বাংলাদেশের আছে নিজস্ব কিছু অর্জন; আছে কিছু স্বাতন্ত্র্য, আর আছে গর্ব করার মতো কিছু দীপ্তিমান মানুষ। যাঁরা কর্ম আর ব্যক্তিত্বের দীপ্তিময় বিশালতায় নিজকে নিয়ে গেছেন আকাশচুম্বী উচ্চতায়। তেমনি এক আলোকিত মানুষ, বিশিষ্ট শিক্ষা সংস্কারক, শিক্ষা উদ্যোক্তা এবং আধুনিক ডিজিটাল শিক্ষার স্বপ্নদ্রষ্টা লায়ন এম কে বাশার পিএমজেএফ। লায়নিজম আন্দোলনে নিবেদিত সদা হাসি-খুশি, সদালাপি, প্রাণোচ্ছ্বল ও সদাচারে বিশ্বাসী এই মানুষটি একজন দক্ষ সংগঠক, সমাজসেবক, শিক্ষাসেবী, সংবাদপত্রসেবী সফল মানুষ। এছাড়াও তিনি একজন সংস্কৃতমনা মানুষ, একজন সঞ্চালক ও সফল বক্তা। তিনি শিক্ষাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছেন অপেক্ষাকৃত সাবলীল ও নান্দনিক রূপে, আর এ কাজে তিনি ব্যবহার করেছেন তথ্যপ্রযুক্তিকে। এজন্য তিনি নিজ প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিয়ান কলেজে প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ডিজিটাল শিক্ষা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রকৃত ডিজিটাল শিক্ষা ও এর ব্যাপকতা তুলে ধরার প্রয়াস রেখেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রমের গবেষণায় তিনি যুক্ত করেছেন সকল শিক্ষা উপকরণের ডিজিটাল ভার্সন তৈরি এবং শিক্ষার্থীদের হাতে বইয়ের পরিবর্তে ছোট্ট ল্যাপটপ তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া। ডিজিটাল বাংলাদেশের গবেষণায় তিনি যুক্ত করেছেন গণমাধ্যমকে, ইতোমধ্যে তিনি অনুমোদন নিয়েছেন দেশের প্রথম শিক্ষামূলক টেলিভিশন ‘সিটিভি’ নামক এক ব্যতিক্রম টিভি চ্যানেলের।
লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল এর ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫ এ২ এর ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর স্বদেশ রঞ্জন সাহার নেতত্বে এডুকেশন ফর এক্সিলেন্স প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ২০১৫-’১৬ লায়ন বর্ষের কার্যক্রম অত্যন্ত সফলভাবে পরিচালিত হয়েছে। ২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল ক্যাবিনেট ডিক্লারেশনে ২০১৬-’১৭ লায়ন বর্ষের ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর ইলেক্ট হয়েছেন গত সেশনের ১ম ভাইস ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর লায়ন এম কে বাশার। এডুকেশন ফর এক্সেলেন্স বা সবার জন্য শিক্ষা -এ থিম ধারণ করে নতুন ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর শিক্ষা উন্নয়নের প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস স্বীকৃত সেরা শিক্ষা উদ্যোক্তা এ গুণী ব্যক্তিত্বের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন ক্যাম্পাস পত্রিকার প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ও আনিসুর রহমান এরশাদ। তাঁর প্রতিক্রিয়া ও মতামত পাঠকের জন্য এখানে সন্নিবেশিত হলো।
ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নির্বাচিত হয়ে আপনার অনুভূতি কী -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার এ প্রাপ্তিতে আজ আমি আনন্দিত, সেইসাথে আমার লায়ন্স জেলার সকল সদস্যের প্রতি রইল লাল গোলাপ শুভেচ্ছা। আমি আমার দায়িত্ব পালনে ডিস্ট্রিক্ট এর সম্মানিত লায়নদের সহযোগিতা কামনা করছি।
আমি সবসময় চেষ্টা করেছি মানবতার সেবায় নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার। আমি সমাজের মধ্যবিত্ত ও স্বচ্ছলদের আহ্বান করব আসুন, আমরা সবাই লায়ন্স এর পতাকাতলে একত্রিত হয়ে মানবতার সেবায় কাজ করে নিজকে গৌরবান্বিত করি। আপনি লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল এর ৩১৫ এ২-এর ২০১৬-১৭ মেয়াদে ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর। লায়নিজম আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততার ব্যাপারে বলবেন কীএমন প্রশ্নের জবাবে লায়ন এম কে বাশার বলেন, মানবকল্যাণ ও দেশোন্নয়নের যে স্বপ্ন আমি দেখে আসছি সে স্বপ্ন পূরণের সুযোগ এই ক্লাবে সম্পৃক্ত হবার মাধ্যমে এসেছে; এজন্য আমি আনন্দিত। দেশ ও মানুষের সেবার একটা যোগসূত্র এই ক্লাব। ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য আর আর্ত-মানবতার সেবাই লায়নিজমের লক্ষ্য। এর মাধ্যমে সাংগঠনিক ও পরিকল্পিতভাবে সমৃদ্ধ দেশ ও উন্নত জাতি গঠনে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। লায়নিজম আন্দোলনের সাথে যুক্ত হতে পারাটা স্রষ্টার করুণা, কারণ স্রষ্টাই কেবল মানুষকে সম্মানদান করতে পারে।
লায়ন্স ক্লাবের মাধ্যমে সমাজ ও মানুষের জন্য ভালো কাজ করা যায়। মানবিক কারণে লায়ন্স ক্লাব জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম চালানোর ফলে অগণিত মানুষের সেবা ও সহযোগিতা করার অবারিত সুযোগ পাওয়া যায়। মানবতার কল্যাণে কাজ করেও আনন্দ উপভোগ করা যায়। ধন-সম্পদ থাকলেও কোন লাভ হয় না যদি মানবতার কল্যানে খরচ না করা যায়। মানুষের কল্যাণে কাজ করা আরেক রকম আনন্দ। অবশ্য এ আনন্দ উপভোগ করতে হলে উদার মনের অধিকারী হতে হয়।
লায়ন্স ক্লাব কী ধরনের কাজ করে এমন প্রশ্নের জবাবে লায়ন এম কে বাশার বলেন, আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক সেবা সংগঠন হচ্ছে লায়ন্স ক্লাব। লায়ন্স ক্লাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে গরিব ও দুস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ, বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ গরিব-দুঃখী মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। লায়ন্স ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য হলো মানবসেবা। লায়ন্স ক্লাব সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়ে গরিব ও দুঃখীদের শিক্ষা,স্বাস্থ্য তথা জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী উন্নতির ছোঁয়া পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে দেশে দেশে শান্তির বার্তা নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী লায়ন্স ক্লাব দুর্গত মানুষের সেবায় নিয়োজিত। অসহায় মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দাও এই আহ্বান নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে লায়ন্স ক্লাব। এ ক্লাব বক্ষৃরোপণ কর্মসূচি পালন করে। দুর্যোগময় সময় অসহায় দরিদ্র সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। পাশাপাশি সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে লায়ন্স ক্লাব আন্দোলন করে যাচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি এই ধরনের স্বেচ্ছসেবী সংগঠনগুলো দারিদ্র জনগোষ্ঠির পাশে দাড়িয়ে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ উন্নত জীবন যাত্রায় সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সমাজের বিত্তবান মুখগুলো এই ধরনের সংগঠনের সাথে জড়িয়ে সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে। সেবামূলক কাজে এই ক্লাবের সদস্যরা সব সময় এগিয়ে আসে। তাই এই ক্লাবের একজন কর্মী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
লায়ন্স ক্লাবের কর্মকান্ডের দেশ ও জাতি কীভাবে উপকৃত হচ্ছেএমন প্রশ্নের জবাবে লায়ন এম কে বাশার বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সামাজিক সংগঠনের কোনো বিকল্প নেই। সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র দূরীকরণে সরকারের পাশাপাশি লায়ন্স ক্লাবের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সেবার হাতকে সম্প্রসারণ করার লক্ষে গরিব-দুঃখীদের পাশে কাজ করছে লায়ন্স ক্লাবগুলো। যা’ দেশের অগ্রগতি ও উন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। শান্তি, স্থিতিশীল ও সৌহার্দ্যময় পরিবেশ বজায় রেখে দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিতে নিঃস্বার্থবান, মানবদরদী, দানশীল ও ত্যাগী মানুষ দরকার। লায়ন্স ক্লাব এই ধরনের মানুষকে সংগঠিত করে পরের কল্যাণে নিবেদিত হবার মনোভাব জাগিয়ে তোলে। সমাজের বিত্তবানদেরকে যদি নি:স্ব, অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আনা যায় তাহলে দেশে আর দুঃখী মানুষ থাকবে না। গুণগত সামাজিক পরিবর্তন নিশ্চিত হবে। সুস্থ ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হলে তারাই হবে পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি, সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মানে যারা অন্যদের পথ দেখাবে।
আপনার ভালোলাগার অনুভূতি জানতে চাইএমন প্রশ্নের জবাবে লায়ন এম কে বাশার বলেন, আমার সবচেয়ে ভালো লাগে মানুষের মুখে হাসি দেখলে। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করি পাশের মানুষকে ভালো রাখতে এবং ভালো থাকার উপায় শেখাতে। আমি বিশ্বাস করি, কাউকে দেখে মিষ্টি করে হাসলে সে কিছুক্ষণ পরেই পাল্টা হাসবে। কারো বিপদে পাশে দাঁড়ালে কিংবা আনন্দে নিজেও আনন্দ প্রকাশ করলে নিজের কাছেই ভীষণ ভালো লাগে। এই ভালো লাগার অনুভূতিটুকু সঙ্গে রাখলে সময় ভালো কাটে।
দেশে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মৌলিক অধিকার বঞ্চিত পথশিশু। যারা খাদ্যের সন্ধানে বই ছেড়ে কর্মসংস্থানের খোঁজে পথে নামতে বাধ্য হয়। এসব ছিন্নমূল পথশিশুর সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিলে, সুবিধা বঞ্চিত পথশিশুর মধ্যে খাবার এবং শিক্ষা উপকরণ দেয়া হলে আনন্দের হাসি ফুটে উঠে তাদের মুখে। এমন ছিন্নমূল শিশু-কিশোরসহ পিছিয়ে পড়া মানুষদের মুখে হাসি ফুটাতে সফল হলে কিংবা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বা অসুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারলে অন্যরকম এক মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়।
আপনি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, কোন্ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আপনি এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেন এমন প্রশ্নের জবাবে লায়ন এম কে বাশার বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগে এবং পরে যেসব ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলো কোনো না কোনো দেশপ্রেমী-মানবপ্রেমী ব্যক্তির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সারা পৃথিবীতেই এমন ব্যক্তি রয়েছেন যারা নিজেদের শ্রম, মেধা, অর্থ দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন; বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে এদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন অত্যাবশ্যক মনে করি। এদেশের মানুষের অর্থে পড়ালেখা করেছি; সেজন্য বিনিময়ে কিছু করা উচিত এ ভাবনা থেকে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষাই মূল ভিত্তি। শ্রম ও অধ্যবসায় অগ্রগতির মূল সোপান। আমরা মনে করেছি, দেশ শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। তাই এক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। সে স্বপ্ন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রচেষ্টা। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হয়ে পড়েছে, সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না; সেগুলোর দায়িত্বও আমরা নিয়েছি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে তাঁর সুখকর অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে লায়ন এম কে বাশার বলেন, যখন দেখি আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করছে, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেরাদের মধ্যে স্থান করে নিচ্ছে তখন অনেক ভালো লাগে; আমাদের শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে তখন কষ্টের কথা আর মনে থাকে না। আমি মনে করি, শিক্ষা ছাড়া মানুষ অন্ধ এবং অন্ধত্বের রং কালো। আর সে কারণেই বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক, বিএসবি ফাউন্ডেশন, ক্যামব্রিয়ান কলেজ এবং এর অঙ্গ সংগঠনসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা কালো পোষাক পরিধান করে। যতদিন দেশ নিরক্ষরমুক্ত না হবে ততদিন এ কালো পোষাক পরিধান করবে বিএসবি পরিবারের সদস্যরা।
আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা শেষে অধিকাংশ তরুণই বেকার হয়ে পড়ে; এ বেকারত্ব দূরীকরণে তাঁর পরামর্শ হলো উচ্চশিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি তরুণ বেকারত্বের অভিশাপ বহন করছে। এসব উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবকদের কাজ করার যোগ্যতা কম। যে বিষয় নিয়ে তারা পড়ালেখা করেছে সেসব বিষয়-সংশ্লিষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। বিজনেস বিষয়ের ওপর অনেক ছেলেমেয়ে ডিগ্রি নিয়েছে, কিন্তু বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দেশে বেশি নেই যে, তাদের সবাইকে নিয়োজিত করতে পারে। যে যুবক ৩০ বছর পর্যন্ত পড়াশোনায় যে টাকা ইনভেস্ট করেছে, তা চাকরি করে উঠাতে পারে না। কারণ যে বিষয় নিয়ে সে পড়ালেখা করেছে জব-মার্কেটে তৎসম্পর্কিত কোনো চাকরি নেই। উচ্চশিক্ষা হতে হবে ঘববফ-নধংবফ; দেশ ও সমাজের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বইপত্র-সিলেবাস ঠিক করতে হবে। আর হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারলে কোনো তরুণ বেকার থাকবে না। সরকারের শিক্ষা বাজেটের টাকা খরচ করতে হবে কারিগরি এবং প্রাইমারি শিক্ষার উন্নয়নে। সেখানে তৈরি হবে বেসিক; আর উচ্চশিক্ষা নিজ খরচে অর্জন করবেন শিক্ষার্থীরা। যদি তাৎক্ষণিক ফান্ডের ব্যবস্থা না হয়, তাহলে সরকার বা ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। যা তারা চাকরিকালীন শোধ করবেন। এ ধরনের ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে পড়াশোনা করে ডিগ্রি নিয়ে কর্মজীবনে দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারবেন।
বিএসবি ফাউন্ডেশনকে ঘিরে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে এ প্রতিষ্ঠানের প্রাণপুরুষ লায়ন এম কে বাশার বলেন, বিএসবি ফাউন্ডেশন বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক থেকেই সৃষ্টি। বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক থেকে যে ইনকামগুলো এসেছে, সে ইনকামগুলো গরিব বা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা দেখেছি কোনো পরিবারকে ২০ হাজার টাকা সাপোর্ট দেয়ার পর তারা পরবর্তী বছর আবার সাপোর্ট নেয়ার জন্য হাজির হয়েছে। আগের ২০ হাজার টাকা পরিবারের উন্নয়নে খরচ করেনি। আমরা ভেবেছি শিক্ষার মাধ্যমে যদি দরিদ্র পরিবারগুলোকে সাপোর্ট দেয়া যায়, তাহলে সেটি হবে স্বচ্ছ এবং কার্যকর। সেটি করতে গিয়েই বিএসবি ফাউন্ডেশনের আবির্ভাব ঘটে। বিএসবি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ আমরা খরচ করার উদ্যোগ নিয়েছি শিক্ষাখাতে। বিএসবি ফাউন্ডেশন ঢাকাস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে; ঢাকার বাইরেও ময়মনসিংহ, জামালপুর, পিরোজপুরসহ ঢাকার আশেপাশে অনেক স্কুল-কলেজ মাদ্রাসাতে আমাদের আর্থিক সহায়তা রয়েছে। আমাদের সামনে বড় একটা চ্যালেঞ্জ হলো ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নিরক্ষরমুক্ত করা। এ ব্যাপারে আমাদের কর্মীবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে আমরা কিছু কাজ সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেছি। আমরা মনে করি এবং প্রত্যাশা করি, ২০২১ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৫ বছরে শিক্ষার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। নতুন নতুন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উন্নত দেশের শিক্ষাঙ্গন সর্বাংশে আকর্ষণীয় হলেও আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গনকে আমরা এখনও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারিনি। তবে সেজন্য হতাশ না হয়ে সবার সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা সুন্দর, শিক্ষাবান্ধব শিক্ষাঙ্গন গড়ে তোলার নিরন্তর চেষ্টা চালাতে পারি। কেননা আগামী দিনে এ অঙ্গন থেকেই নামকরা গবেষক, সমাজ বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিল্পপতি, দক্ষ প্রশাসক বেরিয়ে আসবে। যাদের কর্মফল শুধু বাংলাদেশকে নয়, সমগ্র বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
ছাত্র-যুবকদের উদ্দেশ্যে মূল্যবান পরামর্শ প্রদান প্রসঙ্গে ছাত্র-তরুণদের প্রেরণা-ব্যক্তিত্ব লায়ন এম কে বাশার বলেন, যারা আজ ছাত্র-যুবক তারা আগামীর আশা-ভরসা, দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তারাইতো দেশ পরিচালনা করবে। পড়ালেখাকে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে, পড়ালেখার পাশাপাশি তারা নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা নেবে, পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তোলার সাধনা করবে। তাদেরকে হাতেকলমে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে; জ্ঞানকে বইয়ের মোড়কে আবদ্ধ না রেখে বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগ করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। আমরা যুবসমাজকে এমনভাবে দেখতে চাই তারা দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন, তারা দেশের প্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ, কিন্তু জনসংখ্যা অনেক বেশি যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছোট্ট দেশের পক্ষে এত বিশাল জনসংখ্যার ভার বহন করা সম্ভব নয়। তাই আমরা চাই, আমাদের মানুষগুলো আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠুক। এ রকম আধুনিক শিক্ষা আমরা যদি তাদেরকে দিতে পারি, তাহলে তারা বিশ্বায়ন প্রতিযোগিতায় বিশ্বের যেকোনো দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে, বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম হবে। আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে যদি বিজ্ঞানমনষ্ক দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে পারি, তাহলে জনসংখ্যা বাংলাদেশের জন্য কোনো সমস্যা হবে না। জনসংখ্যা তখন আর অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ছাত্র-যুবকদের বিপথগামিতা রোধে পরিবার বা সমাজের ভূমিকা সম্পর্কে লায়ন এম কে বাশার বলেন, ছাত্র-যুবকদের বিপথগামিতার জন্য তারা দায়ী নয়; এক্ষেত্রে পরিবার ও সমাজই অনেকাংশে দায়ী। শিশু-কিশোররা বড় হয়ে পরিবারের মধ্যে আবদ্ধ থাকে না, সে সমাজের সব অঙ্গনে বিচরণ করে। পরিবার থেকে যদি সুশিক্ষা পায় তাহলে শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন তার স্বচ্ছন্দ হয়। শিক্ষাঙ্গনে যদি ভালো পরিবেশ থাকে, তাহলে সে নষ্ট না হয়ে সমৃদ্ধ হয়। সুশৃংখল, শান্তিপূর্ণ সমাজ তাকে আরো এগিয়ে দেয়, সে দেশের যোগ্য নাগরিকে পরিণত হয়। তাই একটি শিশুর বিকশিত হবার ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-সবারই দায়িত্ব রয়েছে। আমরা যদি মনে করি- আমার ছেলে ভালো থাকলেইত হলো, অন্যের ছেলের কথা ভাবার দরকার কি? এ ধরনের মনোভাব পরিহার করতে হবে। সমাজ যদি নষ্ট হয়ে যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি সন্ত্রাস চলতে থাকে তাহলে আমার ছেলে তা থেকে রক্ষা পাবে কি? এজন্য পরিবার, সমাজ বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের উচিত হবে সম্মিলিতভাবে শান্তি, স্বস্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও আলোকিত জাতি গঠনে করণীয় সম্পর্কে লায়ন বাশার বলেন, আমাদের কথায় ও কাজে মিল নেই। আমরা কাজের যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন না করে একে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করি; আমরা যেটি বিশ্বাস করি, তা পালন করি না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমাদের মুক্তি নেই। আমাদের কাজের যৌক্তিকতা থাকতে হবে, আমরা ন্যায়নিষ্ঠ হব, সত্যসন্ধানী হব, কমিটমেন্ট বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। আমরা শুরু করি, আমরা সফল হই; এরপর অন্যরা আমাদের অনুসরণ করবে। এভাবে সমাজ এগিয়ে যাবে, জ্ঞানের চর্চা হবে, বুদ্ধির বিকাশ হবে, প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায়ের সমাজ।