প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিশুদের জন্য জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার আদর্শে গড়ে তুলতে হবে। বাংলার মাটিতে কোনো শিশু অশিক্ষিত থাকবে না, প্রতিটি শিশু লেখাপড়া শিখবে, সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে। কোনো শিশু না খেয়ে কষ্ট পাবে না, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না। শিশুদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনা এবং জাতির পিতার চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়ন করার জন্যই আমরা শিশু শিক্ষাকে আরও সর্বজনীন করার পদক্ষেপ নিয়েছি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৬তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস ২০১৫ উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু মাজার কমপ্লেক্সের পাবলিক প্লাজায় আয়োজিত শিশু সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
শিশু, কিশোর ও তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আজকে আমরা সেই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেছি, মসজিদভিত্তিক শিক্ষা শুরু করেছি, ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে আমরা শিক্ষার নীতিমালা দিয়েছি এবং কোনো বাবা-মা’র যাতে কষ্ট করে বই কিনে দিতে না হয়, আমরা সে ব্যবস্থাও করেছি। এখন প্রতি ইংরেজি নববর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে এসএসসি পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করছি। তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা দিতে পারেননি, তাদের কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক থেকে শুরু করে ব্যাচেলর ডিগ্রি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আমরা বৃত্তি ও উপবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। পয়সার অভাবে কোনো ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখবে না, এটা হতে পারে না। আমাদের দেশে এখন ঝরে পড়ার সংখ্যা কমে গেছে।
উপস্থিত ছোট্ট ছোট্ট সোনামণি, শিশু-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী অনুরোধের সুরে বলেন, জীবনে বড় হতে হলে লেখাপড়া শিখতে হবে। মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। স্বাধীন দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি হত-দরিদ্র, গরিব বা প্রতিবন্ধীকে কখনও অবহেলা করবে না। তাদের সব সময় আপন করে নিবে, তাদের পাশে থাকবে- এটাই আমি চাই। ‘বঙ্গবন্ধু’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে শিশুদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ছোটবেলা থেকেই শিশুদের প্রতি অত্যন্ত দরদী ছিলেন। স্কুলে গিয়ে বই কিনতে পারে না এমন দরিদ্র কাউকে পেলে নিজের বই তাকে দিয়ে দিতেন। তিনি বড় হয়ে এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম খেটেছেন। এসবে তাঁর বাবা-মা’র আদর ভালবাসা ও উৎসাহ ছিল বলেই তিনি এতবড় অবদান রেখে যেতে পেরেছেন এবং আমাদের একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাই আমরাও চাই, বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু সুন্দরভাবে বাঁচবে, প্রতিটি শিশুর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। বাংলাদেশের কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিভিন্ন তথ্যসেবা কেন্দ্র করে দিয়েছি। সেখানে এখন ছেলেমেয়েরা কাজ করে অর্থ উপার্জন করছে, নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে।
শিশু সমাবেশে বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন। পরে তিনি দর্শক সারিতে গিয়ে বসে শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানের শেষে তিনি পুনরায় স্টেজে গিয়ে শিশুদের সঙ্গে ফটো-সেশন করেন। পরে তিনি সেখানে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও জেলা প্রশাসন আয়োজিত সাত দিনব্যাপী গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেন এবং মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।