তৃতীয় প্রফেশনাল (বর্ষ) থেকে পাস করার পর এক বছর পূর্ণ হলেই মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ফাইনাল প্রফেশনালে পরীক্ষা দিতে পারবে মর্মে জারি করা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সার্কুলার স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
এর ফলে পূর্বের নিয়ম অনুসারে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ফাইনাল প্রফেশনালে পরীক্ষা দিতে পারবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টে বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ৩৬জন রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট মোঃ আবদুন নূর দুলাল।
এর আগে ২০১৬ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃক একটি সার্কুলার দিয়ে বলা হয়, মেডিকেল শিক্ষার্থীরা তৃতীয় প্রফেশনালে পাস করার পর এক বছর পূর্ণ হলে তারপরই কেবল ফাইনাল প্রফেশনালে পরীক্ষা দিতে পারবে। কিন্তু তৃতীয় প্রফেশনালে যেসব শিক্ষার্থী দুই-একটি বিষয়ে পাস করতে পারেনি, তারা পরে পরীক্ষা দিয়ে পাস করার পর এক বছর পূর্ণ না হওয়ায় ২০১৬ সালের সার্কুলার কার্যকরী করে এবার তাদের পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এসব শিক্ষার্থীরা ২০১৩-১৪ সালে ভর্তি হয়েছিল। আর এ সার্কুলার পুরনো ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন কলেজের ৩৬জন মেডিকেল শিক্ষার্থী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
রিটকৃতরা হলেনÑ রাইসা লাবিবা করিম, মোহাম্মদ খালেদ, সাদিদ হাসান, দীপ্ত মজুমদার, ওয়াসিম সাজ্জাদ, রাবেয়া তানজিয়া রহমান, সুমাইয়া আহমেদ, মোঃ মিনহাজ আহমেদ মিঠু, সাদিয়া আরেফিন চৌধুরী, তমা খন্দকার, মোঃ শাহজাদ হোসাইন, জেরিন তাসনিম, ফাতেহা তাননিম, শারমিন আক্তার, মির্জা জান্নাতুল ফেরদৌস, সায়মা বিনতে হামিদী, শারমিন ইসলাম, নূর-এ তাসমিম রিন্টি, খাদিজা আক্তার বৃষ্টি, আয়েশা আকতার, মোঃ মুহাইমিনুল হক, নায়েমা সুলতানা, শোয়েব হোসাইন, মৌমিতা, আশির ফয়সাল হামিম, এএইচএম আশিকুর রহমান, ওয়ারিসা জাহান, মেহনাজ তাবাস্সুম, হানা মোবারক, তানজিনা শারমিন, অলিভিয়া রয়, আতিয়া ইসলাম, তাসলিমা কবির, মোঃ ইফতেখার হোসাইন রিফাত, মিসিল হোসেন, নিসরাত জাহান নিশা।
সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত ওই সার্কুলারের ওপর স্থগিতাদেশ দেন এবং এসব শিক্ষার্থীরা পূর্বের সার্কুলার মোতাবেক পরীক্ষা অংশ নিতে পারবে মর্মে আদেশ দেন।
এডভোকেট আবদুন নুর দুলাল জানান, এই আদেশের ফলে বিএমডিসি’র ২০১২ সালের সার্কুলার অনুসারে সারা দেশের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের তৃতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষার পর এক বছর পূর্ণ না হলেও ফাইনাল প্রফেশনালের পরীক্ষা দিতে বাধা থাকল না। উক্ত স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে বিএমডিসি মহামান্য আপীল বিভাগে সিএমপি দাখিল করলেও মহামান্য চেম্বার আদালত হাইকোর্ট বিভাগের আদেশকে স্থগিত করেননি।
উল্লেখ্য, এডভোকেট মোঃ আবদুন নূর দুলাল কর্মজীবন শুরু করেন আইন পেশার মাধ্যমে। তিনি ১৯৮৬ সালে ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে তালিকাভুক্ত হন, ১৯৮৯ সালে হাইকোর্ট বিভাগে তালিকাভুক্ত হন এবং ২০০৩ সালে সুপ্রীম কোর্ট আপীল বিভাগে তালিকাভুক্ত হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের লিগ্যাল এডভাইজার এবং অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্যানেল আইনজীবী। এডভোকেট আবদুন নূর দুলাল পদ্মা সেতুর প্রাথমিক পর্যায় থেকে প্রতিটি পর্যায়ে জড়িত ছিলেন এবং আছেন। এছাড়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েতেও প্রাথমিক পর্যায় থেকে অদ্যাবধি জড়িত আছেন। এছাড়া, তিনি ল’ইয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ল্যাব) এর সুপ্রীম কোর্ট শাখার সভাপতি। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম নূর এন্ড এসোসিয়েটস। এডভোকেট দুলাল ২০০০ সালে বাংলাদেশ আইন সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ২০১২ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এডভোকেট দুলাল বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি পরিষদ সুপ্রীম কোর্ট চাপটার এর চেয়ারম্যান এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য-সচিব। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রবাসীদের অধিকার এর অঙ্গীকারে গঠিত ঈড়হহবপঃ ইধহমষধফবংয নামীয় একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের তিনি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক (বাংলাদেশ)। তিনি দেশীয় সাংস্কৃতিক পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। এছাড়া, তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলএলএম ল’ইয়ার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পেশায় সাফল্যের জন্য বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ সম্মাননা পদক-২০১৬, নবাব স্যার সলিমুল্লাহ সম্মাননা পদক-২০১৬, জর্জ হ্যারিসন এওয়ার্ড-২০১৬, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্মাননা পদক-২০১৭ লাভ করেন তিনি।
এডভোকেট মোঃ আবদুন নূর দুলাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.বি. (অনার্স) এবং এলএল.এম. পাস করেন।