প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিসিএস ক্যাডারে যোগদান করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে সংশ্লিষ্ট উপজেলার উন্নয়নে রেখেছেন ব্যাপক ভূমিকা। এরপর উপ-সচিব, যুগ্মসচিব, ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নিষ্ঠা ও যোগ্যতার সাথে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে এ সংস্থাকে বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। কিন্তু তাঁর এর পরবর্তী দায়িত্ব অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। কারণ দুর্নীতির ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার জিরো টলারেন্সে রয়েছেন। এমন অবস্থার মধ্যে যিনি সে গুরুদায়িত্ব লাভ করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছেন Ñতিনি বাংলাদেশ সরকারের চৌকস সচিব এবং বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর সচিব মাকসুদুল হাসান খান। তাঁর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ এর আলাপচারিতার উল্লেখযোগ্য অংশ মোহাম্মদ মোস্তফার অনুলিখনে নিচে সন্নিবেশিত হলো।
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে দেশের শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা জানতে চাইলে বিদ্যোৎসাহী, কল্যাণকামী ব্যক্তিত্ব মাকসুদুল হাসান খান বলেন শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের ৫টি মৌলিক অধিকারের মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। নিজেকে চিনতে হলে, বিকশিত করতে হলে শিক্ষার আলোয় অবগাহন করতেই হবে। প্রিয় নবী (দঃ) এঁর কাছে আল্লাহর প্রথম বাণীই ছিল ইক্রা বিস্মি রাব্বিকা, পড় তোমার প্রভুর নামে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছেন; প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে শিক্ষা পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করার পর নকলের প্রবণতা কমেছে, শিক্ষার্থীরা পুরো সিলেবাস পড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের মাঝে বছরের শুরুতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করে; নতুন বই হাতে নিয়ে যখন তারা বাড়ি ফেরে, তখন অভিভাবকগণও আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন। সন্তানের মুখের হাসি, পিতা-মাতাকে আনন্দ-সাগরে ভাসিয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারই ২০১০ সালে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিল; এর আগে বিভিন্ন সরকারের আমলে যতবারই শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে, তা বিতর্ক ও অসন্তোষের কারণে হিমাগারে চলে যায়; বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমান সরকার শিক্ষাক্ষেত্রের অচলায়তন ভেঙে একে সভ্যতার বেদিমূলে দাঁড় করিয়েছে। একমুখী শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে একে সমাজ অগ্রগতির বাহন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সরকার শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষাকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন, মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি অন্তর্ভুক্ত করে ডিগ্রি কলেজের ওপর চাপ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এতে শিক্ষিতের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন, তাতে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে একে জাতির মূল স্রোতধারার সাথে একাত্ম হবার সুযোগ দেয়া হয়েছে। ফলে মাদ্রাসা শিক্ষা শেষে ছাত্ররা কর্মজীবনে ভালো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের অধিবাসীর মতো তারা আর অবহেলিত হবে না।
দুদক সচিব আরও বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি দেশের শিক্ষা ধারায় নিয়ে এসেছে গুণগত পরিবর্তন। প্রতিটি স্কুলে কম্পিউটার, ল্যাপটপ সরবরাহ করা হয়েছে, কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সরবরাহ করে শিক্ষা পদ্ধতিকে প্রযুক্তি সমৃদ্ধ করার সচেতন প্রয়াস দেশের মানুষকে আশান্বিত করেছে। কারিগরি শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপের ফলে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতের সংখ্যা যেমন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, তেমনি দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি হয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে সরকার সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা নিয়েছেন। ১৯৯২ সালে বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দেয়ায় শিক্ষাক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। যার ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বর্তমানে প্রায় ২ গুন। যেসব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় না, উচ্চশিক্ষার পথ যাদের রুদ্ধ হয়ে যায়, তারা অনায়াসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান করে নিতে পারে। তবে কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ ক্যাম্পাস পরিচালনা, সার্টিফিকেট বাণিজ্যের মতো জঘন্য অপরাধের অভিযোগ রয়েছে যা মোটেই গ্রহণীয় নয়। তাছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে দক্ষ শিক্ষকের অভাবও প্রকট। অনেকে সরকারি নির্দেশ অনুসারে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে তাদেরই স্বার্থে। অন্যথায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আপনারা যখন শিক্ষাঙ্গনে ছিলেন, সেসময় ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক কেমন ছিল; বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করেন কী এমন প্রশ্নের জবাবে দেশপ্রেমী, শিক্ষাপ্রেমী ব্যক্তিত্ব মাকসুদুল হাসান খান বলেন, গুরু-শিষ্য সম্পর্ক প্রাচীনকালে যেমন ছিল, কালের বিবর্তনে পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে সে ঐতিহাসিক সম্পর্কে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগেকার দিনের ছাত্ররা গুরুগৃহে থেকেই পড়ালেখা করতেন; গুরুর পায়ের কাছে বসেই তারা শিক্ষাগ্রহণ করতেন, দীক্ষা নিতেন। এতে শুধু বিদ্যা অর্জন নয়, মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ হয়ে তারা গুরুগৃহ থেকে যোগ্যতা নিয়ে ফিরে আসতেন। তারা সমাজের বিভিন্ন দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতেন। বিশেষ ক্ষেত্রে তারা নিযুক্ত হয়ে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে খাঁটি মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতেন। শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে সম্পর্ক ছিল পিতা-পুত্রের সম্পর্কের মতো।
তিনি বলেন, আমাদের স্কুল জীবনেও দেখেছি শিক্ষকগণ ছাত্রদের সাথে আন্তরিক ব্যবহার করতেন। বিশেষ করে যারা ভালো ছাত্র ছিল, তাদের প্রতি শিক্ষকগণ বিশেষ যত্মশীল থাকতেন। তাদের পড়া-লেখার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা দেখতেন, কোনো সাবজেক্টে দুর্বলতা থাকলে তা মেকআপের ব্যবস্থা নেয়া হতো। তখন কোচিং বাণিজ্য ছিল না; পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের স্পেশাল কোচিংয়ের ব্যবস্থা থাকতো, তবে তা বিনামূল্যে। আমরা তখন শিক্ষকদের সামনে দিয়ে মাথা উঁচু করে আসা-যাওয়া করতাম না। এখন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক রাজনীতিও চলছে। ফলে শিক্ষকগণ পরম পূজনীয় অবস্থানে থাকতে পারছেন না। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হল দখল, ভিন্ন মতের ছাত্রদের হাত-পায়ের রগ কাটা এসব অপসংস্কৃতি চলতে দেখা যায়। বাইরের রাজনীতি ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার করছে, ছাত্ররা এতে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে মূল্যবোধের সংকট। শিক্ষকরা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে তাদের দলীয় স্বার্থে ছাত্রদেরকেও জড়িয়ে নিচ্ছে। এর ফলে ছাত্রদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে নীতি-নৈতিকতার অভাব। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে শিক্ষকদেরকেই দায়িত্বশীল হয়ে তাঁদের হারানো ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক পিতা-পুত্রের সম্পর্কের মতো না হলেও অন্তত শ্রদ্ধাভাজন বন্ধুর মতো হলে শিক্ষাঙ্গন সুন্দর হয়ে উঠবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান অন্তরায় কী এবং কীভাবে সেটি কাটিয়ে ওঠা যায় এমন প্রশ্নের জবাবে দূরদর্শী সমাজসেবী ব্যক্তিত্ব মাকসুদুল হাসান খান বলেন, বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে কোয়ালিটি এডুকেশন চালু করতে হবে ব্যাপকভাবে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে, যার সমাধান দ্রুত সম্ভব নয়। অথচ দক্ষ শিক্ষকের সংখ্যা বাড়াতে না পারলে মানোন্নত শিক্ষার প্রসারও সহজ হবে না। তাছাড়া দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করতে হবে ব্যাপকভাবে। বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং উন্নত দেশসমূহের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে গবেষণাকর্ম জোরদারের বিকল্প নেই।
মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশা গ্রহণে অনীহার কারণ এবং তা কাটিয়ে ওঠার উপায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসার জবাবে মাকসুদুল হাসান খান বলেন, একসময় শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীরা আসতেন; এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধাবী ছাত্রও গড়ে উঠতো। কিন্তু বর্তমানে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আসার অনীহার প্রধান কারণ হতে পারে, সরকারের অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসে যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে শিক্ষকদের জন্য অনুরূপ ব্যবস্থা নেই। উপরন্তু শিক্ষকরা আগের মতো সামাজিক মর্যাদাও পান না। শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করেও কিছুদিন পর কেউ কেউ অন্য ক্যাডারে কিংবা অন্য পেশায় চলে যান। এজন্য শিক্ষকতা পেশায় আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। সামাজিক মর্যাদার প্রশ্নেও শিক্ষকতা পেশায় আসতে তরুণরা তেমন আগ্রহী হচ্ছে না। এটি জাতির ভবিষ্যতের জন্য সত্যি চিন্তার বিষয়। এজন্য শিক্ষা ক্যাডারে বিশেষ বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবে, শিক্ষাঙ্গন মেধাবীদের পদচারণায় সরগরম হয়ে উঠবে।
ছাত্র-সমাজের বিপথগামিতারোধে পরিবার বা সমাজের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে কল্যাণকামী ব্যক্তিত্ব মাকসুদুল হাসান খান বলেন, এ ব্যাপারে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বাবা-মা কিংবা বয়স্কদের অনুসরণ করেই শিশু-কিশোর-যুবকরা বড় হয়। অভিভাবকদের জীবন যদি আদর্শ হয়, তাহলে সন্তানদের ওপর তার ভালো প্রভাব পড়বে। সন্তান আদর্শবান হয়ে যদি কর্মজীবনে প্রবেশ করে, তাহলে সে দুর্নীতিমুক্ত থেকে দেশের কল্যাণে কাজ করে যেতে পারবে।
দুর্নীতি দমন ব্যুরোকে দুর্নীতি দমন কমিশন করায় কর্মপরিধি কি বৃদ্ধি পেয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মাকসুদুল হাসান খান বলেন, ১৯৫৭ সালে দুর্নীতি দমন ব্যুরো কার্যক্রম শুরু করলেও তা প্রধানমন্ত্রীর দফতর সংশ্লিষ্ট থাকায় তদন্ত, অনুসন্ধান, তথ্য সংগ্রহ, মামলা করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। ফলে কাজে দীর্ঘসূত্রিতা হতো। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পূর্ণ আলাদা পদ্ধতিতে চলছে, কাজ করছে স্বাধীনভাবে। ফলশ্রুতিতে দুদক’র কর্মপরিধি ব্যুরোর সময়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
দুর্নীতি রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি বা জনগণকে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব মাকসুদুল হাসান খান বলেন, দুর্নীতির ব্যাপকতা, ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা সম্ভব হলে দুর্নীতির আগ্রাসন বন্ধ হবে। মানুষ সচেতন হলে দুর্নীতিবাজরা সতর্ক হবে। দুর্নীতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা জনমনে সঞ্চার করতে হলে আমাদের যেতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে। সাধারণ মানুষ দুর্নীতি করে না, তবে তারা দুর্নীতির ব্যাপারে সিরিয়াসলি চিন্তাও করে না। দুর্নীতি যে একটি জাতীয় ব্যাধি এটি জনগণকে বোঝাতে হবে। দুর্নীতি সম্পর্কে সচেতন করতে পারলে তার ফল হবে শুভ। আর এজন্যই দুদক’র পক্ষ থেকে প্রতিবছর দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে জনগণকে দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে সচেতন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন দুদক’র কর্মতৎপরতার ফলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, দুর্নীতিবাজরা ক্রমশঃ কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কটের অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে বলে দুর্নীতিবাজদের মনে এ ধারণা জন্মাতে শুরু করেছে যে, দুর্নীতি করে পার পাওয়া যাবে না।
আপনি দুর্নীতি দমন কমিশনে যোগদানের পর দুর্নীতি প্রতিরোধে কোনো বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন কি এমন জিজ্ঞাসায় দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার দীপ্ত শপথে বলীয়ান মোঃ বদিউজ্জামান বলেন, আমি দুর্নীতি দমন কমিশনে যোগদানের পর এ কমিশনের কার্যক্রমকে অটোমেশনের আওতায় নেয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া কমিশনের কার্যক্রমকে আরও স্বচ্ছতার মাধ্যমে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারে সর্বোচ্চ প্রয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
দুদক সচিব আরও বলেন মানুষকে যদি শৈশব-কৈশোরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে আগ্রহী করে তোলা যায়, তার প্রভাব অনেক বেশি কার্যকর হবে। শৈশব-কৈশোরের চেতনা মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান পায়; ভালো চিন্তা-চেতনা সমাজ ও দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। এজন্য শিশু পাঠ্য পুস্তকে দুর্নীতির ওপর রচনা, গল্প সন্নিবেশিত থাকতে হবে। সৎ মানুষকে পুরস্কৃত করা হলে শিশু-কিশোররা পরোক্ষভাবে দুর্নীতির ধারণা নিতে পারবে।