পরীক্ষা শুরুর মাত্র ২ ঘণ্টা আগে ছাপানো হবে প্রশ্নপত্র। আর তা প্রণীত হবে পরীক্ষার ৬ ঘণ্টা আগে। এরপর তা ছাপানোর জন্য পাঠানো হবে জেলায় জেলায়। জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নেতৃত্বে একটি টিম রুদ্ধদ্বার কক্ষে ছাপাবে সেই প্রশ্ন। ফাঁস হওয়া ঠেকাতে আসন্ন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। ২৭ জুন দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হবে এ পরীক্ষা।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এভাবে কোনো পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। মূলত প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন এ পরীক্ষাটি মূলত বড় আকারে মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন নিয়োগ এবং সমাপনী পরীক্ষারই পরীক্ষামূলক আয়োজন। এতে সফলতা পাওয়া গেলে প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নও এভাবে করা হবে।
দেশের ৩৭ হাজার ৬৭২টি পুরনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে একজন করে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ইতিমধ্যে দুই দফায় শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। তৃতীয় দফায় ১৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে গত ৯ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। জানা গেছে, সর্বমোট ৯ লাখ ৭১ হাজার ৬০৮ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। সে হিসাবে প্রতি পদের জন্য প্রার্থী প্রায় ৬৫ জন।
জানা গেছে, এ পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন যাতে ফাঁস না হয়, সে লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্ন প্রণয়ন, মুদ্রণ, পরিবহন ও বিতরণ কাজে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার এবং প্রচলিত পদ্ধতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষ্যে ৯ জুন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে (ডিপিই) একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সন্তোষ কুমার অধিকারী।
প্রশ্ন যাতে ফাঁস না হয়, সে জন্য পরীক্ষার দিন সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টায় প্রশ্ন তৈরি করা হবে। এবার ডিপিই প্রশ্ন প্রণয়ন করবে না। প্রশ্ন প্রণীত হবে মন্ত্রণালয়ে। প্রশ্ন তৈরি শেষে ই-মেইলে তা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হবে। এনক্রিপ্ট ডকুমেন্ট হওয়ায় তা খুলতে পাসওয়ার্ড (তথ্য উম্মুক্ত করার গোপনীয় কোড) লাগবে। মেইল পাওয়ার পরই সংশ্লিষ্ট ডিসি তা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন।
এরপর ডিসিকে পাসওয়ার্ড জানানো হবে। একমাত্র তিনিই প্রশ্নপত্রটি খুলতে পারবেন। এই প্রশ্ন ছাপানোর জন্য সুরক্ষিত একটি কক্ষ আগে থেকেই তৈরি থাকবে। সেখানে উন্নতমানের প্রিন্টার এবং ফটোকপি মেশিন এবং বিশ্বস্ত লোক থাকবেন। কক্ষটি সম্পূর্ণরুপে সিসি টিভি নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ফলে অনলাইনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় ও ডিপিই অফিস থেকে প্রশ্ন ছাপার কাজে নিয়োজিতদের ওপর নজরদারি করা হবে।
সন্তোষ কুমার অধিকারী এ বিষয়ে বলেন, আমরা একেকটি ফটোকপি মেশিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার প্রশ্ন কপি করতে চাই। তাই এমন সক্ষমতাসম্পন্ন মেশিন স্থাপন করা হবে। সেই হিসাবে প্রতি ২ হাজার পরীক্ষার্থীর বিপরীতে একটি করে ফটোকপি মেশিন থাকবে। এ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ দুপুর ১২টার মধ্যে প্রশ্ন ছাপার কাজ শেষ হবে। এরপর প্রশ্নপত্র প্যাকেট করা হবে। প্রতি প্যাকেটে ১০০টি প্রশ্ন থাকবে।
জানা গেছে, বৈঠকে প্রশ্নপত্রের মুদ্রণকাজ তদারকি এবং সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলায় মন্ত্রণালয় থেকে ৬-৭ জনের একটি করে টিম পাঠানো হবে। এদের মধ্যে ২ জন থাকবেন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বাকিরা ডিপিই’র কর্মকর্তা। ইতিপূর্বে এ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করত ডিপিই, আর তা ছাপা হতো বিজি প্রেসে। সেখান থেকে প্যাকেট ট্রাংকবদ্ধ করে ম্যাজিস্ট্রেটের পাহারায় পাঠানো হতো জেলা পর্যায়ে।