সরকারি স্কুল-কলেজগুলোতে হচ্ছে বদলি-বাণিজ্য। এমপিওর দাবিতে শিক্ষকরা রাস্তায়। প্রধানশিক্ষক-অধ্যক্ষরা নোট-গাইডের কমিশন খায়। শিক্ষাভবনে চলে ঘুষ বাণিজ্য। সবাইকে বিনামূল্যের বই দেয়ার সুফল নেই। শিক্ষার্থী নয়, সবাইকে পরীক্ষার্থী বানানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশের শিক্ষার গুণগতমান ভালো নয়। শিক্ষার এই মান নিয়ে পুরো জাতি শঙ্কিত।
এসব মন্তব্য ডেপুটি স্পিকার, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী, ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ থেকে শুরু করে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনদের। একই সঙ্গে তাঁরা বাজেটে শিক্ষাখাতে কম বরাদ্দে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) কমপক্ষে ৪ শতাংশ ও মোট বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়ার দাবিও করা হয়। তাঁরা আরও বলেন, গুণগতমান বাড়াতে হলে এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতেই হবে।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে শিক্ষার জন্য বাজেট শীর্ষক এক সংলাপ অনুষ্ঠানে তাঁরা এসব কথা বলেন। আসন্ন জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও গণসাক্ষরতা অভিযান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, শিক্ষায় গবেষণা ও প্রশিক্ষণ অত্যন্ত দুর্বল পরিসরে হচ্ছে। এটা বাড়াতে হবে। নইলে গুণগতমান বাড়ানো যাবে না। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানটি ফেব্রুয়ারি মাসে হলে ভালো হতো। আসন্ন অর্থবছরের বাজেট প্রায় তৈরি হয়েই গেছে।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, সরকারি স্কুল-কলেজগুলোতে বদলি ও বদলি-বাণিজ্য সমানতালে চলছে। সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই দেয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। নিজ এলাকা সুনামগঞ্জের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, প্রাথমিকে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষক থাকতেই চান না।
অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, শিক্ষার মান নিয়ে পুরো জাতিই শঙ্কিত। কারিগরি শিক্ষার নামে ভুয়া শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। প্রধানশিক্ষক ও অধ্যক্ষরা ব্যস্ত নোট গাইডের কমিশন খাওয়া নিয়ে।
কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রাথমিকে আসল শিক্ষক থাকেন না। দেখা যায়, গ্রামের এসএসসি পাস ছেলেমেয়ে ওই বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। এজন্য শিক্ষকেরা তাঁদের বেতন থেকে এসব ছেলেমেয়েকে এক-দেড় হাজার টাকা দেন। সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগের কৃষি-বিষয়ক এই সম্পাদক।
সভায় প্রায় সব বক্তাই শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়ানোর দাবি করেন। সঞ্চালকের বক্তৃতায় গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রশ্ন রেখে বলেন, শিক্ষার লক্ষ্য পূরণ না হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বাকি ১৬টি লক্ষ্য কি পূরণ হবে? তিনি শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়ানোর দাবি জানান।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই অনুষ্ঠানের আগে তাঁরা এ বিষয়ে দু’দিন ফেসবুকে প্রচারাভিযান চালিয়েছিলেন। এতে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৫ জন মন্তব্য করেন। তাঁদের ৯৪ ভাগই শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, দুর্নীতি কমানো, গুণগত মান বাড়ানোর ওপর জোর দিতে বলেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডি’র গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। এতে দেখানো হয় শিক্ষাখাতে বাজেট কমে যাওয়ার চিত্র। পাশাপাশি বাজেট বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেন তিনি।
নানামূখী নেতিবাচক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, শিক্ষার মান বাড়ছে, তবে যে মান দরকার, তা থেকে হয়তো অনেক দূরে রয়েছে। এজন্য শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিই এখন তাঁদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ প্রমুখ।