বাংলাদেশের
জাতীয় বাজেটের বিশাল আকার দেশের
প্রবৃদ্ধির প্রমাণ বহন করে। দেশ
প্রায় সবখাতে এগিয়ে চলছে। বিশ্বমন্দা,
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ ইত্যাদি সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতি দুর্বার। পঞ্চবার্ষিক
পরিকল্পনার আওতায় প্রতিবছর সংসদে
পেশ করা হয় বাজেট। চৌকস,
মেধাবী, দৃঢ় আশাবাদী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন
অর্থনীতিবিদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল
মুহিত ৯ম বারের মতো
বাজেট পেশ করে রেকর্ড
সৃষ্টি করেছেন।
বাজেটের আকার যত বিশাল
হোক, আসল খাত অর্থাৎ
শিক্ষাখাতে এর বরাদ্দ হতাশাব্যঞ্জক। উন্নয়নশীল
দেশেও শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়,
বলা হয়ে থাকে সর্বোচ্চ
পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ।
একটি দেশের মোট দেশজ
উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশ কিংবা
প্রতিবছরের জাতীয় বাজেটের ২০%
পরিমাণ অর্থ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ
করা উচিত বলে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত।
কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে জিডিপি’র ২%
ব্যয় হয়ে থাকে।
শিক্ষাখাতে পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টিসিপেশন
(পিপিপি) এর আওতায় ৬৪
জেলায় মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ
প্রতিষ্ঠা করে এর পরিচালনার
উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। দেশের
২৫ থেকে ৪০ বছর
বয়সি বিপুল জনগোষ্ঠীকে কাজে
লাগাতে হলে শিক্ষায় বিনিয়োগ
বাড়াতে হবে। ডায়নামিক
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ
এবারের শিক্ষা খাতে বাজেট
বরাদ্দে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এক্ষেত্রে
পুনর্বিবেচনা হবে বলে সবাই
আশাবাদী। ২০১৫-’১৬ জাতীয় বাজেট
সম্পর্কে, বিশেষ করে শিক্ষাখাতে
বাজেট বরাদ্দ নিয়ে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট বিদগ্ধজন মতামত ব্যক্ত করেছেন। এরই
ওপর ভিত্তি করে ক্যাম্পাস
পত্রিকার বিশেষ আয়োজন শিক্ষাখাতে
বাজেট ভাবনা।
চাকরিরত বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকদের লিয়েনের পরিবর্তে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো
ডেপুটেশনের সুযোগ দিতে হবে
-প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সামাদ
ভাইস-চ্যান্সেলর, ইউআইটিএস
বর্তমান সরকার টানা ৭
বছর ক্ষমতায়, এ সময়ে শিক্ষার
কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে বিশেষ
অগ্রগতি হয়েছে বলে আপনি
মনে করেন এমন জিজ্ঞাসায়
বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক প্রফেসর
ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, শিক্ষার
সকল ক্ষেত্রেই অর্থাৎ প্রাথমিক থেকে
উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। তবে
গুণগতমানের ওপর গুরুত্বারোপ করা
আবশ্যক।
বর্তমান শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে
বলে আপনার বিশ্বাস, এ
সরকারের মেয়াদকালে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে কার কী করণীয়
রয়েছে বলে মনে করেন
এমন প্রশ্নের জবাবে প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার অধিকারী শিক্ষাব্রতী
ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বাংলাদেশে
এই প্রথম একটি শিক্ষানীতির
বাস্তবায়ন সফলভাবে শুরু হয়েছে এটাই
বড় অগ্রগতি। তবু
পাঠ্য-পুস্তকের বিষয়বস্তু, নীতিশিক্ষা এবং স্কুল পর্যায়ে
পরীক্ষার বোঝা কমানোসহ বিশেষজ্ঞদের
কাছ থেকে পত্র-পত্রিকায়
যেসব যুক্তিসংগত পরামর্শ আসছে, সেগুলো গ্রহণ
করে শিক্ষানীতি আরও যুগোপযোগী, প্রগতিশীল
ও সর্বজনগ্রাহ্য করার সুযোগ রয়েছে।
শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে ২০১৫-’১৬ জাতীয়
বাজেটে শিক্ষার কোন্ কোন্ খাতে
অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন বলে
মনে করেন এমন প্রশ্নের
জবাবে বিদগ্ধ শিক্ষাবিদ ড.
সামাদ বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে এখন
প্রধান সমস্যা যোগ্য ও
নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের অভাব। কাজেই
যোগ্য, দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ
শিক্ষক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ
খাতে বাজেটে অগ্রাধিকার দেয়া
খুবই জরুরি। এছাড়া
অবকাঠামো উন্নয়ন খাতকেও অবশ্যই
অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ব্যাপক হলেও
শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ।
শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে নিজ
মতামত ব্যক্ত করে শিক্ষাপ্রেমী
দক্ষ শিক্ষা প্রশাসক ড.
মুহাম্মদ সামাদ বলেন, স্কুল
পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ
ও নৈতিকতার মান উন্নয়নে জোর
দেয়া উচিত। বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকে
সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে
একটি কথা বলতে পারি
যে, বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
চাকরিরত বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকদের লিয়েনের পরিবর্তে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো
ডেপুটেশনের সুযোগ দিতে হবে। ফলে
অবসরপ্রাপ্ত ও বয়সের ভারে
ন্যুব্জ অধ্যাপকদের নামমাত্র উপাচার্যের পদে বসিয়ে রাখার
পরিবর্তে কর্মক্ষম উপাচার্যের নেতৃত্বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হলে শিক্ষার মান
বাড়ানো সম্ভব হতে পারে। সরকারকে
বিষয়টি ভেবে দেখার আহ্বান
জানাচ্ছি।
উন্নয়নশীল দেশ শিক্ষাখাতে মোট
জাতীয় আয়ের ৬ ভাগ
ব্যয় করে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের
বরাদ্দ মাত্র শতকরা ২
ভাগ -এ অবস্থার উত্তরণ
চাই
-প্রফেসর ড. এম আর
খান
ভাইস-চ্যান্সেলর, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
বর্তমান সরকারের গত ৭ বছর
শাসনামলে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে
দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি হয়েছে
বলে মনে করেন এমন
প্রশ্নে প্রফেসর ড. এম আর
খান বলেন, প্রায় সব
ক্ষেত্রেই তাদের সাফল্য আছে;
তবে শিক্ষাক্ষেত্রে এ সরকারের সাফল্য
উল্লেখযোগ্য। প্রাথমিক
শিক্ষায় বিদ্যালয়ে শিশুদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত
করা হয়েছে, দুপুরে খাবারের
ব্যবস্থা করে শিশু-শিক্ষার্থীদেরকে
বিদ্যালয়মুখী করার ফলে ঝরেপড়ার
হার হ্রাস পেয়েছে।
প্রাথমিকে ৫ম শ্রেণি এবং
৮ম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষার ব্যবস্থা
করে মেধা বিকাশের সুযোগ
সৃষ্টি করা হয়েছে, মেধা
যাচাইয়ের ক্ষেত্রে গ্রাম-শহরের মেধা
মূূল্যায়িত হচ্ছে।
প্রফেসর এম আর খান
আরও বলেন, শিক্ষাখাতে প্রচুর
টাকা ব্যয় হতে দেখা
যায়, কিন্তু সঠিকভাবে ব্যয়
না হওয়ার কারণে ভালো
রিটার্ন আসছে না।
এ বিষয়টির প্রতি কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি
দিতে হবে। ইউনিভার্সিটি
লেভেলে ভালো শিক্ষার্থী পেতে
হলে দৃষ্টি দিতে হবে
প্রাইমারি শিক্ষাস্তরেই। সঠিক
যতœ ও পরিচর্যার মাধ্যমে
আমরা মেধাবী ছাত্র পেতে
পারি; যারা দক্ষ শিক্ষক,
বিশেষ করে ইংরেজি বিষয়ের
শিক্ষকের অভাব পূরণ করতে
পারে। এসব
সমাধানে বাজেটে শিক্ষাখাতের বরাদ্দ
যেন উল্লেখযোগ্য হয় সেটি আমার
কামনা। উন্নয়নশীল
দেশে শিক্ষার উন্নয়নে বাজেটে মোট জাতীয়
আয়ের শতকরা ৬ ভাগ
ব্যয় করা হয় সেখানে
বাংলাদেশে এখনও শতকরা ২
এর মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এছাড়া
নার্সিং শিক্ষার ওপর নজর দিতে
হবে। পেশাটিকে
আমাদের সমাজ মুক্তমন নিয়ে
এখনও গ্রহণ করতে পারে
না, কিন্তু এর প্রয়োজনীয়তা
কত বেশি মানুষ কার্যক্ষেত্রে
তা‘ বুঝতে পারে।
দেশে নার্সিং ইনস্টিটিউটের সংখ্যা খুব কম। বিষয়টির
প্রতি সরকারের নজর দিতে হবে,
নার্সিং পেশাকে সম্মানজনক পেশা
হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
শিক্ষার উন্নয়নে শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই
চলবে না, টাকাটা সঠিকভাবে
ব্যয় হচ্ছে কিনা তা’
নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার মান নিয়ে বিভিন্ন
মহলে প্রশ্ন ওঠে।
বরাদ্দ বাড়ানোর সাথে সাথে যদি
শিক্ষামানের উন্নয়ন হয় তাহলে
সে বরাদ্দ হবে যথার্থ। এ
বিষয়ে তার মতামত জানতে
চাইলে প্রফেসর এম আর খান
বলেন, শিক্ষার মানের উন্নয়ন চলমান
প্রক্রিয়া। এর
পেছনে লেগে থাকতে হবে,
বরাদ্দের টাকার যেন অপচয়
না হয় সেজন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের
কাজের জবাবদিহি থাকতে হবে।
শিক্ষকরা যদি সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে
ক্লাস না নেন, ছাত্ররা
যদি ক্লাসে আসতে অনাগ্রহী
থাকে তাহলে এর কারণ
খুঁজে বের করে তার
প্রতিকার করতে হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষকরা জাতির
বিবেক, তাদের প্রধান কাজ
পাঠদান, জ্ঞান বিতরণ।
তাদের হাতেই গড়ে উঠবে
মেধাবী শিক্ষার্থী, মেধাবী মানুষ যারা
হবে সমাজের চালিকাশক্তি।
প্রফেসর এম আর খান
বলেন, আমাদেরকে শতভাগ শিক্ষিতের দেশ
হিসেবে গড়ে তুলতে হলে
শিক্ষকদের নিতে হবে দায়িত্বশীল
ভূমিকা; শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো ফাঁকিবাজি, জোড়াতালি
চলবে না, শিক্ষা হবে
স্বচ্ছ আয়নার মতো তবে
দেশ ও সমাজ উপকৃত
হবে, গড়ে উঠবে আলোকিত
জাতি। এর
ফলে সমাজের বিভিন্ন অনিয়ম
আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে
যাবে।
বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে দিয়ে
শিক্ষাকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে গণ্য করতে হবে
-ডাঃ এ কে এম
মোখলেসুর রহমান
প্রশাসক, বরিশাল জেলা পরিষদ
প্রবীণ রাজনীতিবিদ বরিশাল জেলা পরিষদের
প্রশাসক ডাঃ এ কে
এম মোখলেসুর রহমান বলেন, বর্তমান
সরকারের ৬ বছরে দেশের
সার্বিক উন্নতি হয়েছে।
বিশেষ করে কৃষি, শিক্ষা,
স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এমনকি
পিছিয়ে পড়া দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নও
দৃশ্যমান।
জাতীয় বাজেট সম্পর্কে বিজ্ঞ
রাজনৈতিক নেতা মোখলেসুর রহমান
বলেন, প্রথম গুরুত্ব দিতে
হবে শিক্ষাক্ষেত্রে; দ্বিতীয়ত কৃষিক্ষেত্রে; তৃতীয়ত শিল্পক্ষেত্রে; চতুর্থ
সামাজিক উন্নয়ন খাত।
তিনি বলেন শিক্ষা গুরুত্ব
পাবে এজন্য যে, শিক্ষাকে
জাতির মেরুদন্ড বলা হয়।
শিক্ষা ছাড়া কোনো অগ্রগতিই
সম্ভব নয়। অন্য
সেক্টরের উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রেও
শিক্ষার ভূমিকা অপরিহার্য।
কৃষির যে অগ্রগতি হয়েছে
তাতে সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকলে
চলবে না, উন্নয়নের ধারা
অব্যাহত রাখতে হবে।
তা না হলে বর্তমানে
বিদেশে যে চাল রপ্তানি
করে বাংলাদেশ উন্নত ও উন্নয়নশীল
দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে,
তা ধরে রাখা সম্ভব
হবে না। বাংলাদেশের
স্থপতি বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এদেশের উন্নয়ন বলতে
পল্লীর উন্নয়নকে বোঝাবে। বর্তমান
সরকার কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমে
চিরায়ত খাদ্য ঘাটতির একটি
দেশকে খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশ
হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।
শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ এবং
শিক্ষার মান নিয়ে মতামত
ব্যক্ত করে মোখলেসুর রহমান
বলেন, শিক্ষার উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর
দিতে হবে। কারিগরি
শিক্ষা, কৃষি শিক্ষা ইত্যাদি
ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে।
এজন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে
দিয়ে শিক্ষাকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে গণ্য
করতে হবে। উন্নয়নশীল
বিষয়ের ক্রমউন্নতি হয়, অবনতি কম
হবে। শিক্ষামানের
ক্রমউন্নতিতে শিক্ষকসমাজ নিবেদিত হয়ে কাজ করছেন,
কাজেই এ ব্যাপারে অবনতির
কথা সরাসরি বলা যায়
না।
বরিশাল শহর তথা বরিশাল
জেলার সার্বিক উন্নয়নে সরকারের কাছে প্রত্যাশার চেয়ে
সরকারের সাথে সহযোগীতা করে
জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছি।
জেলা পরিষদের কাঠামো সাধারণ অফিস
থেকে ভিন্ন। অন্যান্য
অফিস বা দপ্তরের মতো
জমজমাট নয়। আমার
পরিষদ নেই, একাই কান্ডারী। আমি
নিয়োগপ্রাপ্ত, কাজেই রাজনীতিবিদ হয়েও
রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। জননেত্রী
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সব
জেলাতে জেলা পরিষদ এর
জন্য প্রশাসক নিয়োগ করেছেন।
প্রধানত রাজনীতি ও সমাজসেবার ক্ষেত্রে
যেসব ব্যক্তির ক্লিন ইমেজ রয়েছে
তাদেরকেই তিনি জেলা পরিষদ
এর প্রশাসক নিয়োগ করেছেন।
এটি একটি নতুন কনসেপ্ট;
যারা জনগণের সাথে সরাসরি
সংশ্লিষ্ট, তাদের পরিচালনায় উন্নয়ন
কর্মকান্ড পরিচালিত হলে তা সফল
হবে এটি প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস। তাই
তিনি জেলা পরিষদ গঠন
করেছেন। বরিশালের
উন্নয়নের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ
নজর রয়েছে। বরিশাল
জেলা বাংলার শস্যভান্ডার হিসেবে
আখ্যায়িত হয়েছে, বিএম কলেজকে
বলা হতো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড,
বরিশাল শহরকে বলা হতো
প্রাচ্যের ভেনিস। বাংলার
গৌরব শেরে বাংলা এ
কে ফজলুল হক এ
জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন। আরও
অনেক কৃতী-সন্তানের স্মৃতিধন্য
বরিশাল অবিভক্ত ভারতে গৌরবের আসন
লাভ করে। বরিশালের
উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর যে প্রস্তাবনা রয়েছে,
তা বাস্তবায়িত হলে শুধু এ
অঞ্চল নয়- সারা বাংলাদেশ
উপকৃত হবে।
বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ালেই চলবে
না; শিক্ষানীতির সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে
কিনা, তা নিশ্চিত করতে
হবে
-প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর
ভাইস-চ্যান্সেলর, খুলনা প্রকৌশল ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর
বলেন, এ সরকারের বিগত
সাত বছরে শিক্ষাঙ্গনে একটি
শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা
বুঝতে পেরেছে যে বাইরের
যত উস্কানি, লোভের হাতছানি থাকুক
না কেন তাতে সাড়া
দিলে তাদের নিজেদেরই ক্ষতি। শিক্ষাক্ষেত্রে
যদি হিংসাশ্রয়ী ঘটনা ঘটে, তাহলে
প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে হলেও বন্ধ হবে
এবং পাঠদান কর্মসূচি ব্যাহত
হবে। এ
ক্ষতি শিক্ষার্থীদের, রাজনীতিকদের নয়। কাজেই
ছাত্রসমাজের মাঝে এ সচেতনতা
সৃষ্টি হয়েছে যে, তাদের
স্বার্থেই শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে
হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষাবান্ধব
পরিবেশ বজায় থাকার কারণে
স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা
বেড়ে বর্তমানে ৩৫ লক্ষে উন্নীত
হয়েছে। ২০০৮
সালে বিজ্ঞানের ছাত্র যেখানে ছিল
২.৭৮ শতাংশ, বর্তমানে
তা ৭.৮৭ শতাংশে
উন্নীত হয়েছে। তাছাড়া
শিক্ষার পুরোনো পদ্ধতির বদলে
সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হওয়ায়
ছাত্ররা এখন শর্টকাট পাসের
আশা ত্যাগ করে পুরো
বই পড়ে পরীক্ষা দিচ্ছে,
মূল বই পড়ে পরীক্ষা
দিচ্ছে বলে নকল-নির্ভরতা
অনেক কমেছে এটি শিক্ষার
পরোক্ষ উন্নয়ন।
বর্তমান শিক্ষানীতির কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে
বলে মনে করেন এমন
প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ শিক্ষাবিদ
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর
বলেন, শিক্ষানীতির মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে। প্রাইমারি
শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত
বর্ধিত করা হয়েছে, নবম-দশম এবং একাদশ
ও দ্বাদশ শ্রেণিকে উচ্চমাধ্যমিক
শিক্ষা হিসেবে গণ্য করা
হচ্ছে। আর
দ্বাদশের পর শুরু হচ্ছে
উচ্চশিক্ষার পথে যাত্রা।
সরকারের শিক্ষানীতির যে অংশ ২০১৬
সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা
ছিল, বর্তমান কাজের গতি দেখে
মনে হয় তা এ
সময়ের মধ্যে সম্ভব হবে
না। তবে
২০২১ সালের মধ্যে শিক্ষানীতির
পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হতে পারে। এ
ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায় যে,
যারা বাস্তবায়নে কাজ করবেন তারা
যেমন প্রস্তুত, যারা গ্রহণ করবেন
সেই ছাত্র সমাজও মানসিকভাবে
প্রস্তুত; এমনকি যারা সহায়কশক্তি,
সেই অভিভাবক শ্রেণিও এ শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন
পূর্ণাঙ্গরূপে দেখতে চান।
শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর
ব্যাপারে তাঁর অভিমত ব্যক্ত
করে কল্যাণকামী শিক্ষাব্রতী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর
বলেন শুধু বরাদ্দ বাড়িয়ে
দিলেই চলবে না, শিক্ষানীতির
সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা
মনিটরিং করার জন্য দক্ষ
লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষকদের
জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল তৈরি
করতে হবে, যাতে মেধাবী
ছাত্র-ছাত্রীরা কর্মজীবনে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে
নেয়।
শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে যে প্রশ্ন
ওঠে, সে সম্পর্কে মতামত
দিয়ে প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ আলমগীর
বলেন শিক্ষার মানোন্নয়ন সবসময় প্রশ্নবিদ্ধ; এ
নিয়ে শংকার কোনো কারণ
নেই। মানুষের
আশা-আকাক্সক্ষা যদি এক পর্যায়ে
থমকে যায় যে যথেষ্ট
হয়েছে, আর দরকার নেই;
তাহলে অগ্রগতির চাকা আর ঘুরবে
না, সৃজনশীলতায় আসবে স্থবিরতা।
সমাজ-প্রগতির ক্ষেত্রে এ বিষয়টি আমাদের
মনে রাখতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়নের কোনো সীমা নেই,
এটি একটি চলমান বিষয়;
আস্তে আস্তে উন্নতি হতে
থাকবে। তবে
এর পেছনে থাকবে সমাজের
দায়িত্বশীল ও সচেতন অংশেরই
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা।
তিনি বলেন শিক্ষার মানোন্নয়নে
শিক্ষকদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
যারা শিক্ষকতায় এসেছেন সমাজের কাছে,
দেশের কাছে, জাতির কাছে
তাদের একটি কমিটমেন্ট থাকতে
হবে। শিক্ষার্থীদেরকে
বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করা,
তাদের ক্লাসমুখী করার দায়িত্ব শিক্ষকদের,
অভিভাবকগণ তাঁদেরকে এ গুরু দায়িত্ব
দিয়েছন। তিনি
বলেন আগের থেকে শিক্ষামান
কমেছে, ঢালাওভাবে এটি বলা যাবে
না; দুু’একটি ক্ষেত্রে
মান কিছু কমলেও তার
জন্য আমরা শিক্ষকসমাজ কম
দায়ী নই। শিক্ষার
মানোন্নয়নের জন্য শত প্রতিকূলতার
মধ্যেও দেশ গঠনের লক্ষ্যে
আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
গবেষণা খাতে আলাদা বাজেট
বরাদ্দ সময়ের দাবি
-প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল
মান্নান চৌধুরী
ভাইস-চ্যান্সেলর, দি পিপল্স ইউনিভার্সিটি
অব বাংলাদেশ
শিক্ষাখাতে বর্তমান সরকারের সফলতা বা ব্যর্থতার
কথা বলতে গিয়ে প্রফেসর
ড. মোঃ আব্দুল মান্নান
চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে
সরকার সফল হয়েছেন বলে
আমি মনে করি।
যেহেতু এটি শিক্ষার ভিত্তি,
কাজেই প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতি ও অগ্রগতি
জাতির জন্য আশাব্যঞ্জক।
তবে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য এখনও দৃশ্যমান
নয়। পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট, ছাত্র অসন্তোষ, শিক্ষক
আন্দোলন শিক্ষাঙ্গনকে অস্বস্তিকর করে তুলেছে।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি নিয়মনীতি কড়াকড়িভাবে
প্রয়োগের ফলে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি
হয়েছে, এতে শিক্ষা কার্যক্রম
ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষান্নোয়নে আমাদের ইতিবাচক কী
পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে
বলে মনে করেন এমন
প্রশ্নে প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদ ড. মান্নান বলেন,
আমাদেরকে শিক্ষার উন্নয়নে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রথমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। এজন্য
টিসার্চ ট্রেনিং কলেজগুলোর সংস্কার করে এগুলোকে আধুনিক
শিক্ষাদানের উপযুক্ত স্থান হিসেবে পুনর্গঠিত
করা প্রয়োজন। তাছাড়া
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যারা নিয়োজিত তাদের
আলাদা বেতন স্কেল হওয়া
উচিত। শিক্ষার
মানোন্নয়ন করতে হলে শিক্ষক
সমাজকে মর্যাদার আসনে রাখতে হবে,
তাদেরকে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করতে
দিতে হবে। শুধু
পাঠদানই নয়, মেধাবী শিক্ষকদেরকে
গবেষণাকর্মে সম্পৃক্ত হবার সুযোগ সৃষ্টি
করতে হবে।
বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দের ব্যাপারে অভিমত ব্যক্ত করে
ড. মান্নান বলেন, উন্নত দেশসমূহের
কথা না বলে উন্নয়নশীল
অনেক দেশের দিকে তাকালে
আমরা দেখি শিক্ষাখাতে মোট
দেশজ উৎপাদনের ৬% ভাগ বরাদ্দ
রাখে; বাংলাদেশে তা হলো ২%
ভাগ! বলার অপেক্ষা রাখে
না যে, উন্নত শিক্ষা
ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে,
বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে মানোন্নত
শিক্ষার বিকল্প নেই।
এছাড়া গবেষণায় সিরিয়াস না হলে দেশ
এগুবে না, বিশ্বায়ন প্রতিযোগিতায়
টিকে থাকা কঠিন হবে। গবেষণা
খাতে আলাদা বাজেট বরাদ্দ
সময়ের দাবি। পৃথিবী
গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে,
এর থেকে দূরে থাকা
সম্ভব নয়। প্রতিযোগিতায়
পিছিয়ে পড়লে উন্নয়নের মহাসড়ক
থেকে আমরা ছিটকে পড়ব।
বিদেশে দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানি
করতে হলে কারিগরি খাতে
বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে
-লায়ন এম কে বাশার
পিএমজেএফ
ফাউন্ডার চেয়ারম্যান, ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপ
বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষার কোন্
কোন্ ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে বলে
মনে করেন এমন প্রশ্নের
জবাবে লায়ন এম কে
বাশার বলেন, শিক্ষাবান্ধব এ
সরকারের আমলে শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক
উন্নতি হয়েছে, অনেক পরিবর্তন
এসেছে। শিক্ষার
গুণগত মানের উন্নয়ন জনগণের
কল্যাণে লাগাতে হলে কোয়ালিটি
শিক্ষার ওপর বিশেষ জোর
দিতে হবে। এ
ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু
যারা সেই নির্দেশনা পালন
করবেন, আদেশ বাস্তবায়িত করবেন
তারা সে কাজটি সঠিকভাবে
করতে পারেননি; ফলে কোনো কোনো
ক্ষেত্রে ব্যর্থতা এসেছে। কিন্তু
এর দায়ভার প্রধানমন্ত্রী বা
ঊর্ধ্বতনদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার
একটা সূক্ষ কৌশল দেখা
যায়।
আসন্ন বাজেটে শিক্ষার কোন্
কোন্ ক্ষেত্রে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা
যায় এমন প্রশ্নের জবাবে
দূরদর্শী সমাজসেবী ব্যক্তিত্ব লায়ন এম কে
বাশার বলেন, শিক্ষা বরাদ্দ
প্রতিবারই একইভাবে চলছে। এতে
কোনো চমক এখনও দেখা
যাচ্ছে না। শিক্ষার
বিভিন্ন খাত আছে, আর্মি
শিক্ষাখাত, কারিগরি শিক্ষাখাত, স্বাস্থ্য শিক্ষাখাত, মাদ্রাসা শিক্ষা, শিশুশিক্ষা, নারীশিক্ষা, উচ্চশিক্ষা সব শিক্ষার বিষয়ই
একই জায়গায় এসে জড়
হয়। এরমধ্যে
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সবার জন্য শিক্ষা,
এ বিষয়টির ওপরও গুরুত্ব দিতে
হবে। কর্মক্ষম
যুবসমাজের অনেকেই কর্মহীন, এদের
জন্য কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা জরুরি।
বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়
শিক্ষার অন্যান্য ক্ষেত্রে বরাদ্দ থাকলেও কারিগরি
শিক্ষার ক্ষেত্রে ২ ভাগের বেশি
বরাদ্দ থাকে না।
কারিগরি শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলে
বর্তমানে যে অদক্ষ জনশক্তি
আমরা বিদেশে রপ্তানি করছি
তাদেরকে যদি কারিগরি শিক্ষায়
প্রশিক্ষিত করে পাঠাতে পারি
তাহলে তারা অনেক বেশি
বেতনের চাকরি করতে পারবে,
দেশও অনেক বৈদেশিক মুদ্রা
অর্জন করতে পারবে।
বর্তমানে যে বৈদেশিক রেমিট্যান্স
আসছে তার চেয়ে পঞ্চাশ
গুণ বেশি রেমিট্যান্স আসবে।
শুধু শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়ানোই শেষ
কথা নয়, শিক্ষার মানোন্নয়নে
ব্যবস্থা নেয়ার প্রশ্ন আসে,
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কী ব্যবস্থা নেয়া
উচিৎ বলে মনে করেন
এমন প্রশ্নে বিশিষ্ট শিক্ষাদ্যোক্তা লায়ন এম কে
বাশার বলেন, শিক্ষার সাথে
সরাসরি সম্পৃক্ত আছেন তাদেরকে প্রশিক্ষিত
হতে হবে, মেধাবী শিক্ষকদের
নিয়োগ দিতে হবে, গবেষণার
ক্ষেত্রে উদ্যোগী হতে হবে।
আমাদের সন্তানেরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে বিদেশে
প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে; সেখানে তাদেরকে
জয়ী হতে হবে এ
লক্ষ্য নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের
গড়ে তুলতে হবে।
দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি
মূল্যবান পরামর্শ ব্যক্ত করে কল্যাণকামী
শিক্ষাব্রতী লায়ন এম কে
বাশার বলেন, তাদের প্রতি
আমার পরামর্শ হলো তাদের মূল
লক্ষ্য হলো শিক্ষা; কাজেই
শিক্ষা নিয়েই তাদেরকে থাকতে
হবে, তাদেরকে অন্য কিছু ভাবলে,
অন্য পথে চললে হবে
না। বর্তমানে
তরুণ সমাজে মাদকের নেশা
ছড়িয়ে পড়েছে, এটি রোধ
করতে হলে ছাত্র সমাজের
মধ্য থেকেই চেতনা জাগ্রত
করতে হবে। নেশা
থেকে বেরিয়ে এসে তারা
পরিবার, সমাজ ও দেশের
জন্য কাজ করবে।
তারাইতো আগামীর কর্ণধার, সেভাবেই
তারা নিজেদের গড়ে তুলবে তাদের
কাছে এ আমার প্রত্যাশা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দে কার্পণ্য কারো
কাম্য নয়
-এম কাওছার এইচ কমেট
ভাইস-চেয়ারম্যান, ইবাইস ইউনিভার্সিটি
বর্তমান সরকার শিক্ষাখাতে কী
কী অগ্রগতি সাধন করেছে বলে
মনে করেন এমন প্রশ্নে
দূরদর্শী শিক্ষাদ্যোক্তা কাওছার এইচ কমেট
বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান সরকার উল্লেখযোগ্য উন্নতি
সাধন করেছে। বিশেষ
করে শিক্ষার আধুনিকায়নে তাদের কর্মকান্ড আশাব্যঞ্জক। যে
ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা একসময় চমক
সৃষ্টি করেছিল, তা দ্রুত বাস্তবরূপ
লাভ করছে। এটি
এ সরকারের একক কৃতিত্ব।
শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সমৃদ্ধ
বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক
হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে
অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার সচেতন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদনদান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর
ফলে উচ্চশিক্ষার দ্বার অবারিত হয়ে
শিক্ষিতের হার বেড়েছে।
তিনি বলেন, বছরের শুরুতে
শিশু-কিশোরদের হাতে বিনামূল্যের বই
বিতরণ অব্যাহত রেখে বিস্তৃত করেছেন
এর কল্যাণকর দিক। প্রাইমারিতে
শিক্ষার্থীর ঝরেপড়ার হার কমেছে, শিশুরা
হয়েছে বিদ্যালয়মুখী। শিক্ষার
মূল ভিত মজবুত করতে
সরকার যে পদক্ষেপ গ্রহণ
করেছেন তাতে একটি সমৃদ্ধ
বাংলাদেশ গড়তে আমাদেরকে আশাবাদী
করে তোলে।
সরকারের শিক্ষানীতি কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে
বলে মনে করেন এমন
প্রশ্নে শিক্ষাপ্রেমী কল্যাণকামী ব্যক্তিত্ব কাওছার এইচ কমেট
বলেন, শিক্ষানীতি প্রণয়ন একটি উল্লখযোগ্য
ঘটনা। স্বাধীনতার
পর ২০১০ সালে প্রণীত
শিক্ষানীতিই যুগোপযোগী বলে বাস্তবায়নের পথে
দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষার উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দকে আপনি
পর্যাপ্ত বলে মনে করেন
কি, তা না হলে
কী ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ এমন
প্রশ্নের জবাবে প্রগতিশীল চিন্তার
শিক্ষাদ্যোক্তা কাওছার এইচ কমেট
বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা প্রয়োজন;
এসব প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার, মাল্টিমিডিয়া
সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, আধুনিক
ও উন্নত ল্যাব, সমৃদ্ধ
লাইব্রেরির ব্যবস্থা করলে কোয়ালিটি শিক্ষাক্ষেত্রে
দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ
গড়তে হলে শিক্ষাখাতে বাজেট
বরাদ্দ উন্নয়নশীল দেশের সমান হওয়া
প্রয়োজন। যেখানে
তারা বাজেটে জাতীয় আয়ের
শতকরা ৬ ভাগ বরাদ্দ
দিয়ে থাকে, আমাদের দেশে
তা মাত্র শতকরা ২
ভাগ। শিক্ষাক্ষেত্রে
ব্যয় সংকোচন কোনোভাবেই কাম্য
নয়। কারণ
শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয় হলো ভবিষ্যতের
বিনিয়োগ।
শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানোর
সাথে সাথে শিক্ষার মানোন্নয়ন
নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়,
এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া
যেতে পারে বলে মনে
করেন এমন প্রশ্নে শিক্ষান্নোয়নে
নিবেদিত শিক্ষাব্রতী কাওছার এইচ কমেট
বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে আমাদের সবাইকে সচেতনভাবে
এগিয়ে আসতে হবে, সরকার
একা এ কঠিন কাজ
করবে না; তারা লজিস্টিক
সাপোর্ট দিয়ে যাবে।
শিক্ষাপ্রেমী, সমাজসচেতন সব মানুুষের সহযোগিতার
হাত যদি যুক্ত হয়
তাহলে এর বাস্তবায়ন সম্ভব। জাতি
বিশ্বমানের উন্নত শিক্ষা চায়,
যা অন্য দেশের কাছেও
হবে অনুকরণীয়।
শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা
অর্জনে বাংলাদেশ ছুঁয়েছে নতুন মাইলফলক
-প্রফেসর মোঃ শাদাত উল্লা
উপাচার্য, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বর্তমান সরকারের সময়ে শিক্ষার কোন্
কোন্ ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি হয়েছে
বলে আপনি মনে করেন
এমন প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর মোঃ
শাদাত উল্লা বলেন, বর্তমান
সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল ২০১৪ সালের
মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করা। শিক্ষার
মানোন্নয়নের মাধ্যমে একটি শিক্ষিত ভবিষ্যৎ
প্রজন্ম গড়ে তোলা।
অঙ্গীকার পূরণে বর্তমান সরকার
শতভাগ সফল বলে আমি
মনে করি। কারণ
ইতোমধ্যে ৯৯ দশমিক ৬৪
শতাংশ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি
নিশ্চিত হয়েছে। ৩১
হাজার ২০৮টি সরকারি, রেজিস্ট্রার্ড
ও কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ থেকে ৫
বছর বয়সি শিশুদের জন্য
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু
করা হয়েছে। ঝরে
পড়া শিশুর সংখ্যা হ্রাস
পেয়েছে। পঞ্চম
শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণির
জন্য সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ
করা হচ্ছে। উচ্চশিক্ষার
প্রসারের জন্য বর্তমান সরকার
ঢাকায় ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, রংপুর
বেগম রোকেয়া বিশবিদ্যালয়, পাবনা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
স্থাপন করেছে। রাঙামাটি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,
গাজীপুরে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় ও শিলাইদহে রবীন্দ্র
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান
সরকার। যুগান্তকারী
এসব উদ্যোগ চার দশকের
শিক্ষাচিত্রে অনন্য সংযোজন।
সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত
করা আর শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের ক্ষেত্রে
রীতিমতো ঘটে গেছে বিপ্লব,
যা বিশ্বের বহু দেশের কাছে
অনুকরণীয়। সাক্ষরতার
হার বৃদ্ধি, বিদ্যালয়ে ভর্তির হার শতভাগ,
ছাত্র-ছাত্রীর সমতা, নারী শিক্ষায়
অগ্রগতি, ঝরে পড়ার হার
দ্রুত কমে যাওয়াসহ শিক্ষার
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোল মডেল এখন
বাংলাদেশ। সরকারি
ভাষ্য নয় বরং বিশ্বব্যাংক,
ইউনেস্কো, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামসহ
আন্তর্জাতিক দাতা ও গবেষণা
সংস্থা বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতিকে অন্যদের জন্য উদাহরণ অভিহিত
করে বলছে শিক্ষায় প্রতিটি
পর্যায়ে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন
করেছে বাংলাদেশ। একদশকে
কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে দেশ
যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও টেকসই। শিক্ষায়
নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে বাংলাদেশ
ছুঁয়েছে নতুন মাইলফলক।
বর্তমান শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে কার কী করণীয়
রয়েছে বলে মনে করেন
এমন প্রশ্নের জবাবে শাদাত উল্লা
বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে একটি যুগোপযোগী
শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে, যা
অত্যন্ত আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক। এ
শিক্ষানীতি অতীতের পশ্চাৎপদতা ও
বিভ্রান্তি ঝেড়ে ফেলে যুগের
চাহিদা পূরণে সক্ষম।
এটি পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে
দেশ শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত আরও সাফল্য
অর্জন করবে। এ
শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সবাইকে একসাথে কাজ
করতে হবে। অবশ্যই
শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি
বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে ২০১৫-’১৬ জাতীয়
বাজেটে শিক্ষার কোন্ কোন্ খাতে
অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন বলে
মনে করেন এমন জিজ্ঞাসায়
শাদাত উল্লা বলেন, আমাদের
জাতীয় বাজেটে সব সময়ই
যেসব খাতকে সবচেয়ে বেশি
অগ্রাধিকার দেয়া হয় তার
মধ্যে শিক্ষাও একটি; যদিও তা
প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
আবার এই বরাদ্দের বড়
অংশটাই চলে যায় অনুন্নয়ন
খাতে অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাবদ।
রাজস্ব বাজেটের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রাথমিক
শিক্ষায় ৯৮ শতাংশ ও
মাধ্যমিক শিক্ষায় ৯৯ শতাংশ অর্থই
ব্যয় হচ্ছে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাবদ।
এটা সত্য যে, আফ্রিকার
অনেক গরিব দেশও শিক্ষাখাতে
বাংলাদেশের চেয়ে বেশি অর্থ
বরাদ্দ করে থাকে।
বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র ওই
অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাজেটে তাঞ্জানিয়া
২৬ শতাংশ, লেসেথো ২৪
শতাংশ, বুরুন্ডি ২২ শতাংশ, টোগো
১৭ শতাংশ ও উগান্ডা
১৬ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ
রাখে শিক্ষাখাতের জন্য। অথচ
এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশের
জিডিপি’র আকার অনেক
বড়। তাই
২০১৫-’১৬ অর্থবছর থেকে
সরকার জাতীয় বাজেটের অন্তত
১৫ শতাংশ পরিমাণ অর্থ
শিক্ষাখাতের জন্য বরাদ্দ করার
মাধ্যমে শুরুটা করতে পারে। পরবর্তী
বছরগুলোতে ১ শতাংশ করে
বরাদ্দ বাড়িয়ে তা ২০
শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব। আমি
মনে করি, বর্তমানে যেখানে
সরকারি বরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম
বা বরাদ্দ দেয়া সম্ভব
নয়, সেখানে বেসরকারি খাত
ও বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) এগিয়ে আসতে
পারে তাহলে সেটি লক্ষ্যমাত্রা
অর্জনে সহায়ক হবে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারীর মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলায়
ভালো মানের মাধ্যমিক ও
উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
ও পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া যেতে
পারে।
শিক্ষার জন্য যে ব্যয়
হবে অন্যান্য খাতের মত তা’
ব্যয় নয়, তা’ হবে
ভবিষ্যতের বিনিয়োগ
-প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার মাস্উদ আহ্মদ
উপাচার্য, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়
দূরদর্শী শিক্ষাবিদ প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার মাস্উদ আহ্মদ বলেন,
বর্তমান সরকারের ৬ বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে
ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
তবে প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি লেবেলে
এ উন্নতি উল্লেখযোগ্য।
প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়মুখী
করার কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহত রয়েছে। নারীশিক্ষার
ক্ষেত্রে অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। কারিগরি
শিক্ষা, মেডিক্যাল শিক্ষা, কৃষি শিক্ষা ইত্যাদি
ক্ষেত্রেও অগ্রগতি লক্ষণীয়। এর
ফলে সার্বিকভাবে যে জিনিসটি বেরিয়ে
আসবে, তাহলো শিক্ষাসহ সকল
সেক্টরের উন্নয়নের জোয়ার। জাতির
জীবনে একটি জাগরণ সৃষ্টি
হয়েছে, যা স্থবিরতা ও
হতাশা কাটিয়ে জাতিকে নিয়ে
যাবে সৃষ্টিশীলতার পথে। একটি
পরিবারের সকল কর্মক্ষম সদস্যই
যদি কাজে নিয়োজিত থাকে,
তাহলে সেই পরিবার হয়
সুখী ও সমৃদ্ধ; জাতির
জীবনেও এটি সমান গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষানীতির সাফল্য সম্পর্কে এক
প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর মাস্উদ
আহ্মদ বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের
অর্জন বিশাল। পঞ্চম
ও অষ্টম শ্রেণিতে পাবলিক
পরীক্ষা প্রবর্তন করে শিক্ষাঙ্গনে দারুণ
আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
এর ফলে অবহেলিত গ্রামাঞ্চলের
মেধাও উঠে এসেছে সমৃদ্ধ
শহরাঞ্চলের সাথে। শিক্ষার
উন্নয়নে আমাদের মিডিয়াও ভূমিকা
রাখছে। মিডিয়ায়
শিক্ষামূলক কিছু তথ্য পরিবেশিত
হয়, পাঠ্য বিষয়ের ওপর
পরামর্শ দেয়া হয়, প্রশ্নের
ধরন তুলে ধরা হয়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন
হয়, যা থেকে শিক্ষার্থীরা
অনেক কিছু জানতে পারে;
নিজেদের জ্ঞান-ভান্ডারকে সমৃদ্ধ
করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষানীতি
অনুযায়ী ১ম থেকে ৮ম
শ্রেণি হবে প্রাইমা,ির
আর প্রাইমারিতেই কারিগরি শিক্ষা সন্নিবেশিত করার চিন্তা সরকারের রয়েছে। এটি
পরিপূর্ণভাবে চালু করা গেলে
বিপুল জনগোষ্ঠী কারিগরি জ্ঞান লাভ করে
আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে।
সরকার ধীরে ধীরে এগুচ্ছে
দৃঢ়তার সাথে। এদের
মধ্যে কারিগরি শিক্ষা যারা গ্রহণ
করবে, আগ্রহ সহকারে তাদেরকে
৫ম শ্রেণি থেকে আলাদা
করে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত
নিয়ে যাওয়া হবে।
২০১৫ সালে জাতীয় বাজেটে
শিক্ষার কোন্ কোন্ খাতে
অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন বলে
মনে করেন এমন প্রশ্নের
জবাবে প্রফেসর মাস্উদ আহ্মদ বলেন,
যেকোনো জাতির উন্নয়ন নিশ্চিত
করতে হলে জনগোষ্ঠীর মৌলিক
চাহিদা মেটাতে হবে।
প্রথমে খাদ্য এতে আমরা
স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে বর্তমানে বিদেশেও
রপ্তানি করতে পারছি।
বস্ত্রখাতে আমাদের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য
হলেও প্রয়োজনীয় তুলা আমাদের আমদানি
করতে হয়, তুলাসহ অন্যান্য
উপকরণগুলো স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা গেলে
উৎপাদন ব্যয় অনেক কমে
যেত, তখন রপ্তানির প্রতিযোগিতামূলক
বাজারে আমরা নেতৃত্ব দিতে
পারতাম। তিনি
বলেন, স্বাস্থ্য খাতেও আমাদের অর্জন
কম নয়। অনেক
মেডিকেল কলেজ ও মেডিকেল
বিশ্ববদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার মাস্উদ আহ্মদ বলেন,
আমি সাধারণ শিক্ষা বা
মানবিক শিক্ষার অবমূল্যায়ন করছি না; কারিগরি
শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে দেশকে
কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়া সম্ভব
এটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। শিক্ষার
মাধ্যমে মানুষ মানবিক গুণাবলি
অর্জন করতে পারে, শান্তি-সৌহার্দ্য-ভালোবাসার পৃথিবী গড়ে তোলা
সম্ভব। মানুষ
মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে,
দয়াশীল হবে, সুখ-দুঃখ
সবার সাথে ভাগ করে
নেবে; তাহলে সন্ত্রাস-হানাহানি-জাতিবিদ্বেষের বিষবাষ্প থেকে মানুষ রক্ষা
পাবে। তিনি
বলেন, শিক্ষার প্রতিটি স্তরকে টার্গেট করে
আমাদের বাজেট প্রণীত হওয়া
উচিৎ। মনে
রাখতে হবে শিক্ষার জন্য
যে বাজেট হবে, তা
অন্যান্য খাতের মতো ব্যয়
নয় এটি ভবিষ্যতের বিনিয়োগ,
যা পুনঃপৌণিকভাবে ফিরে আসবে।
তাই শিক্ষা সংক্রান্ত বাজেটের
অংশকে আলাদা গুরুত্ব দিতে
হবে। আমাদেরকে
সারা দেশে মেধা অন্বেষণ
করে তার পরিচর্যার মাধ্যমে
মেধাবী জাতি গড়ে তুলতে
হবে। বিশেষ
সংস্থার মাধ্যমে এ বিরাট কর্মসূচি
পালনের ব্যবস্থা থাকবে। বিভিন্ন
সেক্টরে, শিক্ষা প্রতষ্ঠান ও
সংস্থায় যেসব মেধাবী ব্যক্তিত্ব
কাজ করছেন, তাদের একত্রিত
করে মেধাবিকাশ ও পরিচর্যার বিশাল
কর্মযজ্ঞ চালুু করা গেলে
বাংলাদেশ শিক্ষান্নোয়ন ও কারিগরি শিক্ষার
মডেল হিসেবে পরিগণিত হবে। তিনি
আরও বলেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে
বাছাই করে তাদেরকে বিভিন্ন
টার্গেট দিয়ে পরিচালিত করতে
হবে। যাদের
শিক্ষাপ্রাপ্ত মেধাবীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশকে উন্নয়নের রোল
মডেলে পরিণত করবে।
আমাদের টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটিকেও অনুরূপ টার্গেট দেয়া
যেতে পারে। অবশ্য
আমরা এর জন্য প্রস্তুতও
রয়েছি। মানুুষের
প্রয়োজন যদি দেশে মেটানো
যায়, তাহলে সে বিদেশে
যাবে কেন? প্রত্যেকটি সেক্টরে
যদি দক্ষ জনবল গড়ে
তোলা যায়, তাহলে বাংলাদেশকে
কে ঠেকাবে!
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাখাতে
বাজেট বরাদ্দ বর্তমানের চেয়ে
অন্তত দ্বিগুণ করতে হবে
-প্রফেসর জিয়াউল হক
চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক
শিক্ষা বোর্ড, বরিশাল
বর্তমান সরকারের সময়ে শিক্ষার সার্বিক
অবস্থার মূল্যায়ন প্রসঙ্গে প্রফেসর জিয়াউল হক বলেন,
সরকারের দৃশ্যমান সাফল্যের মধ্যে শিক্ষা উল্লেখযোগ্য
স্থান দখল করে আছে। তার
মধ্যে বছরের প্রথম দিন
উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই
বিতরণ কর্মসূচি অন্যতম। ইতিপূর্বে
গুদামে রক্ষিত বিনামূল্যের বই
নাশকতাকারীরা পুড়িয়ে দিয়েও এ
গণমুখী কর্মসূচিকে থামিয়ে দিতে পারেনি। ফলে
বছরের শুরুতেই নতুন বই নিয়ে
ছাত্র-ছাত্রীরা নবযাত্রা শুরু করতে পারছে
এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
তিনি বলেন লিঙ্গ-সমতা
নিয়ে অতীতে আন্দোলন হয়েছে। তখন
শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা
বরাবরই বেশি ছিল; কিন্তু
নারী-শিক্ষায় বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের
ফলে লিঙ্গ-সমতা সৃষ্টির
পর এখন মেয়েদের সংখ্যা
ছেলেদের তুলনায় বেড়ে গেছে। মেয়েদেরকে
বিনামূল্যে গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ, উপবৃত্তি প্রদান,
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে নজরদারি, ইভটিজিং বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে
মেয়েরা উৎসাহিত হয়েছে, অভিভাবকগণ হয়েছেন
আশ্বস্ত।
প্রফেসর জিয়াউল হক বলেন,
আমাদের শিক্ষা পদ্ধতিতেও ব্যাপক
পরিবর্তন হয়েছে। প্রণীত
হয়েছে যুগোপযোগী শিক্ষানীতি। সৃজনশীল
পদ্ধতি প্রবর্তন করে শিক্ষাক্ষেত্রে আলোড়ন
সৃষ্টি করা হয়েছে।
এখন শিক্ষার্থীদেরকে পুরো বই পড়তে
হচ্ছে, শিক্ষকদেরকে শেষ করতে হচ্ছে
পুরো সিলেবাস। এর
ফলে নকলের প্রবণতা অনেক
কমেছে। ভবিষ্যতে
নতুন প্রজন্ম নকল কী জিনিস,
তা বুঝবে না।
তিনি বলেন একসময় শিক্ষা
ব্যবস্থায় ভারসাম্যের অভাব ছিল, গ্রাম-শহরের শিক্ষায় বৈষম্য
ছিল প্রকট। এখন
প্রায় সব স্কুল-কলেজে
কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া সরবরাহ করা হয়েছে। অবশিষ্টগুলোতেও
দ্রুত সরবরাহ করা হবে
এটি সবার প্রত্যাশা।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি
সমৃদ্ধ করা হচ্ছে, আধুনিক
ল্যাবরেটরিরও ব্যবস্থা হয়েছে। শিক্ষকরা
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হচ্ছেন, তাঁরা লব্ধ অভিজ্ঞতা
ছড়িয়ে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের মাঝে। শিক্ষাক্ষেত্রে
যে বিপ্লব সাধিত হয়েছে,
তা এ মুহূর্তে বোঝা
না গেলেও এটি নিশ্চিত
করে বলা যায় আগামী
১০/১৫ বছর পর
এ দেশে কোনো অশিক্ষিত
লোক থাকবে না।
বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষানীতি কতটুকু
বাস্তবায়ন হয়েছে বলে মনে
করেন এমন প্রশ্নে প্রফেসর
জিয়াউল হক বলেন, শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার বিশেষ নজর
দিয়েছে; শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নেও তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত
রয়েছে। শিক্ষার
সম্প্রসারণ হচ্ছে, কিন্তু কোয়ালিটি
শিক্ষা এখনো দানাবেঁধে উঠতে
পারেনি। তবে
কোয়ালিটি শিক্ষার প্রসার সরকারের অন্যতম
লক্ষ্য। আশা
করি, আমাদের সকলের সহযোগিতায়
এক্ষেত্রেও সরকার সফল হবে।
শিক্ষাবিদ প্রফেসর জিয়াউল হক বলেন
আমাদের দেশের বাজেটে শিক্ষাখাতে
জিডিপি’র মাত্র ২
শতাংশ বরাদ্দ হয়, অন্যান্য
উন্নয়নশীল দেশে এ খাতে
বরাদ্দ হয় জিডিপি’র
প্রায় ৬ শতাংশ।
বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে
হলে বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ
কমপক্ষে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করতে হবে। তাছাড়া
শিক্ষার মান বাড়াতে হলে
শিক্ষকদের মান বাড়াতে হবে
সর্বাগ্রে।
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড; আর
শিক্ষার মেরুদন্ড হলো শিক্ষক।
শিক্ষকরা জ্ঞান বিতরণের ভূমিকায়
রয়েছেন। তাঁদের
দায়িত্ব অপরিসীম। শুধু
শিক্ষার প্রসার নয়, কোয়ালিটি
শিক্ষার প্রসারও তাঁদের ওপর বর্তায়। তাই
শিক্ষকদেরকেই প্রশিক্ষিত হতে হবে নিখুঁতভাবে। এজন্য
শিক্ষক প্রশিক্ষণের ওপর সরকারের বিশেষ
জোর দেয়া প্রয়োজন।