স্কুল, কলেজের পর বিশ্ববিদ্যালয়। এইচএসসির পর অলসভাবে সময় না কাটিয়ে নিজেকে ভবিষ্যতের কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুত করার এখনই সময়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যে কোনো শিক্ষার্থীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। স্কুল ও কলেজ জীবনের পর এখান থেকেই শুরু হয় ক্যারিয়ার গঠনের স্বপ্নপথের যাত্রা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দেয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেরই জানা নেই কিছু বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর অনেকেরই চিন্তা থাকে কিভাবে প্রথম সেমিস্টারে ভাল রেজাল্ট করা যাবে? প্রথমেই শিক্ষার্থীকে বুঝতে হবে; বিগত সময়ে পড়ে আসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় শিক্ষাক্ষেত্র। বিষয়ের পাশাপাশি ব্যবহারগত দিকটাও সম্পূর্ণ ভিন্নরকম। এমনকি শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকের প্রত্যাশার রকমটাও অন্যরকম। শিক্ষাদান ও গ্রহণের প্রক্রিয়াটাও ভিন্ন। প্রেক্ষিত বিবেচনায় প্রয়োজন শিক্ষার্থীর অতিরিক্ত আগ্রহ ও মনোযোগ। নিয়মতান্ত্রিকতা ও কাজের সময়কে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারা কলেজ পর্যায়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভাল রেজাল্টের মূলমন্ত্র। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সফল হওয়া যাবে, এটা ভাবলে ভুল হবে!
এখানে প্রতিযোগিতা বেশি। সেই সঙ্গে মেধাবী মুখের সমাবেশও আগের চেয়ে বেশি। তবে এটাও ঠিক, স্কুল ও কলেজের তুলনায় এ পর্যায়ে ভাল ফল করা বেশ সহজও। তবে এজন্য প্রয়োজন-ক্লাসে মনোযোগী হওয়া, সঠিক বিষয়ে আগ্রহ থাকা, বিষয়টি বোঝার সামর্থ্য অর্জন, ক্লাসে পড়ার আগে লেকচার দেখে নেয়া কিংবা পড়ানোর পর শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করা। ফলে বিষয়টির প্রতি অস্পষ্টতা কেটে যাবে। আজকের ক্লাসে পড়াটা কালকের জন্য ফেলে না রাখা, নিয়মিত ক্লাস করা, ক্লাসে মনোযোগী থাকা আর পঠিত বিষয়টি সম্পূর্ণ বুঝতে পারার সদিচ্ছা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাসায় এসে মূল বইটা পড়ে মিলিয়ে নিতে হবে ক্লাসে পড়ানোর বিষয়টি। এ চর্চা শিক্ষার্থীকে এগিয়ে রাখবে বহুগুণ। ভাল গ্রেড কিংবা ফল নির্ভর করে সার্বিক পড়ালেখার পারফরমেন্সের ওপর। তাই শুরু থেকে ভাল ফলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।
বিষয় নির্বাচনে করণীয়
শিক্ষার্থীর সামর্থ্য অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন জরুরি। বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিভাবকের পছন্দ-অপছন্দের মূল্য দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীর পছন্দ-অপছন্দের বিষয় উপেক্ষিত হয়। যার প্রভাব পড়ে একাডেমিক রেজাল্টে। সবদিক বিবেচনা করে বিষয় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিজেরই নেয়া বাঞ্ছনীয়।
নতুন বিষয়ে সনাতনী বিষয়গুলোর তুলনায় প্রথম শ্রেণি পাওয়া সহজ। আবার কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলোতে স্বাভাবিকভাবে বেশি নম্বর পাওয়া যায়। ভাল ফলের জন্য ভাল বিষয় বেছে নিতে হবে।
কিছু কিছু বিষয়ের সময়োপযোগিতা ও চাহিদা ব্যাপক। যেমন বর্তমান মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে ব্যবসায় শিক্ষার চাহিদা রয়েছে। এ কারণে অনেকেই বিবিএ পড়তে চায়। আবার নতুন কিছু বিষয় আছে, যার কর্মপরিধি সীমিত। বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর উচিত সংশ্লিষ্ট বিষয়ের চাহিদা ও এর কর্মপরিধি মূল্যায়ন। বহির্বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এবং ভবিষ্যত চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিষয় নির্বাচন করা।
যুগোপযোগী বিষয়
এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিষয় ও প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গতানুগতিক সাধারণ বিষয়গুলোতে পড়াশোনার চেয়ে নতুন ও আধুনিক সমসাময়িক বিষয়ে পড়াশোনা করলে ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি।
মেডিক্যাল সায়েন্স
মানবসেবা ও মহৎ পেশা হিসেবে বর্তমানে ডাক্তারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এইচএসসি উত্তীর্ণ বিজ্ঞান বিভাগের অধিকাংশ মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে ডাক্তার হওয়ার।
ইঞ্জিনিয়ারিং
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) খুলনা, রাজাশাহী, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ যেমন- কম্পিউটার, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল, মেকানিক্যাল, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।
কম্পিউটার সায়েন্স
ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে এই বিষয়টি। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে পড়ার সুযোগ।
আর্কিটেকচার
আর্কিটেকচার বা স্থাপত্য বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে বুয়েট ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বিষয়ে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের কনস্ট্রাকশন, কনসাল্টিং ফার্ম, ডেভেলপার ও রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে চাকরির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
ফার্মেসি
চাকরির ক্ষেত্রে এই বিষয়টির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এই বিষয়ে ভর্তি হয়ে সোনালি ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখেন। ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি পড়ার সুযোগ রয়েছে।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বাংলাদেশ কলেজ অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনোলজি বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এই বিষয়ে পাসকৃত শিক্ষার্থীর টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে চাকরির ব্যাপক সুযোগ।
কেমিস্ট্রি
ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, সিলেট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রায় সব কলেজে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরেও রয়েছে চাকরির ব্যাপক ক্ষেত্র। ওষুধ কোম্পানি, টেক্সটাইল শিল্প, গার্মেন্টস, টয়লেট্রিজ, পেইন্ট কোম্পানি, সার কারখানা, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, পেপার মিলÑ এ রকম আরও অনেক ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে চাকরির সুযোগ।
বিবিএ
চাকরির বাজারে এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ডিমান্ডিং জব অপেক্ষা করছে বিবিএ গ্রাজুয়েটদের জন্য। ব্যাংক, বীমা, প্রোডাকশন এবং সার্ভিস সেক্টরসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সব শাখায় এদের চাকরির দরজা উন্মুক্ত। বিবিএ ভর্তির সুযোগ রয়েছে আইবিএ (ঢাবি), খুলনা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও কয়েকটি কলেজ এবং প্রায় সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ানো হয়।
আইন
ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। মানবিক বিভাগের মেধাবীদের শীর্ষস্থানীয় পছন্দনীয় বিষয় আইন।
ফিজিওথেরাপিস্ট
বর্তমান সময়ের চাহিদাসম্পন্ন পেশা ফিজিওথেরাপিস্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের অধীনে বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশন্স ইনস্টিটিউট এই বিষয়টির ওপর বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করে আসছে। কোর্সগুলো হলো বিএসসি অনার্স ইন ফিজিওথেরাপি, বিএসসি অনার্স ইন অকুপেশনাল থেরাপি, বিএসসি অনার্স ইন স্পিচ এ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি, ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি (ফিজিওথেরাপি), ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি (অকুপেশনাল থেরাপি)।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা
ঢাকা, রাজশাহী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়ে অনার্স করার সুযোগ আছে। বর্তমানে এই পেশার পরিধি অনেক বেড়েছে। প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান টিভি নিউজ চ্যানেলগুলোও আজকাল সাংবাদিকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করছে।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং
ক্যারিয়ার উন্নয়নে ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং এখন বেশ জনপ্রিয়। আর্কিটেকচারাল ফার্ম, ম্যানুফ্যাকচারস পেইন্টস (কালার কোম্পানিজ, এ্যাডভারটাইজিং কোম্পানি, পর্যটন বা ট্যুরিজম কোম্পানিতে, বিল্ডার্স, প্রমোটর, বিল্ডিং ডেভেলপার, স্পেস প্ল্যানার হিসেবে উচ্চ বেতনে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
হোটেল ম্যানেজমেন্ট
পর্যটনের এ যুগে হোটেল ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড ট্যুরিজম প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের দেশে-বিদেশে রয়েছে চাকরির ব্যাপক সুযোগ। এককথায়, হোটেল ম্যানেজমেন্টে দক্ষ ব্যক্তির জন্য বিশ্বব্যাপীই চাকরির বাজার খোলা।