শিক্ষা ও যুব উন্নয়নে নিবেদিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনে তার কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে; তাছাড়া প্রকাশনার ৩৪ বছরে পদার্পণ করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ পত্রিকা প্রকাশনার ২৫ বছরে পালন করেছে রজত জয়ন্তীর আনন্দানুষ্ঠান; নিয়েছে লক্ষ্যে পৌঁছানোর বলিষ্ঠ শপথ।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিএসডিসি), যার মাধ্যমে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে বিভিন্ন মাল্টিডায়মেনশনাল কর্মসূচি। মাতৃসংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার দিকনির্দেশনায় পরিচালিত হচ্ছে নিজস্ব গবেষণা কার্যক্রম এবং অন্যান্য কল্যাণমূলক জাতি জাগানিয়া কর্মসূচি।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকাকে অনেক বাধা, প্রবল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছে সামনের দিকে। কিন্তু ক্যাম্পাস তাতে দমে যায়নি। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে এগিয়ে গেছে দীপ্ত পদভারে। বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছাত্র-যুব সমাজের মাঝে প্রোএকটিভ ও পজিটিভ এটিচিউড এর মানুষ গড়ে চলেছে, তাদের মন থেকে দূর করছে নেতিবাচক চিন্তা; ক্যাম্পাস যুব সমাজের সামনে তুলে ধরছে স্বপ্নের বিশাল ক্যানভাস। বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় যুব সমাজকে যোগ্য করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ডায়নামিক কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের আয়োজন করেছে, পরিচালনা করছে ইংলিশ এন্ড স্মার্টনেস কোর্স ফর লিডারশিপ।
শিক্ষানবীশ কর্মসূচির মাধ্যমে ক্যাম্পাস তার সমাজ সচেতনতামূলক, জাতিজাগানিয়া কর্মসূচির আওতায় নিজস্ব ক্যালেন্ডার, বিভিন্ন বাণী ও দিকনির্দেশনামূলক উক্তিসহ স্টিকার, লিফলেট, ব্যানার প্রকাশ করছে। পরীক্ষায় নকল, ক্যাম্পাসে ধূমপান ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং শ্রেণিবৈষম্যহীন শিক্ষার পক্ষে সোচ্চার হয়েছে। ক্যাম্পাস’র সেসব কল্যাণমূলক কর্মসূচি অনেকটা বাস্তবরূপ লাভ করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে ধূমপান, নকল এখন বিরল প্রায়; সন্ত্রাস মাঝে মাঝে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়। প্রতিরোধের মুখে এটিও একদিন অবলুপ্ত হবে।
ক্যাম্পাস সমাজ, দেশ ও জাতির কাছে দায়বদ্ধ; ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন সমগ্র জাতির স্বপ্ন। ডিজিটাল বাংলাদেশের মহাকর্মযজ্ঞের সাথী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষাঙ্গনে কোয়ালিটি শিক্ষার প্রসার, দক্ষ শিক্ষকের নিযুক্তি নিশ্চিত করার জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে পরামর্শ রেখে ক্যাম্পাস তার সামাজিক দায়িত্ব পালন করে চলেছে। ৪ দশকে পদার্পণ ক্যাম্পাস’র ধারাবাহিক অগ্রযাত্রার বর্ণিল স্বাক্ষর।
ক্যাম্পাস’র ৩৪ বছরে পদার্পণ পত্র-পত্রিকা জগতে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ উপলক্ষে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, শিক্ষাদ্যোক্তা, সমাজসেবী কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার মূল্যায়ন এবং এর ভবিষ্যৎ উন্নয়ন সম্পর্কে তাঁদের সুচিন্তিত পরামর্শ আহ্বান করা হয়েছিল। যাঁরা সাড়া দিয়েছেন তাঁদের মতামত নিচে তুলে ধরা হলো।
ক্যাম্পাস তার উন্নতমানের প্রকাশনা অব্যাহত রেখে পাঠকপ্রিয়তা ধরে রাখবে এটি আমাদের কাম্য
ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া
বিশিষ্ট শিক্ষাদ্যোক্তা, রূপায়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
দেশের শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন নিয়ে কী ভাবছেন এমন প্রশ্নে কল্যাণকামী ব্যক্তিত্ব ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়; সারাবিশ্বে শিক্ষা হলো উন্নয়নের চাবিকাঠি। আমাদের শিক্ষা নিঃসন্দেহে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর কিছুদিন বিশৃংখল অবস্থা থাকলেও বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের আগের টার্মে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নতুন রূপ নিয়েছে, শিক্ষানীতি প্রণীত হয়ে বাস্তবায়নের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার সরকারি নানাবিধ উদ্যোগ সত্ত্বেও শিক্ষাঙ্গনে বর্তমানে যে পরিবেশ বিরাজ করছে, তা শিক্ষাকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে শিক্ষার্থীদের কতটুকু সমৃদ্ধ করতে পারছে তাতে সন্দিহান না হয়ে উপায় নেই। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আউট হয়ে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে। তাছাড়া ছাত্র নামধারীদের টেন্ডারবাজি, হল দখলসহ নানা ঘটনা আজ শিক্ষাঙ্গনগুলোতে দানাবেঁধে বসেছে; যা শিক্ষার পরিবেশকে কলুষিত করছে।
তবে এও সত্য, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা দিয়ে পুরো বিষয়ের বিচার করা যায় না। তবে শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে সব রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসতে হবে, তাদের ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তাদের অঙ্গ সংগঠন ছাত্র সংগঠনকে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাস থেকে সরিয়ে আনতে হবে; ছাত্রাবস্থায় কোটিপতি হবার অস্বাভাবিক স্বপ্ন থেকে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের হায়ার এডুকেশনের জন্য প্রতিষ্ঠান আপাতত না বাড়িয়ে যেগুলো আছে তার সংস্কার করে সেখানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। শালীনতা, নৈতিক মূল্যবোধ বজায় রেখে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীরা যাতে জ্ঞানার্জন করতে পারে তার সুব্যবস্থা করতে হবে।
গুণগত শিক্ষকের অভাব শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করছে, কীভাবে এর মোকাবেলা করা যায় এমন প্রশ্নে শিক্ষাপ্রেমী-সমাজসেবী ব্যক্তিত্ব ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, আমাদের দেশের খুব কম সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী বিদেশে উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষক শিক্ষকতা করছেন মোটা বেতন ও নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে। কিন্তু দুঃখিনী বাংলা তাদেরকে বহু সীমাবদ্ধতার মাঝেও পাঠিয়েছিল উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ফিরে এসে দেশের শিক্ষাঙ্গনে অবদান রাখতে। কিন্তু তাদের মেধা দেশের উন্নতিতে কাজে লাগল না। এভাবে মেধা পাচারের ফলে দেশের কাঙ্খিত অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে না। এভাবেই দেখা দিচ্ছে দক্ষ শিক্ষকের অভাব। অবশ্য এও ঠিক, গুণী শিক্ষকগণ বিদেশে যে পরিবেশ পাচ্ছে, দেশে সেই পরিবেশের নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। এজন্য শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ, শিক্ষকের মর্যাদা এবং তাদের জন্য সম্মানজনক বেতন-ভাতা বৃদ্ধির যে আন্দোলন শিক্ষক সমাজ করছেন সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আগে বিদেশে অবস্থানরত দক্ষ ও গুণী শিক্ষকদের ফিরে আসতে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। এছাড়া দেশে যেসব মেধাবী শিক্ষক আছেন, তাঁদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই দক্ষ শিক্ষকের অভাব ধীরে ধীরে কমে আসবে।
ছাত্র-যুবকদের বিপথগামিতারোধে পরিবার বা সমাজের কার কী ভূমিকা রয়েছে জানতে চাইলে শিক্ষাদ্যোক্তা ব্যক্তিত্ব ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন ছাত্র-তরুণদের বিপথগামিতা রোধে পরিবারের যেমন ভূমিকা আছে, তেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজের ভূমিকাও কম নয়। পরিবার থেকে সুশৃংখল জীবনের রীতি-নীতি যখন তার জানা হবে, তখন সে লাইনচ্যুত হবে না। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলা চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, বিতর্ক প্রতিযোগিতা প্রভৃতি এক্সট্রা-কারিকুলার একটিভিটিজের ব্যবস্থা থাকলে ছাত্রদের বিপথগামিতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ৪ দশকে পদার্পণ করেছে, এ পত্রিকার কাছে আপনার প্রত্যাশা এবং এর উন্নয়নে পরামর্শ কী এমন প্রশ্নে শিক্ষানুরাগী, দেশপ্রেমী ব্যক্তিত্ব ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যখন প্রকাশনা শুরু করে তখন পত্রিকা কিনে পড়ার সামর্থ্য অনেকের ছিল না। একটি পত্রিকা কেনা হলে অনেকে মিলেই সেটা পড়ত। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার মাধ্যমে সারা বিশ্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার খোঁজ-খবর নেয়া সম্ভব হয়। ক্যাম্পাস শিক্ষা উন্নয়নে যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে, তার তুলনা নেই। ক্যাম্পাস উন্নত প্রকাশনার মাধ্যমে দেশ ও সমাজকে জাগিয়ে তুলছে, উন্নত মানুষ গড়ছে এটি তার কল্যাণকর কর্মসূচি। ক্যাম্পাস তার উন্নতমানের প্রকাশনা অব্যাহত রেখে পাঠকপ্রিয়তা ধরে রাখবে এটি আমাদের কাম্য।
ক্যাম্পাস পত্রিকা ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ জনগণকে শিক্ষার মাধ্যমে দেশের উন্নতিতে উৎসাহ প্রদান করে আসছে
লায়ন এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বাবর
ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর, ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫বি২, বাংলাদেশ
বর্তমান শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন সম্পর্কে এবং প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করে শিক্ষাপ্রেমী ব্যক্তিত্ব লায়ন ওয়াহিদুজ্জামান বাবর বলেন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন এনে এ শিক্ষাকে ব্যক্তি উন্নয়নে, জাতির উন্নয়নে সর্বোপরি দেশ উন্নয়নে বাস্তবভিত্তিক করে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে নোবেল বিজয়ী কৈলাস সৈত্যার্থীর শিক্ষার Goal বিষয়ক দর্শনটি কাজে লাগানো যেতে পারে। দর্শনটি হলো 5E দিয়ে Education Goal নির্ধারণ করা যেতে পারে Employability, Entrepreneurship, Excellence, Ethics and Equity. শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য কমাতে হবে এবং কারিগরি শিক্ষাকে ও IT শিক্ষাকে Preference দিতে হবে। তাছাড়া প্রতিবন্ধীদের শিক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। দুঃখের সাথে বলতে হয় নোট গাইড পড়ে, প্রশ্নপত্র ফাঁস করে, নকল করে আমাদের ছেলেমেয়েরা বেশি পাস (৯০-৯৮%) দিচ্ছে, আসলে তারা কি সুশিক্ষা পাচ্ছে? এ বিষয়গুলো নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। অন্যথায় জাতি মেধাশূন্য হয়ে পড়বে।
দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব দূর করতে হলে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে এমন জিজ্ঞাসায় ওয়াহিদুজ্জামান বাবর বলেন, শিক্ষা Professionকে মর্যাদাসম্পন্ন Profession হিসেবে Acknowledge করতে হবে। শিক্ষকদের Cost of Learning এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি Attractive Salary structure করতে হবে। Attractive Salary benefit এর মাধ্যমে শিক্ষকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাহিরে Private Coachingএ নিরুৎসাহিত করতে হবে। বাজেটে শিক্ষা ক্ষেত্রে সঠিক Budget allocation এর মাধ্যমে IT based শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ফলশ্রুতিতে শিক্ষকদের Quantity প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে। নবীন শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আরো বেশি Training এর আয়োজন করতে হবে এবং পাশাপাশি অভিজ্ঞ শিক্ষকদের Latest Technology এবং Technics গুলো জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশে অপসংস্কৃতির দৌরাত্ম্য সম্পর্কে ছাত্র-তরুণদের সতর্কতা এবং শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এমন প্রশ্নে সমাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত ব্যক্তিত্ব লায়ন ওয়াহিদুজ্জামান বাবর বলেন, দেশ থেকে কুশিক্ষা, অপসংস্কৃতি রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। পড়াশুনার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধুলা, সংস্কৃতি, সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করতে হবে। এজন্যই আমি লায়ন্স গভর্নর হিসেবে ডাক দিয়েছি “Education for Excellence” উৎকর্ষের জন্য শিক্ষা -এ Call কে সামনে রেখে আমরা লায়ন্সের নিবেদিত কর্মীরা সামগ্রিক শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে যাব। ফলশ্রুতিতে জাতি একটি ন্যায়ভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক ও আলোকিত সমাজ ও দেশ পাবে।
ছাত্র ও যুব উন্নয়নে নিবেদিত পত্রিকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস’র ৩৪ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে পরামর্শ প্রদান করে ওয়াহিদুজ্জামান বাবর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সীমিত সামর্থ্য নিয়েও চমৎকারভাবে ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ জনগণকে শিক্ষার মাধ্যমে দেশের উন্নতিতে উৎসাহ প্রদান করে আসছে। এ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে বলে আশা রাখছি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে ক্যাম্পাস পত্রিকা
প্রফেসর মোঃ আবু বক্কর ছিদ্দিক
চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা
বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী, ভবিষ্যৎ শিক্ষা ব্যবস্থাকে আপনি কোন্ পর্যায়ে দেখতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, আমি অত্যন্ত আশাবাদী। শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের কার্যক্রম কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমরা লক্ষ্য করছি, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় প্রতিবছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিয়ে যে নজির সৃষ্টি করেছেন, তা সত্যিই পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে যে প্রাণচাঞ্চল্য বা আনন্দ এবং শিক্ষার প্রতি যে অনুরাগ সৃষ্টি হয়, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এটি বর্তমান সরকারের শিক্ষা কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য বিষয়।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের স্কুলমুখী করার লক্ষ্যে দুপুরে টিফিনের ব্যবস্থা করে পড়ালেখার প্রতি শিশুদের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিকে সৃজনশীল পদ্ধতি অনুসরণের ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বা পড়ার টেবিলে ফিরে এসেছে। এতে নকলের প্রবণতা অনেক কমেছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে তথ্য-প্রযুক্তির আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে; প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী কিংবা ইন্টারনেটে প্রচারকারী বা এ ব্যাপারে গুজব সৃষ্টির কাজকে সাইবার ক্রাইম হিসেবে গণ্য করে যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
শিক্ষার গুণগত মান সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, শিক্ষা প্রসারে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা আশাব্যঞ্জক। কিন্তু শিক্ষার মানোন্নয়ন না হলে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্বায়ন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে না পারলে অগ্রগতির দৌড়ে আমরা পিছিয়ে থাকব। মধ্যম আয়ের দেশ কিংবা উন্নত দেশের সারিতে বাংলাদেশকে স্থান করে দিতে হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কর্মযজ্ঞকে আরও তীক্ষè ও লক্ষ্যাভিসারী করে তুলতে হবে। শিক্ষকদের হতে হবে প্রশিক্ষিত এবং গুণগত মানে দক্ষ ও অভিজ্ঞ।
প্রফেসর আবু বক্কর ছিদ্দিক আরও বলেন, বর্তমান সময়কার শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি ভাগ্যবান। আমাদের সময় অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হয়েছিল, কিন্তু এখনকার ছাত্র-ছাত্রীরা হাতের কাছে শিক্ষার আধুনিক উপকরণসমূহ পেয়ে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়েছে, নতুন ল্যাবরেটরি স্থাপন কিংবা পুরাতন ল্যাব-এর আধুনিকীকরণ করা হয়েছে, লাইব্রেরি সমৃদ্ধ করা হয়েছে যেখানে বসে শিক্ষার্থীরা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান অর্জন করে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে পারবে।
গুণগতমানের শিক্ষা প্রদানে শিক্ষকরা বর্তমানে যথেষ্ট সচেতন। শিক্ষার্থীরাও উন্নতমানের জ্ঞান অর্জনে সক্ষম। এ কথা সত্যি যে তাদের জ্ঞান যদি কেবল বই-পুস্তক-ল্যাব-কম্পিউটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে তারা প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারবে না। মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান; মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন একজন মানুষ সমাজ দেশ ও জাতিকে অনেক কিছু দিতে পারে। সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে যে ধাক্কাটা প্রয়োজন তা মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন আলোকিত মানুষরাই দিতে পারে। এক্ষেত্রে পাঠদানকারী শিক্ষকদের ভূমিকাই প্রধান; তারা নিজেরা প্রশিক্ষিত হবেন, তাদের গবেষণা ও পরীক্ষালব্ধ জ্ঞানকে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেবেন, ছাত্র-ছাত্রীদের ভেতরের মেধা বিকশিত করার কাজে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবেন। শিক্ষক সমাজ যদি জাতীয়ভাবে এ দায়িত্ব পালন করতে পারেন তাহলে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী গড়ে উঠবে; এতে দেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, গুণগত শিক্ষাদান শিক্ষকের আন্তরিকতার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক যদি সচেতনভাবে পাঠদান করেন, ছাত্রদের প্রশ্নের জবাব দেন এবং তাদেরকে প্রশ্ন করে তাদের অগ্রগতি সম্পর্কে কিংবা দুর্বলতা সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করেন তাহলে জ্ঞান আহরণের একটা সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে উঠবে, দুর্বল ও পিছিয়েপড়া শিক্ষার্থীদের টেনে তোলা সহজ হবে। শ্রেণিকক্ষে যদি সিলেবাসের আওতাভুক্ত বিষয়সমূহ ভালোভাবে পড়িয়ে দেখা যায় তাহলে শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেট টিউটরের কাছে ছোটার প্রবণতা কমে আসবে।
শিক্ষাঙ্গনে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব তীব্রভাবে অনুভূত হয়, যে কারণে গুণগতমানের শিক্ষাপ্রদান ব্যাহত হয়, এটা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় এমন প্রশ্নে প্রফেসর ছিদ্দিক বলেন, দক্ষ শিক্ষকের অভাব সম্পর্কে সরকার সচেতন। এক্ষেত্রে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে, কিছু সংখ্যক শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান বিষয়ে বিদেশি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এদের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ব্যাচ বাই ব্যাচ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আশা করা যায়, এর ফলে সারাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক গড়ে উঠবে, দেশে গুণগত মানের শিক্ষার প্রসার ঘটবে।
ছাত্র-তরুণ সমাজের বিপথগামিতারোধে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা সমাজের কী ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর ছিদ্দিক বলেন, তারুণ্য বা যৌবনের এ সময়টায় ছাত্র-তরুণদের একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পরিবেশের কারণে, সামাজিক মেলামেশার কারণে কিংবা বিদেশি সংস্কৃতির কুপ্রভাবে ছাত্র-তরুণরা পথভ্রষ্ট হতে পারে। তিনি বলেন, তরুণদের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ সময়টায় পরিবার-সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবারই সতর্ক থাকতে হবে, ছাত্র-তরুণদের ওপর লক্ষ্য রাখতে হবে তারা যেন বিপথগামী না হয়।
ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে করণীয় সম্পর্কে আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, জ্ঞানের চর্চা, জ্ঞান আহরণের জন্য আকাঙ্খা জাগিয়ে তোলা, জ্ঞান অর্জনের পথকে অবারিত করার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের প্রয়াস যখন ব্যাপকতালাভ করবে তখন বুঝতে হবে সমাজ একটা পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সমাজে জ্ঞান চর্চার সাথে সাথে ন্যায়ভিত্তিক আচরণেও মানুষ অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা হচ্ছে, সরকার এক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কর্মযজ্ঞে গোটা জাতিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এটি দেশে-বিদেশে স্বীকৃত। এ অগ্রগতিকে কেউ থামিয়ে দিতে পারবে না, অগ্রগতির চাকাকে কেউ পারবে না পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দিতে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা ৩৪ বছরে পদার্পণ করেছে, এ পত্রিকার উন্নয়নে তাঁর পরামর্শের কথা জানতে চাইলে কল্যাণকামী ব্যক্তিত্ব প্রফেসর আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা রুচিশীল পাঠক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মূলতঃ ছাত্র-তরুণদের উন্নয়নে এ পত্রিকা কাজ করলেও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, দুর্নীতি-সন্ত্রাস-ধূমপান ইত্যাদি ক্ষতিকর বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাস বরাবর সোচ্চার থেকেছে। শিক্ষার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা এবং শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে ক্যাম্পাস যে ভূমিকা রাখছে তা সরকারের বিশাল কর্মযজ্ঞ, বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। ক্যাম্পাস বস্তুনিষ্ঠ খবর-প্রতিবেদন প্রচার করছে, সমাজকে ইতিবাচক দিকে এগিয়ে নিতে মানুষের মন-মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। ক্যাম্পাস’র আরও উন্নয়ন ঘটবে, পাঠকপ্রিয়তা আরও বাড়বে; পাঠকপ্রিয় পত্রিকা হিসেবে আরও দায়িত্বশীল হয়ে সমাজ-প্রগতির বাহনের ভূমিকা পালন করবে- ক্যাম্পাস’র কাছে এই আমাদের প্রত্যাশা।
ক্যাম্পাস ৪ দশকে জাতির জন্য ৪শ’ বছরের কাজ সম্পন্ন করে দিয়েছে
ডাঃ আলমগীর মতি
ফাউন্ডার এমডি, মডার্ণ হারবাল গ্রুপ
বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হারবাল গবেষক ডাঃ আলমগীর মতি বলেন, বিশ্বায়নের যুগে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা গতানুগতিক পদ্ধতিতে চলতে পারবে না। আমাদের শিক্ষা যদি বাস্তবভিত্তিক এবং গণমুখী না হয়, তাহলে আমরা বিশ্বায়ন প্রতিযোগিতায় ছিটকে পড়ব। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অদক্ষ মানবসম্পদ রপ্তানি করছি; এ মানবসম্পদকেই যদি প্রশিক্ষিত করে পাঠাতে পারতাম, তাহলে এখনকার তুলনায় আমরা কয়েক গুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারতাম। তাই স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ব্যাপারে শতভাগ জোর দিতে হবে। আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে সাধারণ কারিগরি শিক্ষার ওপর। এমএস ডিগ্রিধারী, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এসবের চেয়েও এখন বেশি প্রয়োজন ভোকেশনাল ট্রেনিংপ্রাপ্ত কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মী। কারণ দেশে-বিদেশে রয়েছে এদের ব্যাপক চাহিদা।
তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত না হওয়ার কারণে আমরা বিশ্বে পিছিয়ে আছি। বাঙালি পরিশ্রমী, কর্মঠ, বুদ্ধিমান; তারা যদি কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে তাহলে বিদেশে গিয়ে থালা-বাসন মাজা, বিছানা-বালিশ পরিষ্কার করা, ঘরমোছা, রাস্তায় ঝাড়– দেয়া বা ড্রেন পরিষ্কার করার মতো নিম্নমানের কাজগুলো করতে হয় না; তারা উচ্চ বেতন আয় করতে পারে। ভাষা এবং কারিগরি শিক্ষা যদি আমরা দিতে পারি, তাহলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার আয় দশগুণ বেড়ে যাবে। ক্যাম্পাস যদি কারিগরি শিক্ষা প্রসারে কিছু প্রোগ্রাম নেয়, তাহলে সেটি সবার জন্য অনুসরণীয় হবে।
ছাত্র-যুবকদের বিপথগামিতারোধে করণীয় সম্পর্কে কল্যাণকামী সমাজসেবী ব্যক্তিত্ব ডাঃ আলমগীর মতি বলেন, ছাত্রছাত্রীরা বিপথগামী হয় না, আমরা তাদের বিপথগামী করি। প্রভাবশালীরা ছাত্র-তরুণদের হাতে ইয়াবা, ফেনসিডিল তুলে দিয়ে তরুণদের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে নষ্ট করে দিচ্ছে; দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের গাঁজা-হেরোইনে আসক্ত করে অকর্মন্য করে তুলছে। তিনি বলেন, গ্রাম থেকে শুরু করতে হবে, সকাল বেলায় মক্তবে পড়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। এভাবে শুরু হলে সেসব ছেলেরা মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকে এসে অনিয়ম-উশৃঙ্খলতার দিকে যাবে না। ছাত্ররা যখন পড়ালেখায় নিবিষ্ট হয়, তখন তারা সহজে খারাপ পথে যায় না। প্রতিটি থানা পর্যায়ে সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমাদের দেশে সাংস্কৃতিক চর্চা ও খেলাধুলা রাখা প্রয়োজন। বিনোদনমূলক কাজে যেসব ছাত্রছাত্রী নিয়োজিত থাকে, তারা সাধারণত খারাপ পথে যায় না; তাদের মধ্যে ছোটবেলায় যে মনমানসিকতা সৃষ্টি হয়, তা তাদেরকে সঠিক পথে থাকতে সাহায্য করে। এভাবে পরিচালিত হলে জনসংখ্যাকে আমরা জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে পারব।
জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনে করণীয় সম্পর্কে ডাঃ আলমগীর মতি বলেন, আলোকিত জাতি এবং ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে হলে সৎ ও সত্যবাদী লোকের প্রয়োজন। ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠান যেভাবে সততা, ন্যায়নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের শিক্ষা দিচ্ছে; সারা দেশে তাদের নানামুখী কর্মসূচি চালু হলে দুর্বার গতিতে সমাজ এগিয়ে যাবে। ডাঃ মতি বলেন, আমাদের জনবল নেই এ কথাটা ঠিক নয়; আমাদের মনোবল নেই এটিই সত্য। সেই কাক্সিক্ষত মনোবল দৃঢ় করতে পারলে আমাদের অগ্রগতির পথে কোনো বাধা টিকে থাকতে পারবে না। আমাদের মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটাতে হবে। আমাদের একিন, বিশ্বাস, ভালোবাসাকে জাগিয়ে তুলতে হবে; লক্ষ্যকে শানিত করতে হবে। আমাদের আত্মবিশ্বাস যদি দৃঢ় হয়, লক্ষ্য যদি স্থির নিশ্চিত থাকে তাহলে আমরা এগিয়ে যাবোই।
ছাত্র ও যুব সমাজের প্রিয় পত্রিকা ক্যাম্পাস ৩৪ বছরে পদার্পণ করেছে। এ পত্রিকার উন্নয়ন ও প্রসারে মূল্যবান পরামর্শ প্রদান প্রসঙ্গে ছাত্র-তরুণ সমাজের সৃজনশীলতায় আশাবাদী ব্যক্তিত্ব ডাঃ আলমগীর মতি বলেন, ক্যাম্পাস’র উপদেশ-পরামর্শের প্রয়োজন হয় না। কারও উপদেশ ছাড়া তারা নিজে নিজে যেসব কর্মসূচি পরিচালনা করছে বিশেষ করে ডায়নামিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ইংলিশ এন্ড স্মার্টনেস কোর্স, প্রোএকটিভ সেমিনার এগুলো ছাত্র-তরুণ সমাজের মানসিক পরিবর্তনে বিরাট ভূমিকা রাখছে। ক্যাম্পাস জাতির জন্য ৪ দশকে ৪শ’ বছরের কাজ করে দিয়েছে। সততা পুরষ্কার প্রবর্তনের মাধ্যমে সৎ মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে, নতুন প্রজন্মের মধ্যে সৎ মানুষ তৈরি করছে। ক্যাম্পাস কয়েক বছর আগে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিল, আজ সে আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ক্যাম্পাস’র মতো আরও কিছু প্রতিষ্ঠান যদি এগিয়ে আসত, তাহলে সচিবালয়সহ সারাদেশে ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রিত হয়ে যেত। ক্যাম্পাস’র সাফল্য ও বিজয়কে আমরা নিজেদের সাফল্য ও গৌরব বলে মনে করি।
ছাত্র ও যুবসমাজের উন্নয়নের রূপরেখা তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পালন করছে ঐতিহাসিক ভূমিকা
প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল মান্নান চৌধুরী
ভাইস-চ্যান্সেলর, দি পিপল্স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রফেসর এম আব্দুল মান্নান চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষার অনেক প্রসার ঘটেছে; কিন্তু সেই তুলনায় শিক্ষার মান এখনও পর্যন্ত তেমন একটা বাড়েনি। এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবার পরও এখনো উচ্চশিক্ষা গ্রহণে অনেক শিক্ষার্থীকে সমস্যায় পড়তে হয়। অবশ্য এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হবে না, স্বল্পকালের মধ্যে এর সমাধান হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
গুণগত শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে দক্ষ শিক্ষকের স্বল্পতা প্রতীয়মান, এ সমস্যা মোকাবেলায় করণীয় কী এমন প্রশ্নের জবাবে আশাবাদী শিক্ষাবিদ প্রফেসর মান্নান চৌধুরী বলেন, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের স্বল্পতা রয়েছে, মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় খুব কম আসছে বিভিন্ন কারণে। এজন্য দক্ষ শিক্ষকের অভাব মেটানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে। বর্তমানে যে শিক্ষকমন্ডলী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে রয়েছে, তাদের মধ্যথেকে পর্যায়ক্রমে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে আস্তে আস্তে এ অভাব দূর হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, মেধাবী গ্রাজুয়েটরা শিক্ষকতা পেশায় না আসার বড় কারণ হলো তাদের জন্য আলাদা কোনো বেতন-ভাতা নির্ধারণ না হওয়া, শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা সম্পর্কে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত না নেয়া ইত্যাদি কারণও মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত করে। এ ব্যাপারে নীতিনির্ধারক মহলে যথাযথ আলোচনা হওয়া উচিত, যাতে জাতীয় এ সমস্যাটির সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
প্রতিনিয়ত ছাত্র-যুবকরা বিপথগামী হচ্ছে, তাদের বিপথগামিতা রোধে পরিবার বা সমাজের কার কী দায়িত্ব রয়েছে এমন প্রশ্নে ছাত্রবৎসল শিক্ষা প্রশাসক প্রফেসর আব্দুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ছাত্র-যুবকদের বিপথগামিতা রোধে পরিবারের ভূমিকা সবার আগে। পরিবারে যদি সন্তানদের ওপর পিতা-মাতার নিয়ন্ত্রণ থাকে, তারা যদি নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখেন তারা কোথায় কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে চলাফেরা বা মেলামেশা করছে তাহলে সেই সন্তানরা বখাটে হতে পারবে না, উচ্ছন্নে যাবে না। পাড়া-মহল্লার মুরুব্বীরা এলাকার ছেলেমেয়েদের ওপর যদি নজর রাখেন, তাহলে ছাত্র-যুবকরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে।
ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও আলোকিত জাতি গঠনে আমাদের করণীয় সম্পর্কে দূরদর্শী শিক্ষাবিদ প্রফেসর মান্নান চৌধুরী বলেন, শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। জাতিকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। প্রাথমিক শিক্ষা হলো শিক্ষার ভিত্তি, একে মজবুত করতে পারলে শিক্ষার ভিত্তি দৃঢ় হবে, মানুষ জ্ঞানের সন্ধানে সামনের দিকে অগ্রসর হবে। জ্ঞানের প্রসারে জাতি সকল অন্ধকার দূর করে আলোর পথে এগিয়ে যাবে। এভাবেই গড়ে উঠবে আলোকিত জাতি। আলোকিত সমাজের মানুষেরা গড়ে তুলবে ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা ৩৪ বছরে পদার্পণ করেছে, এ পত্রিকার কাছে প্রত্যাশা এবং এর উন্নয়নে পরামর্শ সম্পর্কে আব্দুল মান্নান চৌধুরী বলেন, এ পত্রিকা এখন অনেক জনপ্রিয়। বিভিন্ন চিন্তাশীল, গঠনমূলক, তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধ-নিবন্ধ, আলোচনা-প্রতিবেদন, গুণীজনদের সাক্ষাৎকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা গুণগত শিক্ষা প্রচলনের আন্দোলনকে বেগবান করে তুলছে; যুবসমাজের উন্নয়নের রূপরেখা তুলে ধরে পালন করছে ঐতিহাসিক ভূমিকা। আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নব-কলেবরে উন্নত প্রকাশনার এ ধারা অব্যাহত রাখবে, সমাজ-প্রগতি ও জাতিজাগরণে আরো বলিষ্ঠভাবে কলম ধরবে এ প্রত্যাশা করি।
জ্ঞানভিত্তিক সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার শিক্ষা শুরু করতে হবে শৈশব থেকেই
ড. এম এ হালিম পাটওয়ারী
চেয়ারম্যান, ইউসিসি গ্রুপ
বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন সম্পর্কে শিক্ষাদ্যোক্তা ড. এম এ হালিম পাটওয়ারী বলেন শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে; প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে শিক্ষান্নোয়নে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। প্রাইমারিতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমে আসছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হবার ফলে নকল থেকে শিক্ষার্থীরা সরে আসছে, তারা মূল বইয়ের ওপর নির্ভর করছে -এটি ভালো লক্ষণ। উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যদি সরকার ও ইউজিসি’র নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দূর হবে। অগ্রগতির ধারা দেখে সামগ্রিকভাবে আমি শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন সম্পর্কে আশাবাদী।
দক্ষ শিক্ষকের অভাব মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে ড. এম এ হালিম পাটওয়ারী বলেন, আমাদের কেন্দ্রগুলোকে সংস্কার করে এখানেই গ্রুপ বাই গ্রুপ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলতে পারে। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্যও শিক্ষক প্রেরণ করা যায়। মোটকথা যেকোনো মূল্যে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক গড়ে তুলতে হবে। পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হলে দক্ষ শিক্ষকের অভাব বেশিদিন থাকবে না।
ছাত্র-যুবকদের বিপথগামিতা রোধে কার কী ভূমিকা রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সমাজ সচেতন শিক্ষাব্রতী ড. এম এ হালিম পাটওয়ারী বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থী পরিবার থেকেই আসে; পরিবার থেকে নীতি-নৈতিকতা, আদর্শের হাতেখড়ি নেয়। পরিবারের প্রধান বা সিনিয়র সদস্যরা সচেতন না হলে শিক্ষার্থীরা লাইনচ্যুত হতে পারে। অন্যদিকে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীরা যদি সুন্দর পরিবেশে সযতœ নজরদারিতে থাকে, তাহলে তার পক্ষে উচ্ছন্নে যাওয়া সম্ভব নয়। ছাত্র-তরুণরা দেশের সম্পদ, তাদের উন্নয়ন ও বিকাশে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ সবারই দায়িত্ব রয়েছে -যা উপেক্ষা করা যায় না।
ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও আলোকিত জাতি গঠনে করণীয় সম্পর্কে শিক্ষা প্রসারে নিবেদিত সমাজসেবী ব্যক্তিত্ব ড. এম এ হালিম পাটওয়ারী বলেন, জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি ন্যায়ের শিক্ষা চালু রাখতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজের মানুষরাই ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলবে, তাহলে সমাজ পরিপূর্ণতা লাভ করবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা প্রকাশনার ৪ দশকে পদার্পণ উপলক্ষে এ পত্রিকার কাছে প্রত্যাশা এবং এর উন্নয়নে পরামর্শ প্রদান প্রসঙ্গে দেশপ্রেমী, শিক্ষাপ্রেমী ব্যক্তিত্ব এম এ হালিম পাটওয়ারী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা ছাত্র-তরুণ সমাজের মুখপত্র হিসেবে শুরু করলেও এর কর্মধারা পরিবর্তিত হয়ে নতুন মাত্রায় যুক্ত হচ্ছে। এটি সময়ের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আগামীতেও উন্নত প্রকাশনার মাধ্যমে সমাজ উন্নয়ন ও জাতি জাগরণে তার প্রেরণাদায়ক ভূমিকা অব্যাহত রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
ছাত্র-যুব সমাজের উন্নয়ন, মানুষের মন-মানসিকতার পরিবর্তেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ক্যাম্পাস
অধ্যাপক মোঃ রুহুল আমিন
অধ্যক্ষ, নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করে নিবেদিত শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ রুহুল আমিন বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। শিক্ষার ভিত প্রাথমিক শিক্ষা; সেই প্রাথমিকে বিনামূল্যে ছাত্রদের মাঝে বই সরবরাহ, দুপুরে টিফিনের ব্যবস্থা করে ঝরেপড়া রোধ করার ব্যাপারে সরকার অনেকটা সফল হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে সৃজনশীল পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে নকলের প্রবণতা অনেক কমে এসেছে, শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে যারা অনিয়ম করছে, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগামীতে শিক্ষাব্যবস্থা আরও উন্নত হবে এবং উচ্চশিক্ষার মান বিশ্বমানের দিকে এগিয়ে যাবে।
গুণগত শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে দক্ষ শিক্ষকের স্বল্পতা প্রতীয়মান, এ সমস্যা মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসার জবাবে দূরদর্শী শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ রুহুল আমিন বলেন, দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব কমবেশি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছে। এক্ষেত্রে গ্রুপ পর্যায়ে শিক্ষকদের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ট্রেইনিংয়ের ব্যবস্থা করা হলে দক্ষ শিক্ষকের অভাব ক্রমশঃ দূর হবে। সম্ভব হলে শিক্ষকদের মধ্য থেকে কোনো কোনো শিক্ষককে বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
ছাত্র-যুবকদের বিপথগামিতা রোধে পরিবার বা সমাজে কার কী ভূমিকা রয়েছে বলে আপনি মনে করেন এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, ছাত্র-যুবকদের দেখাশোনার প্রাথমিক দায়িত্ব পরিবারের ওপর বর্তায়; তবে তারা যখন শিক্ষাঙ্গনে থাকে, তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও উচিত তাদের শিক্ষার্থীদের দেখাশোনা করা। সবাই যদি সচেতন থাকে, তাহলে ছাত্র-যুবকরা বিপথে যেতে পারে না।
ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও আলোকিত জাতি গঠনে করণীয় সম্পর্কে শিক্ষাব্রতী অধ্যক্ষ মোঃ রুহুল আমিন বলেন, শৈশব থেকে আমাদের সন্তানদেরকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার শিক্ষা দিতে হবে। অন্যায়, অনিয়ম, মিথ্যা, পরনিন্দা-পরচর্চা পরিহার করতে পারলে জ্ঞানের প্রসারের সাথে সাথে সমাজে ন্যায়ের শাসনও প্রতিষ্ঠিত হবে। ন্যায়ভিত্তিক সমাজই জ্ঞানভিত্তিক সমাজের ভিত্তি দৃঢ় করবে। এভাবেই গড়ে উঠবে আলোকিত জাতি।
ক্যাম্পাস পত্রিকা প্রকাশনার ৪ দশকে পদার্পণ উপলক্ষে এ পত্রিকার কাছে প্রত্যাশা এবং এর উন্নয়নে নিজের পরামর্শ প্রদান প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ রুহুল আমিন বলেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শুধু উন্নতমানের প্রকাশনার জন্য নয়, এতে প্রকাশিত তথ্যবহুল ও জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ-নিবন্ধ-প্রতিবেদনসমূহের জন্যও পাঠকমহলে সমাদৃত।
ক্যাম্পাস ছাত্র-যুবসমাজের উন্নয়ন এবং মানুষের মন-মানসিকতার পরিবর্তনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ক্যাম্পাস’র এ ভূমিকা অব্যাহত থাকবে, এর পাঠকপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পাবে এ বিষয়ে আমি আশাবাদী।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাত্র-তরুণদের প্রিয় পত্রিকা, এর পাঠকপ্রিয়তা দিন দিন বাড়বে
মিয়া ফজলে করিম
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিঃ
বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন সম্পর্কে বীমাশিল্পে অগ্রণী ব্যক্তিত্ব মিয়া ফজলে করিম বলেন শিক্ষার প্রসার হয়েছে, শিক্ষিতের হার বেড়েছে, কিন্তু শিক্ষার মান উর্ধ্বগামী হচ্ছে না এটা চিন্তার বিষয়। আমাদের সময়ে আমরা উচ্চশিক্ষায় যেভাবে সময় ও শ্রম দিয়েছি, পুরো সিলেবাস পড়েছি; এগুলো থেকে নোট তৈরি করেছি। সেখান থেকে তৈরি করেছি সম্ভাব্য প্রশ্ন, যা ফাইনাল পরীক্ষার সময় আমাদের কাজ দিয়েছে। এখনকার ছেলেমেয়েদের টেক্সট বুকের সাথে সম্পর্ক নেই; ইন্টারনেট, ল্যাপটপ নিয়েই সময় চলে যায়। জিপিএ-৫ পাচ্ছে অনেকে, কিন্তু শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে আমাদেরকে হতাশ হতে হয়। তিনটি ফার্স্টক্লাস, অথচ একটি দরখাস্ত লিখতে দিলে পারে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে না। শিক্ষাঙ্গনের কথা বলতে গেলে আরও হতাশ হতে হয়। আওয়ামী লীগের অংগসংগঠন ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সংগঠনের তেমন তৎপরতা নেই বললেই চলে। এমন পরিবেশেও মাঝে মাঝে ক্যাম্পাস অশান্ত হয়ে ওঠে। কোনো আদর্শগত দ্বন্দ্ব নয়, প্রভাব বিস্তার নিয়ে দু’গ্রুপের হানাহানি মারামারি। দু’গ্রুপই চায় ক্যাম্পাস এবং এর আশেপাশের এলাকায় টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখল, ভর্তি-বাণিজ্য ইত্যাদিতে একক কর্তৃত্ব। এ নিয়ে চলছে সংঘাত হানাহানি; লাশ পড়ছে, আহত হচ্ছে অনেকে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
দক্ষ শিক্ষকের অভাব কীভাবে মোকাবেলা করা যায় এমন প্রশ্নে সমাজ-সচেতন ব্যক্তিত্ব মিয়া ফজলে করিম বলেন, দক্ষ শিক্ষক স্বল্পতা সমস্যা কম-বেশি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মোকাবেলা করতে হয়। আমাদের যে শিক্ষক ইংরেজি পড়াতেন, তিনি ছিলেন ম্যাট্রিক পাস; সেই রকম শিক্ষক আজকাল চোখে পড়ে না। এখন শিক্ষকতা পেশায় মেধাবী ছাত্ররা কমই আসে। অন্য পেশায় সুযোগ-সুবিধা বেশি, এজন্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মেধাবী ছাত্ররা এ পেশায় আসতে অনীহা প্রকাশ করে। এর ফলে মেধাবী শিক্ষকের অভাবে গড়ে উঠছে না মেধাবী ছাত্র। শিক্ষাঙ্গনে মেধাশূন্যতার অভাব বেড়েই চলেছে। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হলে শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন-স্কেল তৈরি করতে হবে।
ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনে করণীয় সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে আশাবাদী ব্যক্তিত্ব মিয়া ফজলে করিম বলেন, যুব সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হলে গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতে তাদের যেমন জ্ঞানচর্চা হবে, তেমনি তারা সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবে, রাখতে পারবে সমাজ ও দেশ উন্নয়নে ভূমিকা। শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞানের চর্চা হলে ন্যায়ের সমাজ গড়ে উঠবে। এর মাধ্যমে গড়ে উঠবে আলোকিত জাতি।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা ৩৪ বছরে পদার্পণ করেছে; এ পত্রিকার কাছে আপনার প্রত্যাশা এবং এর উন্নয়নে পরামর্শের কথা জানতে চাইলে সমাজহিতৈষী ও দেশদরদী ব্যক্তিত্ব মিয়া ফজলে করিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উন্নতমানের প্রকাশনায় সুখ্যাতি অর্জন করেছে। এতে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখায় শিক্ষা-সমস্যার সমাধান এবং কোয়ালিটি শিক্ষা প্রসারের দিকনির্দেশনা ফুটে ওঠে। ছাত্র ও যুব সমাজের মনমানসিকতা পরিবর্তনে এ পত্রিকা বিশেষ ভূমিকা রাখে। এতে উন্নত চিন্তার রচনাবলির প্রকাশ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাত্র-তরুণ তথা যুব সমাজের প্রিয় পত্রিকা। এর পাঠকপ্রিয়তা ক্রমাগত বাড়বে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।