরের উপরে কখনও কখনও একাকীত্ব অনুভব হওয়ার রিপোর্ট আছে। একটু বিশ্লেষণ করে যদি দেখা যায়- ৮০% এর মধ্যে কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের গুটিয়ে নেয় পরিবারের কারণে; যেমন পরিবারে যদি ঐক্যবন্ধন না থাকে, বাবা-মা বা বড় ভাই-বোনেরা থাকলে যদি তারা ছোট ভাই-বোনকে ‘নঁষষু’ করে ইত্যাদি। তখন তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যেতে থাকে ও মনোবল হারিয়ে ফেলে।
এখন ধরা যাক বয়স্কদের কথা, যারা ৬৫ বছরের বেশি বয়সী, দেখা যায় তারা চাকরী থেকে অবসরপ্রাপ্ত, শারীরিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে বা অনেকে আবার নানা রোগে ভুগতে থাকে, যার ফলে তাদের দায়-দায়িত্ব কেউ নিতে চায় না। পরিবার থাকা সত্ত্বেও সন্তানরা অন্য দেশে বা অন্য স্টেটে চলে যায়। ফলে দেখা যায় বয়স্ক নারী বা পুরুষেরা একা হয়ে যায়। একা থাকতে থাকতে তারা আরো মানসিকভাবে হয়ে পরে দুর্বল। আস্তে আস্তে তারা বিষণœতার দিকে ঝুকে পড়ে।
জীবনে চলার জন্য যেমন কাছের মানুষ দরকার, তেমনি মাঝে মাঝে একা থাকাও দরকার। একা না হলে নিজেকে আবিষ্কার করা যায় না। নিজেকে বুঝা যায় না। আমরা একা চলি কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যাতে নিঃসঙ্গ হয়ে না পড়ি। না খারাপ পথের দিকে ধেয়ে পড়ি।
এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে পৃথিবী জুড়ে, যেখানে একাকীত্ব মানুষকে ঠেলে নিয়ে গিয়েছে বিষণœতার দিকে। বিষণœতা ঠেলে দিয়েছে আত্মহত্যার দিকে। এমনও ঘটনা আছে অনেক। একা হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে একা থাকা, একা সময় কাটানো তারপর এক সময় একা চলে যাওয়া পৃথিবী থেকে। তাহলেতো দেখা গেল শেষ পর্যন্ত আমরা সবাই একা। লিখতে লিখেতে গানের লাইন দু’টি মনে পড়ে গেল-
আইছি একা যাইমু একা
সঙ্গে যাইব কি?