শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষকসংকটের কথা উল্লেখ করে বদলির ক্ষেত্রে তদবিরের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আমার কাছে এ কাজে যত লোক আসেন, তাঁদের ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জনই ঢাকায় থাকতে চান। ক্ষমতাবান অনেকের কাছ থেকে অনেকে লিখিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু তাঁদের উদ্দেশ্যে বলছি, এখন থেকে বদলির জন্য সবাইকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। কেউ যদি এটি না করে কারও কাছ থেকে লিখিয়ে আনেন, তাহলে সেটা নেতিবাচক হিসেবে গণ্য হবে।
সম্প্রতি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী ‘সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ সম্মেলন’ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, একটি কলেজে ৩৭টি পদ আছে। কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন। সবার শুধু ঢাকা ভালো লাগে। ঢাকার বাইরের ছেলেমেয়েরা কি পড়বে না? মন্ত্রী বলেন, তাঁর নিজ এলাকার কলেজেই শিক্ষকসংকট রয়েছে বলে পত্রিকায় এসেছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সারা দেশে সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ১৮ লাখের বেশি। এসব কলেজে শিক্ষকের পদ আছে ১৬ হাজার ১৪১টি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৭৫টি পদ খালি।
অধ্যক্ষদের বক্তব্য পর্বে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি কলেজের অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, তাঁর কলেজে ৫৬ পদের মধ্যে ২৬টি পদ ফাঁকা।
প্রাণিবিদ্যা ও গণিতে একজনও শিক্ষক নেই। তিনি মফস্বল এলাকার কলেজে যাতে শিক্ষকেরা থাকেন, সে জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালার দাবি করেন। শিক্ষকসংকটের কথা উল্লেখ করে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মতিন মিয়া বলেন, মাউশিতে আবেদন-নিবেদন করেও কাজ হচ্ছে না।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে পদ সৃষ্টি না হওয়ায় বাংলা কিংবা ইংরেজির শিক্ষক দিয়ে আইসিটি পড়ানো হয়। এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন। এটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো ছাড়া আর কিছুই নয়। জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় অধ্যক্ষদের বসার জন্য আসন রাখা হয় না, পেছনে বসতে হয় বলে অভিযোগ করেন শরীয়তপুর কলেজের অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেন।
সভায় মফস্বল এলাকার কলেজগুলোতে তীব্র শিক্ষকসংকটের কথা উঠলেও ঢাকা শহরের চিত্র উল্টো। সঞ্চালকের বক্তৃতায় মাউশি’র পরিচালক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ৩২৯টি কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১২ জন অধ্যক্ষ শিক্ষকসংকটের কথা জানিয়েছেন। তবে ঢাকা কলেজে ২০০ পদের বিপরীতে আছেন ২২৪ জন, তিতুমীর কলেজে ১১৭ পদের বিপরীতে ১৯৮ জন ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ২৩ পদের বিপরীতে ৪৮ জন। মাউশি’র মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইনসহ বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষেরা।