প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কমিশনে শিক্ষকদের গ্রেড পুননির্ধারণের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচির মতো আন্দোলনে সরকার সাড়া না দেয়ায় এবার কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এরই অংশ হিসেবে দেশের ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন।
৮ সেপ্টেম্বর ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল স্বাক্ষরিত এ বিবৃতিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে অর্থমন্ত্রীর কথায় মনে হয়েছে তিনি জনগণের প্রতিনিধি নন, তিনি আমলাদের প্রতিনিধি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিক্ষকদের পদোন্নতিকে ঘিরে তিনি দুর্নীতির কথা বলেন, অন্যদিকে হলমার্ক কেলেঙ্কারিকে তিনি কিছুই মনে করেন না এবং বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি যখন অত্যন্ত হালকাভাবে দেখেন তখন তার মুখে অন্তত জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষকদের বিষয়ে এরূপ অবাঞ্ছিত বক্তব্য নিতান্তই অশোভন।
বিবৃতিতে শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ জানান তারা। অন্যথায় শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি পূরণে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
এদিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এদিন কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, একদিকে সরকার শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবি মানছে না, অন্যদিকে তাদেরকে কয়েক ধাপ নিচে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা তো বেতন বাড়ানো বা টাকা-পয়সার কথা বলছি না; আমরা বলছি আমাদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু আমাদের দিন।
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এই সভাপতি বলেন, যে সময়ে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে, সে সময় এটাকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে শিক্ষকদের মর্যাদাহানির অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. খবির উদ্দিন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি মেহেদী হাসানও উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো নিয়ে আপত্তি জানিয়ে কয়েক মাস ধরে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসা শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক সভায় কর্মবিরতির কর্মসূচি ঠিক করেন।
ভার্সিটি শিক্ষকদের কর্মবিরতির যৌক্তিকতা নেই -অর্থমন্ত্রী
দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তাদের এই কর্মবিরতির কোনো যৌক্তিকতা নেই। তারা জানেনই না পে-স্কেলে তাদের জন্য কী আছে, কী নেই। স্বতন্ত্র পে-স্কেলের দাবি ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতির প্রতিক্রিয়ায় এখন ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী। তবে নতুন পে- স্কেল ঘোষণায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মুহিত।
নতুন পে-স্কেলে কী ভাবে শিক্ষকদের মর্যাদাহানি হয়েছে সে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি শিক্ষকদের পদোন্নতিতে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন তিনি। গত বছর ডিসেম্বরে বেতন কমিশন অষ্টম পে- স্কেল সুপারিশ করার পর থেকেই আলাদা বেতন কাঠামোর দাবিতে বিভিন্ন সময়ে কর্মবিরতি পালন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের অভিযোগ, সপ্তম বেতন কাঠামোতে সচিব, মেজর জেনারেল ও সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপকরা একই গ্রেডে থাকলেও নতুন কাঠামোতে তাদের পদাবনতি হয়েছে।
শিক্ষকদের আন্দোলনের সমালোচনা করে মুহিত বলেন, শিক্ষকদের করাপ্ট প্রাকটিস নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। দুর্নীতির উদাহরণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেমন প্রত্যেকটি শিক্ষক প্রফেসর হয়। এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, প্রফেসর (পদে) তাদের ইচ্ছামতো প্রমোশন দেয়।
তিনি বলেন, অসংখ্য প্রফেসর হয়েছে দেশে। প্রফেসর, এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও লেকচারার। এদের মধ্যে লেকচারার সবচেয়ে কম। নিচে ১০ জন হলে উপরে এক হাজার। এটা কোনো সার্ভিস হলো? শুধু উপরে পদোন্নতি হবে। এটা ঠিক করা দরকার।