॥ সাবা ইকবাল ॥
আজকাল বেশিভাগ ছাত্রছাত্রী বিদেশে পড়াশুনা করতে যাওয়াতে আগ্রহী, উদ্যমী ও উৎসাহিত। কেউবা হাইস্কুল শেষ করে যায় আবার কেউ মাস্টারস বা পিএইচডি করতে ইচ্ছুক। তবে কি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতি পড়েছে, নাকি কম বয়সে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে তাদের ব্যগ্রতা বেড়েছে? হতে পারে যে কোনো একটি, কারণ আবার হতে পারে দুটি!
ভালো একটা জীবনযাত্রা আমরা সবাই চাই। হোক সেটা দেশে বা বিদেশে। কিন্তু দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী সুযোগের অভাবে যেতে পারে না, আবার অনেক মেধাবী অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পিছিয়ে পড়ে। এখন অবশ্য বিদেশ যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে বিদেশি স্কলারশিপগুলো। যেখানে ফুল স্কলারশিপ থেকে শুরু করে নানা ধরণের স্কলারশিপে আবেদন করার সুযোগ আছে।
বাহিরে পড়াশুনার ব্যাপারে লিখতে লিখতে মনে পড়ে গেল আমার নিজের বিদেশ গমনের কথা। খুব ছোটবেলা থেকেই শখ ছিল দেশের বাহিরে পড়তে যাওযার। যেহেতু ল’ পড়েছি, বার-এট-ল তো যুক্তরাজ্য ছাড়া ব্যতিক্রমি কোনোটাই মনে হয়নি। তারপরও বার-এট-ল করা হয়ে উঠেনি। তাই ভাবলাম, কেন না মাস্টার্স করতে যুক্তরাজ্য যাই।
তাই শুরু করে দিলাম বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজা। নিলাম ওঊখঞঝ এর প্রস্তুতি। ওঊখঞঝ এর স্কোর একটা ভালো ভূমিকা রাখে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কাজে। পাশাপাশি খুলতে হয় ব্যাংকে সেভিং অ্যাকাউন্ট। সব ব্যাংক আবার স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টের সুবিধা রাখে না। কিছু কিছু নির্দিষ্ট ব্যাংকই স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলে। যদি বাবা-মা স্পন্সর করেন, তাহলে জায়গা-জমি, বাড়ি বা ফ্ল্যাট মোট কথা সম্পত্তি থাকলে তার দলিলপত্র ইংলিশ অনুবাদ করে, সত্যায়িত করে জমা দিতে হয়। সব যখন মোটামুটি তৈরি, তখন নিতে হয় ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট। আগে থেকে ভিসার তারিখ নিয়ে রাখা ভালো, কারণ খুব সহজে তারিখ পাওয়া যায় না। যেহেতু সেপ্টেম্বর ইনটেকে বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়, তাই প্রচুর চাপ থাকে।
ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিন-তারিখ ঠিক হওয়ার পর, ভাইভা দিতে যেতে হয়। ভাইভার দিন সাথে করে যাবতীয় সব কাগজপত্র নিয়ে যেতে হয় জমা দেয়ার জন্য। জমা নেবার পর, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় তারপর ডাক আসে। ছোট একটা ৫-১০ মিনিটের ইন্টারভিউ নেয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞেস করা হয় পড়াশুনার বিষয়ে, কর্ম জীবন নিয়ে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ইত্যাদি। ইন্টারভিউ এর এক মাসের মধ্যে বা আগে ফলাফল চলে আসে। ভিসা দিয়েছে কি দেই নাই। ইমেইল বা এসএমএস এর মাধ্যমে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে বলা হয়। ভিসা সেন্টারে স-শরীরে গিয়ে পাসপোর্ট তুলে আনতে হয়।
ভিসা ইন্টারভিউ দিয়ে আসার পর যেন সময় কাটছিলই না। সে যেন এক অনন্ত সময় পার করতে হয়েছিল। একদিক দিয়ে টেনশন ভিসা পাওয়া না পাওয়ার, অন্যদিকে বিদেশ গমনের প্রস্তুতি। গরম দেশ থেকে শীতের দেশে যাওয়া কিছুটা কঠিন কাজ বটে। যে প্রথমবার যাবে আর ধারণা না থাকবে ওখানকার আবহাওয়ার ব্যাপারে, তার জন্য মুশকিল হয়ে পড়বে। তাই যাত্রা শুরু করার আগে সেই দেশের আবহাওয়া, খাবার-দাবার সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত।
চলে যাই ভিসা প্রসংগে। দু’সপ্তাহ অপেক্ষা করার পর যখন কল-এসএমএস কিছুই পাচ্ছিলাম না, তখন মনের ভেতর ধুক-ধুক শুরু হয়ে গেল। মনে নানা প্রশ্ন এই বুঝি রিজেক্ট করে দিল ভিসা, এই বুঝি কোনো জটিলতা হলো। এত মাসের কষ্টের ফল কি শুন্যে যাবে? সব মিলিয়ে প্রচন্ড টেনশনে ছিলাম। অবশেষে পঁচিশ দিন পর কল আসল পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য।
সংগ্রহ করতে গেলাম তাদের পড়হংঁষধঃব অফিসে। খুব ভয়ে ভয়ে সংগ্রহ করলাম তাদের দেয়া সীল করা একটি প্যাকেট। সেই প্যাকেট নিয়ে তড়িঘড়ি গেলাম গাড়িতে। ভয়-টেনশন-অস্থিরতা সব এক সাথে কাজ করছিল। তাও সাহস করে খুললাম। প্যাকেটের ভেতর ছিল পাসপোর্ট ও কিছু কাগজপত্র। পাসপোর্ট খুলে দেখি ভিসা নাই! আমারতো মাথায় হাত। কি বলব কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তারপর মাথা ঠান্ডা করে প্রতিটা পাতা উল্টালাম। মাঝের এক পৃষ্টাতে দেখি আমার কাক্সক্ষীত যুক্তরাজ্যের ভিসা। সেই মুহূর্তে কি যে আনন্দিত ও উল্লসিত লেগেছে বলে বুঝাতে পারব না।
পরে বাসায় এসে সবাইকে জানালাম। নিজের মনকে শান্ত করলাম। তারপর লাগেজ গোছানো শুরু করলাম। শীতের দেশে অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়, যেমনÑ সোয়েটার, জ্যাকেট, গ্লাভস ইত্যাদি। সবই মোটামোটি নিলাম।
প্রস্তুতির পাশাপাশি টিকেট কাটলাম। আস্তে আস্তে কাঙ্খিত দিনও চলে আসল। একদিকে যাবার খুশি, অন্যদিকে বাবা-মা-বোনকে রেখে চলে যাব এত দূর Ñতাই মনটাও খারাপ। মন খারাপ হলেও উদ্দেশ্যটাতো ভালো কাজের। সেই ভেবে মনকে স্থির করে রওনা দিলাম নিজ উদ্দেশ্যে।