বিশেষ খবর



Upcoming Event

চাকরিকাল গণনা করে বা কেশপক্কতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতি হয় না

ক্যাম্পাস ডেস্ক মতামত

ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ধন্যবাদ শিক্ষামন্ত্রীকেও। অর্থমন্ত্রীর ধন্যবাদ অপেক্ষমাণ। আমার ধারণা ছিল উত্তরমেরু আর দক্ষিণমেরু আলিঙ্গনাবদ্ধ হলে হতেও পারে, তবু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হওয়ার নয়। প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন। ৫ আগস্ট কালের কণ্ঠে প্রকাশিত আট বছর চাকরির পর সহকারী শিক্ষকের মর্যাদা প্রথম শ্রেণির শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রকাশ, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সন্তোষজনকভাবে আট বছর চাকরির পর তাঁদের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড (নন-ক্যাডার) মর্যাদা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে তাঁদের পদবিও পরিবর্তন করা হয়েছে। আট বছর চাকরির পর তাঁরা পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র শিক্ষক হবেন। সহকারী শিক্ষকদের মোট পদের অর্ধেক প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এই পদোন্নতি দেয়া হবে। গত ৩ আগস্ট এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মোট পদের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ তিন হাজার ৮৮২টি পদ সিনিয়র শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক হিসেবে তাঁরা ১০ নম্বর বেতন স্কেলে (৮০০০-১৬৫৪০ টাকা) বেতন পেতেন। কিন্তু এখন তাঁরা আট বছর সন্তোষজনক চাকরি শেষে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হবেন। তাঁরা জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির গেজেটেড (নন-ক্যাডার) পদে ৯ নম্বর স্কেলে (১১০০০-২০৩৭০ টাকা) বেতন পাবেন। সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেতে হলে ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন, বিএড, বিপিএড বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে।
জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির এ শতাব্দীতে এ সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়, বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী। সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেলার যাত্রায় আরো একধাপ অগ্রগতি। শিক্ষকরা জাতিকে শিক্ষিত করে তোলার মহান ও কঠিন দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। শিক্ষককে সম্মানিত করা মানে কেবল একটি শ্রেণিকে সম্মানিত করা নয়, গোটা জাতিকেই সম্মানিত করা। গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের স্কুল ও কলেজ সেকশনের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে নিয়োগ কমিটির বাছাই কাজে অংশ নিয়েছিলাম। নিয়োগ প্রার্থীদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট। পরীক্ষায় কিছু প্রার্থীর দক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এসএসসি থেকে মাস্টার ডিগ্রি পর্যন্ত ফলাফলও প্রশংসনীয়। তাঁদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দিয়ে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা না দেয়া যেকোনো বিচারে আমাদের মানসিক দৈন্যতা। আমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে জানি, যাঁরা বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত দিয়েছেন, কিন্তু কোনো কারণে চাকরি হয়নি। হতে পারে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি কিংবা সম্মিলিত নম্বর নির্বাচিতদের তুলনায় কম হওয়ায় তাঁদের চাকরি হয়নি। তাই বলে তাঁরা কী কম মেধাবী? কেবল বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করলে ব্রাহ্মণ, অন্য ক্যাডারে যোগদান করলে ক্ষত্রীয় বা বৈশ্য, আর বিদ্যালয়ে যোগদান করলে নমশূদ্র হয়ে যাবে, এটা কেমন বিচার? মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদাদানের বর্তমান সরকারের প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত শিক্ষকদের নমশূদ্র অবস্থার উন্নতি ঘটাবে। মেধাবীরা এ পেশায় আরো অধিক হারে আকৃষ্ট হবেন আশা করা যায়। একটি জ্ঞাননির্ভর সমাজের ভিত্তি স্থাপিত হয় বিদ্যালয়ে। কাজেই এ পেশায় অধিকতর মেধাবীদের যোগদান জ্ঞাননির্ভর সমাজের ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করে স্বপ্নযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করবে সন্দেহ নেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা এখনো তৃতীয় শ্রেণির। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক গ্র্যাজুয়েট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরিতেও যোগদান করছেন। সরকার বাহাদুর তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দিতে ব্যবস্থা নেবে আশা করি।
বিদ্যালয় জ্ঞাননির্ভর সমাজের ভিত্তি স্থাপন করে আর মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় তার উপরিকাঠামো নির্মাণ করে পূর্ণতা দেয়। জ্ঞাননির্ভর সমাজের উপরিকাঠামো নির্মাণের কারিগররা অষ্টম বেতন স্কেলকে কেন্দ্র করে সচিব কমিটির অযৌক্তিক ও অবমাননাকর সিদ্ধান্তে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। মানববন্ধন, কর্মবিরতিসহ নানা গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করে শিক্ষকরা তাঁদের দাবি তুলে ধরেছেন। শিক্ষাবান্ধব শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে সচিবদের ডিও লেটার পাঠিয়েছেন বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। পাশাপাশি খবর বেরিয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গ্রেড-১ পদে বেতন নির্ধারণে রাজি নন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে, বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক প্রভাবে খুব কম সময়ে অধ্যাপক হয়ে যান। অন্যদিকে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ বছর চাকরি করার পর একজন কর্মকর্তা চাকরির শেষ সময়ে এসে সচিব হন। প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ অর্থমন্ত্রীকেও জানাতে চাই এমন বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সচিব ও অধ্যাপকদের বেতন কাঠামো এক হওয়া যুক্তিযুক্ত নয় বলে মনে করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা (২৫ জুলাই,সমকাল অনলাইন সংস্করণ)। ডেইলি স্টারের ২৭ জুলাইয়ের প্রতিবেদনে জনৈক সচিব বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ব্যাপকভাবে প্রমোশন পেয়ে থাকেন, তাঁদের দাবি পূরণ হলে অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা বইতে হবে। মন্ত্রী মহোদয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতি সম্পর্কে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তা হয় মূর্খতা, না হয় শত্রুতা। দুটিই জাতির জন্য ভয়ংকর। জনকের মৃত্যুতে মৃত্যু ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার। তাই পদোন্নতির মিথ্যা তথ্য দিয়ে অধ্যাপকদের অবমাননার জায়গায় ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা। বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্মান-সমীহের চোখে দেখতেন। অধ্যাপক আবুল ফজল বঙ্গবন্ধুকে চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের প্রথম সমাবর্তনে উপস্থিত থেকে ডিপ্লোমা বিতরণের অনুরোধ জানালে তিনি অস্বীকার করে বলেন, এ কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। মানাবেও না। অতগুলো শিক্ষক প-িতজনের সামনে আমার মতো একজন অল্প শিক্ষিতের পক্ষে কনভোকেশনে সভাপতিত্ব করা আমি ভাবতেই পারি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে আইন অনুসারে এ কাজ তাঁকে করতে হবে বলে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছিলেন (অধ্যাপক আবুল ফজল, বঙ্গবন্ধুকে যেমন দেখেছি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতি বিষয়ে তিন স্তরবিশিষ্ট সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা রয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই।
কোনো শিক্ষক পদোন্নতির জন্য অবেদন করলে তা যাচাই-বাছাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত পরিকল্পনা কমিটির সভায় পেশ করা হয়। পরিকল্পনা কমিটির বিবেচনায় আবেদনকারী পদোন্নতির আইনে নির্ধারিত শর্ত পূরণ করলে তা সুপারিশসহ রেজিস্ট্রার দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। এরপর উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ সদস্যের উপস্থিতিতে নির্বাচনী বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়। উল্লেখ্য, নির্বাচনী বোর্ডে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিশেষজ্ঞ ছাড়াও বহির্বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকেন। নির্বাচনী বোর্ডের সদস্যরা প্রার্থীকে পদোন্নতির যোগ্য বিবেচনা করলে তা সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়। সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ছাড়াও সরকার মনোনীত নানা শ্রেণি-পেশার বহিঃসদস্য আছেন। আমার জানামতে কমর্রত বা অবসরপ্রাপ্ত সচিবরাও সিন্ডিকেট সদস্য থাকেন। কাজেই পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের কোনো সুযোগ নেই। কেননা কেবল চাকরিকাল গণনা করে বা কেশপক্বতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতি হয় না। উচ্চতর ডিগ্রি, শিক্ষাজীবনের ফলাফল, বৃত্তিপ্রাপ্তি, মৌলিক গবেষণা, এমফিল-পিএইচডি গবেষণা তদারকি, নির্দিষ্টসংখ্যক গবেষণা প্রবন্ধ-পুস্তক প্রকাশনা ইত্যাদি পদোন্নতির আবশ্যিক শর্ত। সচিবরা দাবি তুলেছেন, সচিব হতে ২৫-৩০ বছর সময় লাগে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হতে কম সময় লাগে। তাই অধ্যাপকরা গ্রেড-১ পদে বেতন নির্ধারণের যোগ্য নন। উচ্চতর ডিগ্রি, গবেষণা, প্রকাশনা এ সব কিছুই না থাকলে কেবল ২৫-৩০ বছর কেন ৫০ বছর চাকরি করলেও অধ্যাপক হওয়ার সুযোগ নেই। তাহলে কিভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি হবে? বিশ্বের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ আমাদের প্রতিবেশী দেশের বিশ্ববিদ্যালয়েও সচিবদের মতো চাকরিকাল গণনা করে বা কেশপক্বতা দিয়ে অধ্যাপকদের পদোন্নতি হয় না। অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য যদি মোট ১০০ পয়েন্ট থাকে সেখানে চাকরিকাল গণনার জন্য মাত্র ১০-১৫ পয়েন্ট থাকে, অবশিষ্ট ৮৫-৯০ পয়েন্ট নির্ধারিত হয় প্রার্থীর উচ্চতর ডিগ্রি, শিক্ষাজীবনের ফলাফল, বৃত্তিপ্রাপ্তি, মৌলিক গবেষণা, এমফিল-পিএইচডি গবেষণা তদারকি, দেশে-বিদেশে গবেষণা প্রবন্ধ বই প্রকাশনা ইত্যাদির জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির প্রভাব চাকরিতে নিয়োগের প্রবেশপদ ছাড়া পদোন্নতিতে প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ নেই। আর পদোন্নতিতে রাজনীতি সে তো বাংলাদেশ সচিবালয়ের ব্র্যান্ডে পরিণত হতে চলেছে। রাজনৈতিক কারণে কেউ কেউ পর পর পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়রকে ডিঙিয়ে তরতর করে ওপরে ওঠে যাচ্ছেন আবার কেউ কেউ তিন-চারবার পর্যন্ত সুপারসিডেড (সিনিয়রিটি ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতিবঞ্চিত) হচ্ছেন। সুপারসিডেড সে তো রাজনীতির কারণে, তাই না? সচিবালয়ে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক লিফলেট বিতরণ হয়, এটি রাজনীতি নয় কি? সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ওএসডি’র মচ্ছব শুরু হয়। একে কি রাজনীতির প্রতিহিংসা ছাড়া অন্য কিছু বলা যাবে? অবশ্য ওএসডি শব্দটিই ভ্রান্ত ও প্রতারণামূলক। ওএসডির পূর্ণ অভিব্যক্তি অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, ওএসডি কর্মকর্তার কোনো ডিউটি নেই। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁর বসার চেয়ার-টেবিল পর্যন্ত থাকে না। ওএসডি কর্মকর্তা স্পেশাল ডিউটি পালন করবেন কিভাবে? কাজেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কোনো কর্মকর্তাকে সব দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা ওএসডি নয়, ওএনডি (অফিসার অন নো ডিউটি) হবে। সচিব কমিটি প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো বিষয়ে যেসব বৈষম্য, বিতর্কের কথা এরই মধ্যে আলোচিত হয়েছে তার চেয়েও ভয়ংকর ও আইনগত বিতর্কিত বিষয় এর মধ্যে রয়েছে। অনালোচিত সম্ভাব্য বিতর্কিত বিষয়গুলো হলো- এক. সিনিয়র সচিব বলে কোনো পদ অর্গানোগ্রামে ছিল না। প্রশাসন ক্যাডারের ইচ্ছামাফিক অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করা হলে তা প্রজাতন্ত্রের অন্য চাকুরেদের প্রভাবিত করতে পারে, যা আইনগতভাবেই চ্যালেঞ্জ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দুই. পদায়িত সচিব ও ওএসডি সচিব অর্গানোগ্রামে ছিল না। দুই রকমের সচিবপদ সৃষ্টি করে তাঁদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল প্রদান আইনত বিতর্কিত। আমার জানামতে, একই পদে কর্মরতদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করা যাবে না মর্মে আদালতের রায় রয়েছে। এটিও আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তদুপরি এক সরকারের পদায়িত সচিব আরেক সরকারের সময় ওএসডি হলে তার বেতন স্কেল কমে যাবে, এটি কী কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে? আবার পদায়িত সচিব ওএসডি হওয়া সত্ত্বেও পে প্রটেকশন দেয়া হলে দুই সচিবের বেতন স্কেল ভিন্ন হবে কেন? তিন. প্রশাসনের সঙ্গে প্রকৃচির বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। সম্প্রতি প্রশাসন ও পুলিশের দ্বন্দ্ব হামেশাই পত্রিকায় শিরোনাম হচ্ছে। বেতন স্কেলকে কেন্দ্র করে প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় দ্বন্দ্ব রাষ্ট্রের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্ষমতার বিচারে দুর্বল। আর এ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাঁদের বঞ্চনা আর অবমাননার জায়গায় ঠেলে দেয়া হলে আখেরে ভালো নাও হতে পারে। দুর্বলের প্রতিবাদ কখনো কখনো ভয়ংকর হয় বৈকি। চার. রাষ্ট্রের সামর্থ্য না থাকলে বা সচিবদের বিরোধিতার কারণে শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল না দিতে চাইলে সরকার দেবে না। কিন্তু গ্রেড-১ বেতন পেয়ে আসা শিক্ষকদের মর্যাদাকে কোন্ যুক্তিতে তিন-চার ধাপ অবনমন ঘটাবেন? প্রশাসনের ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যে সুবিধা নেন, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোন্ যুক্তিতে বঞ্চিত করবেন?
মানুষ জীবনে দ্’ুবার অবসর গ্রহণ করে। একবার স্বাভাবিক কর্মজীবন থেকে, আরেকবার এ পৃথিবী থেকে। দুবারই অবসর গ্রহণের আগে অবসর প্রস্তুতির অবকাশ থাকে। পৃথিবী থেকে চূড়ান্ত অবসর নেয়ার আগে অবসর প্রস্তুতির সময় মানুষের মন খুব নরম থাকে। অতি চালাক কেউ কেউ এ সময় অবসর প্রস্তুতিরতদের সহজেই ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে। তাই দেখা যায়, চালাক সন্তানদের অনেকেই অন্য ভাইবোনদের বঞ্চিত করে বৃদ্ধ পিতা-মাতার কাছ থেকে অতিরিক্ত কিছু লিখিয়ে নেয়। আমাদের অর্থমন্ত্রীকে সতর্ক থাকতে হবে, এমনটি যাতে না হয়। অর্থমন্ত্রীকে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। উত্তীর্ণ অর্থমন্ত্রীও তখন ধন্যবাদ বর্ষণে সিক্ত হবেন।
মোঃ জাকির হোসেন, অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img