বন্ধুত্ব থেকে আড্ডা। আর আড্ডা থেকে সৃষ্টি হয় রঙের খেলা। শুরু হয় স্বপ্ন দেখা। জমে ওঠে ক্যাম্পাস। মানুষের জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন আড্ডার মুহূর্তের দেখা পায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। অবাধ স্বাধীনতাময় এই শিক্ষাজীবনের আড্ডা থেকে অর্জন করা যায় অনেক কিছু। যা কলেজ কিংবা স্কুল জীবনে একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে নতুন বন্ধুদের সাথে নতুনরূপে আড্ডা দিতে কার না ভাল লাগে! আবার যেখানে আড্ডাই নাকি বাঙ্গালীর প্রাণ। এই আড্ডা থেকে উঠে এসেছে বাংলার অনেক মেধাবী মুখ।
তেমনি আড্ডায় মুখরিত সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গণবি) ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন মানেই ক্লাস, এ্যাসাইনমেন্ট, গ্রুপস্টাডির মতো আরও কাজের সমাহার। কিন্তু এগুলো যদি সবই আনন্দ আর হাসি-গানে পার করা যায়, তাহলে তো কথাই নেই। তাই তো এই ক্যাম্পাসেও সৃষ্টি হয়েছে বকুলতলা, ফুসকা চত্ত্বর, ওয়াই-ফাই জোন, র্যাগতলার মত জনপ্রিয় আড্ডার স্থান। এসব স্থান ছাড়াও ক্যান্টিন, ক্যাম্পাসের মাঠের বিভিন্ন গাছের ছায়ায় বসে চলে মন মাতানো সব গল্প। এসব গল্পে পড়াশোনাসহ গান, কবিতা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে।
বিশ্ববিদ্যাবিদ্যালয়ে পড়ব আর সেখানে আড্ডা থাকবে না তা হয় না- বলছিলেন গণবির ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান। বৃষ্টিতেও জমে ওঠে ক্যাম্পাসের আড্ডাগুলো। বাইরে বসতে না পারলেও ক্লাসকক্ষে চলে আড্ডাগুলো। গানের কন্ঠে তাল মিলিয়ে চলে গল্প। বৃষ্টির দিনে ক্লাস না থাকলেই খুশি থাকে গণবি’র শিক্ষার্থীরা। ঝড় বৃষ্টিতে ক্যাম্পাস নীরবই থাকে। রাস্তা আর বাহিরের আড্ডার স্থানগুলো থাকে ফাঁকা। তবুও থেমে থাকে না আড্ডা। লাইব্রেরি, একাডেমিক ভবনের বারান্দা কিংবা ক্লাসকক্ষে চলে আড্ডা। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলে তারুণ্যের প্রাণবন্ত আড্ডা।
চলছিল আড্ডা নিয়ে আড্ডাবাজি। হঠাৎ শীতকালের আড্ডা নিয়ে গণবি’র বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন বলে উঠলেন, শীতকালের আড্ডাটা সবচেয়ে প্রাণবন্ত হয়। ক্যাম্পাসের সবাই রোদ পোহাতে এবং গল্পবাজি চালাতে ক্যাম্পাসের মাঠটাকে বেছে নেয় সানন্দে।
আড্ডার স্থায়িত্ব নির্ভর করে ক্লাস না থাকার ওপর। ক্লাস থাকলে আড্ডা যত মজারই হোক আড্ডাকে গুডবাই জানিয়ে ক্লাসে ঢুকতে হবে। কারণ ক্লাসে উপস্থিত থাকলেই ১০টি মার্কস। ১০ মার্কস মানেই হলো পরীক্ষায় এগিয়ে থাকা। আড্ডা প্রিয় হলেও এখানের শিক্ষার্থীরা ভালো রেজাল্ট করতে আগ্রহী অনেক।
আড্ডার সাথে সাথে আড্ডার খাবারেরও ভাল প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। ঝালমুড়ি, চানাচুর, ফুসকা, সিংগাড়া, সমুচা, পেঁয়াজি, সবজির চপ কিংবা গরম জিলাপি ও বৃষ্টির আড্ডার প্রধান খাবার। কোনো কোনো আড্ডাতে ক্যাম্পাসে সহজলভ্য লালচা-ই মুখ্য সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করে থাকে।
আড্ডা বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে আড্ডা প্রিয়রা আগ্রহের সঙ্গে জানান তাদের ক্যাম্পাসের আড্ডার খবর। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের খাদেমুল ইসলাম জানান, আড্ডা থেকে আমাদের অনেক শিক্ষণীয় বিষয়ও আমরা জানতে পারি। এজন্য ক্যাম্পাসের বাইরে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রাঙ্গণেও চলে আড্ডাবাজি। তাছাড়া ইমরান, আহাদ, রূপক, ঈশিকা, জ্যোতি, আঁখিসহ আরও অনেকেই একসাথে বলে ওঠেন- আড্ডা ছাড়া অসম্ভব। এভাবেই হয়তো চলছে ক্যাম্পাসে জীবনের আড্ডা। বৃষ্টি হোক আর রোদ হোক থেমে থাকবে না আড্ডা। আড্ডা হোক ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা। আড্ডা হোক শিক্ষার্থীদের আনন্দ আর উল্লাসের। হিংসা আর দ্বেষ ভুলে গিয়ে আড্ডা গড়বে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। জয়তু ক্যাম্পাস আড্ডা।
-মেহেদী তারেক, গণ বিশ্ববিদ্যালয়