জঙ্গি প্রতিরোধ, একাডেমিক কোয়ালিটি বাড়ানো, আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিকে এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জড়িত থাকার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপ-সচিব জিন্নাত রেহানা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের জন্য তিন ঘন্টা অতিরিক্ত আবশ্যিক কোর্স চালু, খ-কালীন শিক্ষকের সংখ্যা কমিয়ে পূর্ণকালীন শিক্ষক বাড়ানো, বোর্ড ও অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল হতে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ না করা, বিওটি’র সদস্যদের দ্বন্দ্ব নিরসনসহ ১২ দফা নির্দেশনা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রথম বর্ষের সকল শিক্ষার্থীর জন্য সপ্তাহে তিন ঘণ্টা অতিরিক্ত কারিকুলাম এক্টিভিটিজ আবশ্যিক কোর্স চালু করা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আচরণ ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য ভ্রাম্যমাণ টিম গঠন ও স্টুডেন্ট কাউন্সেলিং সেল, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। দ্বিতীয় দফায় বলা হয়েছে, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী একটি সিমেস্টারে শুধু দু’টি কোর্স নিয়ে পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীর মর্যাদা পাচ্ছে। স্নাতক পর্যায়ে শুধুমাত্র দু’টি কোর্স নেয়ায় প্রচুর অবসর সময় পাচ্ছে। এর ফলে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ইউজিসি’র তদন্ত কমিটি এর প্রমাণ পেয়েছে। এজন্য শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করার জন্য প্রতি সিমেস্টারে কমপক্ষে ৩টি কোর্স আবশ্যিক করতে হবে। গত বছরে ৫ হাজার ১১৬ শিক্ষার্থী কোর্স শেষ না করেই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে বিওটি’র সদস্যদের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব নিরসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ না করা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের জন্য বিওটি’র সদস্যদের একক আধিপত্য হ্রাস করা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর ৪৩ (৩) ধারা অনুযায়ী সরকার ও ইউজিসিকে অবহিত করে সাধারণ তহবিলের অর্থ নির্ধারিত খাতে বিনিয়োগ করতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার হতে ১৪টি নিষিদ্ধ বই সরিয়ে ফেলা হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর ৬(১০) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকার করেনি। একই সঙ্গে নিষিদ্ধ, ধর্মীয় উগ্রবাদ সৃষ্টির মতো কোনো বই, সাময়িকী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে না রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করতে পারে এ ধরনের লিফলেট যাতে ক্যাম্পাসে বিতরণ না হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশি ছাত্রদের মধ্যে পাকিস্তান, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ১৪ জনের বৈধ ভিসা নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তথ্য দিতে হবে। বিওটি’র নেতৃত্বাধীন প্রায় ১৭টি কমিটি সক্রিয়। যা বিওটি’র একক আধিপত্যের প্রমাণ। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে অবহিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১লা জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলায় নেতৃত্ব দেয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান প্রো-ভিসি জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়। এরপর ইউজিসি’র একটি প্রতিনিধিদল গত ১৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টি আকস্মিক তদন্ত করে। এর আগে গত বছরের ১৯ আগস্ট পরিদর্শন করে। এ সময় বেশ কিছু অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়। এসবের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়টির ঘাটতি ও অনিয়ম দূর করতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।