বিশেষ খবর



Upcoming Event

পদ্মা সেতু চালুর ফলে তীব্র যানজটের শঙ্কা মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি

ক্যাম্পাস ডেস্ক প্রতিবেদন

স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পর যানবাহন চলাচল শুরু হলে তীব্র যানজট হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজধানী ঢাকাসহ রাস্তায় যাতে যানজটের সৃষ্টি না হয় সেজন্য পরিকল্পনা করছে সরকার। যানজট মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জেলার সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হবে। এতে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলসহ ৪১ জেলার যোগাযোগ সহজ হবে। একটি সরকারি সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিদিন ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার যানবাহন ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে। পদ্মা সেতুর ফলে এই সংখ্যা প্রতিদিন আনুমানিক ২৫ হাজারে উন্নীত হবে। দশ বছরের মধ্যে তা প্রতিদিন ৪৫ হাজারে দাঁড়াবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। পদ্মা সেতু যানবাহনের জন্য খুলে দেয়ার ফলে নদী পারাপারে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হবে, জীবনের ঝুঁকিও কমে আসবে। কিন্তু রাজধানীতে তুলনামূলক গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাবে। এর ফলে কোন্ রাস্তায় কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে, তা চিহ্নিত করে অগ্রিম ব্যবস্থা নেয়া শুরু করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে। রাজধানীতে প্রবেশের রাস্তাগুলোতে যাতে যানজটের সৃষ্টি না হয় সেজন্য বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষা, সুপারিশ ও আশু করনীয় নিয়ে সরকার যে কর্মপরিকল্পনা করছে তার বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও রাজধানী ঢাকার মধ্যে যাতায়াতের সময় কমিয়ে দেবে বটে। কিন্তু এই সেতু চালু হলে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হতে পারে বলেও শঙ্কা রয়েছে। সেতুটি উদ্বোধনের পর থেকে কয়েক বছরের মধ্যে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে এক্সপ্রেসওয়ের সংক্ষিপ্ত রুটের কারণে ঢাকা-আরিচা রুট ৪০% আকর্ষণ হারাবে। এর ফলে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মসৃণ যাত্রার পর অভ্যন্তরীণ যানবাহনগুলো রাজধানীর দুটি প্রবেশপথ- যাত্রাবাড়ী ও বাবুবাজারে আটকে থাকবে। যার ফলে এই রুটে ভ্রমণে অতিরিক্ত সময় লেগে যাবে।

পরিকল্পনাঃ রাজধানীর যানজট এড়াতে একটি আউটার রিং রোডের পরিকল্পনা করেছে সরকার। যেখান থেকে অন্য জেলাগামী যানবাহনকে রাজধানীর প্রবেশমুখের আগে ডাইভার্ট করা যায়। স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান ফর ঢাকার (আরএসটিপি) আওতায় রাজধানীতে যানজট কমাতে পদ্মা সেতু থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বাইপাস হিসেবে রিং রোডের দক্ষিণ অংশের উন্নয়ন করা ছিল সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তবে এই সড়কটির নির্মাণকাজ এখনও শুরু হয়নি। সরকার সবেমাত্র সড়কটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ করে একটি নক্সা প্রণয়ন করেছে। যেহেতু এটি সম্প‚র্ণ নতুন রাস্তা হতে যাচ্ছে তাই কর্তৃপক্ষকে আগে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। জমি প্রস্তুত হলেই নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

দীর্ঘ ৪৮ কিলোমিটার রাস্তাই সমাধানঃ সড়ক ও জনপথ বিভাগ স‚ত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত ৪৮ কিলোমিটার সড়কটি সাভারের হেমায়েতপুর থেকে শুরু হয়ে কেরানীগঞ্জের কালাকান্দিতে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে মিলিত হবে। কালাকান্দি থেকে এটি সৈয়দপুর ও মদনপুরে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর দিকে যাবে, যা এন৫, এন৮ এবং এন১-কে সংযুক্ত করবে। পদ্মা সেতু থেকে নামার পর অন্য জেলাগামী যানবাহন এসব সড়কে গেলে তাদের আর রাজধানীতে প্রবেশ করা লাগবে না। ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ কিলোমিটার রাস্তা তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু থেকে মদনপুর পর্যন্ত আগে থেকেই আছে, তবে রাস্তাটির আরও উন্নয়নের প্রয়োজন। নতুন ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি হেমায়েতপুর থেকে কালাকান্দি হয়ে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু পর্যন্ত চলবে। এই ৩৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করতে হবে। এদিকে মদনপুর থেকে একটি ঢাকা বাইপাস সড়ক রয়েছে, যা গাজীপুরের কোড্ডা পর্যন্ত যায়, সড়কটি আউটার রিং রোডের একটি অংশ এবং এই চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে চলছে। রিং রোডের আরেকটি অংশ হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর থেকে বাইপাইল থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত যাবে, এটিও রিং রোডের একটি অংশ, যা আগে থেকেই আছে। সুতরাং, আউটার রিং রোডের ১৩২ কিলোমিটারের মধ্যে, শহরের চারপাশে ট্রাফিক ডাইভার্ট করার জন্য আমাদের মাত্র ৪৮ কিলোমিটার নির্মাণ এবং উন্নয়ন করতে হবে। নতুন ৩৬ কিলোমিটার রাস্তাটি জাপান সরকার-টু-সরকার (জিটুজি) ভিত্তিতে নির্মাণ করবে। প্রথমে কালাকান্দি থেকে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে এবং বাকি অংশ পর্যায়ক্রমে নির্মাণ করা হবে। শীতলক্ষ্যা থেকে মদনপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার বিদ্যমান অংশের উন্নয়ন করবে আরএইচডি। অন্যদিকে, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হতে আরও ছয় মাস সময় লাগতে পারে। ব্রিজ থেকে কোড্ডা পর্যন্ত রাস্তা তৈরির কাজ ইতোমধ্যেই চলছে। যা শেষ হতে আরও তিন বছর লাগবে। আউটার রিং রোডের সামগ্রিক দক্ষিণ অংশে ভ‚মি মালিকদের জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণসহ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। বাজেটের মধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকা নতুন রাস্তা এবং জমি অধিগ্রহণে ব্যয় করা হবে এবং আরএইচডি ১২ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়নে ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। ডবল ফ্লাইওভার এবং লুপসহ মদনপুরে একটি বিশাল মোড় থাকবে।

দুই বছরের মধ্যে শুরু হতে পারে নতুন সড়ক নির্মাণ কাজঃ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে উন্নয়ন কাজ দুই বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমানে জাপানী প্রকৌশলীরা পরিকল্পনাটি যাচাই-বাছাই করছেন। শিগগিরই জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকাকালীন, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জকে সংযোগকারী মুক্তারপুর সেতুর পাশে জাপান সেখানে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করবে। সরকারের প্রাথমিকভাবে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুই বছর সময় লাগবে এবং রাস্তা নির্মাণে আরও দুই বছর সময় লাগবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

সরকার একটি এ্যাডহক সমাধান নিয়ে কাজ করছেঃ যেহেতু আউটার রিং রোডের দক্ষিণ অংশের নির্মাণ কাজ শেষ করতে বিলম্ব হবে বিধায় সরকার এখন পোস্তগোলা-চাষাঢ়া এবং গাবতলী-সদরঘাট সড়কসহ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আরও ভালো অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য বিদ্যমান কিছু রাস্তার উন্নয়নে মনোনিবেশ করছে। এ সংযোগে গাবতলী সেতুকে আট লেনে উন্নীত করা হবে। এটি গ্রিডলকগুলোকে সহজ করতে সাহায্য করবে। কারণ, যানবাহনগুলোকে সেখানে ঘুরিয়ে দেয়া যেতে পারে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দাবি। পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রাবাড়ী থেকে মূল যানজট শুরু হবে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। ইকুরিয়া থেকে যান চলাচল করবে পোস্তগোলা ও বাবুবাজারে। গাবতলীতে যানবাহন চলাচলের জন্য বাবুবাজারের সড়ক ও ছোট ব্রিজগুলো মেরামত করা হবে। পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করা হবে। যাত্রাবাড়ীর সাইনবোর্ড থেকে চট্টগ্রামমুখী রাস্তা ছয় লেনে উন্নীত করা হবে। বাবুবাজার সেতুটি শহরের পশ্চিমদিকে গাবতলী, ধানমন্ডি ও কল্যাণপুরে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হবে। সেতু থেকে রাস্তা প্রশস্ত করা হবে। সব সবজি বাজার ও বাদামতলী ফলের বাজার অন্যত্র স্থানান্তর করা হতে পারে। এছাড়া কেরানীগঞ্জে স্থানীয় রাস্তা আছে যেগুলো উন্নত করা হবে যাতে বসিলা দিয়েও যানবাহন চলাচল করতে পারে।

পদ্মা সেতু চালুর পর যানজটের সমাধানের পরিকল্পনাঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক কর্মকর্তা বলেছেন, এমনিতেই রাজধানীতে ঢোকার প্রতিটি রাস্তায় যানজট রয়েছে। পদ্মা সেতুর ফলে বিশেষ করে ওয়ারী, মতিঝিল ও লালবাগ দিয়ে গাড়িগুলো রাজধানীতে প্রবেশ করবে। এতে করে উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে যাতায়াত ও গাড়ির গতি ঠিক রাখতে রাস্তায় সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। মাওয়া পার হওয়ার পর যানবাহনগুলো যাতে স্বল্প সময়ে রাজধানীতে ঢুকতে পারে, টার্মিনালে পৌঁছতে পারে, যেন দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। টার্মিনালগুলোতে ধারণক্ষমতা পর্যালোচনা করে গাড়ির সংখ্যা পর্যালোচনার পাশাপাশি কী ধরনের বাড়তি গাড়ির চাপ হতে পারে, সে বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে। সব বিষয় মাথায় রেখেই গাড়ির চাপ সামলে কীভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যায়, গাড়িগুলোর আসা-যাওয়া নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা এবং কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ট্রাফিক বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে একটি পরিকল্পনা পেশ করেছে।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img