ঢাকা ইউনিভার্সিটি একাউন্টিং এলামনাই এসোসিয়েশন এর উদ্যোগে ৫ জুন অনুষ্ঠিত হয় এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান। ঢাবির ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস স্টাডিজ এর কনফারেন্স হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডিপার্টমেন্ট অব একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (AIS) এর বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রফেসর মমতাজউদ্দিনকে সংবর্ধনা এবং নতুন চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আবদুল হাকিমকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করা হয়।
একাউন্টিং এলামনাই এর প্রেসিডেন্ট হায়দার আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর এবং একাউন্টিং এলামনাই এসোসিয়েশন এর ফাউন্ডার-প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. এম হারুনুর রশিদ; এলামনাই এসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট লায়ন ওয়াহিদুজ্জামান বাবর এবং খবির উদ্দিন খান; ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং এআইএস ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. মাহমুদা আকতার; আরেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও ফেয়ারওয়েল এন্ড রিসেপশন অনুষ্ঠানের কনভেনর এম হেলাল; সাধারণ সম্পাদক মোঃ গিয়াস উদ্দিন; অর্গানাইজিং সেক্রেটারি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের যুগ্ম-কর কমিশনার মোঃ মহিদুল ইসলাম; এক্সিকিউটিভ মেম্বার প্রফেসর আমীরুস সালাত।
অনুষ্ঠান অর্গানাইজ করেন একাউন্টিং এলামনাই এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এম হেলাল। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং ক্যারিশমেটিকভাবে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন এসোসিয়েশনের এক্সিকিউটিভ মেম্বার ও সরকারের উপ-সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।
বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রফেসর মমতাজউদ্দিন আহমেদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এলামনাই এর সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন এবং সম্মাননা ক্রেস্ট অর্পণ করেন এসোসিয়েশনের ফাউন্ডার-প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. হারুনুর রশিদ।
নতুন চেয়ারম্যান প্রফেসর এম আবদুল হাকিমকে ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন এলামনাই এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হায়দার আহমেদ খান এফসিএ এবং তাঁকে সম্মাননা ক্রেস্ট অর্পণ করেন এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হায়দার আহমেদ খান এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট, ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এর মহাসচিব এম হেলাল।
দুচেয়ারম্যানের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত ডক্যুমেন্টারি প্রদর্শন করেন প্রফেসর আমীরুস সালাত।
অনুষ্ঠানে অতিথি-অভ্যাগতদেরকে ওয়েলকামিং রিফ্রেশমেন্ট এবং ব্যতিক্রমী নৈশভোজে আপ্যায়িত করা হয়। যাতে ছিল বিভিন্ন ধরনের হারবাল খাদ্যের সমাহার। অতিথিগণ পরম তৃপ্তির সাথে ডিনার উপভোগ করেন। ওয়েলকামিং রিফ্রেশমেন্ট ও ব্যতিক্রমী ডিনারসহ সমগ্র অনুষ্ঠানমালা এককভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেন জনাব হায়দার আহমেদ খান এফসিএ।
বিদায়ের বেদনা, স্বাগতের আনন্দ দুয়ে মিলে সৃষ্ট প্রাণস্পর্শী অনুভূতির প্রকাশ পায় অনুষ্ঠানে আগত অতিথিগণের বক্তৃতায়। বক্তাগণের বক্তৃতার উল্লেখযোগ্য অংশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার কন্ট্রিবিউটর মোহাম্মদ মোস্তফার অনুলিখনে সন্নিবেশিত হলো।
প্রফেসর ড. এম হারুনুর রশিদ
একাউন্টিং এলামনাই এর প্রতিষ্ঠাতা-প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. হারুনুর রশিদ প্রাণবন্ত বক্তৃতায় বিদায়ী এবং নতুন চেয়ারম্যানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন একজন পিতা যখন দেখেন সন্তান তাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে, পিতা ঈর্ষান্বিত হন না বরং সন্তানের সাফল্যে গর্বিত হন, পরম তৃপ্তিলাভ করেন। তেমনি একজন শিক্ষক যখন দেখেন তার ছাত্র জ্ঞান-গরিমায় তাকে ছাড়িয়ে গেছে, তখন তিনি গভীর তৃপ্তি অনুভব করেন এবং ছাত্রের পেছনে যে সময় ও শ্রম ব্যয় করেছেন, তা সার্থক হয়েছে বলে মনে করেন। সে হিসেবে এবং শিক্ষক হিসেবে মমতাজ পরিপূর্ণতা লাভ করেছেন। আজকের দিনটি অনবদ্য দিন হিসেবে বিবেচিত হবে। দুজনের সৃষ্টিই হারিয়ে যেত যদি আজকের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে না পারতাম। আজকের অনুষ্ঠান ইতিহাস সৃষ্টিকারী বিষয়ে পূর্ণ হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এলামনাই সদস্যরা বিদায়ী চেয়ারম্যান মমতাজকে যেমন দৃষ্টিতে গ্রহণ করেছিল, নতুন চেয়ারম্যান প্রফেসর হাকিমকেও অনুরূপভাবে গ্রহণ করবে ও সহযোগিতা দেবে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ এর পর ঢাকা ভার্সিটিতে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তরুণদেরকে দায়িত্ব প্রদানে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। সিনিয়র ও প্রবীণ শিক্ষকরা তরুণ বিভাগীয় প্রধানের কাছে জবাবদিহি থাকবেন, এটা গ্রহণযোগ্য ছিল না; তাঁরা জবাবদিহি থাকবেন ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে; বিভাগের চেয়ারম্যান হবেন Co-ordinator। তিনি বলেন, সোসিয়ালাইজেশনকে যারা রপ্ত করতে পেরেছে, তারা সহজে সংকট উত্তরণ করেছে। একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট একমাত্র ডিপার্টমেন্ট, যারা একাডেমিক প্রশ্নে দৃঢ়তা ও দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছে। বিভাগীয় মামলায় দুপক্ষ কোর্টে গেছে একই রিক্সায় চড়ে, আবার মামলা শেষে ফিরেও এসেছে একই রিক্সায়। কোর্টে সওয়াল-জবাবে কী হয়েছে, সে সম্বন্ধে মোটেই বিতর্ক কিংবা আলোচনা করেনি। একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট একাডেমিক প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থেকেছে; এলামনাইদের ঐক্যে কখনো ফাটল ধরেনি।
প্রফেসর হারুন বলেন যিনি কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে যোগ্য উত্তরসূরি সৃষ্টি করে যান, তিনিই প্রকৃত লিডার। একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টে এক ডজন শিক্ষক আছেন, যেকোনো সময়ে যাদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের যোগ্যতা আছে। এলামনাইয়ের কাজে মমতাজের ভূমিকার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। প্রফেসর হাকিমকে আনুষ্ঠানিকভাবে এলামনাই সদস্য করে নেয়ার জন্য কার্যনির্বাহী পরিষদকে আমি অনুরোধ করছি। এলামনাইয়ের উচিত ডিপার্টমেন্টকে সহযোগিতা করা। এম হেলালের পরামর্শ অনুযায়ী AIS Department এর চেয়ারম্যানের রুমটা বড় করে নেয়ার ব্যাপারে নতুন চেয়ারম্যান হাকিম সাহেব ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করি।
প্রফেসর মমতাজউদ্দিন আহমেদ
সংবর্ধনার জবাবে এআইএস ডিপার্টমেন্টের বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রফেসর মমতাজউদ্দিন আহমেদ বলেন এ ধরনের সংবর্ধনা দেয়া হবে আমাদেরকে, তা ভাবতে পারিনি। আমি সবসময় ডিপার্টমেন্টকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। ২০০৫ সালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লাম। ধারণা করতে পারিনি সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসতে পারব। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ফিরে এসেছি। সেই উদ্বেগজনক মুহুর্তে শ্রদ্ধেয় হারুন স্যার সাহস জুগিয়েছিলেন। Extended life এ আল্লাহ আমাকে দিয়ে ভালো কিছু কাজ করাবেন বলে হয়ত প্রাণটা ফিরিয়ে দিয়েছেন। কাজই আমার লক্ষ্য, আমি কাজে ডুবে থাকতে চাই। এক সময়ে বলা হয়েছিল, ৮টি ডিপার্টমেন্টের মধ্যে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট ৮ নম্বরে থাকবে, আমরা এখন ১ নম্বরে! এর জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। আমরা যা করেছি, অন্য কোনো ডিপার্টমের্ন্টের পক্ষে তা করা সহজ হবে না।
আমি আস্থাশীল যে, হাকিম ভাই নতুন কিছু করবেন একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টে ও এলামনাইতে। এ ডিপার্টমেন্টের স্কলারশিপে এলামনাইয়ের অবদান অনেক বড়।
ঘটনাক্রমে আমি আর হাকিম ভাই ৮ বছর আগে সুযোগ পেয়েছি বলে এত কাজ করতে পেরেছি। চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সময় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পাঠদান করতে পারিনি। এখন আবার পাঠদান শুরু করব। শিক্ষার্থীদের বলি হতাশার কোনো কারণ নেই, তোমরাই সব পারবে। আমাদের ডিপার্টমেন্টে বর্তমানে ৩৮ জন শিক্ষক; আমরা যদি শিক্ষার্থীদেরকে সঠিকভাবে নার্সিং করতে পারি, তাহলে সাফল্য অবধারিত। শিক্ষকদের বসার জায়গা হয়েছে, এটি স্বস্তিদায়ক। আমি এলামনাইতে পদে না থাকলেও এলামনাইয়ের কাজে সহযোগিতা করব।
প্রফেসর মোহাম্মদ আবদুল হাকিম
এআইএস ডিপার্টমেন্টের নতুন চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আবদুল হাকিম সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সুন্দর একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদেরকে সংবর্ধনা দেয়া হলো; এজন্য আমি কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন চেয়ারম্যানশিপের দায়িত্ব Full time job হয়ে গেছে, আর শিক্ষকতা নেমে এসেছে Part time job এ। মমতাজ ভাই চেয়ারম্যনের দায়িত্ব নেয়ার আগে তাঁকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলাম; আশা করি, মমতাজ ভাইয়ের কাছ থেকেও সহযোগিতা পাব। আমাদেরকে মনে করতে হবে, একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট একটা পরিবারের মতো। আমরা Cordial আচরণ এবং সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করব। বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর একটি প্রাইভেট ব্যাংকে লোভনীয় অফার পেয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষকতা পেশায় থাকব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।
তিনি বলেন, ছোট বেলায় ছোট ছোট অনেক কাজ করতাম; ছোট ছোট কাজে মানুষের উপকার হতো। এখনও সুযোগ পেলে করি। পূর্বসুরীদের কাছ থেকে অনেক প্রেরণা পেয়েছি। সেই প্রেরণার ফলশ্রুতিতে আজকের এ অবস্থান। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকব। আজকের অনুষ্ঠানের মতো আগামীতেও এভাবে এলামনাইদের পক্ষ থেকে বিদায়দান ও স্বাগত সম্ভাষণ দেয়া হবে বলে আমি আশা করি। এলামনাই এর কাজে সর্বোত সহযোগিতার আশ্বাস থাকল।
ওয়াহিদুজ্জামান বাবর
একাউন্টিং এলামনাই এসোসিয়েশনের পূর্বতন কমিটির প্রেসিডেন্ট এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বাবর বক্তব্যের শুরুতেই এ ধরনের সফল অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য এম হেলালকে অভিনন্দিত করেন। তিনি বলেন, একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের প্রত্যেক চেয়ারম্যান অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন। এর মধ্যে প্রফেসর মমতাজ আহমেদ অসাধারণ কাজ করেছেন। আমরা তাঁদের পরিচালিত একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টকে নিয়ে গর্ববোধ করি। আপনারা সবাই জানেন, একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টে কোনো সমস্যা নেই। অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের মতো এ ডিপার্টমেন্টে কোনো গ্রুপিং নেই। অন্যান্য ডিপার্টমেন্টে দেখা যায়, টিচারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ লেগে থাকে; একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট এ ধরনের দ্বন্দ্ব-বিবাদ থেকে সাফল্যের সাথে দূরে থাকতে পেরেছে। বিদায়ী ও নয়া দুচেয়ারম্যান যৌথভাবে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবেন -এটি আমাদের প্রত্যাশা।
ওয়াহিদুজ্জামান বাবর আরও বলেন, একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট এলামনাইদেরকে কাজে লাগাতে পারে। অথচ এলামনাইদের সাথে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের তেমন সম্পর্ক নেই। এর জন্য কারো কারো ব্যর্থতা থাকতে পারে, সে বিচার-বিশ্লেষণ না করে একাউন্টিং শিক্ষাকে কীভাবে আরও আকর্ষণীয় করা যায় সে চেষ্টা করতে হবে।
খবির উদ্দিন খান
একাউন্টিং এলামনাই এর সাবেক প্রেসিডেন্ট, সোয়ান গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর, সদাহাস্যময় ও প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব খবির উদ্দিন খান বলেন সৃজনশীলতার কোনো সীমানা নেই; এতে অতৃপ্ত থাকলেই নব নব উদ্যম সৃষ্টি হবে। সন্তুষ্টি এসে গেলে সৃষ্টির গতিও থেমে যাবে। এজন্য আমি বলব কর্মযোগী প্রফেসর মমতাজের সাফল্য অনেক, চেয়ারম্যানশিপ থেকে চলে গেলেও তিনি নতুন কিছু সৃষ্টি করবেন। নয়া চেয়ারম্যান প্রফেসর হাকিম একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টকে আরও গতিশীল ও সমৃদ্ধ করবেন এটি আমাদের প্রত্যাশা।
এম হেলাল
অনুষ্ঠানের কনভেনর, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এম হেলাল অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আজকের অনুষ্ঠান বিদায় ও স্বাগত সম্ভাষণের অপূর্ব সমন্বয়; এটি একটি অনাড়ম্বর, কিন্তু নতুন ও ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান। কারণ, এই প্রথম এ ডিপার্টমেন্টের এলামনাইরা AIS Dept এর চেয়ারম্যানের সংবর্ধনা ও বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রফেসর মমতাজউদ্দিন আহমেদ একজন ডায়নামিক ও কর্মযোগী ব্যক্তিত্ব, সাংগঠনিক দক্ষতার উন্নয়নকামী শিক্ষক। প্রকৃতপক্ষে তিনি বিদায় হননি, তিনি ডিপার্টমেন্টে এবং এলামনাইতে ছিলেন-আছেন এবং সবসময়ে থাকবেন। নতুন চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আবদুল হাকিম ছাত্রবাৎসল শিক্ষক; জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও পান্ডিত্য দিয়ে তিনি আধুনিক শিক্ষান্নোয়নে ভূমিকা রাখবেন বলে বিশ্বাস।
অওঝ এর চেয়ারম্যানের ছোট্ট অফিস-রুমের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এম হেলাল বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ ডিপার্টমেন্ট একাউন্টিং কিংবা AIS ; তাই ১নং ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের রুমও প্রশস্তের দিক থেকে ১নং হওয়া উচিত; এত ছোট রুমে বসে উদার ও বড় কাজ করা কষ্টসাধ্য। আমি আশা করি, নতুন চেয়ারম্যানের আমলে এ রুমটি আরও প্রশস্ত হয়ে অধিক ব্যবহারোপযোগী হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে এর লবিংয়ে প্রয়োজনে এলামনাই হিসেবে আমরাও সহযোগিতা করব। ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভাস্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষস্থানীয় অনন্য অপরিহার্য ও আপন মহিমায় প্রোজ্জ্বল AIS Dept. এর উন্নয়নে ও প্রাগ্রসর অভিযাত্রায় এলামনাই এসোসিয়েশন রাখবে অনবদ্য ভূমিকা।
তিনি বলেন, বর্তমান ইসি কমিটি এলামনাই এসোসিয়েশনের রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেয়াসহ বিভিন্ন ব্যতিক্রমী কাজ করেছে। তাই প্রয়োজনে চেয়ারম্যানের রুমসহ অওঝ ডিপার্টমেন্টের উন্নয়নেও এগিয়ে আসবে।
প্রফেসর ড. মাহমুদা আকতার
ডিপার্টমেন্টের বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রফেসর মমতাজউদ্দিন সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করে একাউন্টিং এলামনাই এসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. মাহমুদা আকতার বলেন প্রফেসর মমতাজউদ্দিন আহমেদ আমাদের কাছের মানুষ, প্রাণের মানুষ। তাঁর বিদায়ে আমাদের মনে বেদনার ঢেউ ওঠে; তবে আমরা আশান্বিত যে, তিনি ডিপার্টমেন্টে সক্রিয় থাকবেন।
গোমতী নদী বিধৌত কুমিল্লায় ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণকারী অসাধারণ মেধাবী সন্তান প্রফেসর মমতাজউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি এম কম এ ১ম শ্রেণিতে প্রথম হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন, যা ছিল নৈপুণ্যে ভরপুর। তাঁর প্রতিভাদীপ্ত অংশগ্রহণে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস মর্যাদাপূর্ণ বিভাগে পরিণত হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের স্বপ্নের ডিপার্টমেন্ট AIS এ গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে তিনি কর্মক্ষেত্রে বিজয়ী হয়েছেন, বিজয়ী হয়েছি আমরা তাঁর সহকর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীরাও। তিনি মানবিক গুণের মানুষ। অর্থনীতি সমিতির আজীবন সদস্য হিসেবে তিনি সম্মানিত হয়েছেন। স্যারকে আমি বিনীতভাবে বলব চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়লেও আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, আমাদের কাছেই থাকবেন।
প্রফেসর মোঃ মহিদুল ইসলাম
ডিপার্টমেন্টের নতুন চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আবদুল হাকিম সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করে একাউন্টিং এলামনাই এসোসিয়েশনের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি মহিদুল ইসলাম বলেন, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জে ১৯৫৬ সালে জন্মগ্রহণকারী প্রফেসর মোঃ আবদুল হাকিম তাঁর শিক্ষাজীবনে অসাধারণ মেধার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ম্যাথমেটিকস বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স দুটোতেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। ১৯৮৩ সাল থেকে ডিপার্টমেন্ট অব একাউন্টিংয়ে বিবিএ ও এমবিএ প্রোগ্রামের শিক্ষক হিসেবে অদ্যবধি কর্মরত আছেন। ১৯৮৯ সালে তিনি ব্রুনেল ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি অনেকগুলো পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স, একাউন্টিং বিষয়ের সাথে যুক্ত আছেন। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং কমিটির মেম্বার ছিলেন। তাঁর ২০টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত হয়; তিনি ৬টি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষক, উত্তরা একাডেমিক ফাউন্ডেশন এবং উত্তরা কলেজের বোর্ড অব গভর্নেন্স এর মেম্বার।
জনাব হাকিম এর জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরার পর তিনি বলেন শিক্ষার প্রসারে, শিক্ষার উন্নয়নে আমরা অনেক এগিয়েছি; কিন্তু মানুষ হবার ক্ষেত্রে আমরা ক্রমশঃ পিছিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষাক্ষেত্রে মানুষ হবার দিকে তথা মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে আমাদেরকে জোর দিতে হবে। একাউন্টিংয়ের ছাত্র হিসেবে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও ট্রান্সফারেন্সি, একাউন্টেবিলিটি থাকা প্রয়োজন, কেননা আমাদেরকে মানুষ অনুসরণ করবে।
গিয়াস উদ্দিন
একাউন্টিং এলামনাই এর সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দিত করে বলেন যারা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এক্ষেত্রে তিনি ক্যাম্পাস পত্রিকা কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে এর সম্পাদক এম হেলালের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি বলেন ক্যাম্পাস পত্রিকা সবসময়েই স্বউদ্যোগে আমাদের এলামনাই এসোসিয়েশনের খবর ও প্রতিবেদন সচিত্র ছাপিয়ে এলামনাই কার্যক্রমকে গতিশীল-উৎসাহিত ও প্রসারিত করে চলেছে। ক্যাম্পাসর কাছ থেকে ভবিষ্যতেও আমরা এমন আন্তরিক সহযোগিতা-সমর্থন প্রত্যাশা করি।
আমীরুস সালাত
ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর আমীরুস সালাত। তিনি বলেন, এ বিভাগের শিক্ষক হিসেবে শ্রদ্ধেয় ও অনুকরণীয় মেধার অধিকারী দুঅগ্রজ শিক্ষক মমতাজ স্যার ও হাকিম স্যারকে শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
তিনি বলেন, আজকের এ সুন্দর ও গোছালো অনুষ্ঠানের মতো অনুষ্ঠান আরও আয়োজিত হলে ডিপার্টমেন্টের টিচার ও এলামনাইদের মধ্যে ইন্টারাকশান বাড়বে। স্বল্প সময়ের মধ্যে এত সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে কনভেনর এম হেলাল সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। নিপুণভাবে অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় এবং পরিস্থিতির পরিবর্তনে ও সংকটে কীভাবে দ্রুত ও দক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তা আমিও তাঁর কাছ থেকে বুঝতে পেরেছি। আগামীতে এলামনাই এসোসিয়েশনের আরও বড় অনুষ্ঠানের দায়িত্ব তাঁর কাছে পড়লে তাঁর ক্যারিশমেটিক হাতের পরশ আরও বেশি পাব।
তিনি আরও বলেন, মমতাজ স্যারের ক্লাস আমি কখনো মিস করিনি। স্যারের গুরুতর অসুখের সময় তাঁর পাশে থেকেছি। ডিপার্টমেন্টের উন্নতির জন্য তিনি আমাদের স্নেহপূর্ণ বকা দিতেন। স্যার যেখানে যান, ডিপার্টমেন্টের কথাই ভাবেন। ডিপার্টমেন্টের নতুন চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আবদুল হাকিম স্যার কর্ডিয়েল, কো-অপারেটিভ। ছাত্রবান্ধব এ গুণী শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপারে যেকোনো সময় যেতে পারে। অতীতে বিভিন্ন কাজে তিনি যেমন সাফল্যের চমক সৃষ্টি করেছেন; আশা করি, অওঝ বিভাগেও সে সাফল্য আসবে অদূর ভবিষ্যতে।
তিনি আরও বলেন, ১০০টি স্কলারশিপ একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট দিয়ে থাকে। ডিপার্টমেন্টের একটি মেয়েকে স্কলারশিপ দেয়া হয়েছে, যার বাবা চা বিক্রি করে সংসার চালান। ৩০টি স্কলারশিপ একাউন্টিং এলামনাই থেকে প্রতিবছর আসে। আমরা আরও সহযোগিতা আশা করি।
হায়দার আহমেদ খান
সবশেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি, সদা বিনয়ী ও প্রিয়মুখ, একাউন্টিং এলামনাই এর সুযোগ্য প্রেসিডেন্ট হায়দার আহমেদ খান বলেন, আমাদের প্রিয় ডিপার্টমেন্টের বিদায়ী ও নবাগত চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনা দিতে পারায় একাউন্টিং এলামনাই এসোসিয়েশনের সদস্যরা অত্যন্ত আনন্দিত। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি।
তিনি বলেন, আমাদের সবার প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ড. হারুনুর রশিদ স্যার সবসময় আমাদের সাথে আছেন; তাঁর গাইডেন্সে আমরা চলি। তেমনি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকগণের সহযোগিতাও আমাদের কাম্য। স্কলারশিপ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি এসোসিয়েশনের মেম্বার সংখ্যাও বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন এলামনাইয়ের আজকের অনুষ্ঠান থেকে আমরা নিয়ে যাচ্ছি রজনীগন্ধার সুরভী, প্রাজ্ঞ-বিজ্ঞ নেতৃত্বের নির্দেশনা আর কর্মযোগী এলামনাই নেতৃত্বের কাছ থেকে অফুরন্ত প্রেরণা।