বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদে সংসদ সদস্যদের সভাপতি পদে মনোনীত হওয়া নিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। গভর্নিং বডির বিশেষ কমিটির বিধান অবৈধ বলে হাইকোর্টের দেয়া রায়ও বহাল রেখেছেন আপীল বিভাগ। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে করা এক আবেদনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর ফলে মনোনীত হয়ে সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না সংসদ সদস্যরা। সভাপতি হতে হলে তাকে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। এদিকে রায়ের পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, রায়ের বিষয়ে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
গত ১ জুন একটি রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালে প্রণীত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালার ৫(২) ও ৫০ বিধি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালের জুনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা তৈরি হয়। ওই প্রবিধান অনুযায়ী, একজন সাংসদ সর্বোচ্চ চারটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পেরেছেন। তবে ওই প্রবিধানের ৫(২) ধারা আদালত অবৈধ ঘোষণা করায় এখন সাংসদেরা ইচ্ছে করলেই আর সর্বোচ্চ চারটি স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন না। তবে ৫(১) বিধি অনুসারে সাংসদদের সর্বোচ্চ চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত হতে কোনো বাধা নেই। হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে (সিএমপি) ভিকারুননিসা নূন স্কুল কর্তৃপক্ষ আপীল বিভাগে আবেদন করেছিল। এ আবেদন শুনে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের চার বিচারকের বেঞ্চ ‘নো অর্ডার’ দেন। আদালতে ভিকারুননিসার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর হাইকোর্টে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।
ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল, এর বিরুদ্ধে করা আবেদনে নো অর্ডার দিয়েছে আপীল বিভাগ। ফলে হাইকোর্টের আদেশই বহাল রয়েছে। সুতরাং সংসদ সদস্যরা গভর্নিং বডির সভাপতি থাকতে পারছেন না। পরে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আপীল বিভাগ কোনো আদেশ দেননি। হাইকোর্টের রায়সহ লিভ পিটিশন দায়ের করলে তখন বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। হাইকোর্টের রায়ের কপি পেলে আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে নিয়মিত লিভ পিটিশন দায়ের করব। ঢাকা বোর্ডের জন্য করা প্রবিধানমালার ৫ বিধিতে গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়ন এবং ৫০ বিধানে বিশেষ ধরনের গভর্নিং বা ম্যানেজিং কমিটি গঠন বিষয়ে বলা রয়েছে। গবর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়ন সম্পর্কে প্রবিধানমালার বলা আছে- কোনো স্থানীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য তাহার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এমন সংখ্যক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্বগ্রহণ করিতে পারিবেন যেন ওই এলাকায় অবস্থিত, এই প্রবিধানমালার আওতাভুক্ত নয় এরূপ অন্যান্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ, তাহার এরূপ দায়িত্ব গ্রহণ করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চার এর অধিক না হয়।
উপ-বিধান ১ এর অধীন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের জন্য স্থানীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য, তাহার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত যে সকল উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ করিতে ইচ্ছুক তাহার উল্লেখসহ লিখিতভাবে এই প্রবিধানমালার অধীন বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট তাহার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিবেন এবং উক্ত অভিপ্রায়পত্র সংশ্লিষ্ট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানসমূহের সভাপতি হিসেবে তাহার মনোনয়নরূপে গণ্য হবে। বিধান ৫০ এ রয়েছে-বিশেষ ধরনের গবর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি-বিশেষ পরিস্থিতিতে বোর্ড এবং সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ ধরনের গবর্নিং বডি বা, ক্ষেত্রমতে ম্যানেজিং কমিটি করা যাইবে। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে রয়েছে প্রশাসনে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণের বিষয়ে।