॥ ড. মিহির কুমার রায় ॥
করোনাকাল চলছে প্রায় দেড় বছরের কাছাকাছি সময় ধরে যা কবে শেষ হবে তা অনেকটা অনিশ্চিতের মধ্যেই ধরা যায়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশি বেকায়দায় পড়েছে শিক্ষা খাত। ১০ লাখের বেশি বেসরকারী সকল স্থরের শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা প্রায় বন্ধ আছে। অনেকেই সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন পেশায় নিযুক্ত হয়েছেন। এমতাবস্থায়ও মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো বেসরকারি কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুনাফার ওপর শতকরা ১৫ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে ঘোষিত বাজেটে। সম্প্রতি প্রকাশিত নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, এই ধরনের একটি পরিস্থিতিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ২৬ হাজার ৩১১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ২৪ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। মাধ্যমিকে ৩৬ হাজার ৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৩৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় ৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে।
প্রযুক্তি খাতকে এর সঙ্গে জড়িয়ে দিয়ে এই খাতে ৯৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, অথচ শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে গত বছর বরাদ্দ ছিল ৮৫ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা; যা সংশোধিত বাজেটে নেমে দাঁড়ায় ৭৮ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। এমপিও কাঠামোর মধ্যে না থাকা বেসরকারী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা এবং ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য ২০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে, আর সংশোধিত (২০২০-২১) বাজেটে অবসরে যাওয়া বেসরকারী শিক্ষকদের জন্য ৪০ কোটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, ভবন মেরামত ও সংস্কার খাতে ৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা অপ্রতুল।
প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, টাকার অঙ্কে বাড়লেও মোট বাজেটের অংশ হিসেবে এবার শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত সংশ্নিষ্ট প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মিলে শিক্ষা খাতকে বিবেচনা করা হয়। তবে বিগত বছরের মতো এবারও প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে একীভূত করে ‘শিক্ষা ও প্রযুক্তি’ খাত করা হয়েছে।
এতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ২১ হাজার ২০৪ কোটি এবং তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১ হাজার ৭২০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় দেখা যায় ‘শিক্ষা ও প্রযুক্তি বাজেট মোট বাজেটের ১৫.৭ শতাংশ এবং প্রযুক্তিসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বাদ দিয়ে চলমান সঙ্কটে কেবল শিক্ষা খাতেই ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া উচিত। বড় বাজেটে সীমিত বরাদ্দ মাত্র। সরকারের অঙ্গীকার এবং আন্তর্জাতিক মানের দিকে তাকালে এ বরাদ্দ অত্যন্ত নগণ্য। এখানে উল্লেখ্য, বহু বছর যাবত শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ১১-১২ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের ২ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কো গঠিত দেলরস কমিশন প্রতিবেদনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রাপ্ত মোট বৈদেশিক সহায়তার ২৫ শতাংশ অর্থ শিক্ষা খাতে ব্যয় করার জন্য যে সুপারিশ আছে, তা প্রশংসনীয়।
ইউনেস্কো দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা খাতে জিডিপি’র ৬ শতাংশ অথবা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দের কথা বারবারই বলে আসছে। একই দাবি আগামী দু-তিন বছর মেয়াদি একটি শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচী প্রণয়ন করা গেলে কোভিড-১৯-এর ফলে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছে, তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হতে পারে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু বার্ষিক বিনিয়োগের পরিমাণ বাংলাদেশে ৫ ডলার, শ্রীলঙ্কায় ১০ ডলার, ভারতে ১৪ ডলার, মালয়েশিয়ায় ১৫০ ডলার ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৬০ ডলার। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত একটি মানসম্মত শিক্ষার কথা বিবেচনা করে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখা প্রয়োজন, যা প্রাথমিক স্তরের জন্য ১:৩০, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের জন্য ১:৩৫ এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ১:২০-এর বেশি নয়। অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতিফলন বাজেটে ঘটেনি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সবক্ষেত্রেই মজুরি ও বেতন এবং প্রশাসনিক ব্যয় খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষায় উপবৃত্তি কার্যক্রমের আওতায় বরাদ্দ মাথাপিছু অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি না করায় মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় তার ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নন-এমপিও সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক লাখ ছয় হাজার ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার ৬১ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে মোট ৭৫ কোটি টাকার নগদ সহায়তা ছিল অপর্যাপ্ত। এ খাতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নিঃশর্ত সুদবিহীন শিক্ষাঋণ প্রবর্তন করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির উদ্যোগ নেয়ার বড় বেশি প্রয়োজন যা বাজেটে উল্লেখ নেই।
দেশের অতীতের বাজেটগুলোর দিকে নজর দিলে দেখা যায় শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মানোন্নয়নে ভৌত অবকাঠামোগত অবস্থার উন্নয়ন ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির জোগান দিয়ে শিক্ষাবিস্তারে সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অতীতের এই শিক্ষাবান্ধব বাজেট বাস্তবায়ন করায় এবারের বাজেটেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মৌলিক চাহিদাগুলো বাস্তবায়নে সরকার সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে। যদি শিক্ষার্থীর চাহিদার দিকে তাকানো যায় তবে দেখি তাদের মধ্যে একটি পরমতসহিষ্ণু উদার ও প্রগতিশীল মানসিকতা এবং দেশাত্মবোধ সৃজনের লক্ষ্যে পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি বিভিন্ন পাঠক্রমবহির্ভূত বই যেমন- বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কিত বই, বিভিন্ন মনীষীর আত্মজীবনী, ধর্মীয় রীতিনীতি পালন ও নৈতিকতা বোধ জাগ্রত হওয়ার লক্ষ্যে ধর্মীয় অনুশাসনমূলক বই সংবলিত একটি সুপরিসর পাঠাগার প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকা আবশ্যক মনে করি। এছাড়াও শিক্ষার্থীর সুস্বাস্থ্য রক্ষায় খেলার মাঠ, স্যানিটেশন, সুপেয় পানি ইত্যাদির ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে আগামী বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দেয়া দরকার।
বেসরকারী গবেষণা সংস্থা পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড গবর্ন্যান্স (বিআইজিডি) যৌথভাবে একটি গবেষণা করেছে, যেখানে দেখা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯ ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনার বাইরে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে মহামারীর চেয়েও সন্তানদের শিক্ষাজীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। তারা ব্যাপকভাবে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া ঠেকাতে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ারও সুপারিশ করেছেন। যদিও অনেকেই পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে, তবু অধিকাংশ শিক্ষার্থী ছয়টি উপায়ে তাদের পড়াশোনা চালিয়েছে। এগুলো হলো তদারকবিহীন নিজস্ব পড়াশোনা, পরিবারের সহায়তায় পড়াশোনা, অনলাইনে বা টিভির মাধ্যমে দূরবর্তী শিক্ষণ, কোচিং-প্রাইভেট এবং স্কুল থেকে মাদ্রাসায় ভর্তি ইত্যাদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করোনা মহামারীর প্রায় শুরু থেকেই অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে এবং পরীক্ষাও নিচ্ছে। গত বছরের ২৫ জুলাই ইউজিসির সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সভার পর এটি গতি লাভ করে এবং ইতোমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই দুই সেমিস্টারের ক্লাস শেষ করেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে আউটগোয়িং ব্যাচের অর্থাৎ সর্বশেষ সেমিস্টার বা বর্ষের পরীক্ষা শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারী নির্দেশনায় চলমান পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু অনলাইন ক্লাস যথারীতি চলমান ছিল। গত মাসের শেষ সপ্তাহে শিক্ষামন্ত্রী, ইউজিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সভার মাধ্যমে কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অনলাইনে, সশরীরে বা মিশ্র শিখন পদ্ধতিতে (কিছু অনলাইনে, কিছু সরাসরি) ক্লাস পরীক্ষা নেবে। সেই মোতাবেক অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই পরীক্ষা শুরু করেছে অথবা পরীক্ষা শুরুর তারিখ ঘোষণা করেছে।
প্রায় দেড় বছর ধরে সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তা নিয়ে সরকারের ভাবনা কি এবং তার সঙ্গে মানসম্মত শিক্ষা তথা শিক্ষার্থীর ভষিষ্যতের পদচারণার বিষয়টি জড়িত। এরই মধ্যে সময় চলে যাচ্ছে, করোনার প্রভাব বাড়ছে, সবকার ঘোষিত সময়ের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে খুলবে, তা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির উন্নতির ওপর। এ ধরনের একটি ক্রান্তি মুহূর্তে যা করা উচিত তা হলো- ১. শিক্ষার কার্যক্রম যে কোন মূল্যেই হোক চালিয়ে নিতে হবে। সর্বস্তরে যেমন- মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে সম্মানিত শিক্ষক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের টিভি ক্লাসে অংশগ্রহণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। শিশু শ্রেণী থেকে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত ক্লাস সম্প্রচারের জন্য ১৩টি টিভি চ্যানেলের প্রয়োজন হবে। সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের উদার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
মাদ্রাসার ক্ষেত্রেও ইবতেদায়ী, দাখিল ও আলিম পর্যায়ের ক্লাসগুলো একইভাবে টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করতে হবে; ২. অনলাইন ক্লাস পরিচালনার ব্যাপারে কিছু অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন- অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা নেই; আর থাকলেও স্পিড খুব কম। এ ছাড়াও ইন্টারনেটের খরচ বহন করা অনেক অভিভাবকের পক্ষেই সম্ভব নয়। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে যে শিক্ষকরা পাঠদানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থী তথা অভিভাবকদের সমন্বয় করতে পারলেই শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে, যদি সহজ মূল্যে সরকার জিবির প্যাকেজ প্রণোদনার মাধ্যমে সরবরাহ করতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সার্বিক দিকনির্দেশনা দেবে এবং সামগ্রিক তত্ত্বাবধান করবে। এভাবে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অংশগ্রহণ করানো গেলে তারা পড়াশোনার মধ্যে থাকবে, মানসিকভাবে ভাল থাকবে। পাঠদান কার্যক্রম সম্পাদন করা গেলে অনুকূল পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেয়া যাবে অথবা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের প্রমোশন দেয়া সহজ হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সরাসরি ক্লাসে অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
কিন্তু করোনার এ মহাদুর্যোগের সময় তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। ৩. শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসির পরীক্ষা বিকল্প পদ্ধতিতে হবে। কিন্তু সেটি কি এ ব্যাপারে কোন প্রকার আভাস দেননি, যা অবিলম্বে ঘোষণা করা উচিত; ৪. বছরের শুরুতেই কোটি কোটি ছাত্রছাত্রীর হাতে বিনা মূল্যে নতুন বই তুলে দেয়া হয় যে দেশে, সেদেশে করোনাকালীন এ সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। সেক্ষেত্রে বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে সরকার প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে পারেন যেমন অন্যদের ক্ষেত্রেও হয়েছে। অপরদিকে বাজেটে ঘোষিত ১৫% কর অরোপের বিষয়টিকে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে হবে; ৫. মানসম্মত শিক্ষার জন্য আদর্শ শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই এবং বেসরকারি শিক্ষকরা অনেকেই চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবনের দিকে যাচ্ছে, যা কাম্য নয়। সে ব্যাপারে বেসরকারি উদ্যোক্তাগণ এই পরিস্থিতিতে আরও মানবিক আচরণ করবেন, যা সময়ের দাবি।
কারণ, শিক্ষা কোন পণ্য নয়, একটি সেবা খাত, সেটাকে সেই মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে। সরকার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনার আওতায় আনতে পারে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায়, যা সময়ের দাবি; সর্বশেষে বলা যায়, বর্তমানে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী সরকারী নিয়মে উপরোক্ত যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণে আগামী ২০২১-২২ আর্থিক বছরে শিক্ষাবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণের নিমিত্ত এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহযোগিতা করবে, এই প্রত্যাশা রইল।
-লেখকঃ গবেষক, অর্থনীতিবিদ ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি