একাদশ শ্রেণিতে মেধাতালিকা থেকে ভর্তি শেষ হয়েছে। কিন্তু ভর্তির জন্য পাঁচ দিন সময় দেয়া হলেও নামিদামি কলেজগুলোতে অর্ধেক শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়নি। ফলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ বাড়ছে। অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শূন্য আসনের ভিত্তিতে আবারও মেধাতালিকা প্রকাশ করবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, নামিদামি কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী কম ভর্তি হওয়ার পেছনে কারণ একটাই, বেশির ভাগ মেধাবী শিক্ষার্থী আবেদন করেছে ২০ থেকে ৩০টি নামিদামি কলেজে। ফলে প্রায় সব কলেজেই তারা মেধাতালিকায় রয়েছে। কিন্তু তারা ভর্তি হয়েছে একটি কলেজে। ফলে বাকি কলেজগুলো শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। তবে এসব নামিদামি কলেজে যারা অপেক্ষমাণ তালিকার শুরুর দিকে রয়েছে তারাও মেধাবী। হয়তো সামান্য নম্বরের ব্যবধানে তারা প্রথম মেধাতালিকায় আসতে পারেনি। অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে যে মেধাতালিকা করা হবে তাতে তারাই এবার ভর্তির সুযোগ পাবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন বলেন, এবার একেকজন শিক্ষার্থী ২০টি কলেজ পছন্দের সুযোগ পেয়েছে। তাই দেখা গেছে সেরা মেধাবীরা অনেকেই সাত থেকে ১০টি পর্যন্ত কলেজে মনোনীত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তারা তো ভর্তি হয়েছে একটি কলেজে। ফলে বাকি কলেজগুলোর ওই আসন খালি হয়ে গেছে। এ কারণে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে যে মেধাতালিকা প্রকাশ হবে তাতে অনেক শিক্ষার্থীই ভর্তির সুযোগ পাবে।
জানা যায়, সারা দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার কলেজের আসন সংখ্যা প্রায় ১৯ লাখ। আর এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন। চলতি বছরে উত্তীর্ণদের সঙ্গে ২০১৪ ও ২০১৫ সালের পাস করা শিক্ষার্থীদেরও আবেদনের সুযোগ রয়েছে। তবে আবেদন করেছে ১৩ লাখ এক হাজার ৯৯ জন। আবেদনকারীদের মধ্যে ৯ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজে ভর্তির জন্য মেধাক্রমে স্থান পেয়েছে। বিলম্ব ফিসহ ভর্তি হওয়া যাবে ১০ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত। একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে ১০ জুলাই।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু অনেক আসন খালি থাকবে। তাই কেউ যাতে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয় সে ব্যাপারটি লক্ষ রাখা হচ্ছে। যারা এখনো অনলাইন বা এসএমএসে আবেদনই করেনি তাদের কিভাবে ভর্তির সুযোগ দেয়া যায় সে চিন্তা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে নির্বাচিতদের ভর্তি শেষে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে ভর্তি উন্মুক্ত করা যায় কি না সে বিষয়টিও ভাবনায় রয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে একাদশে ভর্তিতে এবার ২১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫টি আসন রয়েছে। ফলে সাত লাখ আসন এবার ফাঁকা থাকবে। সবাই তার পছন্দের কলেজ স্বাভাবিকভাবেই নাও পেতে পারে। তবে আসনের জন্য কেউ ভর্তি হতে পারবে না- এমন হবে না। তবে এবার একেকজন শিক্ষার্থী ১০টি অনলাইনে ও এসএমএসে ১০টি কলেজে আবেদনের সুযোগ পেয়েছে। ফলে অনেকেই একাধিক কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। এ অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই প্রথম পর্বের ভর্তির পর অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে অধিক শিক্ষার্থী চলে আসবে মেধাতালিকায়।
ভর্তি প্রক্রিয়ার ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখাছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আসফাকুস সালেহীন। সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ পেয়েও অসংখ্য শিক্ষার্থী প্রথম মেধাতালিকায় স্থান না পাওয়ায় উদ্বেগের তথ্য আসছে তার কাছে। ৫ থেকে ১০টি কলেজে আবেদন করেও বহু মেধাবীর কেবল অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকার ঘটনায় বিষয়ে তিনি বলছিলেন, হ্যাঁ বিষয়টি আমাদের কাছে আসছে। অনেকেই ফোন করে বলছেন, আমার ছেলে ৮ থেকে ৯টি কলেজে আবেদন করেও একটিতে মেধাতালিকায় আসেনি। সবগুলোতেই অপেক্ষমাণ তালিকায় নাম।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তবে এটা সত্যি যে ভালো মানের প্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা কম। কিন্তু সকলের চাহিদাও সেখানেই। ফলে প্রতিযোগিতা অধিক।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মইনুল ইসলাম বলেন, একেকজন অনেক প্রতিষ্ঠানে মনোনীত হয়েছে, ফলে তারা যখন একটি কলেজে ভর্তি হবেন বাকিগুলোর আসন খালি হবে। দেখা গেছে যারা সবচেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠানে মনোনীত হয়েছে, তারা অন্য প্রতিষ্ঠানেও মনোনীত হয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভালো মানের প্রতিষ্ঠানে প্রতিযোগিতা থাকবেই। যেখানে রাজধানীর সর্বোচ্চ চাহিদাসম্পন্ন ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসন ৫ হাজারের কম, সেখানে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে এবার ১৮ হাজার। ফলে প্রতিযোগিতা কোন পর্যায়ে হচ্ছে বোঝাই যায়।
এদিকে এবার শিক্ষার্থীদের চাহিদার বিবেচনায় সর্বাধিক পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে আছে ঢাকা সিটি কলেজ ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ।
বোর্ড ও কলেজগুলো থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাজউক উত্তরা কলেজে সর্বাধিক ৩২ হাজার ৭৫০ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঢাকা সিটি কলেজ ৩১ হাজার ৯৬১টি আবেদন। ৩০ হাজার ৫৮ আবেদন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ ২৯ হাজার ৮৬২ আবেদন নিয়ে চতুর্থ। পঞ্চম অবস্থানে সরকারি বাঙলা কলেজ, ষষ্ঠ অবস্থানে কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সপ্তম বিএএফ শাহীন কলেজ (তেজগাঁও), অষ্টম ঢাকা কলেজ, নবম রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, দশম ঢাকার সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।
এরপর এগারোতম অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ। এরপর যথাক্রমে চিটাগাংয়ের ওমরগণি এমইএস কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ (কুর্মিটোলা), নিউ গভঃ ডিগ্রি কলেজ রাজশাহী, চট্টগ্রামের হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজ, সরকারি আনন্দমোহন কলেজ, রাজশাহী কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ময়মনসিংহের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ ও নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ।