পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সমালোচনায় থাকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মনিটরে থাকা প্রশ্ন প্রদর্শন করে পরীক্ষা গ্রহণের কথা ভাবছে। এতে প্রশ্ন ফাঁস এড়ানো এবং সময় ও খরচ বাঁচবে বলে মনে করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন।
এই পদ্ধতি খুঁজতে পাঁচটি উপ-কমিটি কাজ করছে জানিয়ে সচিব বলেন, কমিটির প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে সম্প্রতি সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সচিব বলেন, আগে ২২৮ জন লোক বিজি প্রেসে প্রশ্ন দেখতে পেতেন। এটা ১৮ জনে এসেছে। যারা যুক্ত তাদের নাম-ঠিকানা বিভিন্ন বাহিনীর কাছে থাকে। সেখান থেকে কঠিন হয়ে গেছে আউট হওয়া।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিজি প্রেস ছিল আগে সহজ। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করছেন, কোনো প্রশ্নপত্রই পরীক্ষার দুই মাস আগে ফাঁস হয় না, ওইদিন (পরীক্ষার দিন) সকালে আউট হয়। মোটামুটি এই জায়গায় চলে আসছি আমরা।
বিজি প্রেসে আমরা ব্যাপক পরিবর্তন করছি, ওখান থেকে এখন প্রকাশের সুযোগ নেই। আমরা জেলায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিরাপদ করেছি, থানায় পৌঁছানো নিরাপদ করেছি। এরপরেও সমস্যা রয়েছে। অনেক লোক শিক্ষকতায় ঢুকে পড়েছেন, তারা অপব্যবহার করেন।
সচিব বলেন, আমরা চাচ্ছি যে প্রশ্ন ছাপানোই হবে না। এ রকম ব্যবস্থা যদি করা যায়, প্রত্যেকের সামনে একটা মনিটর থাকবে। সেখানে যথা সময়ে ভেসে উঠবে এবং প্রশ্ন ব্যাংক থেকে প্রশ্ন দেয়া হবে। কেউ ইচ্ছে করে কোনো প্রশ্ন দিতে পারবে না, অটো। যিনি প্রশ্ন করবেন তিনিও জানবেন না প্রশ্ন কী আসছে। সে পর্যায়ে যেতে হয়তো আমাদের অনেক সময় লাগবে। তার আগে কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, সেজন্য পাঁচটি উপ-কমিটি করেছি। ওইসব কমিটি কাজ করছে। যদি দেখি নিশ্চিদ্র, তাহলে আমরা সে পথে যাবো। কারণ নেটের ব্যাপার আছে, এটারও বিকল্প চিন্তা করেছি কোনো ডিভাইসে প্রশ্ন দিয়ে দেয়া যায় কিনা, তাহলে খরচও বাঁচবে, সিকিউরডও করা যাবে। একটা নির্ধারিত সময়ের আগে ওপেনই হবে না, সে জন্য কমিটি কাজ করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, আমি একষট্টি (১৯৬১) সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছি। কত বছর অনুমান করেন? একষট্টি সাল। তখন থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস দেখে আসছি। তখন ছিল সীমাবদ্ধ। সেই সময় ফাঁস হতো, বিক্রি হতো।
এখন প্রশ্ন ফাঁসের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দ্রুতই প্রচার হচ্ছে জানিয়ে নাহিদ বলেন, এজন্য মনে হয় অনেক বেশি। যদি না ফাঁসও হয়, আমি খালি একটা ফেসবুকে লিখে দেই- প্রশ্ন আউট হয়ে গেছে আর কিছুই লাগবে না, ওইটা ধরেই ব্যাপক প্রচার হয়ে যাবে।
ফলাফলের সব সূচকে এবার নিম্নমুখীতার কারণ জানতে চাইল শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি এখন কোনো মূল্যায়নে যাচ্ছি না, বোর্ডগুলো নিজস্বভাবে মূল্যায়ন করবে, মন্ত্রণালয় তদারকি করবে বা আলাদা তদন্ত করবে। তখন সঠিক চিত্রটা জানা যাবে। বাংলাদেশ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের সুপারিশ অনুসরণ করে গত তিন বছর থেকে উত্তরপত্র মূল্যায়নে ফলাফলে তার কিছুটা প্রভাব পড়েছে বলে জানান নাহিদ।