অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস। গোটা বিশ্বের শিশুদের জন্য এটি আনন্দের দিন। মহা আনন্দের দিন। ইউনেস্কো শিশুদের জন্য এই দিনটি নির্ধারণ করেছে। জাতিসংঘ শিশুদের কল্যাণে তৈরি করেছে নিয়মনীতি, সুন্দর সুন্দর শ্লোগান, শিশু অধিকার সনদসহ অনেক কিছু। যেমন- Put the children first, Say yes for the children.
বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের ভালোবেসে তাঁর জন্মদিন ১৭মার্চ শিশুদের জন্য উৎসর্গ করেছেন। ১৭মার্চ এখন বাংলাদেশে জাতীয় শিশু দিবস।
সেদিন লালবাগ মডেল স্কুল এন্ড কলেজে দেখেছি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ প্রাণের সমস্ত উচ্ছ্বলতা, হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে শিশুদের আদর করছেন। জড়িয়ে ধরেছেন, চুমু খেয়েছেন। সে এক নৈসর্গিক দৃশ্য। ভালো লেগেছে। অনেক জ্ঞানীগুণী লোক এ দৃশ্য দেখে আবেগ-আপ্লুত হয়েছেন।
দেশে-বিদেশে, দেশীয় সংস্থা-বিদেশি সংস্থা সবাইতো শিশুদের মঙ্গল চায়; তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করতে চায়। যুগে যুগে কবি সাহিত্যিক মনীষীরা শিশুর জয়গান করেছেন। যেমন- ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।’ ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।’ কত সুন্দর সুন্দর গান রচিত হয়েছে শিশুদের নিয়ে ‘আমরা সুন্দর আমরা শিশু এসো গাই জীবনের গান।’ ‘We Shall overcome some days’ ইত্যাদি।
ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম শিশুদের প্রাণ ভরে ভালোবাসতেন। তাঁর জন্মদিন তিনি উদযাপন করতেন শিশুদের নিয়ে।
আফ্রিকার জনপ্রিয় নেতা কৃষ্ণাঙ্গদের মুক্তিদাতা প্রয়াত নেলসন মেন্ডেলাকে দেখেছি শিশুদের গভীরভাবে ভালোবাসতে।
আমাদের মাননীয় প্রাধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সারা বিশ্ব জুড়ে কাজ করে যাচ্ছেন Otistic শিশুদের নিয়ে।
এক কথায় শিশুদের কল্যাণে জাতীয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কর্মসূচির ছড়াছড়ি। অথচ বিপরীত চিত্র আমরা কি দেখি! স্বয়ং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র ১০ বছরের শিশু রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। টোকাই ফেলানীদের ইতিহাস বাংলাদেশের কে না জানে। খোদ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ টেলিভিশনে শিশু কাজের মেয়ে ফেলানীর কষ্ট দেখে কেঁদেছেন। এইতো সেদিন আমরা শিশু রাজন হত্যা দেখে স্তম্ভিত হয়েছি। গেরেজে কাজ করা শিশুর পায়ুপথে পাইপ ঢুকিয়ে হাওয়া দিয়ে মারতে দেখেছি। ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই মায়ের পেটে শিশুকে গুলি খেতে দেখেছি। বাবার কোলে ছোট শিশুকে গুলি খেয়ে মরতে দেখেছি। প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ৫ম শ্রেণির ছাত্রী অন্তঃস্বত্ত্বা হতে দেখেছি। মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষিতা হতে দেখেছি। এসব কাহিনী দিনের পর দিন লিখলেও শেষ হবে না। অন্যদিকে ফিলিস্তিনী শিশুদের প্রতি নৃশংসতার কাহিনীতো নিকট অতীতের ঘটনা।
আজ অবধি বাংলাদেশে কত যুদ্ধ শিশু আছে, তার হিসেব কেউ রাখেনি। যাই হোক এ অত্যাচার, এ অনাচার, এ নিষ্ঠুরতার দায়-দায়িত্ব কার। এ শুধু সরকারের নয়। প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। প্রয়োজন জোরালো Motivation আর এ কাজটি করতে পারে মিডিয়া, করতে পারে শিক্ষক, করতে পারে মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত অর্থাৎ সমাজ সচেতন সর্বস্তরের সকল মানুষ। তবেই কেবল শিশুদের মঙ্গল কামনা করা হবে। প্রচলিত বচন পুরানো কথা দিয়ে শেষ করি, ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে। আজকের শিশু আগামী দিনে জাতির ভবিষ্যৎ।
-প্রতিবেদক