সমাজে ও জাতিতে এমন কিছু মানুষ আছে, যাদেরকে চেনা-জানার জন্য প্রত্যক্ষ পরিচয়ের দরকার নেই; তাদের সৃজনীসম্পন্ন গতিশীল কার্যক্রমই সাফল্যের আকাশে দীপ্তিমান সূর্যের মত জ্বলজ্বল করে অস্তিত্বের মহিমা ছড়ায়। সংখ্যায় অত্যল্প হলেও আমাদের সরকারে এরকম ব্যতিক্রমী সৃজনশীল, ডায়নামিক ও দায়িত্ববান কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা নিজ প্রতিষ্ঠান-দপ্তর ও সমাজকে অন্যদের মতো শুধু বয়ে নিয়ে যান না, ধাক্কা দিয়েও সামনে এগিয়ে দেন বহুদূর। এরূপ বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে এদের কেউ কেউ বিপ্লবী বীর বলে আখ্যায়িত হয়ে থাকেন। সেরূপ একজন আলোকবর্তিকাসম প্রোজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব হলেন বহুমুখী প্রতিভায় ভাস্বর ও বর্ণিল গুণাবলির কর্মযোগী, সরকারের সৎ-নীতিনিষ্ঠ-নিরহংকারী ও প্রজ্ঞাবান কর্মকর্তা ড. মোঃ জাফর উদ্দীন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত যখন আমাদের দেশও করোনায় ধুকছে, তখন তার বলিষ্ট ভূমিকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিয়েছে অনেক সাহসী পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় ও বাণিজ্য মন্ত্রীর সক্রিয় অভিভাবকত্বে ড. জাফর পরিচালিত সেসব পদক্ষেপের সুফল পেতে শুরু করেছে দেশের জনগণ। ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতিকে সচল রাখার যে মাস্টারপ্ল্যান করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, তার সফলতায় ক্রমাগত উর্ধ্বমুখী দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য খাত।
শুধু তাই নয়, দেশের বেকার ছাত্র-যুবক ও নারীদের তিনি উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন, যাতে তারা উদ্যোক্তা হয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সে লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছেন তিনি।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার প্রতিনিধিদের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলিত হন বর্ণিল গুণাবলির কর্মযোগী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডায়নামিক সচিব ড. জাফর। সেই সাক্ষাৎকারের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসঃ সরকারের জরুরি ও জনগুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনে আপনার অনূভূতি জানতে চাচ্ছি।
ড. জাফর উদ্দীনঃ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করার অনুভূতি অত্যন্ত আনন্দের। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে যে কয়টি মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে, তার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অন্যতম। আমদানি-রপ্তানি, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য, বৈদেশিক বাণিজ্যের দিক থেকে এ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে গ্রাজুয়েশনের যে চ্যালেঞ্জ আছে, তা পূরণে এ মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
রপ্তানি উন্নয়নের একটি অনন্য চালিকাশক্তি। রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধিতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি শুরু করেছি। একই সাথে সাপ্লাই চেইন, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি পলিসি তৈরিতে ভূমিকা রেখে চলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিজনেসের একজন ছাত্র হিসেবে এ মন্ত্রণালয়ে কাজ করা আমার জন্য বেশ সুখকর এবং আমি আশানুরূপ ভূমিকা রাখতে পারছি বলে মনে করি।
বি ক্যাঃ ব্যবসা-বাণিজ্যে অযুত সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ‘কান্ট্রি ব্রান্ডিং’ কেন গুরুত্বপূর্ণ? ব্রান্ডিং বাংলাদেশ এর ক্ষেত্রে কার কী করণীয়?
ড. জাফরঃ ব্রান্ড মূলত এক ধরনের পজিটিভ ইমেজ, যার উপর ভিত্তি করে যেকোনো ক্রেতা পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয়, বিনিয়োগে আগ্রহী কিংবা ভ্রমণে আগ্রহী হয়। ব্রান্ডিং দু’ধরনের হতে পারে- পণ্য ব্রান্ডিং ও কান্ট্রি ব্রান্ডিং। পণ্যের ব্রান্ডিং হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট নাম, চিহ্ন, ডিজাইন অথবা সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, যা দ্বারা কোনো বিক্রেতার পণ্য বা সেবাকে অন্য বিক্রেতার পণ্য বা সেবা থেকে মান ও মূল্যগত দিক থেকে পৃথকভাবে ক্রেতার কাছে উপস্থাপন করা। অন্যদিকে কান্ট্রি ব্রান্ডিং হলো দেশের মানুষ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, পর্যটন ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগ ও বর্হিগমন বিষয়ক পজেটিভ সূচক তৈরিপূর্বক দেশের খ্যাতি, মর্যাদা কিংবা পরিচয়কে অন্য দেশের নিকট উপস্থাপন করা।
বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে অযুত সম্ভাবনাময় দেশ। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কান্ট্রি ব্রান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ পালন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে। তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কান্ট্রি ব্রান্ড Made in Bangladesh প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অন্যান্য সম্বাবনাময় পণ্য সেক্টর যেমন চামড়াজাত পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে ভূমিকা রাখবে।
ব্রান্ডিং এর মাধ্যমে মার্কেটিং উন্নয়ন কৌশল অবলম্বনের ক্ষেত্রে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা দক্ষ হওয়া জরুরি। ব্রান্ডিং-এর মাধ্যমে ক্রেতার আগ্রহ ধরে রাখার জন্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানকে অবিরতভাবে পণ্য ও সেবার মানের উৎকর্ষ সাধনে সচেষ্ট থাকতে হয়। এ বিপণন কৌশল অবলম্বনের ক্ষেত্রে পণ্যের উৎকর্ষসাধনে ক্রেতার রুচি, চাহিদা, ভালো লাগা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা হয়ে থাকে। পণ্যের/ সেবার মান উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের মূল্য বিচার বিশ্লেষণ করে মূল্য হ্রাস বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থা ধরে রাখা ব্যবসায়ের একটি প্রচলিত কৌশল। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পণ্যের/সেবার তুলনামূলক সুবিধাদি বিচার বিশ্লেষণ করে সুনির্দিষ্ট বাজার অথবা সেগমেন্টে পণ্য বিপণনের কৌশল গ্রহণ করে থাকে।
কান্ট্রি ব্রান্ডিং এর সাথে পণ্য এবং বাজার উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক সাপোর্ট থাকাটা জরুরি। বাংলাদেশ সরকার এ সকল প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও বাণিজ্য সরলীকরণে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ সবের মধ্যে অন্যতম বিষয় হচ্ছে বাণিজ্য সহজীকরণ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে ব্যয় হ্রাস। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও তার আওতাধীন সংশ্লিষ্ট সংস্থা/দপ্তরসমূহ সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা সহজ এবং সময় হ্রাসের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পণ্য মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ চলমান রয়েছে। সকল ধরনের বন্দরসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি, পণ্য দ্রুততার সাথে ছাড়করণ ও প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কষ্ট অব ক্যাপিটাল সহনীয় করার জন্য এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, প্রি-শিপমেন্ট, পোষ্ট শিপমেন্ট ক্রেডিট এর ব্যবস্থা করার মাধ্যমে সুদ হার হ্রাস করা হচ্ছে। বর্তমানে Single Digit এ ব্যাংক ঋণের সুদের হার কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সকল উদ্যোগের ফলে দেশের সার্বিক ব্যবসায়ীক ব্যবস্থাপনা উন্নততর হওয়ার পাশাপাশি পণ্যের মান উন্নত এবং মূল্য প্রতিযোগী হবে ফলে দেশের বাণিজ্যে সুনাম বৃদ্ধি পাবে, যা কান্ট্রি ব্রান্ডিং হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
বি ক্যাঃ ‘ব্রান্ডিং বাংলাদেশ’ এর ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কীভাবে ভূমিকা রাখছে এবং ভবিষ্যতে কী ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?
ড. জাফরঃ ইতোমধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মহোদয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক পর্যালোচনা সভায় রপ্তানি আয় বৃদ্ধির দিক নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের খ্যাতনামা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সমন্বয়ে নিজস্ব ব্রান্ডে পণ্য রপ্তানির কৌশল, করণীয়, সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোতে বেশ কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী বস্ত্রখাতে আর্থিক সংশ্লেষযুক্ত ক্ষেত্রসমূহে বিদ্যমান দুর্বলতা দূর করার ক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক একটি Core Group গঠন করা হয়। উক্ত Core Group এর সুপারিশসমূহের মধ্যে একটি সুপারিশ ছিল নিজস্ব ব্রান্ডে পণ্য রপ্তানি। পণ্যের একক প্রতি রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধিকরণ ছিল এ সুপারিশের উদ্দেশ্য। এ ব্যতীত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক Country Brand হিসেবে Made in Bangladesh প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উক্ত আলোচনায় দেশের রপ্তানি বিপণন উন্নয়নে তা ব্যবহারের বিষয় স্থির করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে রপ্তানি বিপণন উন্নয়নে Country Brand- Made in Bangladesh I Country Logo প্রতিষ্ঠা, ব্যবহার এবং নিজস্ব ব্রান্ডে পণ্যাদি রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
উল্লিখিত বিষয়াদির ধারাবাহিকতায় মহাপরিচালক-১, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-কে আহবায়ক করে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহবায়কের সভাপতিত্বে নিজস্ব ব্রান্ডে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, সমস্যা, কৌশল চিহ্নিতকরণের জন্য বেশ কয়েকটি ফলপ্রসু সভার আয়োজন করা হয়। এসব সভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে কমিটির সদস্যবৃন্দের মধ্য হতে ০৭ (সাত) সদস্য বিশিষ্ট একটি উপ-কমিটিকে নীতিমালার খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। উপকমিটি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও পর্যালোচনা, স্টেক হোল্ডারদের মতামত গ্রহণ এবং নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করে।
ব্রান্ডিং একটি মনোজাগতিক বিষয়, যার ভিত্তি রচিত হয় মানুষের অভিজ্ঞতা ও ক্রমাগত প্রচারণার মাধ্যমে। তাই পণ্য বা দেশ ব্রান্ডিং যেভাবেই বলা হোক না কেন, তা শুরু হবে পণ্যের গুণমান সম্পর্কিত নিশ্চিত অভিজ্ঞতা দিয়ে এবং তা ক্রমাগত বিস্তৃত হয়ে যখন দেশের সকল পণ্য-সেবায় ছড়িয়ে পড়বে তখনই দেশ ব্রান্ডিং সম্ভব।
এসব দিক বিবেচনায় আমাদের দেশের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাসমূহের ভূমিকা অগ্রগণ্য। আমরা যদি বিশ্বমানের পণ্য বা সেবা উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারি তবে এক্ষেত্রে প্রতিযোগী দেশসমূহ হতে এগিয়ে যাব। এর ওপর ভিত্তি করে দেশের সকল প্রমোশনাল বা উন্নয়ন সংস্থা একত্রে একই সুরে প্রচারণা চালাতে পারে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোও এক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করবে এবং সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করবে।
প্রচারণার জন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আমাদের উপস্থিতি তুলে ধরা একান্ত আবশ্যক। এ উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলায় নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বি ক্যাঃ বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশের পরিকল্পনা জানাবেন কি?
ড. জাফরঃ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এবং বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এফটিএ/পিটিএ সম্পাদনের নীতি গ্রহণ করেছে। এ সকল দেশের সাথে এফটিএ/পিটিএ সংক্রান্ত অগ্রগতি নিম্নরুপ
১। এ যাবৎ ১৭ টি দেশের সাথে এফটিএ/পিটিএ সম্পাদনের জন্য নির্ধারণ করে ১১ টি দেশের সাথে এফটিএ সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। গত ৬ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে বাংলাদেশ-ভুটান দ্বি-পাক্ষিক পিটিএ স্বাক্ষরিত হয় -যা বাংলাদেশের সাথে অন্য কোনো দেশের সাথে প্রথম পিটিএ। ইন্দোনেশিয়া ও নেপালের সাথে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরের বিষয়ে কাঙ্খিত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার সাথে পিটিএ করার লক্ষ্যে উভয় দেশের বাণিজ্য নেগোসিয়েশন কমিটির মধ্যে পিটিএ টেক্সট, রুলস অব অরিজিন চূড়ান্ত আলোচনা সম্পন্ন করা হয়েছে। নেপালের সাথে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে এবং পিটিএ টেক্সট ও রুলস অব অরিজিন বিষয়ে আলোচনা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পণ্য তালিকা বিনিময় সংক্রান্ত পরবর্তী কার্যক্রম চলমান আছে।
২। ইতোমধ্যে তুরস্ক, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, যুক্তরাষ্ট্র, ইরাক ও লেবানন এর সাথে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ)/মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। ভারতের সাথে Comprehensive Economic Partnership Agreement (CEPA) সম্পাদনের বিষয়ে সমীক্ষা প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
৩। ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে নিয়মিতভাবে বাণিজ্য সচিব, অতিরিক্ত সচিব/যুগ্মসচিব পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সভাসমূহে ট্রানজিট, পণ্যের স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন, সরকারি পর্যায়ে পণ্য আমদানি, পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা বন্দরের অবকাঠামোগত সুবিধা, অশুল্ক বাঁধা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়।
৪। বিগত ১ জুলাই ২০১৮ থেকে Asia-Pacific Trade Agreement (APTA) এর চতুর্থ রাউন্ডের শুল্ক ছাড় কার্যকর হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ অচঞঅ সদস্য দেশসমূহে ১০,৭৭৬টি পণ্যে ১০০% পর্যন্ত শুল্ক সুবিধা পাবে। ফলে, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হবে বলে আশা করা যায়।
৫। দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে South Asian Free Trade Area (SAFTA)-এর আওতায় সদস্য দেশসমূহের মধ্যে অশুল্ক বাধা দূরীকরণসহ সেনসিটিভ লিস্টের পণ্য তালিকা এবং শুল্ক হ্রাসকরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
৬। Eurasian Economic Union (EEU)-এ বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে Bangladesh-Commission Eurasian Economic Commission (EEC) সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে Memorandum of Cooperation between the Government of the People‘s Republic of Bangladesh and the Eurasian Economic Commission সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে।
৭। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, ভুটান ও নেপাল নিয়ে Bay of Bengal Initiatives for Multi-Sectorial Technical and Economic Cooperation (BIMSTEC) আঞ্চলিক জোটের আওতায় BIMSTEC-FTA চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে যা কার্যকর করার লক্ষ্যে বর্তমানে নেগোশিয়েশন চলমান রয়েছে। Trade Facilitation Working Group এর সর্বশেষ সভা সেপ্টেম্বর ২০১৯ সময়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি চূড়ান্ত ও কার্যকর হলে সদস্যভূক্ত দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।
৮। দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক বাণিজ্য জোট ‘মার্কোসর’ ভুক্ত দেশসমূহ (ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে) এর সাথে এফটিএ সম্পাদনের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। বিগত সেপ্টেম্বর ২০১৯ এ মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী মার্কোসর ভুক্ত দেশসমূহ সফর করে বাংলাদেশের পক্ষ হতে এফটিএ করার জন্য অনুরোধ জানান। এ লক্ষ্যে মার্কোসর এর সাথে যোগাযোগ চলমান রয়েছে।
৯। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, মিশর ও নাইজেরিয়া এর সমন্বয়ে গঠিত Developing-8 (D-8) ভূক্ত দেশসমূহের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত D-8 Preferential Trade Agreement (PTA) চুক্তিটি বাংলাদেশ ২৫ এপ্রিল ২০১৭ তারিখ অনুসমর্থন করেছে। এর ফলে সদস্য দেশসমূহে প্রাধিকারমূলক শুল্ক সুবিধায় পণ্য রপ্তানি করা যাবে।
১০। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুটি কয়েক পণ্য (যথা- নিট ও ওভেন গার্মেন্টস, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং ফুটওয়্যার) এর উপর নির্ভরশীলতা হ্রাসের লক্ষ্যে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ যেমন- ফার্নিচার শিল্প, জাহাজ শিল্প, আগর উড্ ও আতর, হীরা কাটা ও পলিশ করা, পাঁপড় ইত্যাদিকে রপ্তানি পণ্যের ঝুঁড়িতে অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং আরো নতুন নতুন পণ্য রপ্তানির আওতায় আনয়নের পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে।
১১। রপ্তানিকারকদের কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য রক্ষিত EDF (Export Development Fund) এর পরিমাণ ১.২০ বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ৩.৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে।
বি ক্যাঃ আইসিটি খাতের ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে সরকারের কোনো দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা আছে কী? এ খাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কী?
ড. জাফরঃ আইসিটি খাতে ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে সরকার নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা নিম্নে উপস্থাপন করা হলোঃ
১. এখাতের ব্যবসাকে আইনগত কাঠামোর আওতায় আনতে সরকার ইতোমধ্যে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ প্রণয়ন করেছে। পরিবর্তিত ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে তা যুগোপযোগী করতে ইতোমধ্যে ২০০৯ ও ২০১৩ সালে সংশোধন আনা হয়েছে। তাছাড়া, জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতিমালাও হালনাগাদ করে বেশ কিছু বিষয়ে সংশোধনী এনে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। তাছাড়া, জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
২. সরকার আইসিটি খাতের ব্যবসাকে উৎসাহিত করতে রপ্তানি নীতিমালা ২০১৮-২১ এ রপ্তানিতে ওঈঞ সহ সেবা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেছে এবং ই-কমার্স ও ই-গভর্নেন্স ব্যবহার করে রপ্তানি বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও গতিশীলতা আনয়নের বিষয়টি নীতিমালার লক্ষ্যমাত্রার অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
৩. সরকার এই খাতকে এগিয়ে নিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হ্রাসকৃত সুদ হারে প্রকল্প ঋণ প্রদান করা; আয়কর রেয়াত প্রদান করা; বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি ইউটিলিটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে ডব্লিউটিও-এর এগ্রিমেন্ট অন এগ্রিকালচার এবং এগ্রিমেন্ট অন সাবসিডিজ এন্ড কাউন্টার ভেইলিং মেজারস্-এর সাথে সংগতিপূর্ণ সম্ভাব্য আর্থিক সুবিধা বা ভর্তুকি প্রদান করা; কমপ্লায়েন্ট শিল্প স্থাপনে বিনা শুল্কে ইকুইপমেন্ট আমদানির ব্যবস্থা করা; পণ্য উৎপাদনে ও বাজারজাতকরণে সহায়তা প্রদান করা; বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা ইত্যাদিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
৪. মহিলাদের এ খাতে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ‘ই-বাণিজ্য করবো, নিজের ব্যবসা গড়বো’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় মহিলা ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প উদ্যোক্তাদের পণ্য বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ, প্রশিক্ষণ প্রদান, সচেতনতা সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমান সময় পর্যন্ত ৯৮ টি ব্যাচে ২৪৫০ জন উদ্যোক্তাকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে ব্যবসা পরিচালনা বা ইকমার্স প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে যার মধ্যে ৯৬০ জন নারী। উক্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ঢাকা ছাড়া ও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বিভাগীয় শহরগুলোতে চলমান রয়েছে।
বি ক্যাঃ বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরগুলোর সম্ভাবনাকে কীভাবে আরো লাভজনকভাবে কাজে লাগানো যায়?
ড. জাফরঃ বঙ্গোপসাগরের পাশে অবস্থিত বলে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানটিকে খুব আকর্ষণীয় হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে । দীর্ঘদিন থেকে চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দরের কার্যক্রম চলে আসছে। বাজার অর্থনীতির প্রসার এবং বিভিন্ন পণ্যের চলাচল দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে দেশের বন্দরগুলোর উপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির তৃতীয় সমুদ্রবন্দর, পায়রা উদ্বোধন করেন।
অর্থনৈতিকভাবে বন্দর উন্নয়ন হলো অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপকে উদ্দীপিত করা এবং উদীয়মান কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া। পাশাপাশি বন্দরগুলি বৈদেশিক বাণিজ্যের গেটওয়ে হিসাবে কাজ করে। বন্দরের সুযোগ সুবিধা যত বৃদ্ধি পাবে, কাজে তত গতি আসবে এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। তাই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মাধ্যমে পণ্য খালাস নিশ্চিত করতে হবে। দিন দিন বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও সেই অনুযায়ী অবকাঠামোগত সুবিধা, জনবল ইত্যাদি বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। তাই এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। প্রায়ই শোনা যায় বন্দরসমূহে কন্টেইনারের জটের কথা। তাই সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি এই অঞ্চলের স্থলবেষ্টিত বা ল্যান্ড লকড দেশ যেমন নেপাল ও ভুটানের মত দেশকে বন্দর সুবিধা দেয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে দেশের রাজস্ব আহরণের পরিমান অনেক বৃদ্ধি পাবে।
বি ক্যাঃ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ির ‘ব্রান্ডিং’ করতে প্রবাসী ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এটিকে এত গুরুত্ব দেয়ার কারণ কি?
ড. জাফরঃ বাগদা জাতের চিংড়ি তুলনামূলকভাবে High End Gi Product. আন্তর্জাতিক বাজারে এ জাতের চিংড়ি মাছের দাম তুলনামুলকভাবে বেশি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ভেনামী জাতের সস্তা হিমায়িত চিংড়ি ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানী করে থাকে। হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য উচ্চ মূল্যমানের বাগদা চিংড়ি রপ্তানির গুরুত্ব অপরিসীম। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এ চিংড়ির চাহিদা রয়েছে। এ বিবেচনায় প্রবাসী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাগদা চিংড়ি ব্রান্ডিং এর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বাগিদা চিংড়ি বাংলাদেশের জলবায়ুতে ভাল উৎপাদন হয় এবং এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য, যা বিশ্বের বাজারে ব্র্যান্ডিং করা জরুরী।
বি ক্যাঃ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চাচ্ছে। সরকার এসব ব্যাপারে বিশেষ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
ড. জাফরঃ বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা হলোঃ
(১) রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা আনয়ণ ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের স্থান সুদৃঢ়করণের লক্ষ্যে যুগোপযোগী রপ্তানি নীতি ২০১৮-২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সেই মোতাবেক রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে;
(২) রপ্তানি বাজার বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে চীন, ব্রাজিল এবং সিআইএসভূক্ত দেশসমূহের বাজারে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করা হচ্ছে ;
(৩) ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ও সিআইএসভুক্ত দেশে বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ঐ সকল দেশে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধির সমন্বয়ে বাণিজ্যিক মিশন প্রেরণ করা হয়েছে;
(৪) বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত থিম ভিত্তিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের ইমেজ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে;
(৫) দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ, ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনাসহ ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ এবং সিআইএসভুক্ত বিভিন্ন দেশ ও সাউথ আফ্রিকা এবং অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশী সকল পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা আদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে;
(৬) দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনে ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধাসমূহ দূরীকরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ;
(৭) বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুটি কয়েক পণ্য (যথা- নিট ও ওভেন গার্মেন্টস, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং ফুটওয়্যার) এর উপর নির্ভরশীলতা হ্রাসের লক্ষে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ যেমন ফার্নিচার শিল্প, জাহাজ শিল্প, আগর উড্ ও আতর, হীরা কাটা ও পলিশ করা, পাঁপড় ইত্যাদিকে রপ্তানি পণ্যের ঝুঁড়িতে অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং আরো নতুন নতুন পণ্য রপ্তানির আওতায় আনয়নের পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে;
(৮) বাংলাদেশের রপ্তানি খাতকে সম্প্রসারণের জন্য সার্ভিস সেক্টরকে (ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশন,মিড-ওয়াইফ নার্সিং সার্ভিজ টেকনোলজি, কনসালটেশন সার্ভিস, কনস্ট্রাকশন, পর্যটন ইত্যাদি) রপ্তানির আওতায় আনা হয়েছে;
(৯) দেশের রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রমঘণ শিল্প স্থাপনকে উৎসাহিতকরণ, রপ্তানি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন পরীক্ষাগার স্থাপন, বিদ্যুৎ খাত ও দেশের অবকাঠামোর উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে;
(১০) দেশে সমুদ্রবন্দরসমূহকে আরো গতিশীল এবং নতুন সমুদ্রবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে;
(১১) রপ্তানিকারকদেরকে উৎসাহ প্রদানের জন্য নিয়মিতভাবে সিআইপি ও রপ্তানি ট্রফি প্রদান করা হচ্ছে;
(১২) বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার জন্য FTA/ PTA (Free Trade Agreement/ Preferential Trading Arrangement) করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে;
(১৩) রপ্তানিকারকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য সেমিনার/ কর্মশালার আয়োজন অব্যাহত রাখা হয়েছে এবং পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে ;
(১৪) Bangladesh Standard and Testing Institution (BSTI) এর সাথে Bureau of Indian Standard (BIS) এর MoU স্বাক্ষরিত হয়েছে ;
(১৫) রপ্তানিকারকদের সহায়তা করার জন্য Export Development Fund (EDF) এর পরিমাণ ১.২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৩.৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি করা হয়েছে;
(১৬) দেশীয় পণ্যের বৈচিত্র আনয়ন এবং গুণগত মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন অব্যাহত রয়েছে;
(১৭) আমেরিকার জিএসপি সুবিধাসহ অন্যান্য দেশের কাছ থেকে শুল্ক সুবিধা আদায়ের সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নেগোশিয়েশন চলমান রয়েছে।
(১৮) বাণিজ্য সহজিকরণের জন্য বাংলাদেশ ডব্লিউটিও এবং ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এগ্রিমেন্ট এবং এশিয়া প্যাসিফিক দেশ সমূহের মধ্যে paperless Trade Agreement স্বাক্ষর করেছে।
(১৯) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে National Single Window স্থাপন করা হয়েছে।
বি ক্যাঃ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে জিএসপি প্লাস প্রদানের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে ইউরোপীয়ান প্রতিদনিধিদল। এটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন? এর বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কেমন?
ড. জাফরঃ ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক বাংলাদেশকে GSP+ প্রদানের আশ্বাস অবশ্যই আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক দিক। LDC graduation -এর ফলে ২০২৭ সালের পর আমাদের সর্ববৃহৎ রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে GSP সুবিধা থাকবে না। অন্যান্য দেশের প্রদত্ত GSP সুবিধার বহাল থাকার বিষয়ে বাংলাদেশের সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়টিও নিশ্চিত নয়। LDC graduation হলে বাংলাদেশেকে Rules of Origin প্রতিপালনে কঠোর (Stringent) শর্তাদি প্রতিপালন করতে হবে ।
LDC graduation হলে আমাদের সর্ববৃহৎ রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের GSP-তে প্রদত্ত বর্তমান শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাতে হবে, যা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের রপ্তানি খাতকে প্রভাবিত করবে। LDC graduation -এর পরেও বাংলাদেশের GSP সুবিধা ২০২৭ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে ধরে নিলেও পরবর্তীতে GSP+ সুবিধা গ্রহণের জন্য EU -এর সাথে Negotiation -এর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের GSP+ চুক্তির ক্ষেত্রে তিনটি কাজ প্রযোজ্য হয়।
১) ২৭ টি আন্তর্জাতিক কনভেশন স্বাক্ষর।
২) একক দেশ হিসাবে ঊইঅ ব্যবহারের হার ৬.৫% এর মধ্যে থাকা।
৩) রপ্তানি পণ্যের স্বল্প সংখ্যা (product consultation) ২৭ টি আন্তর্জাতিক কনভেশন স্বাক্ষর করা সম্ভব। বাংলাদেশ রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা ও কম । তবে ঊইঅ ব্যবহার হার বাংলাদেশের অনেক বেশী প্রায় ১৫.৫% সুতরাং GSP+ পেতে হলে ঊইঅ Utilization Rate এর ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় প্রয়োজন হবে।
এজন্য আমাদের Labor Law, পরিবেশগত ইস্যু, good governance প্রভৃতি শর্তাবলী পূরণ করতে হবে। এ সকল শর্তাবলী পূরণে বাংলাদেশের সক্ষমতা অর্জনের জন্য কাঠামোগত পরিবর্তন আনয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। GSP+ সুবিধা প্রাপ্তির শর্তাবলীসমূহ প্রতিপালনে বেসরকারী খাতকে উদ্বুদ্ধকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে আমাদের বাণিজ্য সুবিধার দৃষ্টি নিবন্ধিত না রেখে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে ASEAN, CIS Countries, Latin America, Middle East প্রভৃতি দেশের সাথে বাণিজ্য সুবিধা আদায়ে Negotiation -এর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে ।
বি ক্যাঃ বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো দেশ সমাজ উন্নয়ন ও কান্ট্রি ব্রান্ডিং এ কি ভূমিকা রাখতে পারে?
ড. জাফরঃ দেশের যেকোন উন্নয়নমূলক কাজে মিডিয়ার ভূমিকা রয়েছে। মিডিয়ার মাধ্যমে যেকোন বিষয়ে যথাযথ প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। কান্ট্রি ব্রান্ডিং এর ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ভূমিকা অপরিসীম। আর এই বিষয়গুলোকে যথাযথভাবে উপস্থাপনার দায়িত্ব হলো মিডিয়ার। মিডিয়ার মাধ্যমে দেশকে এবং দেশের কার্যক্রমকে যেভাবে তুলে ধরা হয় বা বিশ্বব্যাপী দেখানো হয়, তা বিশ্বজুড়ে মানুষের ধারণাকে প্রভাবিত করতে সহায়তা করে। তাই মিডিয়াগুলি পজিটিভ ও প্রকৃত তথ্য সংবলিত সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্তমান ইন্টারনেট যুগে মিডিয়াতে দেশের নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করা হলে তা অতি সহজেই অন্যান্য দেশের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে যায়। এতে করে দেশের ইমেজ বা ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তাই মিডিয়া এই বিষয়ে সতর্ক থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন ও দেশের অর্জনকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরে দেশ সমাজের সার্বিক উন্নয়ন ও কান্ট্রি ব্রান্ডিং এ ভূমিকা রাখতে পারে ।
বি ক্যাঃ প্রবাসী ও বিদেশিদের দেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে উল্লেখযোগ্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কী সাফল্য এসেছে?
ড. জাফরঃ চারটি সংরক্ষিত সেক্টর ব্যতীত অন্যান্য খাতে বিনিয়োগকে সরকার বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করে থাকে। নিম্নলিখিত শিল্পগুলিতে বিদেশী বিনিয়োগকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দেয়া হয়ঃ
-রপ্তানিমুখী শিল্প
-রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড)
-উচ্চ প্রযুক্তি পণ্য যা আমদানির বিকল্প বা রপ্তানিমুখী হবে।
সুবিধা/ইন্সেন্টিভস
(ক) বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের জন্য বিদেশী ইক্যুইটি অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা দূর করা হয়েছে। অর্থাৎ ১০০ শতাংশ বৈদেশিক ইক্যুইটি অনুমোদিত। অনাবাসী প্রাতিষ্ঠানিক বা স্বতন্ত্র বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জগুলিতে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ করতে পারেন। বিদেশী বিনিয়োগকারী বা সংস্থাগুলি স্থানীয় ব্যাংকগুলির কাছ থেকে সম্পূর্ণ ঋণ গ্রহণ করতে পারে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট সম্পর্কের ভিত্তিতে এই জাতীয় ঋণের শর্তাদি নির্ধারিত হয়ে থাকে।
(খ) বিদেশী সংস্থায় নিযুক্ত বিদেশী টেকনিশিয়ানকে ৩ (তিন) বছর পর্যন্ত ব্যক্তিগত করের আওতাভুক্ত করা হবে না এবং সেই সময়ের বাইরে তার ব্যক্তিগত আয়কর প্রদানের বিষয়টি চুক্তির শর্ত দ্বারা পরিচালিত হবে।
(গ) বিদেশী উৎস থেকে বিনিয়োগকৃত মূলধনের সম্পূর্ণ প্রত্যাবাসন অনুমোদিত হবে। একইভাবে, বৈদেশিক বিনিয়োগে অর্জিত লাভ এবং লভ্যাংশ পুরোপুরি স্থানান্তরিত হতে পারে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যদি তাদের প্রত্যাবর্তনযোগ্য লভ্যাংশ বা উপার্জন পুনরায় বিনিয়োগ করেন তবে সেগুলি নতুন বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশিরা তাদের বেতনের ৫০ শতাংশ অবধি পরিশোধের অধিকারী এবং তাদের সঞ্চয় এবং অবসর গ্রহণের সুবিধাগুলির সম্পূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য সুবিধা ভোগ করবে।
(ঘ) বিদেশী উদ্যোক্তারা তাই tax holiday, রয়্যালিটি প্রদান, ফি ইত্যাদির ক্ষেত্রে দেশীয় উদ্যোক্তাদের মতো একই সুবিধার অধিকারী হবেন।
(ঙ) বিদেশী সংস্থাগুলির বিনিয়োগ বা যৌথ উদ্যোগের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সুপারিশের ভিত্তিতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের ওয়ার্ক পারমিট দেয়ার প্রক্রিয়া কোনও বাধা ছাড়াই পরিচালিত হবে। সম্ভাব্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ৩ বছরের জন্য এন্ট্রি ভিসা প্রদান করা হবে। বিশেষজ্ঞদের ক্ষেত্রে তাদের কর্মকালীন সময়ের পুরো মেয়াদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা জারি করা হবে।
অন্যান্য উদ্দীপনা
-সর্বনিম্ন ৫০০,০০০ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে বা কোনও স্বীকৃত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (অ-প্রত্যাবাসনযোগ্য) ১০,০০০ মার্কিন ডলার স্থানান্তর করে নাগরিকত্ব পাবার সুযোগ।
-সর্বনিম্ন ৭৫,০০০ মার্কিন ডলার (অ-প্রত্যাবাসনযোগ্য) বিনিয়োগ করে স্থায়ী বাসিন্দা বা Permanent residents হওয়ার সুযোগ।
- Thrust Sector এর অধীনে রপ্তানিমুখী শিল্পগুলিকে বিশেষ সুবিধা এবং উদ্যোগের মূলধন সহায়তা সরবরাহ করা হবে। এই সেক্টরগুলির মধ্যে রয়েছে কৃষি ভিত্তিক শিল্প, কৃত্রিম ফুল তৈরি, কম্পিউটার সফটওয়্যার এবং তথ্য প্রযুক্তি, ইলেক্ট্রনিক্স, হিমায়িত খাদ্য, ফুলের চাষ, উপহার সামগ্রী, অবকাঠামো, পাট পণ্য, জুয়েলারী এবং হীরা কাটা ও পালিশ, চামড়া, তেল ও গ্যাস, রেশম চাষ এবং রেশম শিল্প, স্টাফড খেলনা, টেক্সটাইল, পর্যটন।
বি ক্যাঃ নতুন করে কোম্পানি আইন প্রণয়নে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ আইন ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে কতটুকু ভূমিকা রাখবে?
ড. জাফরঃ নতুন করে কোম্পানি আইন প্রণয়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ব্যবসা সহজীকরণ সূচক (Ease of Doing Business Index)-এর উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের সঙ্গে আলোচনাক্রমে এ সম্পর্কিত কর্মকৌশল, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ করছে। এ বিষয়ে কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় বিধান রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বর্তমান কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ সনে প্রণীত হলেও বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের সাথে সামঞ্জস্য এবং যুগোপযোগী রাখার নিমিত্ত নতুন কোম্পানি আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ইতিমধ্যে কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ দুই বার সংশোধন করা হয়েছে। প্রথমবারের সংশোধনী ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
প্রথম সংশোধনীতে কোম্পানি সিলের প্রয়োজনীয়তা নেই বিধায় বর্তমানে কমন সিল বিষয়টি আইনে বিলুপ্ত করা হয়েছে। কমন সিল অবলোপনের বিষয়টি জনস্বার্থে জনগণের অবগতির জন্য দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় ১৯ অক্টোবর ২০২০ এবং ডেইলি স্টার পত্রিকায় ২০ অক্টোবর ২০২০ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য দপ্তরে ব্যাপক প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় সংশোধনীতে বিনিয়োগ প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ ও অধিকতর ব্যবসা-সহজীকরণের লক্ষ্যে কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন)-এ এক ব্যক্তি কোম্পানী (One Person Compaq OPC) এবং Protecting Minority Investment -এর আইনগত সুরক্ষা প্রদানের নিমিত্ত ন্যূনতম ৫% শেয়ার মূলধনের অধিকারী শেয়ারহোল্ডারগণ কোম্পানির এজিএম/বার্ষিক সাধারণ সভায় আলোচ্যসূচি (Agenda) প্রস্তাব করার বিষয় সংযোজন করা হয়েছে।
দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এ একটি আলাদা খ- সংযোজনের মাধ্যমে এক ব্যক্তি কোম্পানি নিবন্ধন, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত (দ্বিতীয় সংশোধন) বিধি-বিধান, হস্তান্তরকারীর ব্যক্তিগত উপস্থিতি বা কমিশনের মাধ্যমে শেয়ার হস্তান্তর দলিলে স্বাক্ষর নিশ্চিত করা, কোম্পানি অবলুপ্তির ক্ষেত্রে পাওনাদারগণের ঋণ পরিশোধের অগ্রাধিকার, কোম্পানি আইনের অধীনে সম্পাদিতব্য কোন কাজ ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সম্পাদন এবং এ ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (২০০৬ সনের ৩৯ নম্বর আইন) (সংশোধনীসহ) এর প্রয়োগ, অন্যূন ১৪ (চৌদ্দ) দিনের পরিবর্তে ২১ (একুশ) দিনের লিখিত নোটিশ দিয়ে কোম্পানীর বার্ষিক সাধারণ সভা আহ্বান এবং ন্যূনতম ৫% শেয়ার মূলধনের অধিকারী শেয়ারহোল্ডারগণ কোম্পানির এজিএম/বার্ষিক সাধারণ সভায় আলোচ্যসূচি (অমবহফধ) প্রস্তাব করতে পারবেন।
আইনের সংশোধন ছাড়াও ব্যবসা সহজীকরণের লক্ষ্যে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নামের ছাড়পত্র, নিবন্ধন এবং ফি প্রদান এই ধাপগুলোকে একটি ধাপে সম্পন্নকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে:
প্রচলিত পদ্ধতি অনুসারে কোম্পানি নিবন্ধনের দুইটি ধাপ রয়েছে; কোম্পানির প্রস্তাবিত নামের ছাড়পত্র গ্রহণ ও নিবন্ধনের আবেদন এবং এ দুইটি ধাপেই আলাদা আলাদা ফি প্রদান করতে হয়। বর্তমানে আরজেএসসি-তে নিবন্ধনসহ সকল সেবার আবেদন অনলাইনে গ্রহণ ও নিষ্পত্তি হয়। এখন নামের ছাড়পত্র স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয় এবং নিবন্ধনের জন্য আবেদনের পর ফি প্রদান করা হলে একদিনের মধ্যেই তা ডিজিটাল স্বাক্ষরযুক্ত নিবন্ধন সনদ গ্রাহকের ই-মেইলে প্রেরণ করা হয়।
কোম্পানি নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরো সহজীকরণের জন্য নামের ছাড়পত্র গ্রহণ, নিবন্ধনের আবেদন এবং ফি প্রদান এই কার্যক্রম/ধাপগুলোকে একটি ধাপে সম্পন্নকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিডা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আরজেএসসি এতদবিষয়ে কর্তৃক কর্মকৌশল নির্ধারণ ও কারিগরি বিষয় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর ২০২০ এর মধ্যে কোম্পানি নিবন্ধন কার্যক্রম একটি ধাপে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
এছাড়া অনলাইনে ফি প্রদানের বিষয়ে সিটি ব্যাংকের ইন্টারনেট পেমেন্ট গেটওয়ে’র সাথে আরজেএসসি’র অনলাইন সিস্টেমের ইন্টিগ্রেশন সম্পন্ন হয়েছে যার পরীক্ষামূলক লেনদেন এর কাজ চলমান রয়েছে। নতুন কোম্পানি আইন প্রণীত হলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে।
বি ক্যাঃ করোনা দুর্যোগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঠিক রাখতে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ জানাবেন কী?
ড. জাফরঃ উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের বরাতে নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, করোনা দুর্যোগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঠিক রাখতে, সবার হাতে ন্যায্যমূল্যে পণ্য পৌঁছাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছেঃ
০১। রেকর্ড পরিমাণ পণ্য টিসিবির মাধ্যমে ক্রয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান।
০২। সারা বাংলাদেশে বিরতিহীনভাবে ট্রাকসেলের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী বিক্রয় করা হচ্ছে।
০৩। শুক্র-শনিবারসহ সপ্তাহে ৭ দিন বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
০৪। তাছাড়া, এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে ই-কমার্সের মাধ্যমে পেঁয়াজ ও আলু বিক্রি করা হচ্ছে।
০৫। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত দপ্তর/ সংস্থার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে করোনা টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, সরবরাহ, স্টক বিবেচনায় সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
০৬। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিকারক, পাইকারি ও আড়তদারদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়মিত সভা করা হচ্ছে।
০৭। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ, চেইন ও পণ্য পরিবহন ঠিক রাখতে এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি মন্ত্রণালয়, পোর্ট অথরিটি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ আরো অনেক পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
০৮। পোর্ট ও বিভিন্ন জেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ, স্টক ও মূল্য পর্যালোচনার জন্য নিয়মিত কর্মকর্তা প্রেরণ অব্যাহত আছে।
০৯। বাণিজ্য সচিব মহোদয় কর্তৃক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ, মূল্য ও স্টক পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য বেশ কয়েকটি জেলা পরিদর্শন করা হয়েছে।
বি ক্যাঃ রপ্তানি বাড়াতে এবং নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কী করণীয় বলে আপনি মনে করেন?
ড. জাফরঃ বাংলাদেশের এক্সপোর্ট বাস্কেট মূলত নির্দিষ্ট কিছু পণ্য বা সেক্টরের উপর নির্ভরশীল। এক তৈরি পোশাক খাত থেকেই মোট রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশ রপ্তানি হয়ে থাকে। তাই রপ্তানি বহুমুখীকরণ বা এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন এর বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। বেসরকারী উদ্যোক্তাগণ এই বিষয়ে এগিয়ে আসলে কাজটি সহজ হবে। বিভিন্ন দেশের বাজার পর্যালোচনা করে নতুন নতুন পণ্য নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। এই বিষয়ে রপ্তানি নীতি ২০১৮-২১এও বিভিন্ন রকমের প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে। তাই এই ক্ষেত্রে গবেষণার বিকল্প নেই। শিল্পে বেসরকারী পর্যায়ের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, বিশেষ করে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়ের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে।
চলমান বাজারসমূহের সাথে বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশের সুনামের কথা মাথায় রেখে সততা, নিষ্ঠা ও যথাযথ কমপ্লায়েন্স মেনে ব্যবসা করাটাও জরুরী। কারণ দেশের সুনাম অক্ষুণœ রেখে কাজ করতে পারলে এমনিতেই নতুন নতুন দেশের ব্যবসায়ীগণ এদেশের ব্যবসায়ীদের সাথে কাজ করতে উৎসাহী হবেন। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতের রপ্তানির সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জসমূহের বিষয়ে সম্যক অবহিত থাকা এবং আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থার সাথে পরিচিত থাকা একান্ত প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চলনসই যোগাযোগের সক্ষমতা থাকা এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিষয়েও জ্ঞান থাকা দরকার ।
পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্ভাবনাময় নতুন বাজার যেমন ব্রাজিল, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, চিলি এবং রাশিয়াসহ অপরাপর উন্নত দেশে পণ্যের বাজার সৃষ্টির জন্য সরকার প্রেরিত বিভিন্ন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলে বেসরকারী পর্যায়ের প্রতিনিধির নিয়মিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমিক ও কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। পণ্যের কাঁচামালের স্বল্পমূল্যে আমদানি, রপ্তানি বাজার সংক্রান্ত তথ্যাদি ও প্রযুক্তি সম্পর্কে উদ্যোক্তাদের তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে পণ্য বহুমুখীকরণের উপর গুরুত্ব প্রদান করা জরুরী।
বি ক্যাঃ চীন, ভারত, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে । এই ঘাটতি কমাতে বিশেষ কোন উদ্যোগ আছে কী?
ড. জাফরঃ চীন, ভারত, সিঙ্গাপুর ও জাপান হতে বাংলাদেশ মূলতঃ রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল ও মুলধন যন্ত্রপাতি আমদানি করে থাকে, যার কারণে এ সকল দেশের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বেশি। South Asian Free Trade Agreement (SAFTA) -এর আওতায় ভারতে, Asia Pacific Trade Area (APTA)-এর আওতায় চীন এবং GSP Scheme -এর আওতায় জাপান বাংলাদেশকে পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদান করলেও লেনদেনের ভারসাম্য উন্নীতকরণে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। দীর্ঘ নেগোসিয়েশনের পর গত ১ জুলাই ২০২০ তারিখ থেকে চীন স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে World Trade Organization (WTO) এর আওতায় বাংলাদেশকে শর্তহীন ভাবে ৯৭% পণ্যে (অর্থাৎ সর্বমোট ৮,২৫৬টি HS Code) শুল্ক-মুক্ত কোটা-মুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদান করেছে। তাছাড়া, জাপানের সাথে দ্বি-পাক্ষিক Free Trade Agreement (FTA)/Preferential Trade Agreement (PTA) করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ।
ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের রপ্তানি খাত মোটামুটি একই ধরনের। ইন্দোনেশিয়া মূলত Value added তৈরী পোষাক রপ্তানি করে থাকে। এ দেশ হতে বাংলাদেশ ক্যামিক্যাল, ফুড স্টাফ, ভেজিটেবল ওয়েল, কাঠ প্রভৃতি আমদানি করে। এ গুলোও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস এবং রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল হওয়ায় লেনদেনের ভারসাম্য বাংলাদেশের অনুকূলে নয়। ইন্দোনেশিয়ার সাথে বাংলাদেশের Preferential Trade Agreement (PTA) করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বি ক্যাঃ সুদীর্ঘ ৩ যুগ / ৩৬ বছর থেকে নিয়মিত প্রকাশিত শিক্ষা এ যুব উন্নয়নমূলক একমাত্র নিয়মিত পত্রিকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এর প্রকাশনা সম্পর্কে আপনার পরামর্শ জানতে চাচ্ছি।
ড. জাফরঃ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকাটি শিক্ষার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিউজ ও প্রতিবেদন প্রকাশ করছে এবং যুবসমাজের ব্যক্তিত্ব গঠনসহ বিভিন্ন মতামত ও পরামর্শ দিয়ে শিক্ষা সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণেও ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনেও কাজ করে যাচ্ছে। পত্রিকাটি দেশের ব্রান্ডিং বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং তরুণদের মধ্যে কান্ট্রি ব্রান্ডিং বিষয়ে সচেতনা বাড়াতে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।