যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে এখন ডাক্তার-নার্সদের পাশাপাশি আছে প্রোন-টিম। যাদের কাজ হলো আইসিইউতে থাকা রোগীদের সঠিক নিয়মে উপুড় করে শুইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন। সেই সঙ্গে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত বলেছেন বিএসএমএমইউর রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোশাররফ হোসেন।
লং আইল্যান্ড জিউশ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মঙ্গোলা নরসিমহান ৪০ বছর বয়সী একজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির সহকর্মীর ফোন পেলেন। আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা সংকটাপন্ন এবং রোগীকে নিয়ে আইসিইউতে আসতে চায়। নরসিমহান তাকে বললেন, আগে রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে দেখতে। সেটাই করা হলো। দেখা গেল সেই রোগীর আর আইসিউর দরকার হয়নি।
বিশেষ কায়দায় উপুড় করে শোয়ানোর নাম প্রোন পজিশন। এ অবস্থায় স্বাভাবিক শ্বাস নিলেও রোগীর ফুসফুসে অক্সিজেন ঢুকতে পারে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা লাইফ সাপোর্টে থাকা কভিড-১৯ রোগীদের পেটের ওপর ভর দিয়ে উপুড় করে রাখছেন।
এ প্রোন পজিশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে ফলও পাচ্ছেন বেশ। সিএনএনের প্রতিবেদনে জানা গেল, লং আইল্যান্ড জিউশ-এর রোগীদের বেলায় উপুড় করে শোয়ানোর ফলে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের হার ৮৫ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্তও বেড়েছে। ভেন্টিলেটেড রোগীদের এভাবে প্রায় ১৬ ঘণ্টা শুইয়ে রাখা হয়। বাকি সময়টা সোজা করেই রাখা হয়।
ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রোন পজিশনের ফলে অক্সিজেন সহজে ফুসফুসে যেতে পারে। ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল আইসিইউর পরিচালক ডা. ক্যাথরিন হিবার্ট বলেন, প্রোন পজিশনের ফলে ফুসফুসের কিছু অংশ খুলে যায়, যা এ রোগীদের ক্ষেত্রে বন্ধ থাকতে দেখেছি।
নার্সদের প্রোনিং টিম আইসিইউর বাইরেও রোগীদের এভাবে শোয়ানোর ব্যাপারে সচেতনতা চালাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, যাদের ক্ষেত্রে এভাবে ১৬ ঘণ্টা থাকাটা বেশি অস্বস্তিকর ঠেকবে তারা দুই পর্বে কমপক্ষে চার ঘণ্টা এভাবে থাকবে।
কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীরা প্রায়ই এআরডিএস বা তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংকট সিনড্রোমে মারা যায়। সাত বছর আগে দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে ফরাসি ডাক্তারদের প্রকাশিত এক নিবন্ধ থেকে জানা যায়, এআরডিএস আক্রান্ত রোগীদের যাঁরা ভেন্টিলেটরে ছিলেন তাঁদের মধ্যে যাঁদের উপুড় করে শুইয়ে রাখা হয়েছিল তাঁদের মৃত্যুর হার কম ছিল।
ফাঁদ পেতে করোনাকে মারা সম্ভব!
খুব ধুরন্ধর নভেল করোনাভাইরাসকে কি এবার ফাঁদে ফেলা যাবে মানবশরীরের মধ্যেই? ভাইরাসটির খুব পছন্দের জায়গা আমাদের ফুসফুসেই পাতা যাবে সেই ফাঁদ এমনটাই দাবি করলেন এক দল চীনা গবেষক। জানালেন, তাঁরা পলিমারের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা (ন্যানো পার্টিকলস) দিয়ে কৃত্রিমভাবে ফুসফুসের এমন কোষ বানিয়েছেন, যা আদতে জীবন্ত কোষ নয়। কোভিডের ফাঁদ। সেই ফাঁদের ভেতর ঢুকে পড়লে ভাইরাসটি আর বেঁচে থাকার রসদ পাবে না। মরে যাবে। সম্প্রতি এসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যানো লেটার্সে।
তবে গবেষণাটি করা হয়েছে শুধুই গবেষণাগারে। ইঁদুরের মতো প্রাণী বা মানুষের ওপর এখনো তা প্রয়োগ করে দেখা হয়নি। গত ছয় মাসের গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে ঢোকার পর ফুসফুসই সবচেয়ে পছন্দের জায়গা সার্স-কভ-২ ভাইরাসের। মানবদেহের একটি প্রোটিন তাকে ফুসফুসের কোষের গায়ে সেঁটে থাকতে সাহায্য করে। তারই সাহায্য নিয়ে ভাইরাসটি আমাদের ফুসফুসের কোষের মধ্যে ঢোকে। তারপর দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটায়। একটি কোষে তাদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেলে তারা সেই কোষের প্রাচীর ফাটিয়ে বেরিয়ে এসে ফুসফুসের অন্য কোষগুলোকেও একইভাবে আক্রমণ করে।
গবেষকরা গবেষণাগারে দেখতে চেয়েছিলেন পলিমারের ন্যানো পার্টিকলকে ফুসফুসের কোষের মতো ব্যবহার করলে সার্স-কভ-২কে আমাদের শরীরের মধ্যে ধোঁকা দেওয়া যাচ্ছে কি না। তারা সেই পলিমারের ন্যানো পার্টিকলকে ফুসফুসের জীবন্ত কোষ বলে মনে করছে কি না। গবেষকরা দেখেছেন, ভাইরাসটি ধোঁকা খাচ্ছে। ফাঁদে পড়ছে। আর তার পর বাঁচার রসদ জোগাতে না পেরে মরে যাচ্ছে।
এটা দেখতে গিয়ে গবেষকরা পলিমারের ন্যানো পার্টিকলের ওপর ফুসফুসের বা দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থার জীবন্ত কোষের একটি আস্তরণ দিয়ে দিয়েছিলেন। গবেষকরা দেখেছেন, পলিমারের বাইরে থাকা ফুসফুসের কোষের আস্তরণ দেখেই তা পছন্দ হচ্ছে ভাইরাসটির।