॥ মাহীর হেলাল ॥
৮ম শ্রেণি, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল
সাংস্কৃতিক কার্যক্রম
বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরির ৩য় দিন অর্থাৎ ৩১ জুলাই জাম্বুরি গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি সংক্রান্ত আদান-প্রদান কার্যক্রম। এদিন আমাদের টেন্ট এরিয়া হতে এই অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত এলাকায় যাই। সেখানে ১৩০টি দেশের স্টল ছিল। এসব স্টলে প্রদর্শিত নানা উপাদান ও বিভিন্ন কার্যসূচির মূল লক্ষ্য ছিল সংশ্লিষ্ট দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে অন্য দেশের অংশগ্রহণকারীদের ধারণা দেয়া। যেমন- নেদারল্যান্ডস্ এর স্টলে আমাদের ব্রেসলেট বানানো শিখিয়েছে; আবার ইংল্যান্ড এর স্টলে শিখিয়েছে কীভাবে তাদের দেশের খুব জনপ্রিয় কেক বানানো যায়; পেরু এর স্টলে তাদের দেশের বিশেষ ধরনের ড্রাম বাজানো শেখায়। এভাবেই নানা দেশের সংস্কৃতির আকর্ষণীয় সব কার্যক্রম দেখে আমাদের সারাদিন কাটে।
জাপানের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে সাক্ষাৎ এবং সামাজিকতা
জাম্বুরির ৪র্থ দিন অর্থাৎ ১ আগস্ট এ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। প্রোগ্রামটি ছিল জাম্বুরি গ্রাউন্ডের বাইরে। আমি যে টিমে ছিলাম, সে টিমকে ৩টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রতিটি গ্রুপ ভিন্ন ভিন্ন স্থানে যাবে। এ প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে মূলত জাপানী সমাজের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জাম্বুরিতে অংশগ্রহণকারী ভিন্নদেশি স্কাউটদের ধারণা দেয়া হয়। আমি যে গ্রুপে ছিলাম, সে গ্রুপ গিয়েছিল ‘ফুতাজিমা হাই স্কুল’এ। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা জাপানের স্কুল সম্পর্কে ধারণা নিয়েছি; সেখানকার শ্রেণিকক্ষ কেমন, সায়েন্স ল্যাব কিংবা লাইব্রেরি কেমন ইত্যাদি। জাম্বুরি গ্রাউন্ড থেকে স্কুলটি ছিল বেশ দূরে। স্কুলে পৌঁছানোর পর ছাত্র-ছাত্রীরা হাততালি দিয়ে আমাদের বরণ করল। এরপর সে স্কুলের সিনিয়র টিচার ও ৩ জন ছাত্রী বক্তৃতা দিল। টিচারের বক্তৃতা থেকে জানতে পারলাম, সে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা কখনো অন্য দেশের স্কাউটদের দেখেনি। আমাদের দেখে ওরা অনেক খুশি। আমাদের জন্য ওরা ওদের স্কুলের কার্যক্রম নিয়ে একটি চৎবংবহঃধঃরড়হ তৈরি করে। সেটি বেশ তথ্যবহুল ও আকর্ষণীয় ছিল। এরপর সেই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা আমাদেরকে বিভিন্ন জিনিস বানানো শিখিয়েছে। ওদের কাছ থেকে কাগজের রোবট, পাখি, ফুল ইত্যাদি তৈরি শিখলাম।
আন্তঃধর্মীয় অনুষ্ঠান, খাদ্য মেলা, নাচ-গানের উৎসব
জাম্বুরির ৫ম দিন অর্থাৎ ২ আগস্ট সারাদিনে ৩টি প্রোগ্রাম হয়। তন্মধ্যে প্রথমটি হলো ওহঃবৎ-ৎবষরমরড়ঁং ঈবৎবসড়হু বা আন্তঃধর্মীয় অনুষ্ঠান। এতে সকলে সমবেত হই, যেখানে ঙঢ়বহরহম ঈবৎবসড়হু হয়েছিল সেই সুপরিসর গ্রাউন্ডে। এই অনুষ্ঠানে মূলত বিভিন্ন ধর্মের মূল দর্শন ও নানান নিয়ম-কানুন সম্পর্কে আলোচনা হয়। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী স্কাউটরা একের পর এক মঞ্চে এসে তাদের ধর্মের প্রধান নিয়মগুলোর বর্ণনা দিল। অবশেষে আমিসহ ৩৩,০০০ স্কাউট হাতে হাত রেখে যার যার বিশ্বাস অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি। তখন আমার মনের ভেতর এক অনাবিল প্রশান্তি অনুভব করছিলাম।
ঐদিনের ২য় প্রোগ্রামটি ছিল দুপুর থেকে। এটি ছিল ঋড়ড়ফ ঋবংঃরাধষ বা খাবারের মেলা। এ উৎসবে আমরা অন্যদেশের তাঁবুতে গিয়ে তাদের দেশীয় খাবার খেয়েছি। আবার অন্যরা আমাদের তাঁবুতে এসে বাংলাদেশি খাবার খেয়েছে। বিকেলবেলা ছিল ৩য় প্রোগ্রাম, যার নাম অৎবহধ ঝযড়ি বা নাচ-গানের উৎসব। এখানে সকল স্কাউট একত্রিত হয় গধরহ অৎবহধ-য়। এখানে একটি রক কনসার্ট হয়। আমরা নেচে গেয়ে খুব মজা করি।
বিজ্ঞান মেলা
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদান বোঝাতে জাম্বুরির ৬ষ্ঠ দিন অর্থাৎ ৩ আগস্ট বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রোগ্রামটি জাম্বুরি গ্রাউন্ডেই অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞান মেলার নির্ধারিত এলাকায় বিভিন্ন স্টলে গিয়ে দেখি সেখানে বিজ্ঞানের নানা আকর্ষণীয় বিষয় শেখানো হচ্ছে। আমি একটি স্টলে সোলার গাড়ি বানাই; আরেকটি স্টলে জানতে পারি ভবিষ্যতে কীভাবে পানির সাহায্যে গাড়ি চলবে; অন্য একটি স্টলে দেখলাম কীভাবে ড্রোন বা রোবট মানুষকে বিপদ থেকে বাঁচাবে। এভাবেই এ দিনটি কাটলো বিজ্ঞানের রাজ্যে, জানার ও শেখার আনন্দের মধ্যদিয়ে।
(চলবে)
লেখকের ওয়েবঃ www.maheer.helal.net.bd
ই-মেইলঃ maheer7helal@gmail.com