দেশে কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। কারিগরি ও বিশেষায়িত শিক্ষায় যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের চাকরির বাজারে ভালো চাহিদা আছে। কিন্তু চাহিদানুযায়ী দক্ষ জনবল সরবরাহে আমাদের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকারগণ ব্যর্থতা ও হতাশায় আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক সময় চেষ্টা ও সংগ্রামে বিফল হয়ে ধ্বংসাত্মক কাজে আত্মনিয়োগ করছে, যা কেবল তার নিজের বা পরিবারের জন্য নয়, গোটা সমাজের জন্য হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর। এমতাবস্থায় করণীয় হচ্ছে, এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় বের করা। তাত্ত্বিক জ্ঞানের সাথে ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয় বলা হয়ে থাকে, ‘অ মড়ড়ফ বফঁপধঃরড়হ ষবধফং নড়ঃয ঃযবড়ৎু ধহফ ঢ়ৎধপঃরপব’.কর্মমুখী শিক্ষা থাকলে শিক্ষার্থী প্রাত্যহিক জীবনে ছোটখাট কাজ সম্পাদনে নিজেই সচেষ্ট হতে শেখে এবং বিদ্যালয়, গৃহ, ক্ষেত-খামার, কল-কারখানা ইত্যাদিতে কায়িক শ্রমের দ্বারা উৎপাদনশীল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। যে শিক্ষা দ্বারা শিক্ষার্থীর দেহ, মন ও বাস্তব কর্মের মধ্যে সমন্বয় ঘটে তাই কর্মমুখী শিক্ষা। দেশ ও জাতির প্রধান সম্পদ হল এর দক্ষ জনশক্তি। পরিকল্পনা ছাড়া জনসাধারণকে দক্ষ শক্তিতে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাত্ত্বিক জ্ঞানের সাথে ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমেই শিক্ষার যথার্থ রূপান্তর ঘটানো যেতে পারে এবং জনগণকে জনসম্পদে পরিণত করাও সম্ভব হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে কর্মমুখী শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ভুলে গেলে চলবে না যে, ‘ইবঃঃবৎ ঝশরষষং, ইবঃঃবৎ ঔড়নং, ইবঃঃবৎ খরাবং’. শ্রমঘন কাজে আগ্রহ এবং শ্রমিকের যথাযথ মর্যাদা মানসিকতা থাকা দরকার, ‘শিখবো মোরা শক্ত কাজ, ঘুচবে অভাব মিলবে কাজ’। কিন্তু দু:খজনক যে, আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা কর্মবিমুখ। অভিভাবকেরা সন্তানদের পড়ান ভালো চাকরির আশায় কিংবা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা জজ-ব্যারিস্টার বানানোর জন্য। ছেলেমেয়েরাও পড়ে একই লক্ষ্যে। দক্ষ শ্রমিক বা কারিগর হওয়ার লক্ষ্য থাকে না বললেই চলে। অথচ একটি জাতির টিকে থাকা ও অগ্রগতির জন্য যেমন প্রয়োজন অনেক সুশিক্ষিত দক্ষ শ্রমিক, কর্মকার, কৃষক, কর্মচারী, তেমনি প্রয়োজন নির্ধারিত সংখ্যক সুশিক্ষিত শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, কর্মকর্তা ইত্যাদি। এর জন্য প্রয়োজন মৌলিক শিক্ষা পর্যায়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। শিক্ষা সবাইকে কর্মমুখী করবে। শ্রমভিত্তিক কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি এবং শ্রম ও শ্রমিককে যথাযথ মর্যাদা দিতে শেখাবে। শিক্ষাকে কর্মমুখী করে তোলা শিক্ষাকে যদি কর্মমুখী করে তোলা যায়, তবে শিক্ষিতদের চাকরি পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না। কোনো বিষয়ে লেখাপড়া করলে তা ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্র খুঁজে নিতে গলদঘর্ম হতে হবে না। তাইতো কর্মমুখী শিক্ষাই কর্মসংস্থানের প্রধান সহায়ক। সুতরাং সকল পর্যায়ে কিছু শ্লোগান ছড়িয়ে দিতে হবে। যেমন- ‘ইব ংশরষষবফ, ইব বসঢ়ষড়ুবফ, ইব ঃযব পযধহমবফ মবহবৎধঃরড়হ’; ‘কারিগরি শিক্ষা শিখব, সোনার বাংলা গড়ব’; ‘শিক্ষা নিয়ে কারিগরি, সম্পদ নিয়ে ঘরে ফিরি’; ‘কারিগরি শিক্ষার উন্নতি, গ্রাম বাংলার মুক্তি’; ‘হাতে কলমে শিক্ষা দান, সবার মুখে অন্ন দান’ ইত্যাদি। আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার অভিযান, আত্মকর্মসংস্থান। কারিগরি শিক্ষাগ্রহণ কর, নিজের কর্মসংস্থান নিজেই গড়। কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীর পরবর্তী জীবনে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সহায়তা করে। এর ফলে শিক্ষার্থীকে বেকারত্বের অভিশাপ বহণ করতে হয় না। এ শিক্ষা শিক্ষার্থীদের ঘরের কাজ থেকে শুরু করে বাইরে খেতে-খামারে, শিল্প-কারখানায় এবং সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বিনা সংকোচে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করে। বেকার থাকলে সমাজ দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে না। কেননা ‘ঊসঢ়ষড়ুসবহঃ রং ধ সধলড়ৎ ঃড়ড়ষ ভড়ৎ ঢ়ড়াবৎঃু ৎবফঁপঃরড়হ. কর্মসংস্থানের চাহিদা ও জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসি-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার নিশ্চয়তায় এখন কী ধরনের শিক্ষা প্রয়োজন সেদিকে নজর দেয়ার সময় এসেছে। কর্মসংস্থানের চাহিদা ও শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে একটি জাতীয় সমন্বয় প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সমন্বিত একটি নীতিমালার আলোকে শিক্ষালয় স্থাপনের অনুমোদন ও তা সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখা জরুরি। সেই সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগতমান নিশ্চিত করতে হবে। পেশাগতভাবে দক্ষ করতে সিলেবাসে পরিবর্তন এসিআই গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (অ্যাগ্রো বিজনেস) ফা হ আনসারী বলেন, সাধারণ কিছু পদের বিপরীতে কয়েক গুণ আবেদন জমা পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে আবার আবেদনকারীর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। দেশের ডিগ্রিগুলো বিষয় ভিত্তিক না হওয়ায় নিয়োগদাতা হিসেবে দক্ষ কর্মী বাছাই করতে হিমশিম খেতে হয়। আবার শিক্ষাব্যবস্থায় এখনো শিক্ষার্থীরা পেশাগতভাবে শতভাগ দক্ষ হতে পারছে না। এ ধরনের অসামঞ্জস্যতা দূর করতে সিলেবাসে পরিবর্তন আনাসহ প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। গুণগতমানের শিক্ষা নিশ্চিতকরণ বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছরই লাখো শিক্ষার্থী ডিগ্রি লাভ করলেও শ্রমবাজারে তাদের চাহিদা নেই। গুণগতমানের শিক্ষার অভাবেই শিক্ষাজীবন শেষে বেকার থাকছেন তারা। চাকরির বাজারে যে ধরনের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা প্রত্যাশা করা হয়, প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীর সে ধরনের যোগ্যতা নেই। অনেক স্নাতকের যোগ্যতা ও শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। শ্রমবাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা চালু শ্রমবাজারের সঙ্গে সঙ্গতিহীন শিক্ষাব্যবস্থাকেই বেকারত্বের জন্য দায়ী করা হয়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক, অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত মনে করেন, প্রতিবছরই শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। তাই শিক্ষার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক নীতি এবং অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির আলোকে শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় না করলে এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। খাপছাড়া উচ্চশিক্ষা বেকারত্ব বাড়াচ্ছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা সাহিত্যে স্নাতক হয়েও ব্যাংকে চাকরি করছেন অনেকে। সমাজবিজ্ঞানে পড়াশোনার পর প্রশিক্ষণ নিয়ে আইটি খাতে কাজ করছেন এমন সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আবার প্রকৌশলী হয়েও সরকারের প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োজিত আছেন অসংখ্য কর্মকর্তা। বাংলাদেশে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এই শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে চাকরির বাজারে বিরাজ করছে নাজুক পরিস্থিতি। খাপছাড়া শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার খাপছাড়া শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়া হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট সেক্টর: অ্যান অ্যাসেসমেন্ট অব স্কিলস ইন দ্য ফরমাল সেক্টর লেবার মার্কেট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাকরির বাজারে চাহিদা না থাকলেও কলা ও মানবিক, প্রকৌশল ও কারিগরি, সমাজবিজ্ঞান, কৃষি শিক্ষার প্রতি ঝুঁকছে দেশের শিক্ষার্থীরা। আবার চাহিদা থাকলেও বিজ্ঞান, সাধারণ শিক্ষা, ব্যবসায় প্রশাসন, চিকিৎসা কিংবা লোকপ্রশাসন বিষয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কম। ফলে খাপছাড়া এ শিক্ষাব্যবস্থা বাড়াচ্ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সবচেয়ে বেশি ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী রয়েছে কলা ও মানবিক শাখায়। অথচ চাকরি বাজারে এর চাহিদা মাত্র ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ এ ২বিভাগে বাড়তি শিক্ষার্থী রয়েছে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে বিজ্ঞান শিক্ষায় ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর চাহিদা থাকলেও অধ্যয়নরত মাত্র ৮ শতাংশ। ফলে বিজ্ঞান শিক্ষায় এখনো ঘাটতি রয়েছে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর। এছাড়া প্রকৌশল ও কারিগরি শিক্ষায় ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রয়োজন হলেও শিক্ষার্থী রয়েছে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে এ খাতে বাড়তি শিক্ষার্থী ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আবার ব্যবসায় প্রশাসন শাখার জনবল প্রয়োজন ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ। অথচ এ বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে চাকরির বাজারে এ শাখায় শিক্ষার্থীর ঘাটতি রয়েছে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। সাধারণ শিক্ষায় ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ চাহিদার বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। এ শাখায় ঘাটতি রয়েছে ১৫ শতাংশ। তবে সমাজবিজ্ঞানে ১ দশমিক ৬ শতাংশ চাহিদার বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞানে বাড়তি শিক্ষার্থী রয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া কৃষিতে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ চাহিদার বিপরীতে শিক্ষা নিচ্ছে ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ হিসাবে কৃষিতে শিক্ষার্থীর হার চাহিদার চেয়ে ২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ঘাটতি রয়েছে চিকিৎসা ও লোকপ্রশাসন বিভাগেও। ১ দশমিক ৫ শতাংশ চিকিৎসকের চাহিদা থাকলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। ফলে ঘাটতি রয়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। আর লোকপ্রশাসনে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ চাহিদার বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। কারিগরি ও বিশেষায়িত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ২০১২ সালের প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ‘যদিও সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচলিত কারিকুলাম উন্নতমানের, কিন্তু কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, বিশেষ করে কতিপয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ থেকে পাস করা স্নাতকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। অর্থাৎ যদিও উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, তবু শিক্ষার মান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।’ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তরসহ উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেছেন প্রায় সাড়ে ৩লাখ ছাত্রছাত্রী। তাঁদের মধ্যে ৯২ হাজার ৭৪৭ জন স্নাতক পাস, এক লাখ ২৮ হাজার ৪৮১ জন স্নাতক সম্মান এবং ২১ হাজার ৩৮০ জন কারিগরি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া এক লাখ ১৯ হাজার ৮৯৪ জন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, দুই হাজার ৩৮৫ জন স্নাতকোত্তর (কারিগরি) এবং এক হাজার ৭৬৩ জন এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। অন্যদিকে বিভিন্ন বিষয়ে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট অর্জন করেন দুই হাজার ৩৩৫ জন। তবে কারিগরি ও বিশেষায়িত শিক্ষায় যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের চাকরির বাজারে ভালো চাহিদা আছে। ফিল্ডে চাকরি পাওয়ার উপযোগী বিষয় ও বিভাগ চালু অনেক বেকার তরুণ কোনো কর্মসংস্থান করতে না পেরে অন্ধকার জগতে পা বাড়ায়। মাদকাসক্ত হয়, নানান অপকর্ম করে, সমাজের কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত হয়। অর্থসংকটের একদিক যেমন বেকারত্ব, তেমনই অপর দিকটা হল আধা বেকারত্ব। আধা বেকারত্ব অর্থাৎ যোগ্যতার চেয়ে নিম্নমানের কাজ বা পার্টটাইম কাজ বা অল্প মাইনের কাজ। প্রধানত উচ্চ শিক্ষিতরাই এই ভিন্ন ধরনের বেকারত্বের শিকার। দেশের সেরা ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েট হয়েও মাসের পর মাস বেকার থাকা, হাজারো আবেদনপত্র পাঠিয়ে মাত্র একটা কি দুটো ইন্টারভিউর ডাক পাওয়া- এ সবই এখন সাধারণ অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাবলিক ইউনিভার্সিটির পাঠ্য বিষয় ও বিভাগের ফিরিস্তি দেখলে মনে হয় তারা এখনও অন্য জগতে বাস করেন। কারণ নানা ধরনের বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ থাকলেও এগুলি নিয়ে ফিল্ডে চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এমন বিষয় ও বিভাগ চালু করতে হবে যাতে পড়াশুনা করে বের হয়ে কাউকে বেকার থাকতে না হয়। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু আমরা জানি ‘ঝশরষষ রং ড়হব’ং ড়হি ধংংবঃ’. দক্ষ মানুষ মানেই সম্পদশালী মানুষ। আর দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে দক্ষ মানুষের বিকল্প নেই। আমরা জানি যে, ঝশরষষবফ সধহঢ়ড়বিৎ রং ধংংবঃ ড়ভ ধ পড়ঁহঃৎু’. দক্ষতা উন্নয়নে আজকের বিনিয়োগ আগামী দিনের সম্পদ। দক্ষতা না থাকলে ভাল কিছু করা যায় না। তাইতো বলা হয়ে থাকে, ‘জবপরবাব ংশরষষং ঃধরহরহমং, ঊহযধহপব ুড়ঁৎ বপড়হড়সরপ ংঃধঃঁং’. অদক্ষরা সমস্যার সমাধান করতে পারে না বরং সমস্যা বাড়ায়। এজন্যেই বলা হয়, ‘গড়ৎব ংশরষষ ষবংং ঢ়ৎড়নষবস, ষবংং ংশরষষ সড়ৎব ঢ়ৎড়নষবস’. দক্ষ মানুষ তৈরিতে সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দরকার। কেননা ‘ঞৎধরহরহম রং ধহ রহাবংঃসবহঃ ভড়ৎ ঃযব ভঁঃঁৎব’. সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে আমাদের উচিৎ এমন পরিকল্পিতভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো যাতে বাজারের চাহিদানুযায়ী দক্ষ লোক বের হয়। কর্মমুখী ও বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষায় প্রশিক্ষিত মানুষজন মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠে সমৃদ্ধ দেশ ও উন্নত জাতি গঠনে ভূমিকা রাখে। যে ধরনের শিক্ষিত মানুষ সময়ের দাবি ও যুগের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে, তাদেরকে তৈরি করাই হোক আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষ্য। যে শিক্ষিত হবে সে হয় স্বাবলম্বী, আত্মনির্ভরশীল বা উদ্যোক্তা হবে অথবা তার যোগ্যতার কারণেই কর্মসংস্থান করে নিতে পারবে দেশে কিংবা বিদেশে। তবে হ্যাঁ, রাষ্ট্র ও সমাজকেও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এভাবেই একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত জাতি গঠনের পথে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।