খুব ছোটবেলা থেকেই যদি শিশুকে নিজের কাজ নিজে করার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, তাহলে সে অভ্যাস তার থেকে যাবে সারাজীবন। তাহলে ভবিষ্যতে কখনোই অন্য কারও ওপর তাকে নির্ভর করতে হবে না। মানিয়ে নিতে পারবে যে কোনো পরিবেশে। এ প্রশিক্ষণটি দেয়ার দায়িত্ব পরিবারেরই।
সানজানা বহুদিন পর মৌয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছে। অনেক দিন পর দুই বন্ধুর দেখা। কত গল্প! যেন শেষই হতে চায় না। মৌয়ের ছেলে ইমন বসে টিভিতে কার্টুন দেখছিল। কথার মধ্যে ইমনকে মৌ বলল বাবা, যাও, তোমার হোম ওয়ার্কটা শেষ করে এসো।
সানজানা খেয়াল করল, ইমন তার রুমে ঢুকে পড়তে বসল। এরপর তারা দু’জন গল্প করতে করতে অনেক সময় পেরিয়ে গেল। কিন্তু ইমনের খোঁজই নেই। কিছুক্ষণ পর সানজানা কৌতূহলবশত নিজেই গেল ইমনের রুমের দিকে। সে দেখল, ইমন হোমওয়ার্ক এবং পড়া শেষে সুন্দর করে নিজের পড়ার টেবিল গুছিয়ে ফেলল। শুধু তাই নয়, নিজের ঘরটাও ছোট ছোট হাত দিয়ে গোছাল! সানজানা ছোট্ট ইমনের কাজ দেখে খুব অবাক হলো! মৌকে জিজ্ঞাসা করল, তোমার ছেলে তো বেশ গোছানো। এমন হলো কীভাবে? আমার ছেলেকে তো আমি গোছানো শেখাতেই পারি না! সব সময় চায়, ওর সব কাজ অন্যরা করে দিক।
মৌ বলল, তুমি তো জানো, আমি চাকরি করি। ছুটির দিনগুলো ছাড়া খুব বেশি সময় দিতে পারি না ঘরের কাজগুলোতে। তাই ছোটবেলা থেকেই ইমনকে নিজের কাজ নিজেই করতে শিখিয়েছি। এখন সে নিজের ঘর, পড়ার টেবিল সবই গোছায়। খুব ছোটবেলা থেকে এ কাজগুলো করছে বলে এখন সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ধরেই নিয়েছে, এটি তারই কাজ। তাই কখনও কারও জন্য সে অপেক্ষা করে না বা কাউকে নিজের কাজ করে দিতে বলে না। বরং সে নিজের কাজগুলো শেষ করে আমাকেও মাঝেমধ্যে ঘরের কাজে সাহায্য করে।
সানজানার মতো যদি সব অভিভাবকই সন্তানকে এভাবে ছোটবেলা থেকেই প্রশিক্ষণ দেন নিজের কাজ নিজে করার জন্য, তাহলে ওই অভ্যাসটি শিশুর মনে থেকে যাবে সারাজীবন। নিজের কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখা, স্কুল থেকে ফিরে এসে স্কুল ড্রেস ও ব্যাগ নির্দিষ্ট স্থানে রাখা, পড়া শেষে পড়ার টেবিল ঠিক করে রাখা, বাইরে থেকে এসে নিজে নিজে হাত-মুখ ধোয়া ইত্যাদি সহজ কাজ করার অভ্যাস যদি ছোটবেলা থেকে গড়ে তোলা যায়, তাহলে আপনার শিশুটি ছোটবেলা থেকেই যেমন গোছানো হবে, তেমনি বড় হয়েও যে কোনো পরিবেশে সহজেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে। ছোটবেলায় শিশুদের যা শেখানো হয় তা তারা সহজেই শিখে ফেলে এবং এ অভ্যাসগুলো সারাজীবনের জন্য স্থায়ী হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে সব থেকে বড় ভূমিকা মা-বাবার। ছোটবেলা থেকে যদি না শেখানো হয়, তাহলে বড় হয়েও এ অভ্যাসগুলো আয়ত্তে আনতে সমস্যা হয়।
চারপাশের পরিবেশ একটি শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারই প্রথম ও শ্রেষ্ঠ পাঠশালা। তাই পরিবারের চেষ্টা ও সচেতনতা দিতে পারে শিশুকে সুন্দর, সাজানো-গোছানো ভবিষ্যৎ।