বিশেষ খবর



Upcoming Event

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় | সমৃদ্ধির ৫৪ বছর

ক্যাম্পাস ডেস্ক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
img

কৃষি আমাদের সংস্কৃতির অনিবার্য অনুষঙ্গ। কৃষি প্রধান এই দেশে সনাতন কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকায়নে তথা বিজ্ঞান-ভিত্তিক চাষাবাদের মাধ্যমে টেকসই কৃষি উন্নয়ন ও কৃষি-বিজ্ঞান ভিত্তিক অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ষাটের দশকের গোড়ায় গড়ে ওঠা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশের প্রথম উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার ঐতিহ্যবাহী জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ১৮ আগস্ট ৫৪তম বর্ষে পদার্পণ করছে। বিশ্বমানের গুণগত কৃষি শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ৫৪ বছর যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা শিক্ষক ও গবেষকবৃন্দ নিরলসভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান বিতরণ করে চলেছেন এবং ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ লাভ করেছে।
এদেশের কৃষি বিপ্লব ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার লক্ষ্যে ময়মনসিংহস্থ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ভেটেরিনারি কলেজকে কেন্দ্র করে ১৯৫৯ সালে শুরু হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। পরে কৃষিশিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণের পথিকৃৎ বিদ্যাপীঠ হিসেবে ১৯৬১ সনে ১৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড.এম ওসমান গনি ১৯৬১ সালে প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বনিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল যাত্রা শুরু করে বর্তমানে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মোঃ আলী আকবর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেশের কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা দেয়ার ঘোষণা দিয়ে কৃষিবিদদের সম্মানিত করেছিলেন। কৃষি শিক্ষা ও কৃষিবিদদের যথাযথ মূল্যায়ন ও প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদানের ঐতিহাসিক ঘোষণা আজও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে স্লোগান হিসেবে -“বঙ্গবন্ধুর অবদান - কৃষিবিদ ক্লাস ওয়ান” সোচ্চার কন্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। কৃষিবিদগণ সেই মর্যাদা প্রদানের প্রতিদান দিতে পেরেছেন, তাদের কর্মের মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সাতকোটি মানুষের দেশে বিপুল খালি জমি থাকা সত্ত্বেও খাদ্যের অভাব ছিল। কিন্তু এখন আবাদযোগ্য জমি কমে যাওয়ার পরেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, খাদ্য নিরাপত্তাও বেড়েছে যথেষ্ট। এ লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মৎস্যসম্পদ সম্প্রসারণ, গবেষণা ও শিক্ষাখাতে নিয়োজিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে উত্তীর্ণ গ্রাজুয়েটগণ।
ভেটেরিনারি ও কৃষি অনুষদ নামে দু’টি অনুষদ নিয়ে ১৯৬১ সনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল । বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই পশুপালন অনুষদ নামে তৃতীয় অনুষদের যাত্রা শুরু। এরপরে ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ এবং ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের আওতায় ৪৩টি শিক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সিমেস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষা দান করা হচ্ছে। ৪২টি শিক্ষা বিভাগে তিন সিমেস্টার মেয়াদে এমএস ডিগ্রি কার্যক্রম চালু রয়েছে। বর্তমানে ৪০টি বিভাগ থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে বর্ণাঢ্য গবেষণা সাফল্য বখত গবেষণা প্রকল্পসমূহ সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস) এর তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে সহস্্রাধিক গবেষণা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমানে এর চলমান প্রকল্পসংখ্যা দুই শতাধিক। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ফসল, মাৎস্য ও প্রাণির রোগ দমন পদ্ধতি, ভ্যাকসিন, জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।
এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন ডিগ্রিপ্র্রাপ্ত কৃষিবিদগণ আজ ছড়িয়ে আছেন দেশের কৃষি ও গ্রামোন্নয়নে নিয়োজিত বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যুক্ত থেকে তাঁরা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন। এ যাবত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৫,০০৭ জন স্নাতক, ১৫,৬৩৭ জন এম.এসসি./এম.এস. এবং ৪৯৬ জন পিএইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করে বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সরকারের বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিস, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং এনজিওসহ দেশ ও দেশের বাহিরের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে কাজ করে চলেছেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ এমন একটি পথিকৃৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষা, গবেষণা প্রশিক্ষণ ও সম্প্রসারণের মতো বহুমাত্রিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জার্মপ্লাজম সেন্টারের মাধ্যমে কৃষি গবেষণায় ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরষ্কার-১৪১৯’ স্বর্ণপদক লাভ আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন।
বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সমস্যা ও চাহিদা মোকাবেলার জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সবসময় তৈরি থাকতে হয়। নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বিশ্ববিদ্যালয় এ যাবত যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা একেবারে গৌণ নয়। এ উন্নয়নধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে আগামীতে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যথাযথ পরিকল্পনা ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে এর শিক্ষা ও গবেষণাসহ যাবতীয় কার্যাবলির বিকাশ অব্যাহত থাকবে এবং এর মধ্য দিয়েই কৃষি তথা জাতীয় উন্নয়নে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ও অবদান আরো ফলপ্রসূ হবে। আমাদের অর্জন সেশনজটমুক্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরিচালিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্ষুধা- দারিদ্র্যমুক্ত এক সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বখত এধারা অব্যাহত রাখতে আমরা প্রতিশ্রুত।

- লেখকঃ কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু, সহকারী পরিচালক, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতর, বাকৃবি


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img