বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পরও দৃশ্যত কোনো সমাধান হয়নি। শিক্ষা ক্যাডারদের চাপ, শিক্ষার্থীদের বড় অংশের অভিযোগে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করতে প্রভাব ফেলেছে। এমন অবস্থায় সাত কলেজ নিয়ে আবারও আশার গল্প শোনালো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারের শেষ সময়ে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। অথচ এই কলেজগুলোতে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা এখনো ক্লাস শুরু করতে পারেনি। অন্যদিকে আগামী শিক্ষাবর্ষে ভর্তির বিষয়েও কোনো অগ্রগতি নেই। এমন অবস্থায় ১৮ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলসহ রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন একটি স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ঢাকার কলেজগুলোর মানসম্মত শিক্ষা, সময়মতো পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশের দীর্ঘদিনের যৌক্তিক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সাত কলেজ নিয়ে চাপে পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একাধিক প্রেশার গ্রæপ একাধিক মতামত দিয়েছে। এই প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক পক্ষ উত্তেজিত। সেটি প্রশমন করতেই নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়। একই সঙ্গে কেউ যেন হতাশ না হয় সে বিষয়ও মন্ত্রণালয় নজরে রাখছে। ঢাকা কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ এবং সাত কলেজের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, চলতি বছরের সাত কলেজে ভর্তি পরীক্ষার পর জুলাইতে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। চার মাস শেষ হলেও এখনো ক্লাস শুরু হয়নি। কারণ এখন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধিভুক্তি আর নেই। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলমান রাখতে মন্ত্রণালয় এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। কারা ক্লাস নেবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিদ্যমান কাঠামোতে এসব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ক্যাডাররাই ক্লাস নেবেন। আর পুরো প্রক্রিয়ায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় সহায়তা করবে। অধ্যাদেশ চূড়ান্ত কেন হচ্ছে না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, স্কুলিং মডেল নিয়ে শিক্ষকদের তীব্র আপত্তি ও শিক্ষার্থীদের বড় অংশের মতবিরোধ আছে। এজন্য মডেলটি নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। অংশীজনের মতামতও নেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খসড়া অধ্যাদেশটি গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিভাগটির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ অংশীজনের মতামত আহŸান করা হয়। এতে পাঁচ হাজারের বেশি মতামত জমা পড়ে। অনলাইন ও সরাসরি মতবিনিময়ের পাশাপাশি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষা বিভাগ জানায়, সব মতামত আইনগত ও বাস্তবতার নিরিখে গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করে খসড়াটি পুনর্মূল্যায়ন ও পরিমার্জনের কাজ চলছে। অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করতে কিছুটা সময় লাগবে বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রস্তুতিকালে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয় এ বিষয়ে তারা সচেতন। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত সাত কলেজের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে একজন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, ক্লাস পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়ে অন্তর্বর্তী প্রশাসন, সাত কলেজের অধ্যক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসির প্রতিনিধিদের নিয়ে গত ১১ নভেম্বর এক সভায় করণীয় নির্ধারণ করা হয়। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অপারেশন ম্যানুয়েলও অনুমোদন হয়েছে। এই আলোকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে ক্লাস শুরুর তারিখ ২৩ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।