২৫ জুন, ২০২২। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে ঢাকা-মাওয়া এবং জাজিরা টোল প্লাজা থেকে শরিয়তপুর ও ভাঙ্গা মহাসড়কের দু’পাশে নানা ধরনের ব্যানার, ফেষ্টুন ও বিলবোর্ড লাগানো হয়। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে নদীর দু’পাশে ‘উৎসবমূখর পরিবেশ’ সৃষ্টি হয়। নদীতে নৌকাসহ নানাবাহনকে নানা রঙ্গে সাজানো হয়। আলোকসজ্জার ব্যবস্থা হয়। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ৫টি আনুষ্ঠানিকতায় পালনের ব্যবস্থা করা হয়। ১. মাওয়া পয়েন্টে সুধী সমাবেশের আয়োজন, ২. মাওয়া পয়েন্টে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন, ৩. মাঝ পদ্মা সেতুতে দাঁড়িয়ে বিমান বাহিনী ও পুলিশের বিমান ও হেলিকপ্টার ডিসপ্লে, ৪. জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর আরেকটি ফলক উন্মোচন এবং সর্বশেষ ৫. জাজিরা পয়েন্টে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা।
মাওয়া পয়েন্টে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন স্পট। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফর সঙ্গী ও সংশ্লিষ্ট ভিআইপিদের নিয়ে ফলক উন্মোচন মঞ্চে এলেন। ফুরফুরা ও খোশ মেজাজ। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদকে নিয়ে উদ্বোধনী রেখায় দাঁড়ালেন। সাথে যোগ দিলেন সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম।
অকুস্থলের একটু দূরে দেখা গেল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়াকে। প্রধানমন্ত্রী- সৈয়দ আবুল হোসেনকে ইশারায় কাছে ডাকলেন। কথা বললেন। কি বললেন শোনা গেল না। তবে পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রের বিষয় ছিল বলেই অনুমেয়। দেখা গেল সৈয়দ আবুল হোসেন এরই ফাঁকে তাঁর নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পায়ে সালাম দিতে। এক অপূর্ব আনন্দঘন পরিবেশ। মনে হচ্ছিল- এ দিনটির জন্যই দু’যুগ অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৈয়দ আবুল হোসেনকে পাশে নিয়েই সেতু উদ্বোধনের সুইচ টিপলেন। ধীরে ধীরে লালকাপড়ে ঢাকা ফলক উন্মোচিত হলো। আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণের দুয়ার খুলে গেল। চারিদিকে আকাশ-বাতাস জয়ধ্বনীতে মুখরিত হলো। পলকে সারা দেশ সড়কপথে যুক্ত হয়ে গেল। এ আনন্দঘন অনুষ্ঠান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর খুশি মুখখানা- দেশবাসী, বিশ্ববাসী অবলোকন করলো। বাংলাদেশ এক উন্নয়ন, যোগাযোগের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলো। অতঃপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর প্রথম যাত্রী হিসেবে সেতু দিয়ে জাজিরার দিকে রওয়ানা হলেন। আবেগী মন এবং খুশির আমেজ নিয়ে, জন-দাবী পূরনের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের আনন্দ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, দেশের অগণিত মানুষের একমাত্র নেত্রী আত্মবিশ্বাসী দৃঢ়তা নিয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণে এগুতে লাগলেন।
পদ্মা সেতুর মাঝ বরাবর। প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির বহর মাঝ পদ্মা সেতুতে এসেই দাঁড়িয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী গাড়ি থেকে নামলেন। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদও নামলেন। একে একে তাঁর সফরসঙ্গী সবাই। দেখা গেল- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে। তাঁদের অনুভূতি, আনন্দ উচ্ছাস তখন আকাশ ছোঁয়া। শুরু হলে বিমান বাহিনী ও পুলিশের বিমান ও হ্যালিকপ্টারে আলোর ডিসপ্লে। সারা আকাশ রঙে ছেয়ে গেল। এক অদ্ভুত বিস্ময়কর অনুভূতি সবার মাঝে। এক পর্যায়ে সব সফর সংগী দূরে সরে এলেন। মা ও মেয়ে একান্তে দৃশ্য উপভোগ করলেন। প্রধানমন্ত্রী টেলিফোনে ভিডিও কনফারেন্স করলেন- হয়তো ছেলে জয় বা বোন রেহানার সাথে। মা-মেয়ে সেলফি তুললেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও, মনে হলো, কয়েক সেকেন্ডের অবসর কাটালেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কথা ও চালচলনে সর্বত্র রাষ্ট্রনায়োকোচিত এক অপূর্ব নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গেল।
জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় ফলক উন্মোচন। এখানেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পাশে নিয়ে উদ্বোধনী সুইচ টিপলেন। মুনাজাত করলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুভূতিতে প্রকাশ পেল- এক গভীর প্রত্যয়- We have won. কোন কিছু করতে পারা বা বিজয়ের আনন্দ ব্যাখ্যা করা দুঃসাধ্য। এর আগে ঢাকা থেকে হ্যালিকপ্টারে মাওয়া পৌছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান এবং সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া- প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে হ্যালিকপ্টারে মাওয়া আসেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে রিসিভ করেন সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার থেকে নেমে সরাসরি ‘সুধিসমাবেশ মঞ্চে’ আসেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্বাগত বক্তব্য দেন। সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্য রাখেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেন। বক্তব্যে শেখ হাসিনা “শত প্রতিকুলতার মধ্যেও পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন তাঁদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, “এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-ষ্টিল-লোহার-কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর জেদ”।
ভাষণে পদ্মা সেতুর ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, “পদ্মা সেতু যখন আমরা শুরু করি, তখন সেতুর নির্মাণ কাজ আরম্ভের পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে ষড়যন্ত্র আবিস্কার করে। মিথ্যা দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে একেকটি মানুষকে, একেকটি পরিবারকে মানসিক যন্ত্রনা দেয়া হয়। আমার ছোট বোন শেখ রেহানা, আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আমার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও তাঁর পবিবার এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনেতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ও সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়। দেশে-বিদেশে সবাই যে যন্ত্রণা ভোগ করেছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে- সেজন্য আমি তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই”।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফর সঙ্গী হিসেবে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। পদ্মা সেতুর দু’পাড়ে স্থাপিত ফলক উন্মোচনের সময় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান এবং সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে তাঁর পাশে রেখেছিলেন। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পাশে রেখে বিমানবাহিনীর এ্যাক্রোবেট দেখলেন। জাজিরায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সৈয়দ আবুল হোসেনকে পাশে বসালেন। সে জনসভার ভাষণের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন- “আপনাদের সন্তান সৈয়দ আবুল হোসেন বিনাদোষে শাস্তিভোগ করেছেন, মর্মবেদনায় ভুগেছেন”। সৈয়দ আবুল হোসেনের প্রতি এ আগ্রহ, এই স্নেহের দৃষ্টি এবং কষ্টের কথা, বিনাদোষে সরে যাওয়ার কথা- তিনি মনে রেখে যে উপহার তাঁকে দিলেন -তা দেশবাসী, বিশ্ববাসী এবং সংশ্লিষ্ট সবাই দেখেছেন। এ দৃশ্য দেখে সবাইর চোখে পানি এসেছে। এইতো সেই মহান নেতা- যে নেতা শুধু নিজের নয়- সবাইকে নিয়ে ভাবেন। কর্মীকে নিয়ে, জনগণকে নিয়ে ভাবেন। মূহুর্তেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। তিনি সর্বজনের ভালোবাসায় সিক্ত হন। সবাইকে বলতে শোনা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের একমাত্র নেত্রী, সাহসী নেত্রী, যার বিকল্প এদেশে বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কোন নেতার জন্ম হয়নি। তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আমাদের ‘পদ্মা সেতু’ দিয়েছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছেন, আমাদের উন্নয়ন দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘজীবী করুন। প্রধানমন্ত্রী আজীবন আমাদের নেতা থাকুন।
আমরা, এদেশের মানুষ, অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে এবং ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সমর্থ হয়েছি। এই সেতু আমাদের অহংকার। আবেগ, সহনশীলতা, সাহসিকতা, প্রত্যয় ও জেদের জন্যই পদ্মা সেতু তৈরী করতে পেরেছি। ষড়যন্ত্রে কখনও হতাশ হইনি। আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলেছি। শেষ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রের অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর পথে যাত্রা করতে সক্ষম হয়েছি। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ বলেছিলেন ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’। আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি। পারবেও না। আমরা বিজয়ী হয়েছি। We have won. আমরা কারো কাছে মাথা নোয়াইনি, আমরা কোনদিন মাথা নোয়াবোও না।
বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রশংসা
আজ বিশ্বব্যাপী পদ্মা সেতুর জন্য শেখ হাসিনা অভিনন্দিত। পদ্মা সেতু বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে দিয়েছে। বাইডেন প্রশাসন শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে একত্রে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। ভারত দু’দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় এগিয়ে নিতে চায়। পাকিস্তানও পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। পাটুরিয়া পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। জাইকা বলেছে, বাংলাদেশ তার সক্ষমতা দেখিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেছেন- “পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জন্য বিশাল অর্জন। বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন অংশীদার। সেতু নির্মাণে আমরা খুব খুশি। দীর্ঘদিনের উন্নয়নের বন্ধু হিসেবে আমরা উচ্ছসিত”। জাপান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান এবং কুয়েতও পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃত্বের কাতারে আসীন হয়েছেন। দেশের নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণে সবাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভ‚য়সী প্রশংসা করছে। আড়ালে, আবডালে দেশের উন্নয়নের জননী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই- সর্বমঙ্গলে এ ধরনের কথার প্রতিধ্বনী শোনা যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আবুল হোসেন
ফলক উম্মোচনের সময় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন একটু দূরে দাঁড়ালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে কাছে ডেকে নেন। তাঁর সাথে কিছু কথা বলেন। সম্ভবত পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উচ্চসিত দেখাচ্ছিল। কৃতজ্ঞতা প্রকাশে সৈয়দ আবুল হোসেন- প্রধানমন্ত্রীকে কদমবুচি করেন। এ দৃশ্য টেলিভিশনের পর্দায় জাতি দেখেছে। সৈয়দ আবুল হোসেন একজন ভালো মানুষ। একজন সৎ ও দক্ষ মানুষ। তিনি বর্তমানে রাজনীতিতে নেই। এমপিও নন। তবুও তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য কাজ করছেন। তিনি একজন শেখ মুজিবের আদর্শের কর্মী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অটল বিশ্বাসী মানুষ।
সৈয়দ আবুল হোসেনঃ
পদ্মা সেতুর ঐতিহাসিক মুহুর্তেও সম্পৃক্ত
এখানে উল্লেখ্য যে, এক. সৈয়দ আবুল হোসেন ২০০৯ সালে যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হন। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পড়ে তাঁর উপর। তিনি যথাযথ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর প্রস্তুতিপর্ব কাজ দু’বছরে শেষ করেন। ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পূণর্বাসনসহ এপ্রোচ রোড নির্মাণ করেন। দুই. পরামর্শক নিয়োগ ও সেতু নির্মাণ ঠিকাদার নিয়োগ ও প্রাকযোগ্যতা বাছাইপূর্ব চুড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসেন। তিন. বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থার সাথে অর্থায়নের চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চার. হঠাৎ মাঝ পদ্মায় এসে বিশ্বব্যাংক প্রথমে দুর্নীতির কথা বলে। পরে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের কথা বলে। পরে দুর্নীতির আশংকার কথা বলে। কিন্তু এর স্বপক্ষে কোন প্রমান দিতে পারেনি। পাঁচ. এসব মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করে এবং শর্ত দেয় সৈয়দ আবুল হোসেন যোগাযোগমন্ত্রীর পদ থেকে সরে গেলে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে ফিরে আসবে। ছয়. এমতাবস্থায় কোন ধরনের অন্যায়, দুর্নীতি না করা সত্বেও দেশের স্বার্থে, পদ্মা সেতুর স্বার্থে সৈয়দ আবুল হোসেন মন্ত্রীত্ব থেকে নিজে পদত্যাগ করেন। এরপরও বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে ফিরে আসেনি। সাত. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের পার্লস বুঝতে পেরে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর ঘোষণা দেন। আট. অতঃপর নিজস্ব অর্থায়নে যখন ২০১৫ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ উদ্বোধন হয়- তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- সৈয়দ আবুল হোসেন, মন্ত্রী না হলেও, তাঁকে সাথে নিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। নয়. ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনীর প্রতিটি অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৈয়দ আবুল হোসেনকে পাশে রেখেছেন। সৈয়দ আবুল হোসেনের প্রতি বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ যে অসত্য ছিল, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ছিল তা প্রমাণিত হয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর সময় বিশ্বব্যাংকের অভিমত, বিশ্বব্যাংকের বক্তব্য তার প্রতিধ্বনী। দশ. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিটি ঐতিহাসিক মূহুর্তে সম্পৃক্ত করেছেন। একজন কর্মীর প্রতি, একজন সাবেক মন্ত্রীর প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজের মহত্বকে, দেশের মানুষের ইচ্ছেকে প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। জয়তু শেখ হাসিনা।
সৈয়দ আবুল হোসেনের প্রতিক্রিয়া
পদ্মা সেতু উদ্বোধন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে সাথে নিয়ে পদ্মা সেতুর ফলক উম্মোচন এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে পদ্মা সেতু পারাপারে জাজিয়া পয়েন্টে যাওয়া প্রসঙ্গে নিজ প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকাকে সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন- পদ্মা সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শ্রেষ্ঠ উপহার। তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নপূরণ করেছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ার সূচনায় আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। আজ তিনি পদ্মা সেতু চালুর দিনে আমাকে যেভাবে পুরুস্কৃত করলেন, আমাকে পদ্মা সেতুর প্রতিটি অনুষ্ঠানের সাথে যেভাবে জড়িয়ে রাখলেন, সেজন্য আমি মাননীয় নেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি চিরদিন তাঁর প্রতি অনুগত থাকবো। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে যেমন বাংলাদেশের সৃষ্টি হতো না, ঠিক তেমনি জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্ম না হলে নিজস্ব অর্থায়ণে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হতো না। এজন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ঐকান্তিক প্রীতি, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
ষড়যন্ত্র না হলে আমি যেভাবে কাজ করেছি, কাজের সে ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু সকলের জন্য উন্মুক্ত করা যেতো। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে তা ৯ বছর পিছিয়ে গেল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা আজ সম্ভব হয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ ছিল ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। অনেকেরই রাজনৈতিক এজেন্ডা ছিল শেখ হাসিনা সরকারের মেয়াদকালের মধ্যে যাতে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হয়। তাই ষড়যন্ত্রকারীরা ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে পদ্মা সেতু নির্মাণ ও বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ করে। বিলম্বিত করার চেষ্টা করে। যাতে পরবর্তী অন্য কোন সরকারের আমলে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়। একথা সত্যি যে, টানা তিন মেয়াদে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে আজও পদ্মা সেতু নির্মাণ হতো না।
সৈয়দ আবুল হোসেন আবেগ-আপ্লুত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা প্রতিনিধিকে বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের গর্বের সম্পদ, গৌরবের প্রতীক। পদ্মা সেতু আমাদের সংকল্প ও সক্ষমতার প্রতীক। পদ্মা সেতু আমাদের আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। পদ্মা সেতু আমাদের সততার প্রতীক। পদ্মা সেতু আমাদের অপমানের প্রতিশোধ। পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রের জবাব। পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশপ্রেম, অদম্য ইচ্ছা ও সাহসী চ্যালেঞ্জের ফসল। পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক দুরদর্শিতা ও সততার অনন্য উদাহরণ। পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার অনন্য অর্জন। সংকল্প ও আত্মমর্যাদার নাম পদ্মা সেতু। নয়া বাংলাদেশের প্রতীক পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু সোনার বাংলার নতুন সূর্যোদয়। পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার কালজয়ী মহাকাব্য।
একজন সৎ ও দক্ষ মানুষ সৈয়দ আবুল হোসেন
সৈয়দ আবুল হোসেন একজন সফল ব্যবসায়ী, সৎ ও দক্ষ মানুষ; একজন সমাজকর্মী; একজন বিদগ্ধ ও প্রজ্ঞাবান লেখক; একজন শিক্ষা-উদ্যোক্তা; একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনে সবসময়ই দেশপ্রেমের উজ্জল স্বাক্ষর রাখেন। পদ্মা সেতু নির্মাণে তিনি অবিরাম কাজ করেছেন। কাজের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করেছেন। প্রতিটি স্তরে সৎ ও ভালো লোকদের নিয়োগ দেন। তিনি দক্ষ এবং ভালো মানুষ বলে পরিচিতি স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বদের পদ্মা সেতু নির্মাণ ও আনুষাঙ্গিক প্রস্তুতি কাজের দায়িত্ব দেন। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর মতো গুণী ব্যক্তির নেতৃত্বে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলীদের কারিগরি কমিটিতে স্থান দেন। তাঁদের সবাইকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেন। যোগাযোগমন্ত্রী বা সরকারের কারো পক্ষ থেকে তাঁদের উপর নজরদারি ছিল না। খোদ বিশ্বব্যাংক কখনো তাঁদের বিরুদ্ধে, কারিগরি কমিটির বিরুদ্ধে কোন কথা বলেনি। যে কার্যক্রমে তারা সরকার ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে- সেই কাজ যারা মূল্যায়ন করেছেন সেই কারিগরি কমিটিকে কোন অপবাদ বিশ্বব্যাংক দেয়নি। অথচ পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ ও ঠিকাদার নিয়োগে তাঁরাই ছিল সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। কারিগরি কমিটির যদি কোন ত্রুটি বা দুর্নীতি না থাকে, তাহলে এসব কাজে দুর্নীতির প্রশ্ন ছিল অবান্তর।
পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক নাটক করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধু সৈয়দ আবুল হোসেনকে হেয় প্রতিপন্ন করা নয়, তাদের বৃহত্তর লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারকে অসম্মানিত করা, সরকারকে বিতর্কিত করা। সরকারকে ফেলে দেয়া। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের এ নাটকে আস্থা রাখেননি। ২০১২ সালে হিমালয়ের মতো সাহসী হয়ে উঠেন এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রমান করেন, পদ্মা সেতুতে কোন দুর্নীতি হয়নি। তিনি সত্য ও সততার স্মারক।
ষড়যন্ত্র না হলে ২০১১ সালেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হতো এবং ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু চালু হতো। ষড়যন্ত্রের কারণে ২০১৫ সালে নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়। আজ ৯ বছরের বিলম্বে পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরপর তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না থাকলে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন অধরা থেকে যেতো। মূলত শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য আল্লাহর প্রতিনিধি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ‘উন্নত দেশের’ মর্যাদা পাবে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে আগামীর উন্নত দেশে।