শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, প্রায় ১০ বছর আগে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এখন সময় এসেছে শিক্ষানীতিকে সংশোধন, পরিমার্জন ও সংযোজন করার। তাই সরকার শিক্ষানীতি সংশোধন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের আয়োজনে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এডুকেশন টেকনোলজি হ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার ট্রান্সফরমেশন শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব ও একুশে পদক প্রাপ্ত ড. শামসুল আলম। আলোচনায় যুক্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যরা।
মন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে আমরা দেশের বিপুল জনসংখ্যাকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন প্রয়োজন শিক্ষার গুণগত মান অর্জন। শিক্ষার সব পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। একটি সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়ন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
অনলাইন শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে আমাদের কর্মক্ষেত্রে এত পরিবর্তন হবে যে বর্তমানে অর্জিত জ্ঞান হয়তো ভবিষ্যতে আর প্রয়োজন হবে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, যাতে কোনো কর্মজীবী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেকে রিস্কিল ও আপস্কিল করতে পারে। সে যেন অনলাইনের মাধ্যমে শিখতে পারে সেই সুযোগ রাখতে হবে।
জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষাও হচ্ছে না
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা বাতিলের পর এ বছর অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাও হচ্ছে না। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটি আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই সময়ে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও এই তথ্য জানানো হয়েছে।
গত ২৩ আগস্ট জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিলের প্রস্তাবনা সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। সেই সারসংক্ষেপে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরই গতকাল জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সভায় করোনা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয় সে ক্ষেত্রে এইচএসসি পরীক্ষা কিভাবে নেওয়া যায়, সেই উপায় খুঁজতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণের বিষয়ে বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি কী হতে পারে, সে বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়; যা আগামী সভায় উপস্থাপন করতে বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
সভায় মন্ত্রী করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত রাখতে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কারিগরি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নির্দেশ প্রদান করেন।
সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন।
যদি জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না হয় তাহলে কিভাবে মূল্যায়ন হতে পারে, সে ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বিইডিইউ)। তারা বলছে, করোনা ভাইরাসের ছুটির কারণে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৮৮টি কর্মদিবস নষ্ট হচ্ছে। ১৬ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মাত্র ৪১ দিন কর্মদিবস পেয়েছিল, কিন্তু এই সময়ে তেমন একটা লেখাপড়া হয়নি। যদি ১ অক্টোবর থেকে ৫২ দিন কর্মদিবস থাকে, এই সময়েও ক্লাস শুরু করা সম্ভব হলে শীতকালীন ১০ দিনের ছুটি বাতিল করা বা কমানোর সুপারিশও আছে। বিইডিইউ আরো বলছে, অক্টোবর বা নভেম্বরে খুললে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। আর সেটা সম্ভব না হলে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই অটো পাস-এর মাধ্যমে পরবর্তী শ্রেণিতে চলে যাবে শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের উপস্থিতিতে শিক্ষাসচিব মো. মাহবুব হোসেন এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেনের অংশগ্রহণে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বর্তমান পরিস্থিতিতে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা বাতিলে সারসংক্ষেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরই ভিত্তিতে পরীক্ষা বাতিলে প্রস্তাবনা সংক্রান্ত ওই সারসংক্ষেপ ২৩ আগস্ট সরকার প্রধানের কাছে পাঠানো হয়। আর প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতেই বাতিল হলো পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা।