একাদশ শ্রেণিতে পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ রেখে চতুর্থ ও শেষ মেধা তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি।
চতুর্থ মেধা তালিকার জন্য আবেদনকারী ৮২ হাজার ৫৪৪ জন শিক্ষার্থীর সকলকেই বিভিন্ন কলেজে মনোনীত করা হয়েছে।
পাশাপাশি আসন খালি থাকা সাপেক্ষে এরইমধ্যে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা ছাড়পত্র (টিসি) নিয়ে পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবেন।
২৩ জুলাই সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ায় চতুর্থ দফায় মনোনীতদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ ছাড়াও প্রার্থীদের মোবাইল ফোনে এসএমএস করে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।
গত ১৩ থেকে ২১ জুলাই রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে এসব শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মেধা তালিকা ছাড়াও বিভিন্ন কারণে যারা ভর্তি হতে পারেনি তারাও ভর্তি হতে পারবে। আমরা সবাইকে ভর্তির আওতায় আনছি, কেউ যেন বাদ না যায়। আসন খালি থাকা সাপেক্ষে টিসি নিয়ে পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে।
আগামী আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য সারা দেশে অনলাইন ও এসএমএসে আবেদন করার নতুন নিয়ম চালু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবছর উত্তীর্ণ ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আবেদন করে এ পর্যন্ত ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৫ জন ভর্তি হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
চতুর্থ তালিকার ৮২ হাজার ৫৪৪ জন ছাড়াও কারিগরিতে ৩০ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন নাহিদ। এছাড়াও অনেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হবে।
টিসি নিয়ে পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে যাতে বাণিজ্য না হয় সেজন্য আমরা সক্রিয় আছি বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ায় কারিগরি জটিলতার মধ্যে নির্ধারিত সময়ের তিন দিন পর ২৮ জুন মধ্যরাতে প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে ১১ লাখ ৫৬ হাজার ২২৪ জন প্রার্থীর মধ্যে মনোনীত হয় ৯ লাখ ২৩ হাজার ১০৫ জন।
৬ জুলাই দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়, যাতে মনোনীত হয় ১৭ হাজার ৬৪৭ জন।
আর তৃতীয় তালিকায় প্রকাশ করা হয় ১১ জুলাই, এতে স্থান পায় এক লাখ আট হাজার ৬৩৯ জন শিক্ষার্থী।
তিন দফায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই পছন্দের কলেজ না পাওয়া এবং ভুল বিভাগ মনোনয়নের কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া।
অভিযোগ রয়েছে, তাড়াহুড়ো করে তালিকা প্রকাশ করায় অনেক নামি-দামি কলেজে শিক্ষার্থীর আসন শূন্য রয়েছে। বাণিজ্য শিক্ষা নির্ভর প্রতিষ্ঠানে মনোনয়ন দিয়ে যেমন আসন ফাঁকা রয়েছে, বিপরীতে বিজ্ঞান কলেজে মনোনয়ন দেয়ায় রয়েছে বাণিজ্যের আসন খালি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ।
প্রথম তালিকা প্রকাশের সময় রাজধানীর বিশেষায়িত সরকারি বিজ্ঞান কলেজে বাণিজ্যের শাখা না থাকলে এ বিভাগের ২০১ জন শিক্ষার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। শিক্ষক এবং অবকাঠামো না থাকায় সেখানে ভর্তি সঙ্কটের মধ্যে বাণিজ্যে এখনও প্রায় একশ আসন ফাঁকা রয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে বলেছে। তারা শিক্ষকসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছে। আমরাও রিক্যুজিশন দিয়েছি।
শিক্ষার্থী নিজে আবেদন করে ভর্তি না হলেও তাদের নাম ব্যবহার করে বোর্ডের কাছে কয়েকটি কলেজ তালিকা পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে ওই শিক্ষার্থীরা পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারছে না।
মনোনয়ন তালিকা নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট কাটাতে শিক্ষার্থী, অভিভাবকেরা শিক্ষাবোর্ডে ঘুরছেন প্রতিদিন। কয়েকটি কলেজও আবেদন করেছে সঙ্কট কাটাতে।
ঢাকা সিটি কলেজে প্রায় এক হাজার ৬০০ আসনের মধ্যে এখনও বাণিজ্যে ৬০০ আসন শূন্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান। এখানে দ্বিতীয় মেধা তালিকায় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মাত্র দুজনকে।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মানবিকে প্রায় আড়াইশ আসন শূন্য রয়েছে বলে জানান এ কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম।
ঢাকা কমার্স কলেজেও শূন্য রয়েছে প্রায় এক হাজার আসন। উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে বাণিজ্যে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা এখনও আবেদন করেনি তারা নিজ দায়িত্বে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে যে কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারবে। আবার কেউ ভর্তি হওয়ার পর অন্য কোনো পছন্দের কলেজে আসন খালি থাকলেও ছাড়পত্র নিয়ে সেখানে যেতে পারবে।
আগস্ট মাস পর্যন্ত এ সুযোগ থাকবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আসন খালি থাকলে অন্য কলেজ থেকে শিক্ষার্থী আসলে কলেজগুলোকে ভর্তি করতে হবে। কোনো কলেজ আপত্তি করতে পারবে না, এটা আমাদের নির্দেশ। কোনো বোর্ডও বাধা দেবে না। এখন যে যেখানে চায় স্বাধীনভাবে, উন্মুক্তভাবে সে সেখানে ভর্তি হতে পারবে। এটা আমরা আমাদের প্রক্রিয়ার মধ্যে আনবো না। আমাদের কলেজগুলোতে প্রচুর আসন ফাঁকা আছে। দুই লাখের বেশি আসন তো ফাঁকা থাকবেই -বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ফাঁকা আসনের বিষয়ে জানতে শিক্ষার্থীরা বোর্ডগুলোতে যোগাযোগ করতে পারে। ঢাকা বোর্ডের মোট ১৪টি কলেজ আছে যেখানে একজন শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়নি।
ভর্তি উন্মুক্ত করায় বাণিজ্য হবে কিনা- জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য তো এখনও হয়নি। যেসব কলেজে আসন ফাঁকা তাদের টিকে থাকতে হলে শিক্ষার্থী লাগবে। বাণিজ্য যাতে না হয় সেজন্য আমরা সক্রিয় আছি।
ভর্তিতে জটিলতার জন্য ২১ দিন সময় বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এবার এসএসসি পরীক্ষায় ১২ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৮ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে ১১ লাখ ৭৬ হাজার ১০৭ জন (চতুর্থ তালিকাসহ) ভর্তি হয়েছে। এছাড়া কারিগরিতে ৩০ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এবার এসএসসিতে পাস করা এক লাখ ছয় হাজার ৫১১ জন এখনও ভর্তির জন্য আবেদন করেনি বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাস্তবতার কারণেই সবাই ভর্তি হতে পারে না। পৃথিবীর কোনো দেশেই শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত হয় না।
অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বুয়েটর আইআইসিটি।