মুক্তিযুদ্ধকালীন ত্রাণ শিবিরে বিপন্ন মানবতার সেবা করতে গিয়ে যে চেতনাটা অন্তরে ধারণ করেছিলেন, তা তিনি জীবনের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তখনই তাঁর অন্তরে অনুরণিত হয়- জীবন চলার পথে যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, মানবতার সেবায় এবং মানব-উন্নয়নে তিনি আজীবন সম্পৃক্ত থাকবেন। প্রিয় পাঠক- আজকের আলোচ্য ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশ সরকারের সচিব, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আজিজুর রহমানের সাথে ক্যাম্পাস প্রতিনিধির ঘরোয়া আলোচনায় তিনি শৈশব-কৈশোর-যৌবনের কথা, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবনের কথা শুনিয়েছেন। ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠানের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কারণে তিনি ক্যাম্পাস পরিবারের একজন সম্মানীয় সদস্য হিসেবে বিবেচিত। সমাজসেবায়ও তিনি রেখেছেন অনন্য অবদান। নিজ মেধা ও যোগ্যতা সম্পর্কে স্থিরনিশ্চিত ঊর্ধ্বতন নির্বাহী আজিজুর রহমান অকপটে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তাঁর একান্ত আলাপচারিতা নিচে সন্নিবেশিত হলো।
ছেলেবেলার দুরন্তপনার কথা জানতে চাইলে সরকারের চৌকস ও বুদ্ধিদীপ্ত সচিব মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, সময়ের স্রোতে ভেসে ভেসে দীর্ঘ কর্মজীবনের শেষ প্রান্তে এসে পেছনে তাকালেই মানসপটে উঁকি দেয় অনেক স্মৃতি, অনেক ঘটনা সেখানে ভিড় করে। ষাট’ এর দশকে আমাদের সমাজের মানুষগুলো ছিল অনেক সহজ-সরল। তথ্য-প্রযুক্তি দূরের কথা, গতানুগতিক প্রযুক্তির ছোঁয়াও ছিল না দৈনন্দিন জীবনে। এমনি এক সময়ে মফস্বল শহরে জন্ম নিয়ে আজ নিজের অবস্থান সম্পর্কে ভাবতে গেলে বড় সৌভাগ্যবান মনে হয়। ছেলেবেলার দুরন্তপনার কথা তেমন মনে না পড়লেও ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে একবার স্কুলের ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে হাত/পা ভেঙ্গে অনেক দিন শয্যাশায়ী ছিলাম। হাঁটুর নিচে কয়েক ডজন/অসংখ্য ছোট-বড় কাটা দাগ এখনো আছে। ভাবি, কত দুর্বার ছিলাম তখন। গ্রাম-বাংলায় সচরাচর দেখা যায় এমন কোনো জাতের পাখি নেই যে, একবার আমার খাঁচায় ঢোকেনি। আর কখন যে আমি পড়াশোনা করতাম, তা এখন আর মনে করতে পারছি না। তবে পরীক্ষায় সবসময়ই ভালো করেছি। আর তাই, আমার ছেলেবেলায় আমি ছিলাম আমারই মতো।
শিক্ষা-জীবনের এমন কোনো স্মৃতি মনে পড়ে কী, যা আজও আপনার মনকে নাড়া দেয় -এমন প্রশ্নে সরকারের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, স্কুল জীবন শেষে কলেজে ভর্তি হয়েই আলিঙ্গন করলাম স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল চেতনাকে। যুদ্ধকালে এবং যুদ্ধোত্তর সমাজ-জীবনে মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্ট লাঘবে তৎকালে দেশে শরণার্থী শিবির পরিচালনা, ত্রাণ বিতরণ, আইনশৃংখলা রক্ষায় সরকারকে সহায়তা করেছি সরাসরি। তখনই মনে হয়েছে- জীবনের যে শাখায় বিকশিত হই না কেন, মানুষ ও মানবতাকে ধারণ করে থাকব। আমার এ ব্রত পালনে যুদ্ধোত্তর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের চরম অস্থিরতার মাঝেও জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন কচি-কাঁচার মেলা আমাকে এগিয়ে দেয় সত্য, ন্যায় ও সুন্দরের পথে; নিজেকে দেশের খাঁটি নাগরিকরূপে গড়ে তোলার মহাসড়কে। আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনাটি ঠিক তখনই ঘটে; ১৯৭৪ সাল। কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার উদ্যোগে ঢাকায় জাতীয় শিক্ষা শিবির চলছে। হঠাৎ একদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানালেন। সারা দেশ থেকে আসা প্রায় দু’আড়াই শত ভাই-বোন, উপদেষ্টা সকলের জন্য ৫/৭টি বাসও পাঠিয়ে দেয়া হলো। একটি সুশৃংখল সংগঠন হিসেবে গণভবনে পৌঁছেই আমরা ফল-ইন হয়ে গেলাম ৭/৮টি প্লাটুনে। উদ্দেশ্য কচি-কাঁচার মেলার পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার প্রদান করা। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, সে গার্ড অব অনার প্যারেড কমান্ড করার। যথাসময়ে বঙ্গবন্ধু গণভবনের অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন- শুরু হলো আনুষ্ঠানিকতা। প্রথমেই প্যারেড কমান্ডার হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে সামরিক কায়দায় সালাম জানালাম। অতঃপর প্যারেড পরিদর্শনের জন্য বঙ্গবন্ধুকে আমন্ত্রণ জানালাম। বঙ্গবন্ধু আমাকে সাথে নিয়ে প্যারেড পরিদর্শন করলেন। আনুষ্ঠানিক প্যারেড এ অতিথির সাথে প্যারেড কমান্ডারের কথা হয় না। কিন্তু সেদিন বঙ্গবন্ধু আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন- শিক্ষা শিবিরে আমরা কত জন এসেছি, আমাদের কোনো অসুবিধে আছে কিনা ইত্যাদি। আমি তখন মাত্র ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। ভয়ে আমার বুক কাঁপছে। স্বাধীনতার উষালগ্নে গগনচুম্বী ব্যক্তিত্বের অধিকারী বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক প্যারেড পরিদর্শনকালে এসব প্রশ্নের জবাব দেয়ার ক্ষমতা তৎকালে আমার মতো কোনো যুবকের দূরের কথা, কোনো জেনারেলের ছিল কিনা এ নিয়ে তর্ক হতে পারে। আমার যতটুকু মনে পড়ে, শিক্ষা শিবির পরিচালনায় আমাদের আর্থিক সংকটের কথা আমি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম। বঙ্গবন্ধু তাঁর সাবলীল ভাষায় আমাকে বলেছিলেন, ‘আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি’! আজ প্রায় ৪০ বৎসর পর ভাবতে খুব ভালো লাগে, আমি কত সৌভাগ্যবান- সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর সাথে সেদিন কিছুটা সময় কাটাতে এবং মনের ভাব আদান-প্রদান করতে পেরেছিলাম। আজ অনেকেই রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজ জীবনের উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁরা জীবিত বঙ্গবন্ধুকে চোখে দেখেননি! ফলে তাঁরা জীবনে অনেক কিছু পেলেও জাতির জনকের সান্নিধ্যলাভ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
স্মৃতিচারণে আজিজুর রহমান আরও বলেন, আমার আরো সৌভাগ্য হয়েছিল একেবারে কিশোর বয়সেই দেশের প্রথিতযশা কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের সান্নিধ্যে আসার। তাঁদের মধ্যে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পল্লীকবি জসিম উদ্দিন, কবি বেগম সুফিয়া কামাল, বিজ্ঞানী আবদুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দিন, রোকনুজ্জামান খান (দাদা ভাই), বেগম পত্রিকার সম্পাদিকা নূরজাহান বেগম, শিল্পী হাশেম খান, সাহিত্যানুরাগী শামসুজ্জামান খান, সংগীত শিল্পী মোস্তফা জামান আব্বাসী প্রমুখ বিজ্ঞজন রয়েছেন। এখানেও ছিল কচি-কাঁচার মেলারই অবদান। মেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগ দেয়ার জন্যে ঢাকা থেকে বরেণ্য এসকল ব্যক্তি জেলা শহরে আসতেন। কখনো কখনো ২/৩ দিন অবস্থানও করতেন। এ সময় তাদের সংস্পর্শে এসে আমরা সত্য, ন্যায় ও সুন্দরের পথে নিজকে দেশের খাঁটি নাগরিক রূপে গড়ে তোলার মন্ত্রে অভিষিক্ত হতে পেরেছিলাম -যা এখনো আমাকে চলার পথে ‘লাইট হাউস’ এর মতো পথ দেখায়। এসকল মনীষীর সংস্পর্শে এসে আমার হৃদয়ের যে প্রসারতা ঘটেছে এবং মানুষকে ভালোবাসার যে দীক্ষা আমি পেয়েছি, এটাই বোধ করি জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।
বলতে দ্বিধা নেই- যে ক্যানভাসে আমার বেড়ে ওঠা, সেখানে পরিত্যক্ত পুকুরের কচুরিপানা সাফ করা, সংক্রামক ম্যালেরিয়ার হাত থেকে রক্ষার নিমিত্ত নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা, কলেরা-বসন্তের টীকা দেয়া, চক্ষু শিবিরের আয়োজন করা, ঝড়-বন্যায় রিলিফ ওয়ার্ক করা ছিল আমাদের নিয়মিত কাজ। ৭০’ সালে কুমিল্লার মুরাদনগরে এক ভয়াবহ টর্নেডো হয়েছিল। তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়াও পরিদর্শনে এসেছিলেন। ঐ বৎসরই ১২ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূল জুড়ে বয়ে যায় গত শতাব্দির ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস। যে জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ঘড়-বাড়ি, গবাদিপশু কোনো কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। এমনি ধরনের জাতীয় দুর্যোগে আমারা ছিলাম তৎপর। মনে পড়ে, স্বাধীনতার পরপরই কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানায় একবার বড় ধরনের টর্নেডো আঘাত হানে। এতে শত শত বাড়ি-ঘর লন্ডভন্ড হয়ে যায়, হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। সে দুর্যোগের সময়ে দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কচি-কাঁচার মেলার পক্ষ হতে আমরা শহরের রাস্তায় রাস্তায় সাহায্যের আবেদন জানিয়ে গান গেয়ে গেয়ে চাল, ডাল, পুরানো কাপড়-চোপড়, টাকা-পয়সা ইত্যাদি ত্রাণসামগ্রী তুলে দুর্গত এলাকায় বিতরণ করেছিলাম। কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার পক্ষ থেকেও আসে প্রচুর ত্রাণসামগ্রী। ত্রাণ বিতরণের জন্য অন্যান্যের সাথে এসেছিলেন বেগম সুফিয়া কামালও। আমরা সবাই মিলে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে থানা সদরে ফিরছি, রাত তখন ১০/১১টা হবে। গাঁ এর মেঠোপথ। মাথার ওপর চাঁদের গলে গলে পড়া জোৎস্না। খালাম্মাকে (বেগম সুফিয়া কামালকে আমরা খালাম্মা ডাকতাম) ঘিরে আমরা সবাই হেলেদুলে চলছি। তৎকালীন দেশের নৈরাজ্যকর অবস্থার প্রসঙ্গ এলে খালাম্মা বলছিলেন, ‘তোরা ভাবিসনে। দেশের এ অবস্থা থাকবে না। একদিন না একদিন এ দেশটা সত্যি সত্যি সোনার বাংলায় পরিণত হবে’। খালাম্মা আজ বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে যেয়ে বলতাম, খালাম্মা তোমার কথা সত্যি হতে আর বেশি দিন বাকি নেই।
আজিজুর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা আমার জীবনের একটা ব্রেক থ্রু। আমি তখন ১ম বর্ষ সম্মানের ছাত্র। ছাত্র সংগঠনের সাথে সক্রিয়। জাতীয় রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। বাকশাল প্রতিষ্ঠার সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। ডিষ্ট্রিক্ট গভর্ণরদের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ শেষের পথে। ১৯৭৫ সালের এমনি এক প্রত্যুষে ইথারে ভেসে আসে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম ঘটনা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে জঘন্যতম হত্যার মর্মান্তিক ঘোষণা। সেদিন ভেবেছিলাম আজ হয়তো দেশে লংকাকান্ড ঘটে যাবে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে দেখলাম সবই যেন স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। দ্বি-প্রহর না পেরুতেই ৪/৬ জন বাদে সবাই যেয়ে শপথ নিলেন। শুনেছি জনৈক আমলা খন্দকার মোস্তাককে একথাও বলেছেন যে, তিনি এমনই একটি দিনের অপেক্ষায় ছিলেন। নির্মম সত্যি, তিনি নাকি এখনো আছেন। তারপর দ্রুত সব ঘটনা ঘটে যেতে লাগল। সামরিক আইন জেঁকে বসল। মফস্বল জেলা সদরে অবস্থান বিপজ্জনক হয়ে উঠল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি তখন হিমঘরে। পাহাড়-পর্বত ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল পালিয়ে থাকার অভয়ারণ্য। পাড়ি দিলাম অজানার পথে।
অভিজ্ঞতা বর্ণনা প্রসঙ্গে আজিজুর রহমান আরও বলেন- ক্ষমতার মসনদে পরিবর্তনের গতি আরো তীব্র হতে লাগল, ঢেউ খেলে গেলো রাজনীতিতে, জাতীয় রাজনীতিও জমে উঠতে থাকল। ছাত্ররা সংগঠিত হতে থাকল নিজ নিজ বলয়ে। ‘চেতনার সূর্যে আমরা’ অরাজনৈতিক ব্যানারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সূচনা। তার ক’দিন পরেই দলীয় রাজনীতির দাপাদাপি। ঢাকা থেকে ওবায়দুল কাদের, বাহালুল মজনুন চুন্নু, রবিউল আলম চৌধুরী, মরহুম ইকবাল, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন -এদের আগমনে চট্টগ্রামের রাজনীতি প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেতে শুরু করল। ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’। দায়িত্ব নিতে হলো এফ আর হলের। ৪১৪ নং রুম সিংগেল সিটেড। বসা দূরের কথা, দাঁড়ানোর জায়গাও থাকত না। এরই মধ্যে চাকসু নির্বাচন। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ। গণতান্ত্রিক শিবিরে অনৈক্যের জন্য ট্রফি চলে গেলো স্বাধীনতা-বিরোধী শিবিরে। এরই মধ্যে অনার্স-মাস্টার্স উভয় পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে যোগ দেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায়। দ্বিধা নেই, আমি খুব পড়ুয়া ছাত্র ছিলাম না। সারাজীবনে এসএসসি পরীক্ষার আগে মাত্র ৩ মাস ঐচ্ছিক অংকের জন্য প্রাইভেট পড়েছিলাম। তারপরও মফস্বল শহরের একটি ছেলে অনার্স-মাস্টার্স এ প্রথম হওয়া বস্তুত শিক্ষা ব্যবস্থারই সাফল্য। তিনি বলেন, আমাদের সময় কোচিং কালচার ছিল না। ছাত্রকে ২ বেলা স্কুলে আনা-নেয়া করা আর ৭/৮ বিষয়ে প্রাইভেট পড়ানো বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার অসুস্থতার লক্ষণ। এসএসসি ও এইচএসসি এর মতো পাবলিক পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়- মেডিক্যালে ভর্তির জন্য টেস্ট দেয়া শিক্ষা ব্যবস্থায় নিজকে নিজের অস্বীকার করা। এ নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। আমাদের জনসংখ্যার ২৫% যুবক এর বেশিরভাগই বেকার অথবা Disguise unemployed বিএ এবং এমএ পাস করিয়ে তাদেরকে সমাজে ছেড়ে দেয়া হয়; অথচ তাদের কর্মসংস্থান নেই। অন্যদিকে যদি একজন ইলেক্ট্রেশিয়ান, প্লাম্বার বা ইনজেকশন পুশ করার জন্য একজন টেকনিশিয়ানের দরকার হয় -তবে ২/৪ গ্রামে খোঁজ করতে হয়। এ সকল কারিগরি শিক্ষা/প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় আয়োজন নেই। আবার বিদেশেও তাদের ব্যাপক চাহিদা। এক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি লেভেলে যদি ইলেক্ট্রিশিয়ান, প্লাম্বিং, স্যানিটেশন বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয় -তবে এইচএসসি পাস একজন ছাত্রও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, সমাজের বোঝা হবে না।
শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে আজিজুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপনায় আমি বেশি দিন থাকিনি। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যেও এ ডিপার্টমেন্টে একটি ইমেজ সৃষ্টি করতে পেরেছিলাম বলেই আমার ধারণা। এ সময় একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। তৎকালে বিরাজমান সামরিক শাসনের কারণে ছাত্র-রাজনীতি ও ছাত্রদের উপর দমন-নিপীড়ন চলছিল। একটি বিশেষ সংস্থার স্থানীয় প্রধানের আচরণ সহনীয়তার মাত্রা ছেড়ে যায়। নেত্রী দেশে ফেরার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনের ছেলে-মেয়েরা নেত্রীর সাথে দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে। আমি তাদেরকে নিয়ে ঢাকায় আসি এবং বিরোধীদলীয় নেত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করি। তিনি আমাদেরকে ৩২ নং বাসায় সময় দেন এবং আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। এ সময় বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা সাজেদা চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। দেশের তৎকালীন বিরাজমান পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতির মোকাবেলা ও সামরিক সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করার জন্য নেত্রী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে আমি বিভাগের অধ্যাপিকা জিয়াউন নাহার আপা’র স্নেহধন্য ছিলাম। ডিপার্টমেন্টে জয়েন করার পর আপার আরো বেশি সান্নিধ্য পেয়েছি। একদিন আপার বাসায় দুলাভাই (তিনি ক্যাডেট কলেজে অধ্যাপনা করতেন) এর সাথে কথা প্রসঙ্গে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের প্রসঙ্গ আসে। আমি সিভিল সার্ভিসে যোগদান না করার যুক্তি দেখাচ্ছিলাম। তিনি তখন, অনেকটা তাচ্ছিল্যের স্বরেই বলেছিলেন, ‘আরে মিয়া, সিভিল সার্ভিসে যোগদানের যোগ্যতা আছে কিনা তা একবার দেখ না!’ স্যারের এ মন্তব্যটি আমার ইগোতে লাগে। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, আমি বিসিএস পরীক্ষা দেব।
সেখানেও সমস্যা। আমিও পরীক্ষা দিচ্ছি আমার ছাত্রও পরীক্ষা দিচ্ছে। বিষয়টা যদি এমন হয় যে, আমার ছাত্র বিসিএস-এ টিকে গেল আর আমি টিকলাম না! তাই যতদূর সম্ভব চুপিসারেই বিসিএস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হলাম। প্রতিদিন পরীক্ষা শুরুর ৫/৭ মিনিট পরে হলে ঢুকেছি এবং ৫/৭ মিনিট পূর্বেই হল থেকে বের হয়ে যেতাম। যেন আমাকে কোনো ছাত্রের মুখোমুখি হতে না হয়। এখন মনে হচ্ছে পরীক্ষা যখন দিলামই, পরীক্ষাটা আরো একটু সিরিয়াস হয়ে দেয়াই বাঞ্ছনীয় ছিল। পরীক্ষার রেজাল্ট যখন বের হলো তখন দেখলাম যে, আমার প্রথম চয়েস হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারেই নিয়োগ পেয়েছি।
নিয়োগ পাওয়ার পর দেখা গেল আরেক সমস্যা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনায় থাকব নাকি প্রশাসনে চলে আসব। পরামর্শ চাইলাম পরিবারের কাছে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুমহলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের কাছে। সকলেরই এক কথা, তুমি যা ভালো মনে কর। শুধুমাত্র একজন, তিনি হলেন আমার বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর বদিউল আলম। সবেমাত্র তিনি পিএইচডি করে দেশে ফিরেছেন। তিনি দ্বার্থহীনভাবে বললেন- তুমি অবশ্যই সিভিল সার্ভিসে জয়েন করবে। এ সময় একদিন আমি চট্টগ্রাম কালেক্টরেটে ক্যাডার সার্ভিস, কালেক্টরেটের কর্মপরিবেশ, জয়েন করার বিধিবিধান ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে যাই। আমার সাথে এপয়েন্টমেন্ট পাওয়া মিসেস রিনি রেজা এরই মধ্যে চট্টগ্রামে জয়েন করেছে শুনে আমি তার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি জয়েনিং লেটার টাইপ করিয়ে আমার স্বাক্ষর নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বরাবরে জমা দিয়ে দেন। অপরিকল্পিতভাবে সিভিল সার্ভিসে জয়েন করা নিয়ে আমাকে আমার স্ত্রীর অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
চাকরি জীবনের বিভিন্ন অনিয়ম-অসঙ্গতি সম্পর্কে স্পষ্টবাদী এ ব্যক্তিত্ব বলেন, একটানা ৩২ বৎসর মাঠ প্রশাসন, ম্যাজিস্টেসী, নীতিনির্ধারণী ইত্যাদি ডেক্সে কাজ করার পর মনে হচ্ছে, এ সার্ভিসে মেধা ও দক্ষতার মূল্যায়ন অনেক ক্ষেত্রেই হয় না। যে যেভাবে পারে বাগিয়ে নিতে পারাই হলো আসল কথা। যারা পারে তারা একের পর এক তেলতেলে পদে চাকরি করে। ঘুরে ঘুরে তারা ঢাকাতেই থাকে; মফস্বলে তাদের পোস্টিং হয় না। আর যারা বাগাতে পারে না, তাদেরকে থাকতে হয় গাঁও-গেরামে; তাদেরকে ডাম্পিং করে রাখা হয়। সিভিল সার্ভিসে কাজ হয় গতানুগতিক; এখানে সৃজনশীলতা, দূরদর্শিতা, টিমওয়ার্ক, নেতৃত্ব, পজিটিভিজমের বড়ই অভাব! দায়সারা গোছের কাজ করতেই অধিকাংশ সদস্য অভ্যস্ত। কমান্ড পোস্টে না থাকলে Contribute করার কোনো সুযোগ থাকে না। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে কর্মকর্তাদের কেউ Protection দেয় না। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলাম আমি। দীর্ঘ কর্মজীবনের শেষপ্রান্তে এসে যখন পেছনে ফিরে তাকাই -তখন মনে হয় সরকার আমাকে বেতন-ভাতা, গাড়ি-বাড়ি, মোবাইল, দারোয়ান, চাপরাশি সবইতো দিয়েছে। কিন্তু আমার Potentiality’র ২৫%ও আমার কাছ থেকে নেয়নি।
‘বাগিয়ে নেয়া’র ধান্ধা বা দক্ষতা কোনোটাই আমার নেই। সরকার যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা যথাযথভাবে পালন করে ঐ দায়িত্ব Enjoy করেছি। তবে ২/৩টি কমান্ড পোস্টে ছিলাম -সেখানে স্বীয় মেধা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা ও নেতৃত্বের ছাপ রাখতে পেরেছিলাম বলে তৃপ্ত হই।
তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক হিসেবে আপনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন এর রহস্য কী -এমন প্রশ্নের জবাবে দূরদর্শী সচিব আজিজুর রহমান বলেন, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের যে কোনো কর্মকর্তার অন্তরেই একটা স্বপ্ন লালিত থাকে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করার। যারা জেলা প্রশাসক হয় তাদের অনেকেই আবার জাতীয় নির্বাচন করার সুযোগ পায় না। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জেলা প্রশাসকের পদে নিয়োগ পাওয়ার এবং ২০০১ এর সাধারণ নির্বাচনে নেত্রকোনা জেলার রিটার্র্নিং অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালনের। জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের কয়েক দিনের মাথায়, জেলা-উপজেলায় মানুষ চিনি না, পথঘাট চিনি না - এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালন ছিল একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। তখন এমন ২/৪ টি ঘটনাও ঘটেছিল যা ছিল সত্যি সত্যিই চ্যালেঞ্জ -যা আজ হয়তো প্রকাশ্যে বলা যাবে না। মনে পড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ মিছিল করে আমার কাছে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন- পরবর্তীকালে তাদের ২/১ জন মন্ত্রিত্বও লাভ করেছিলেন।
জেলা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করাই ছিল জেলা প্রশাসকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। জেলার উন্নয়ন সমন্বয়, শিক্ষা বিস্তার, ত্রাণ কার্যক্রম, প্রটোকল, তথা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিভূই হলেন জেলা প্রশাসক। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধানে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমার একাধিকবার ফোনালাপ হয়েছিল। নেত্রকোনা শহরের গরুর বাজার স্থানান্তর করে তথায় OASIS নামে একটি ইংরেজি মাধ্যম কিন্ডার গার্টেন প্রতিষ্ঠা ছিল একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। সারা শহরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এখনও তাদেরকে আমার কথা মনে করিয়ে দেয়। জেলা শহরে দু’দুবার বাণিজ্য মেলায় আয়োজন নেত্রকোনাবাসী আগেও দেখেনি, পরেও দেখেনি। জেলার শিল্প-সাহিত্য, ক্রীড়া সংস্কৃতির অঙ্গনে যে ফোয়ারা বইয়ে দেয়া হয়েছিল- তা এখনও বহমান।
সম্প্রতি আমি সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনে যোগদান করেছি। ট্যারিফ কমিশন সরকারের অন্যতম একটি বুনিয়াদী সংস্থা। প্রথিতযশা আমলাদেরই আগে পোস্টিং হতো ট্যারিফ কমিশনে। স্বাধীনতার পর এ প্রতিষ্ঠানটি তার গুরুত্ব হারিয়ে অধুনা একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। চরম রক্ষণশীল ও ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে বলা যেতে পারে এ প্রতিষ্ঠানটি একটি স্থবির সংস্থায় পরিণত হয়েছিল। এখানে জয়েন করার পর তাকে সচল করতে বেশ বেগ পেতে হয় আমাকে। স্বল্পকালীন কর্মকালে এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধি করে তাকে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা সম্ভব হয়েছে। গত এক বছরে কমিশনের দৈনন্দিন কাজের বোঝা কমিয়ে আনা হয়েছে। প্রশিক্ষণ, গবেষণা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানে একটা গতি প্রদান করা গেছে। কেউ অস্বীকার করবে না ৪ খন্ডে দেড় হাজার পৃষ্ঠার ট্রেড ডাইরেক্টরি প্রকাশ একটি অসাধারণ অর্জন। একটি সরকারি অফিসে থেকে আন্তর্জাতিক মানের নিয়মিত একটি ত্রৈমাসিক প্রকাশনার সূত্রপাত চাট্টিখানি কথা নয়। বকেয়া বার্ষিক প্রতিবেদনসহ এক অর্থ বৎসরে ৩টি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ কেউ করেছে আমার জানা নেই। বলা যেতে পারে ট্যারিফ কমিশনকে উন্নয়নের মহাসড়কে টেনে তোলা গেছে, এখন তীব্র বেগে ধাবমান হওয়ার পালা।
সমাজ-সচেতন অভিভাবক হিসেবে শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনের উন্নয়ন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে ড. আজিজুর রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো জীবনধর্মী হতে পারেনি। প্রতি বছর হাজার হাজার ছেলেমেয়ে উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হতে বের হয়- বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পপুলার কিছু সাবজেক্টে দেদারসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে। যে সংখ্যক ছেলে-মেয়ে ডিগ্রি নিয়ে বের হয় সে পরিমাণ চাকরি সৃষ্টি হয় না। ফলে এ সকল উচ্চশিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়ে হতাশায় ভুগে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। আর উচ্চ ডিগ্রির কারণে কোনো নিম্ন পদ বা কারিগরি কোনো জবেও তারা নিয়োজিত হতে দ্বিধাবোধ করে। অথচ মাধ্যমিক বা সমমানের শ্রেণি হতে কোনো কারিগরি বা Service Oriented কারিকুলাম এ মাধ্যমিকে পর্যায়ক্রমে উচ্চশিক্ষা দেয়া যেত তবে শিক্ষাজীবন শেষে তারাই নিজেদের কোনো না কোনো পেশায় নিয়োজিত করতে পারতো-চাকরির মুখাপেক্ষী হতে হতো না।
ছাত্র ও যুব সমাজ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক হিসেবে ড. আজিজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের ২৫% জনসংখ্যা তরুণ, যাদের বয়স ২৫ বছরের নীচে। তরুণরা হলো নদীর স্রোতের মতো। নদীর স্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করে সেচ, বিদ্যুৎ, নৌ-পরিবহন, মৎস্য চাষ ইত্যাদি কাজে লাগানো যায়। আবার এই স্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দু’কূল ভাসিয়ে বন্যা-প্লাবনের সৃষ্টি করে। ঠিক তেমনি যুব সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে যুবকদের যেমন সমাজ গঠনে কাজে লাগানো যায় তেমনি তাদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তারা মাদকাসক্ত, সন্ত্রাস ও নানারকম সামাজিক অপকর্মে জড়িত হয়ে সৃষ্টি করে মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। তাই, যুবকদের লেখা পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা-সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে তাদেরকে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত রাখতে হবে যেন তারা অলস মস্তিস্কের অপবাদে Devil`s Workshop এ পরিণত না হয়।
আজিজুর রহমান রাজনীতি ও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে মতামত ব্যক্ত করে বলেন, ‘ভিশন-মিশনহীন’ মানুষ হলো মরা মানুষ। এ দু’প্রকৃতির মানুষের মধ্যে পার্থক্য হলো- মরা মানুষ সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে পারে না। কিন্তু ‘ভিশন-মিশনহীন’ মানুষ সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে পারে।
ভিশন-মিশনহীন মানুষের আর একটা বৈশিষ্ট্য হলো- তারা ভিশন-মিশন সম্পন্ন অন্যকে বেড়ে উঠতে দেয় না। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতৃত্বের। বাংলাদেশের রাজনীতি পরিশীলিত হতে আরো ২/৪ দশক লেগে যেতে পারে। তবে আশার কথা হলো বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের স্বর্ণশিখরে যিনি অধিষ্ঠিত- ২০৪১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়নের ছক তিনি কেটে রেখেছেন। এ সময় বাংলাদেশের স্থান হবে বিশ্বের উন্নত দেশের সারিতে। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অনেকেই অধিষ্ঠিত আছেন, অনেকেই অধিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু তাঁরা দেশ না হোক, নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ভিশন ও মিশন নিয়ে এগুতে পারেননি। তাই আমাদের দেশের তরুণ সমাজকে আমি বলব, পড়- নজরুলের ‘যৌবনের গান’। দেশকে ভালোবাস- ভালোবেসে আঘাত কর -প্রতিঘাত বুক পেতে নাও। আর এক কদমও যদি সামনে এগোও- ভিশন নিয়েই এগোও!
শিক্ষা ও যুব উন্নয়নে নিবেদিত দেশের প্রথম ও একমাত্র নিয়মিত পত্রিকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এর ৩৪ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে ড. আজিজুর রহমান বলেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস’কে শুধুমাত্র একটা পত্রিকা বললে ভুল হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস একটি আন্দোলনও বটে। এখানে সংবাদ, ফিচারই প্রকাশ হয় না বরং একজন আদর্শ মানুষ বা একটি আদর্শ সমাজ গঠনের অনুশীলনও এখানে হয়ে থাকে। এ ক্যাম্পাসের সংস্পর্শে এসে বহু তরুণ-তরুণী মেধা-মননশীলতা বিকাশের পাশাপাশি তাদের আত্মবিশ্বাস-আত্মপ্রত্যয় জাগিয়েছে। তাই, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আজ একটি চলমান আন্দোলনের নাম।