২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত না দেয়ায় সারা দেশের এক হাজার ২০৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি জানান, ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে এর জবাব দিতে হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে ভেঙে দেয়া হবে পরিচালনা কমিটি। বাতিল হতে পারে প্রধান শিক্ষকের এমপিও। এ ছাড়া চলতি বছর যেসব প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত টিউশন ফি আদায় করেও এখনো ফেরত দেয়নি তাদের তালিকাও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নানা খাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
মন্ত্রী বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই আমাদের কাছে সমান। কোনো স্কুলের পরিচালনা কমিটিতে কে আছেন আমরা তা দেখব না। আমরা দেখব ওই প্রতিষ্ঠান আইন মানছে কি না। যারা আইন অমান্য করবে তাদের ব্যাপারে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে বিজ্ঞান বিভাগে ফি ছিল এক হাজার ৭৫০ টাকা এবং মানবিক ও ব্যবসায় শাখায় ছিল এক হাজার ৫৮০ টাকা। কিন্তু স্কুলগুলো এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা আদায় করে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর তদন্তে সারা দেশের তিন হাজার ৩৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ নেয় বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ৮৩০টি প্রতিষ্ঠান আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিয়েছে। ৯৯৯টি প্রতিষ্ঠান বাড়তি টাকা আদায় করেনি বলে শিক্ষা বোর্ডগুলোকে জানিয়েছে। আর এক হাজার ২০৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো জবাব দেয়নি।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা, মাইলস্টোন, রেসিডেনসিয়াল মডেল, মতিঝিল আইডিয়ালের মতো নামি-দামি স্কুলও ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছিল। শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলোও বেশি টাকা নিয়েছিল। এটা খুবই অনৈতিক ও বেআইনি। কিন্তু তাদের বেশির ভাগ আবার আমাদের নির্দেশের পর টাকা ফেরত দিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ নেয়নি বলে জানিয়েছে, তাদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। যদি তারা তথ্য গোপন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যারা কোনো রকম জবাব দেয়নি তাদের শোকজ করা হয়েছে। হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন তাদের পরিচালনা কমিটি ভেঙে দেয়া হবে না আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে আমরা পরিচালনা কমিটি ভেঙে দেয়াসহ অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
চলতি বছর অতিরিক্ত টিউশন ফি আদায় করা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, যারা বেতন বেশি নিয়েছিল তাদেরও ফেরত দিতে বলা হয়েছিল। কারা এই অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়নি সে ব্যাপারে মাউশি’র একটি ও সরকারের অন্য সংস্থার আরেকটি প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। এগুলো যাচাই-বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কিছু স্কুল আছে যাদের বাড়তি শিক্ষক রাখতে হয়। তাদের বলেছি তাদের কত টাকা বাড়তি দরকার সে বিষয়ে প্রস্তাব পাঠাতে। আমরা বিবেচনা করব। তবে এই অজুহাতে কোনোভাবেই টিউশন ফি বাড়ানো যাবে না।
জানা যায়, ২০১৫ সালে সারা দেশে নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি অর্থ আদায়ের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আসার পর একজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর অতিরিক্ত অর্থ আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গত ২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বর্ধিত বেতন এবং এসএসসি’র ফরম পূরণে নেয়া বাড়তি টাকা ফেরত দিতে সাত দিন সময় বেঁধে দেন। ১৪ ফেরুয়ারি আলটিমেটাম শেষ হলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান তা ফেরত দেয়নি।