মানবসম্পদ উন্নয়নে আগামী অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়বে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল আবদুল মুহিত। এ ছাড়া প্রশিক্ষণে বিশেষ নজর দেওয়া, আর্থিক খাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল গঠন, সব উপজেলায় কর অফিস স্থাপন, ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে প্রত্যেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান আবুল মাল আবদুল মুহিত। শেয়ার বাজার নিয়েও কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
সচিবালয়ে অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফের) সঙ্গে প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাবরই বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়। এবার আগের চেয়ে আরও বেশি দেয়া হবে। মুশকিল হচ্ছে, ভালো প্রকল্প নেই। মানসম্মত প্রকল্প হলে অর্থের কোনো সমস্যা হবে না। ভারতসহ অন্যান্য দেশের মতো এপ্রিল-মার্চ সময়ে অর্থবছর চালুর এক প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, জুলাই-জুন সময়ে অর্থবছর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সর্বোত্তম।
উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় থাকলেও আয়-বৈষম্য বাড়ছে- এমন মতামতের প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী বলেন, এটি সত্য নয়। আয়-বৈষম্য এমন পর্যায়ে যাচ্ছে না যাতে কোনো সামাজিক সমস্যা বা বিদ্রোহের পর্যায়ে যেতে পারে। সেদিকে আমরা সব সময় সচেষ্ট আছি। আয়-বৈষম্য কিছুটা বাড়বেই। আমরা সব সময় চেষ্টা করছি আয়-বৈষম্য কমিয়ে আনতে। এ জন্য সামাজিক সুরক্ষায় ভালো ভালো কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক রয়েছে সরকার।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর সরকার বরাবরই জোর দিয়ে আসছে। কারিগরি শিক্ষাটাকে প্রশিক্ষণ বলা উচিত নয়। এটা আসলে বৃত্তিমূলক শিক্ষা। প্রশিক্ষণ বিএমইটি দিয়ে থাকে। আমরা বিএমইটি`র প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বাড়িয়েছি। কারণ, এখান থেকে পাস করে যারা বেরোয়, তারা বেকার থাকে না। তাদের অনেক দাম। যারা বাইরে যায় তারাও প্রচুর টাকা-পয়সা পাঠায়।
নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে মুহিত জানান, ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে হিসাব সংরক্ষণ করলে তাদের সুবিধা বাড়বে। গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক মেশিন ব্যবহারের কথা বলা হলেও তা কার্যকর হয়নি। আগামী বাজেটে এর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। এটা হলে চুরি কমবে। ভ্যাট আদায় বাড়বে। একজন ব্যবসায়ী যদি অ্যাকাউন্টিং চর্চা করেন তাহলে তার দায়বদ্ধতা কমে যায় এবং প্রতিষ্ঠানের জন্যও ভালো।
রাজস্ব আদায় বাড়াতে আগামী বাজেটে প্রতি উপজেলায় কর অফিস স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করে সভায় উপস্থিত রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, ৪৯৫টি উপজেলায় কর অফিস স্থাপনে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে একটা কর্মসূচি বানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এনবিআরকে।
আগামী বাজেটে তার প্রতিফলন হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে ৮৬টি উপজেলায় কর অফিস আছে। তবে এগুলোকে সক্রিয় করা প্রয়োজন। আসন্ন বাজেটে উদ্যোক্তা তহবিল গঠনের চিন্তা-ভাবনা আছে কি-না জানতে চাইলে মুহিত বলেন, আমরা ট্যাক্স বেনিফট দেব। আলাদা কোনো বরাদ্দ দেওয়া হবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন ইআরআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল ও সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান। সংগঠনের অন্য সদস্যরা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করেন। অধিক কর্মসংস্থান ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন ইআরআরএফ সদস্যরা। মানবসম্পদ উন্নয়ন, অর্থ পাচার রোধে বিশেষ পদক্ষেপ, ব্যাংক কমিশন গঠন, পুঁজি বাজার চাঙ্গা করতে আরও প্রণোদনাসহ `বাস্তবায়নযোগ্য` বাজেট প্রণয়নের দাবি জানান তারা।
সংগঠনের সিনিয়র সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক সভাপতি মনোয়ার হোসেন, সুলতান মাহমুদ, সিনিয়র সদস্য শাহনেওয়াজ ও সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু কাওসার। এ সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, ইআরডি`র সিনিয়র সচিব মেজবাউদ্দীন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান, এনবিআরের সিনিয়র সদস্য ফরিদ উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।