বিশেষ খবর



Upcoming Event

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ডায়নামিক ও যুগশ্রেষ্ঠ মন্ত্রী এডভোকেট শ ম রেজাউল করিম

ক্যাম্পাস ডেস্ক প্রিয় মানুষের মুখোমুখি
img

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ডায়নামিক ও যুগশ্রেষ্ঠ মন্ত্রী এডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন

মৎস্য রপ্তানি খাতকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা

অর্জনকারী খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো

ছাত্র-যুবকরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সক্ষমতা অর্জন করে

নিজে উদ্যোক্তা হবে, অন্যকেও উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করবে



সততা ও নীতিনিষ্ঠায় প্রোজ্জ্বল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, আওয়ামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক, বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ডায়নামিক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম একজন খ্যাতনামা আইনজীবী। টেলিভিশন টক শোতেও বেশ পরিচিত মুখ। সমসাময়িক যে কোনো ঘটনায় টিভির পর্দায় নিয়মিত দেখা যায় তাঁকে। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবিতে তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতেও তাঁর ভ‚মিকা প্রশংসনীয়। মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম আইনজীবীদের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয়। বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন তিনি। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি আইনজীবীদের সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন।

ছাত্র জীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে জড়িত। ছাত্র জীবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৮০ সালে খুলনা দৌলতপুর সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি, ১৯৮১ সালে খুলনা কৃষি কলেজের সাধারণ সম্পাদক জিএস ছিলেন। ১৯৮৯ সালে নাজিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে ১৯৯০ সাল থেকে অদ্যাবধি জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। পেশাজীবনে গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেলহত্যার মত গুরুত্বপূর্ণ মামলার আইনজীবী ছিলেন তিনি। ১/১১ এর দুর্যোগকালীন সময়ে তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে আইনী সহায়তা দিয়েছেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আবুল হাসনাত আব্দুল­াহ, শেখ সেলিমের মতো রাজনীতিবিদদের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে নতুন সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তাঁকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

তিনি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৬২ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোঃ আব্দুল খালেক শেখ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বরেণ্য রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৭৭ সালে বরইবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসি, ১৯৭৯ সালে এইচএসসি, ১৯৮৩ সালে এলএলবি ডিগ্রি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি মানবাধিকার ও আইনী সেবামূলক কর্মকান্ডের স্বীকৃতি হিসেবে শেখ রাসেল স্মৃতি পদক; বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ পদক; অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক; ইউনেস্কো ক্লাব পদক; আইন ও মানবাধিকার লালন পত্র পদক-২০১১; শের-ই-বাংলা জাতীয় স্মৃতি পদক এবং মানবাধিকার পদক সহ ১৪ টি পদক লাভ করেন।

তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব, ইতিহাসের দায় মুক্তি প্রভৃতি। এছাড়া তিনি দৈনিক আজকের দর্পণ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি জাতীয় ও সামাজিক বিষয়ে নিয়মিত আলোচক হিসাবে টেলিভিশনে টকশো, বিভিন্ন সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণসহ, সংবাদপত্রে নিয়মিত নিবন্ধ প্রকাশের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

সম্প্রতি শ ম রেজাউল করিমের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদল। সেই সাক্ষাৎকারের উল্লেখযোগ্য অংশ নিম্নে তুলে ধরা হলো।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসঃ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরগুলোর কার্যক্রম কেমন চলছে? দপ্তরগুলোর কার্যক্রমে আরো গতি বৃদ্ধিতে গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে বলবেন কী?

অ্যাড. রেজাউল করিমঃ মন্ত্রণালয়ের কাজকে আরও গতিশীল ও তৎপর করার জন্য আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছি। আমরা ইতোমধ্যে টিমওয়ার্ক করে কাজ করছি। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, ফিল্ড লেভেলের কর্মকর্তারা, রিসার্চ ওরিয়েন্টেড দায়িত্বে যারা আছেন, আমরা সকলে মিলে কাজ করছি। যেসব জায়গায় একটু অচলাবস্থা, সেখানে আমরা ফিল্ডে যাচ্ছি। যেখানে যেই অভাব দেখছি, আমরা সেটা পূরণের চেষ্টা করছি।

মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কয়েকটা বড় ধরণের কাজ করছি আমরা। তা হলো, বড় বড় গবেষণাগার স্থাপন করা হচ্ছে। আমাদের এদেশে যে এনিমেল ফুডগুলো আসে, সেগুলোকে আমরা ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করবো, যাতে অনাকাক্সিক্ষত কোনো কিছু থাকলে তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এসব পরীক্ষাগারে বাংলাদেশের মাছ, মাংস অথবা তা থেকে উৎপাদিত অন্য কোনো খাদ্যপণ্য, যেটা বিদেশে রফতানি হবে, সেই রফতানি পণ্যের মধ্যে খারাপ কোনো কিছু মিশিয়ে দেয়া হয়েছে কীনা Ñতা পরীক্ষা করা হবে। অনেক সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা ওজন বাড়াতে মাছের মধ্যে লোহার টুকরো ঢুকিয়ে দেয় বা মাছকে তাজা রাখতে বিভিন্ন রকমের কেমিক্যাল মিশিয়ে দেয়। ফলে বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট হয়। সেটা যাতে না হয়, এজন্য পণ্য দেশের অভ্যন্তরে আনা এবং দেশের বাইরে পৌঁছানো, সব ক্ষেত্রেই এখন আমাদের বিশ্বমানের মাননিয়ন্ত্রণ গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হবে। এমনকি কোনো খামারে গরুর দুধ কি পরিমাণে হচ্ছে, তাদের দুধের মানটা কিরকম সেটাও নির্ধারণের সক্ষমতা আমাদের ল্যাবরেটরিগুলোর আছে। গরুকে কি ধরণের খাবার দেয়া হচ্ছে, তার খাবারের তারতম্য প্রয়োজন কিনা, দুধটা কোনো কারণে খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা -সবকিছুই এখন ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে বের করা সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য সেক্টরকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী উদ্যোগে এসব কিছু হচ্ছে। এবার যেমন অবৈধভাবে মা ইলিশ যাতে কেউ আহরণ করতে না পারে, জাটকা বা ছোট ইলিশ যাতে ধরতে না পারে, সেজন্যে প্রজনন মৌসুমে বা নির্ধারিত সময়ে সারা বাংলাদেশে মাছ আহরণ বন্ধ ঘোষণা করেছি আমরা। আর এসব বিষয় যাতে বাস্তবে কার্যকর করা সম্ভব হয়, সে বিষয়েও আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি যে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নতুন পরিকল্পনা ও উদ্যমে এগিয়ে যাবে। ফলে বাংলাদেশের পোল্ট্রি, ডেইরী, লাইভস্টক, ফিশারিজ এই সেক্টরগুলোয় আমূল পরিবর্তন হবে।

বি ক্যাঃ করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত খামার মালিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষতি পোষাতে কী কী কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন?

অ্যাড. রেজাউল করিমঃ আমরা ইতোমধ্যে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এই চারটি সেক্টরের উদ্যোক্তাদের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি। এমনকি বিদেশ থেকে যখন উদ্যোক্তারা এনিমেল ফুড অনেক টাকা ব্যয় করে ইমপোর্ট করে, আমরা তাদেরকে বলেছি, যারা এদেশে এনিমেল ফুড উৎপাদনের কারখানা করবে, তাদের যন্ত্রপাতি আনার জন্য উৎসে কোনো কর কর্তন করা হবে না। এছাড়া তাদের নানারকম সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। উদ্যোক্তাদের আমরা স্বল্প সুদে, সহজ শর্তে লোন দিচ্ছি। সেইসাথে তাদের খামারগুলোতেও আমাদের ভেটেরিনারি সার্জন জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যে ভ্যাক্সিন বাংলাদেশে অত্যাবশ্যকীয়, আমরা কোটি কোটি টাকা দিয়ে সেই কস্টলি ভ্যাক্সিন এনে দিচ্ছি, যাতে আমাদের দেশে গরু-ছাগল-ভেড়া রোগাক্রান্ত হয়ে মারা না যায়। এইক্ষেত্রে আমরা প্রাইভেট সেক্টরকে যতো প্রকার সহযোগিতা করা যায়, সেই সহযোগিতা আমরা করে যাচ্ছি। যেমন- কোভিডকালীন এয়ারপোর্টে ও বন্দরে বিদেশ থেকে আনা বিভিন্ন রকমের পশুখাদ্য, মাছের খাবার, মুরগির খাবার ইত্যাদি আটকে গিয়েছিলো। আমরা করোনা সংক্রমণের সেই ভয়াবহ সময়েও অত্যন্ত দ্রæততার সাথে তাদের মালামাল ছাড়িয়ে এনেছি। ফলে গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়ার খাবার, হাঁস-মুরগির খাবার, মাছের খাবার তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে আনতে পেরেছে। এমনটি না হলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের খামার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হতো। খামারিদের উৎপাদিত মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ভ্রাম্যমাণ পদ্ধতিতে বিক্রির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রায় ৯,৫০০ কোটি টাকার মৎস্য ও প্রাণিজ পণ্য এ ব্যবস্থায় বিক্রি হয়েছে। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ৬,৭৯,৭৭১ জন খামারিকে আমরা ৮১৮ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা নগদ প্রণোদনা দিয়েছি। তাছাড়া ১,৫৫,৯৭২ জন খামারিকে ৮৪ কোটি টাকা মূল্যের উপকরণ সহায়তা দিয়েছি।

বি ক্যাঃ মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও সামুদ্রিক মৎস্য খাতে রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে বিশেষ কোনো উদ্যোগ বা পরিকল্পনা রয়েছে কী?

অ্যাড. রেজাউল করিমঃ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম বড় খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প। তৈরি পোশাক শিল্প এই করোনাকালে বড় রকমের একটা ধাক্কা খেয়েছে। দ্বিতীয় বড় খাত, প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ঐসকল দেশ কোভিডের কারণে শ্রমিকদের আমাদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। ফলে বড় ধরণের একটা বেকারত্ব তৈরি হয়েছে। এই বেকারত্ব সমস্যার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাতটা খানিকটা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা হালাল মাংস, মাছ, ডিম, দুধ ও মাছ থেকে বিভিন্ন রকমের খাবার তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করার মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে পোশাক শিল্প ও অন্যান্য খাতে যে ধাক্কাটা এসেছে সেটাকে পূরণ করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।

মৎস্য খাতের রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২০ সালে নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মৎস্য ও মৎস্য পণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ হালনাগাদ করে মৎস্য ও মৎস্য পণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করেছি। ২০২০-’২১ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, চীন, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব এবং জাপানসহ ৫০টির অধিক দেশে ৭৬ হাজার ৫৯১ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্য পণ্য রফতানির মাধ্যমে ৪ হাজার ৮৮ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে।

বি ক্যাঃ চাকরির পেছনে না ছুটে বেকার শিক্ষিত যুবকদের বেশি করে মৎস্য খামার ও গবাদি পশুর খামার তৈরিতে উৎসাহিত করতে স্বল্পসুদে ঋণ কর্মসূচি বা সামাজিকভাবে উৎসাহিতকরণে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কী?

অ্যাড. রেজাউল করিমঃ আমি মনে করি, বাংলাদেশে চাকরির ক্ষেত্রটা খুবই সীমাবদ্ধ। সকলেই যে চাকরি পাবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। চাকরির এতো ক্ষেত্রও নেই। চাকরিতে যে চান্স পাবে, এমন সম্ভাবনাও তো অনেকের ক্ষেত্রে ক্ষীণ। আমি চাই, ছাত্র-যুবকরা উদ্যোক্তা হোক। নিজের জমিতে, পুকুরে অথবা যদি সরকারি জায়গা থাকে আমরা লিজ দেব; সেখানে তারা মাছের চাষ, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খামার করতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে উদ্যোক্তাদের বাচ্চা হাঁস-মুরগি সরবরাহ করছি। আমরা মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উদ্যোক্তা ও খামারিদের ভালো ভালো মাছের উৎকৃষ্ট রেনু-পোনা দিচ্ছি। গরুর খামারের জন্য ভালো জাতের বাছুর, গাই-গরু গাভী ইত্যাদি দিচ্ছি। এছাড়া অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধাও দিচ্ছি। কাজেই আমি চাইব, ছাত্র-যুবকরা নিজেরা উদ্যোক্তা হোক। এতে তাদের বেকারত্ব যেমন দূর হবে, তেমনি তারা নিজের আর্থিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের মানুষের পুষ্টি আমিষের চাহিদাও মেটাবে।

ছাত্র-যুবকরা সক্ষমতা অর্জন করে নিজে উদ্যোক্তা হবে, অন্যকেও উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করবে। তার ফার্মে অনেকে কাজ করবে, এতেও অনেকের কর্মসংস্থান হবে। এজন্য তরুণ প্রজন্মের ছাত্র-যুবকদের আমরা সবসময়ই উৎসাহিত করি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও তরুণ প্রজন্মের ছাত্র-যুবকদের উদ্যোক্তা হতে বারবার উৎসাহিত করেন। ছাত্র-যুবক যারা, তাদের আমরা ট্রেইন্ড-আপ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ট্রেইন্ড-আপ হয়ে তারা স্বপ্ন দেখবে উদ্যোক্তা হওয়ার। আমাদের একটা একাডেমি আছে চট্টগ্রামে, মেরিন ফিশারিজ একাডেমি। মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে এরোনটিক্যাল ট্রেনিং হচ্ছে, মেরিন ট্রেনিং হচ্ছে, ফিশারিজ ট্রেনিং হচ্ছে। এখানে চার বছরের কোর্সটি করার পরে বিশ্বের বড় বড় জাহাজে তারা ক্যাপ্টেন হয়ে যাচ্ছে, ক্রু হয়ে যাচ্ছে। অভাবনীয় তাদের সফলতা!

বি ক্যাঃ বøু-ইকোনমি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত। এ ব্যাপারে আপনার মন্ত্রণালয়ের ভাবনা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাবেন কী? অ্যাড. রেজাউল করিমঃ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় সুনীল অর্থনীতির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, আমাদের দেশের বিরাট একটা অংশ জুড়ে সমুদ্র। সেই সমুদ্রে আমাদের সার্বভৌমত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়া অনেক বড় অর্জন। সার্বভৌমত্বই শুধু নয়, সমুদ্র থেকে সম্পদ আহরণ করে বিদেশে রফতানি করে ও দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহার করে একটা আমূল পরিবর্তন আমাদের অর্থনীতিতে আনা সম্ভব। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে, সমুদ্রকেন্দ্রিক সম্পদের ওপর তারা টিকে আছে। শ্রীলঙ্কার একটা বিশাল আয় সমুদ্রকেন্দ্রিক উৎস থেকে। মালদ্বীপ এবং ভিয়েতনামও সমুদ্রকেন্দ্রিক উৎস থেকে ব্যাপক আয় করে। সেসব দেশের প্রেক্ষাপট চিন্তা করে আমি মনে করি, বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থানে আছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনীল অর্থনীতির জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, সে উদ্যোগকে সাফল্যমÐিত করতে, সুনীল অর্থনীতিকে গতিশীল করতে আমরা সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

গভীর সমুদ্রে আমরা অনেক দিন প্রবেশ করতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে সমুদ্র বিজয় হওয়ার পরে এখন আমাদের প্রবেশের অধিকার অর্জিত হয়েছে। ফলে আমরা সেখানে গবেষণা, মৎস্য আহরণসহ সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাÐ পরিচালনা করতে পারছি। আমাদের মন্ত্রণালয়ের ‘আরভি মিন সন্ধানী’ নামে একটি সামুদ্রিক গবেষণা ও জরিপ জাহাজ আছে। সমুদ্রে কী প্রজাতির মাছ আছে, কতদূরে আছে, কী পরিমাণে আছে, ‘আরভি মিন সন্ধানী’ নামের জাহাজ থেকে গবেষকবৃন্দ আমাদের সেই তথ্য জানাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে টেকনোলজিক্যালিও অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছি আমরা। আমাদের ‘আরভি মিন সন্ধানী’ জাহাজটি এরকম যে, তার একপ্রান্তে পাঁচ কিলোমিটার, আরেক প্রান্তে পাঁচ কিলোমিটার, সামনে পাঁচ কিলোমিটার, পিছনে পাঁচ কিলোমিটার, নিচে পাঁচ কিলোমিটার অর্থাৎ চারদিকে পাঁচ কিলোমিটার জায়গার সুস্পষ্ট চিত্র দিচ্ছে। পাঁচ কিলোমিটারের ভেতরে কি কি মাছ আছে, সেই তথ্যও আমরা এ জাহাজটির মাধ্যমে পাচ্ছি। কোথায় মৎস্য সম্পদ আছে, খাওয়ার উপযোগী শৈবাল জাতীয়, সি ফুড জাতীয় কি আছে -এ জাতীয় সমস্ত তথ্য আমরা জানতে পারছি জাহাজটির মাধ্যমে। যে এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবো, সেই এলাকা থেকে জাহাজটির গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। ইতোমধ্যে আরভি মীন সন্ধানী জাহাজের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে ৩৭৩ প্রজাতির মাছ, ২১ প্রজাতির হাঙ্গর এবং রে, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ৩ প্রজাতির লবস্টার, ২১ প্রজাতির কাঁকড়া, ১ প্রজাতির স্কুইলা, ৫ প্রজাতির স্কুইড, ৪ প্রজাতির অক্টোপাস এবং ৫ প্রজাতির কাটল ফিস পাওয়া গেছে।

আমরা গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় মাছ আহরণে প্রকল্প নিয়েছি। তাছাড়া সামুদ্রিক মৎস্য অধ্যাদেশ ৯৮৩ কে হালনাগাদ করে সামুদ্রিক মৎস্য আইন ২০২০ প্রণয়ন করেছি।

বি ক্যাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একীভূত টেকসই সুনীল অর্থনৈতিক বেষ্টনী গড়ে তোলার আহŸান জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে বর্তমানে আপনার মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতি কতদূর?

অ্যাড. রেজাউল করিমঃ বঙ্গোপসাগর থেকে সমুদ্র সম্পদ আহরণের বড় একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে আমাদের সমুদ্র বিজয়ের মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ডিপ্লে­াম্যাসি ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে আমরা সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছি এমন একটি অংশে, যা কার্যত বাংলাদেশের সমপরিমাণ একটি এলাকা। সেই সমুদ্রসীমা থেকে আমরা শুধু মাছ না, সমুদ্রের বিভিন্ন শৈবাল জাতীয় সামুদ্রিক খাদ্য তথা সি-ফুড এবং সমুদ্রের গভীরে তেল, গ্যাসসহ অন্যান্য খনিজ সম্পদও কিন্তু পেতে পারি। ফলে বøু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের গড়ায় আমরা খুব বড় ধরনের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। আগামী একশো বছরে বাংলাদেশ কোন পর্যায়ে যাবে, সে পরিকল্পনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনার বড় ধরনের ক্ষেত্রটা হচ্ছে সুনীল অর্থনীতি। যে পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি, এ পরিকল্পনায় অন্যান্য দেশগুলোকেও সম্পৃক্ত করতে পারলে সুনীল অর্থনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুগুণে সমৃদ্ধ হতে পারে।

বি ক্যাঃ বিলুপ্ত প্রায় দেশি মাছ ফিরিয়ে আনছে মন্ত্রণালয়ের অধীন গবেষকরা। ফলে দেশের মানুষ আবারও পাচ্ছে হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছের স্বাদ। দেশীয় মাছ ও প্রাণীর প্রজাতি সংরক্ষণের এরকম উদ্যোগ আরো ফলপ্রসু করতে কী কী গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়?

অ্যাড. রেজাউল করিমঃ আমরা অনেক দিন থেকে বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলো নিয়ে গবেষণা করছি। এই গবেষণায় ইতোমধ্যে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। বাংলাদেশের নিজস্ব যে মিঠাপানির মাছগুলো বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, সেই মাছগুলো আমরা আবার ফিরিয়ে এনেছি। এ পর্যন্ত ৩৪ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে মাছের জিন ব্যাংক করেছি। সেই জিন ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় যে মাছ বিলুপ্তির পথে, সেখানে আমরা জিন ব্যাংক থেকে মাছের জিন সরবরাহ করবো। যেখানে পুটিমাছ নেই সেখানে পুটিমাছ দেব, যেখানে টাকি মাছ নেই সেখানে টাকি মাছ দেব, যেখানে খলিসা মাছ নেই সেখানে খলিসা মাছের জিন সরবরাহ করবো। জিন ব্যাংক থেকে আমরা প্রয়োজনমতো সব জায়গায় মাছের পোনা অবমুক্ত করবো। এভাবে বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলো সারা দেশে বিস্তার লাভ করবে। বিলুপ্তপ্রায় সব মাছ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমাদের মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কাজ করছে।

বি ক্যাঃ বিদেশ থেকে মাংস আমদানির ক্ষেত্রে আপনার মন্ত্রণালয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত কি?

শ ম রেজাউল করিমঃ আমাদের মন্ত্রণালয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে- আমরা বাইরে থেকে কোনো মাংস আমদানি করতে চাই না। কারণ আমাদের যারা উদ্যোক্তা তারা পর্যাপ্ত গবাদিপশু উৎপাদন করছে। গত দুইবছর ভারত ও মায়ানমার থেকে কোনো গবাদিপশু আমদানি হয়নি। তাতে কিন্তু আমাদের কোরবানিতে কোনো সমস্যা হয়নি, কোনো সর্টেজ হয়নি। এখন কিছু কিছু হোটেলে ভোজনরসিকদের আগ্রহ বাড়াবার জন্য দেশি মাংসকেই ইম্পোর্টেড বলে চালিয়ে দেয়। বাংলাদেশে এখন বিদেশ থেকে কোনো গরুর মাংস আসছে না। শুধুমাত্র ইন্ডিয়া থেকে অল্প কিছু মহিষের মাংস আসে। মহিষের মাংস আসার ক্ষেত্রেও আমরা বিভিন্নভাবে কোয়ারেন্টাইন করছি, টেস্ট করছি যে মহিষের মাংস স্বাস্থ্যসম্মত এবং হালাল প্রক্রিয়ায় আসছে কিনা, কোনো ধরনের জার্ম আছে কিনা। আমাদের টার্গেট রয়েছে যে, ক্রমান্বয়ে আমরা এদেশের গবাদিপশুর এই সেক্টরকে ডেভেলপ করার জন্য এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির সাথে ঈর্ষণীয় উচ্চতায় নিয়ে যাবার জন্য আমরা কোনোভাবেই বাইরের দেশের মাংস আনব না।

বি ক্যাঃ ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটনে অযুত সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ‘কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং’ গুরুত্বপূর্ণ বলে কী আপনি মনে করেন?

অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমঃ কান্ট্রি ব্রান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত বাংলাদেশে ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ পৃথিবীতে ৩য় স্থান, ইলিশ মাছ আহরণে পৃথিবীতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই বাংলাদেশের নিজস্ব প্রজাতির যেসব মাছ আছে, সেই মাছগুলো খুব আগ্রহভরে গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ২০১৭ সালে জিআই পণ্য বা নিজস্ব সম্পদ হিসেবে ইতোমধ্যেই স্বীকৃতি পেয়েছে, যা কান্ট্রি ব্রান্ডিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। বাগদা চিংড়িও জিআই সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমরা এখন সারা বিশ্বে ইলিশ এবং ইলিশ জাতীয় অন্যান্য যে সকল মাছ আছে, সেই মাছগুলোকে কান্ট্রি ব্রান্ডিং এর জন্য ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছি। আশা করছি, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশের মাছ এবং হালাল মাংস পৃথিবীতে বাংলাদেশের ব্রান্ড হিসেবে পরিগণিত হবে।

বি ক্যাঃ ব্রান্ডিং বাংলাদেশ এর ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কীভাবে ভ‚মিকা রাখছে এবং ভবিষ্যতে কী ভ‚মিকা রাখতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?

অ্যাড. রেজাউল করিমঃ ‘ব্রান্ডিং বাংলাদেশ’ এর ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় অনেকভাবেই ভ‚মিকা রেখে চলেছে। আমাদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এজেন্ডাই রয়েছে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি করা, মানসম্মত করা। এর ফলে কয়েকটি বিষয়ে লাভ হচ্ছে। মানুষের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা যেমন মিটছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে, বেকারদের কর্মসংস্থান হচ্ছে, দারিদ্র্যতা দূর করা মাধ্যমে তারা উদ্যোক্তা হচ্ছে। বেকার যুবগোষ্ঠীকে বিভিন্নরকম ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে আগ্রহী ও উদ্যোগী করে তুলতে আমরা প্রণোদনা দেব এবং অন্যান্য যে সকল সাপোর্ট লাগে, সেই সাপোর্টগুলোও দেব।

ব্রান্ডিং বাংলাদেশ করার ক্ষেত্রে আমরা সকল হাইকমিশনগুলিকে প্রচারণা চালাতে হবে। আমাদের ইলিশের ও মিঠা পানির মাছের যে ব্যাপক উৎপাদন হয়েছে এবার, সেই সাফল্যের কথা ছড়িয়ে দিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। যেসকল মাছ আমরা বিদেশে রপ্তানি করি, এই সকল মাছের প্রতি বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্য আমরা কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছি। একইভাবে দেশের অভ্যন্তরে যেসকল বিদেশি হাইকমিশন আছে, বিদেশের সঙ্গে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে, তাদেরকে নিয়েও আমরা কাজ করছি, যাতে বাংলাদেশের এসব মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিশ্বে ব্রান্ড হিসেবে পৌঁছাতে পারে।

বি ক্যাঃ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হবে মৎস্য। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আপনার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে বলবেন কী?

অ্যাড. রেজাউল করিমঃ বাংলাদেশের মাছ একসময় ফুরিয়ে যাচ্ছিলো, নিজস্ব প্রজাতির মাছ অনেকটাই বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছিলো। দেশি মাছের প্রজাতি সংরক্ষণে আমরা মাছের জিন ব্যাংক করেছি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের কার্যক্রম ছড়িয়ে দিচ্ছি। এর ফলে মাছের উৎপাদন অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উৎপাদনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আমরা আশা করছি, অদূর ভবিষ্যতে মাছ ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে।

এখন পর্যন্ত মাছের যে উৎপাদন, এ উৎপাদনে দেশের আভ্যন্তরীণ চাহিদা ভালোভাবেই মিটেছে। আমরা মাছের অভয়াশ্রম করে দিয়েছি, ডিম ছাড়ার সময় যাতে মা মাছ ধরা না হয়, জাটকা বা পোনা মাছ ধরা না হয় -এরকম বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এছাড়া মজা পুকুর, বন্ধ্যা খাল, হাওর-বাওর, বিলে সর্বত্র যাতে মাছের চাষ হয়, এমনকি খাঁচায় যাতে মাছ চাষ করা যায়, তার ব্যবস্থাও আমরা গ্রহণ করেছি।

দেশীয় মাছের প্রজাতি সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতেও আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। পাবদা মাছ, পুঁটি মাছ একসময় হারিয়ে গিয়েছিলো। মানুষ মনে করতো ইলিশ মাছ একসময় হারিয়ে যাবে, আর দেখা যাবে না। কিন্তু এখন ইলিশ হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে; এছাড়া পাবদা, পুঁটি, কুচিয়া, কই মাছও চাষ হচ্ছে। আমাদের অন্যান্য যে সকল বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছগুলো, যেমন- মহাশোলও চাষ হচ্ছে। স্বাদু পানির বিভিন্ন রকমের মাছ, যেগুলো বিলুপ্তির দিকে চলে গিয়েছিলো, সেই বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলোকে আমরা ফিরিয়ে আনছি। এইসব মাছ এখন আভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, যেমন- ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এসব দেশেও যাচ্ছে।

কানাডার বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় হোটেলের বাইরে লেখা থাকে যে, ‘বাংলাদেশের মিঠা পানির মাছ এখানে পাওয়া যায়।’ ঐ যে মিঠা পানির মাছ পাওয়া যায় লেখা থাকে, সেই লেখা দেখে বিদেশিরাও হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে। আমাদের এরকম অনেক মাছ আছে, যে মাছগুলো খুবই চমৎকার। কারণ মাছগুলোর কাঁটা নেই। যেমন- বেলে মাছের কাঁটা বলতে গেলে প্রায় নেই। বিদেশিরা এরকম মাছ খেতে খুব পছন্দ করে। তাই আমরা এইসব মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এমন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি, যাতে রপ্তানিটা অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়।

আমরা বিভিন্নভাবে মাছের উৎপাদন এমনভাবে বাড়াবো যে, রপ্তানির অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। মাছ থেকে মৎস্যজাতীয় বিভিন্ন ভ্যালুএডেড পণ্য তৈরি করেও আমরা রফতানির পরিকল্পনা নিয়েছি। এভাবেই আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো। এখন মাছ বিদেশে রপ্তানির যে সীমাবদ্ধতা, সেই রপ্তানির সীমাবদ্ধতাও আগামীতে থাকবে না। আমরা আশা করছি, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বিপুল পরিমাণ মাছ ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে মৎস্য খাতকে প্রতিষ্ঠিত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো।

বি ক্যাঃ ব্রান্ডিং ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কোন কোন খাত সম্ভাবনাময়?

অ্যাড. রেজাউল করিমঃ আমাদের এখন পর্যন্ত আগ্রহের ক্ষেত্র হচ্ছে সাদা মাছ, চিংড়ি মাছ ও হালাল মাংস। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এবং অন্যান্য দেশে আমাদের দেশের রাজশাহী ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের বø­্যাক বেঙ্গল ছাগলের ব্যাপক চাহিদা। ইন্ডিয়ার হাইকমিশনার বø­্যাক বেঙ্গল ছাগলের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে বলেছেন যে, ভারতেও বø­্যাক বেঙ্গল ছাগলের ব্যাপক চাহিদা।

এছাড়া আমাদের হালাল মাংস, গরুর মাংস, খাসির মাংস, ভেড়ার মাংসের চাহিদা রয়েছে। ভেড়া বা ল্যাম্ব মাংসের উন্নত বিশ্বে খুবই চাহিদা। আর মাছের ভেতর এখন পর্যন্ত সাদা মাছের এবং চিংড়ি মাছের চাহিদা বেশি রয়েছে। আমরা এগুলোর উৎপাদন আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছি।

উন্নত দেশগুলোতে টুনা ফিসের প্রচুর চাহিদা। খুব শীঘ্রই বঙ্গোপসাগর থেকে কিভাবে টুনা ফিস আহরণ করতে পারি, সেই বিষয়ে আমরা একটা প্রকল্প নিয়েছি। সমুদ্রের ভেতরে অনেক মূল্যবান মাছ আছে, শৈবাল আছে। বিদেশে সেগুলোরও ব্যাপক চাহিদা আছে -যা রপ্তানি করে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এ বিষয় নিয়ে আমাদের পরিকল্পনাটা ইতোমধ্যে একনেকে পাস হয়েছে। আমরা শিগগিরই সেখানে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিয়ে সরাসরি কার্যক্রম শুরু করে দেব। আমরা এরই মধ্যে ইন্ডিয়ান টুনা ফিস কমিশনের মেম্বার এবং পৃথিবীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির অথরিটি। বাংলাদেশের সমুদ্র উপক‚লবর্তী এলাকায় রিসার্চ করে তারা বলছে যে- তোমাদের এখানে আনুষঙ্গিক যে সকল তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে প্রচুর পরিমাণে টুনা ফিস আছে। সেজন্যে আমরা টুনা ফিস নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী।

সুস্বাদু স্যামন ফিসের চেয়ে টুনা ফিস আহরণের ক্ষেত্র ও পরিমাণ অনেক বেশি হয়। এছাড়া আমরা যখন টুনা ফিসের আহরণের জন্য কাজ করবো, তখন এমনও হতে পারে, স্যামন ফিসসহ আরও অনেক দামী এবং মজাদার মাছ আমরা পেয়ে যেতে পারি। এভাবেই সামুদ্রিক মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে আমরা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পরিকল্পনা করছি।

বি ক্যাঃ জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনে নিবেদিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা ৩ যুগপূর্তি পালন করছে। ক্যাম্পাস পত্রিকা ও ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের অগ্রযাত্রায় আপনার পরামর্শ জানাবেন কি?

অ্যাড. রেজাউল করিমঃ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ড. এম হেলালের একটি অনবদ্য সৃষ্টি। এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আগে শুধু একটি শিক্ষা বিষয়ক পত্রিকা ছিলো। পত্রিকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন একটি সুবিশাল জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। শিক্ষামূলক ও সামাজিক কর্মকাÐ এবং সমাজের উন্নয়ন অগ্রগতির ক্ষেত্রে, মানুষকে সচেতন করতে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, যুবসমাজকে এগিয়ে আনতে, যারা বয়স্ক তাদেরকেও কর্মতৎপর করাসহ জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অব্যাহতভাবে ক্যাম্পাস কাজ করে চলেছে। ক্যাম্পাস’র সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আমি ক্যাম্পাস’র উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করি।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img