ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস তরুণদের ফোন নিয়ে সারা দিন পড়ে না থেকে পরিবারকে সময় দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পোপ তাঁর তিন দিনের বাংলাদেশ সফরের শেষ দিন ঢাকায় নটরডেম কলেজে তরুণদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেয়ার সময় বলেন, তোমরা তোমাদের মা-বাবা, দাদা-দাদি ও নানা-নানির সঙ্গে কথা বলো। তোমরা তোমাদের ফোন নিয়ে পড়ে থেকে চারপাশের বিশ্বকে অগ্রাহ্য করে সারা দিন কাটিয়ে দিয়ো না।
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে পোপ বাংলায় বলেন, সৃষ্টিকর্তা বাংলাদেশকে আশীর্বাদ করুন।
পোপ ওই অনুষ্ঠান শেষেই পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইতালির উদ্দেশে রওনা হন। বিমানবন্দরে পোপকে বিদায় জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
পোপ নটরডেম কলেজে বক্তব্য দেয়ার সময় বলেন, তরুণদের মধ্যে তিনি একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য খুঁজে পান। সেটি হলো উদ্দীপনা। তরুণদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি নিজেও উজ্জীবিত বোধ করেন।
পোপ বলেন, এ দেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তরুণদের নির্ভীক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তরুণরা সবসময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার, সৃষ্টি করা এবং ঝুঁকি নেয়ার জন্য প্রস্তুত।
পোপ তরুণদের এই উদ্দীপনা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেন। তবে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক পথ বেছে নেয়ার ওপর তিনি জোর দেন।
এর আগে পোপ ফ্রান্সিস ঢাকার তেজগাঁওয়ে হলি রোজারিও গির্জা পরিদর্শন করেছেন।
তিনি হলি রোজারিও গির্জায় গিয়ে শুরুতেই মাদার তেরেসা প্রতিষ্ঠিত মিশনারিজ অব চ্যারিটি হোমসে যান এবং সেখানকার অনাথ, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ রোগীদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান। এরপর তিনি গির্জা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। এ সময় শিশুরা বাংলাদেশ ও ভ্যাটিকানের পতাকা নেড়ে পোপ ফ্রান্সিসকে স্বাগত জানায়।
হলি রোজারিও গির্জায় পৌঁছলে বিশপ রমেন বৈরাগী, বিশপ পল পনেন কুবি, ফাদার কমল কোড়াইয়া ও ব্রাদার বিজয় রড্রিক্স পোপকে স্বাগত জানান। তেজগাঁও চার্চে তিনি বিশেষভাবে নির্মিত চেয়ারে বসে সবার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
সেখানে স্বাগত বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের আর্চবিশপ মজেস কস্তা। ব্রতীয় জীবনের সাক্ষ্য তুলে ধরেন ফাদার আবেল বি রোজারিও, ফাদার ফ্রাংকো, সিস্টার মেরি চন্দ্রা, ব্রাদার লরেন্স ডায়েস ও সেমিনারিয়ান মার্সেলিয়াস টপ্পো। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কার্ডিনাল ও ঢাকার আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি রোজারিও।
পরে পোপ ফ্রান্সিস সমবেত প্রায় দুই হাজার ফাদার, ব্রাদার, সিস্টার ও খ্রিস্টভক্তের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। বক্তব্য শেষে তিনি খ্রিস্টান কবরস্থানে যান। সেখানে আশীর্বাদ শেষে ১৬৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পুরনো হলি রোজারি গির্জাঘরে বটমলী হোমস অর্ফানেজের অনাথ মেয়েদের সঙ্গে প্রার্থনায় যোগ দেন। সেখানে পোপকে স্বাগত জানান বিশপ সেবাস্টিয়ান টুডু, সিস্টার মেরি মিনতি ও সিস্টার মেরি বিজয়া।