উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ দেশ কানাডা। উন্নত জীবনব্যবস্থা, সুশৃঙ্খল পরিবেশ, বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা-জনশক্তি উন্নয়ন ইন্ডেক্সের বার্ষিক সার্ভেতে কানাডা চার নাম্বারে অবস্থান করছে। তাই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে প্রথম পছন্দের একটি দেশ।
কানাডার নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রাজধানীকেন্দ্রিক নয়। বলা যায়, এখানে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজসমহ দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে। এখানকার ডিগ্রিসমূহ বিশ্বমানের তো বটেই, আমেরিকা এবং কমনওয়েলথভুক্ত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিরও সমতুল্য। তাছাড়া পড়াশোনা চলাকালীন সময়ে কানাডার নাগরিকত্বও পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। পড়াশোনা শেষে এদেশেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়ে যায়। গত ৮/১০ বছর ধরে বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা কানাডার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে পাড়ি জমাচ্ছে। তবে বৈচিত্র্যপর্ণ আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের প্রথমে কানাডার আবহাওয়ায় খাপ খাইয়ে নিতে একটু অসুবিধা হয়।
শিক্ষাব্যবস্থা : কানাডায় একজন শিক্ষার্থী ইচ্ছা করলে দুভাবে পড়াশোনা করতে পারে। ফুলটাইম অথবা পার্টটাইম পড়াশোনায় এখানে রয়েছে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, ডক্টরাল, পিএইচডি কোর্স। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরো রয়েছে কো-অপারেটিভ এডুকেশন, ডিসট্যান্ট লার্নিং, কন্টিনিউয়িং এডুকেশন এবং স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মতো আরো অনেক কোর্স ও পদ্ধতি। এখানে শিক্ষার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ওয়ার্কশপ ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা রয়েছে এবং আর্থিক সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে।
যে বিষয়ে পড়া যায় : কম্পিউটার সায়েন্স, বায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ফুড সায়েন্স, কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড রিসোর্সেস, ইলেকট্রনিক্স, মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সার্ভিসেস, মেরিন অ্যাফেয়ার্স, এগ্রিকালচার, ইকোনোমিক্স, অ্যাপ্লায়েড কম্পিউটার সায়েন্স, ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট, অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাসট্রোনমি, অ্যাপ্লায়েড জিওগ্রাফি, আর্কিটেকচারাল সায়েন্স, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, এডুকেশন, হোম ইকোনোমিক্স, মিউজিক, ফিলোসফি, হিস্ট্রি অ্যান্ড রিলিজিওন, ইংলিশ, ল, থিয়েটারসহ আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় দশ হাজার বিষয় এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় তিন হাজার বিষয় পড়তে পারবেন।
পড়াশোনার ভাষা : ইংরেজি ও ফরাসি দুটি ভাষাতেই কানাডার প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করা যায়। তবে যে ভাষায় পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক সে ব্যাপারে আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে নিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ভাষায় যথেষ্ট দক্ষতাও থাকতে হবে। ভর্তির শুরুতেই ভাষার ওপর দক্ষতা যাচাই করার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন পরীক্ষা দেওয়া লাগে। যেমন অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় TOEFL এ ১২০ নম্বরের পরীক্ষায় নূন্যতম ৭৯ পেতে হয়। তবে ১০০-এর বেশি নম্বর পেলে ভালো। এছাড়া বিজনেসের শিক্ষার্থীদের GMAT টেস্টে ভালো স্কোর পেতে হয়।
আবেদনের সময় : কানাডার অ্যাকাডেমিক বছর সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে মে মাসে শেষ হয়। বছরে দুটি সেমিস্টার থাকে। সেপ্টেম্বর অথবা জানুয়ারি সেমিস্টারে ভর্তির জন্য আবেদন প্রক্রিয়া আট মাস আগে শুরু করা ভালো।
খরচ : কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে পড়াশোনার খরচ বিভিন্ন রকম। আবার পড়াশোনার খরচ আপনার পছন্দকৃত বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্যাকাল্টি বা বিষয়ের ওপরও নির্ভর করে। গড়ে যেকোনো বিষয়ে অনার্স করতে বছর প্রতি ৮ থেকে ২০ হাজার ডলার এবং মাস্টার্স করতে বছর প্রতি ৭ থেকে ১৫ হাজার ডলার লাগে। উল্লেখ্য, কানাডায় আইন, মেডিসিন ও এমবিএ পড়তে সাধারণত উচ্চ টিউশন ফি দিতে হয়।
কাজের সুযোগ : কানাডায় পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। চেষ্টা করলে আপনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই কাজ পেতে পারেন। আর ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে কাজ করার অনুমতি নিতে হবে। সেক্ষেত্রে ক্লাস টাইমে নিয়োগকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কোনো আপত্তি করবে না।
যেভাবে আবেদন করতে হবে : কানাডায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হলে প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিষয় পছন্দ করতে হবে। ভাষার ওপর দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা শেষে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অফিসে। সেখান থেকে আবেদন পত্র সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরীক্ষার ফলাফলসহ যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে সেখান থেকে আপনাকে আহ্বান জানালে, কানাডা হাইকমিশনে যোগাযোগ করে ইন্টারভিউ দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। কানাডিয়ান হাই কমিশনের ঠিকানা-
High Commission of Canada
United Nations Road
Baridhara, Dhaka-1212
Bangladesh
Telephone: +880 2 988 7091 to 988 7097
Fax: +880 2 882 3043 & +880 2 882 6585
Email: dhaka@international.gc.ca
www.vfs-canada.com.bd