সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ৪১ সদস্যের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এই কমিটি ২০২৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। নতুন এ কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ। তিনি বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এবং বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি। মহাসচিব হয়েছেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার।
কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি হয়েছেন কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। সহ-সভাপতি হয়েছেন ইউনিক গ্রুপের ফাউন্ডার ও বাংলাদেশে দি ওয়েস্টিন এবং রেডিসন হোটেলের কর্ণধার মো. নূর আলী। এছাড়াও সহ-সভাপতি হয়েছেন সেলিমা খাতুন এবং আশরাফুল হক মুকুল। কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন মাহবুব হোসাইন। যুগ্ম মহাসচিব হয়েছেন সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায় এবং এ. কে. এম. আফজালুর রহমান বাবু।
১৯৪৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ড. মমতাজউদ্দিন আহমেদ ও খান বাহাদুর নাজিরুদ্দিন আহমেদ এর হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের জন্ম হয়। ড. মমতাজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের পাবলিক ইন্সট্রাকশনের পরিচালক এবং পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং খান বাহাদুর নাজিরুদ্দিন আহমেদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রেজিস্ট্রার। এই অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি ও মহাসচিব ছিলেন বিচারপতি এম. ইব্রাহিম এবং জনাব মিজানুর রহমান। ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত অ্যাসোসিয়েশনকে ‘ওল্ড বয়েজ অ্যাসোসিয়েশন’ নামে ডাকা হতো। পরবর্তী বছরে এটির নামকরণ করা হয় ‘ওল্ড স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ যা ১৯৬০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভূক্তির লক্ষ্যে নাম পরিবর্তন করে ‘অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’ করা হয়। শুরুতে অ্যাসোসিয়েশনটি বিশ্ববিদ্যালয় ও এর শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা তথা কল্যাণ চিন্তার লক্ষ্য নিয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কর্তৃক একটি সামাজিক ক্লাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরবর্তীতে এর কার্যক্রম ও পরিধি ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর রূপ লাভ করে। বর্তমানে এই অ্যাসোসিয়েশন আর কেবল বিশ্ববিদ্যালয় ও এর শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এর পরিধি ও কার্যক্রম এখন ছড়িয়ে পড়েছে সমাজে ও রাষ্ট্রে। বর্তমানে এই অ্যাসোসিয়েশন সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বহুবিধ সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রমও পরিচালনা করে থাকে। দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে সমন্বিত শক্তিতে বাড়িয়ে দেয় সহযোগিতার হাত।
টিএসসি মিলনায়তনে এসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভায় (২০১৯-২২) সংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার এ কে এম আবুল কাশেম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন অন্য দুই নির্বাচন কমিশনার শরীফ লুৎফর রহমান ও আবদুর রহমান সরদার। আনোয়ারুল অ্যালামনাইয়ের সদ্য বিদায়ী কমিটির সহসভাপতি আর কাওছার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন।
কমিটির অন্যরা হলেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক জহুরা বেগম, পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক মো. আব্দুর রহিম, প্রচার ও প্রচারণা সম্পাদক কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক শরীফুর রহমান, আইন সম্পাদক ড. মো. শাহজাহান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. সেলিম জাহান, বিনোদন সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল।
কার্যনির্বাহী সদস্যরা হলেন- দেওয়ান রাশিদুল হাসান, বেনজির আহমেদ, অ্যারোমা দত্ত, আফজাল হোসাইন, শামসুজ্জামান দুদু, মাহবুবুর রহমান, মো. নাসের শাহরিয়ার জাহিদি, মো. আতাউর রহমান প্রধান, ড. মো. আবদুল কাইয়ুম লস্কর, মাহফুজা রহমান চৌধুরী বাবলী, মো. শহীদুল ইসলাম নীরু, মো. আল-মামুন, ইয়াসমীন সুলতানা খুকু, নাজিবুল ইসলাম দীপু, সালেহা খাতুন স্নিগ্ধা, মাহমুদা সুলতানা হেলেন, মো. মাহফুজুর রহমান আল মামুন, সাহেলা ফারজানা, নাদিরা কিরণ, অনুপম রায়, ড. নাঈমা খানম এবং শিখা বোস।
এর আগে, বিকেলে বার্ষিক সাধারণ সভা শুরু হয়। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল হক মুকুলের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি আনোয়ার- উল আলম চৌধুরী (পারভেজ), শাইখ সিরাজ প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘অ্যালাইমনাই শুধু অর্থ দেয় অথবা অবকাঠামো নির্মাণ করে তা নয়। অনন্য সাধারণ যে ভূমিকা তারা রাখে সেটি হচ্ছে রেপুটেশন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য সাধারণ যে মর্যাদা তার পেছনে এলাইমনাইয়ের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। যে যেখানে কাজ করছেন দেশে বিদেশে আন্তর্জাতিক পরিম-লে তাদের মর্যাদা মোরাল ইন্টিগ্রিটি, বিজনেস ইথিকস খুবই উঁচু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সম্মান ও মর্যাদা, তার পেছনে অ্যালামনাইদের অসাধারণ ও অনন্য অবদান রয়েছে। অ্যালামনাইদের সুনাম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য র্যাঙ্কিং, সম্মান ও মর্যাদায় শক্তিশালী মানদণ্ড হিসেবে ভূমিকা রাখে। এই মানদণ্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইরা এ বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক কিছু দিয়েছেন।’
সভাপতির বক্তব্যে এ. কে. আজাদ বলেন, ‘সদ্য বিদায়ী কমিটি ১৩ কোটি নয় লাখ টাকা রেখে যাচ্ছে। আরও ১ কোটি টাকা বিভিন্ন লোকের কাছে কমিটমেন্ট আছে, তারা দেবেন। অ্যালাইমনাই অ্যাসোসিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোয় অবদান রাখতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে অবদান রাখতে চায়। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজে এগিয়ে আসবে। আমার শুধু অনুরোধ থাকবে, অ্যালাইমনাইয়ের পাশাপাশি প্রত্যেকে প্রত্যেকের বিভাগের অ্যালাইমনাইকে শক্তিশালী করব। যেন কোনো বিভাগের শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বন্ধ না হয়।’
সভার শুরুতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হয়। ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের পর সভার এজেন্ডা ঘোষণা করেন এ. কে. আজাদ। সংগঠনের শোক প্রস্তাব পাঠ করেন যুগ্ম মহাসচিব সুভাষ সিংহ রায়। শোক প্রস্তাবে করোনায় মারা যাওয়া অ্যালামনাইদের নাম উল্লেখ করে তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে গত ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী পাঠ করেন সাংগঠনিক সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু। কমিটির তিন বছরের কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার এবং আয়-ব্যয়ের বিবরণী তুলে ধরেন কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান রাশিদুল হাসান।
তিন বছরের বার্ষিক কার্যবিবরণী এবং আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর এর ওপর অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা আলোচনা করেন। এরপর এই কার্যবিবরণী এবং আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। এছাড়া সভায় সভাপতির অনুমতিক্রমে অন্যান্য বিষয় উপস্থাপন ও এর উপর আলোচনা করা হয়। সভা শেষে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।