ঢাকা কমার্স কলেজের কৃতিত্ব ও সফলতার ২৫ বছর উপলক্ষে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে ৭ নভেম্বর ২০১৫ উদযাপিত হয় রজত জয়ন্তী উৎসব। এ উপলক্ষে র্যালি, রক্তদান কর্মসূচি, গুণীজন সম্মাননা, কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল ৮ ঘটিকায় রং-বেরয়ের ব্যানার, বেলুন-ফেস্টুন, হাতি, ঘোড়ার গাড়ি ইত্যাদিসহ বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দের আকর্ষণীয় শোভাযাত্রা ও র্যালির মধ্য দিয়ে ঢাকা কমার্স কলেজের রজত জয়ন্তী-২০১৪ এর শুভসূচনা হয়। শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে র্যালির উদ্বোধন করেন কলেজ গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সফিক আহমেদ সিদ্দিক। র্যালিতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর কাজী মোঃ নুরুল ইসলাম ফারুকী, অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবু সাইদ, উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) প্রফেসর মোঃ শফিকুল ইসলাম ও উপদেষ্টা (অ্যাকাডেমিক) প্রফেসর মোঃ মোজাহার জামিল। এরপর কলেজ হলরুমে রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঢাকা কমার্স কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য প্রফেসর ডাঃ এম. এ. রশীদ ।
রজত জয়ন্তী উৎসবে গুণীজন সম্মাননা ও কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজের উদ্যোক্তা ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিকল্পনা মন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল, এফ.সি.এ, এম.পি । অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবু সাইদ। রজত জয়ন্তী স্মরণিকা ‘প্রদীপ্তি’র মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথি আ.হ.ম মুস্তফা কামাল। এরপর প্রধান অতিথি গুণীজনদের সম্মাননা ও স্বর্ণপদক প্রদান করেন। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে ঢাকা কমার্স কলেজের ইতিকথা ও প্রতিষ্ঠাকালীন স্বপ্নগাঁথার স্মৃতিচারণ করেন। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বাস্তবভিত্তিক ব্যবসায় ও প্রযুক্তি শিক্ষা অর্জনের কথা বলেন। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে ক্রিকেট অনুরাগী হওয়ার আহবান জানান। একই সাথে ক্রিকেটে একদিন আমাদের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আশা ব্যক্ত করেন তিনি। সবশেষে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের দেশ মাতৃকার রক্ষার জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান। সভাপতির ভাষণে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ড. সফিক আহমেদ সিদ্দিক ঢাকা কমার্স কলেজ কর্তৃক আজকের গুণীজনদের সম্মাননা জানানোর মধ্য দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে গুণীজনদের পদানুসারী হওয়ার উদ্বুদ্ধ করেন। সবশেষে তিনি সোনার বাংলা গড়ার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আরো প্রত্যয়ী ও পরিশ্রমী হওয়ার আহবান জানান। অনুষ্ঠানের ২য় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় স্মৃতিচারণ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ।
উল্লেখ্য, ঢাকা কমার্স কলেজের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে ৩৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে গুণীজন সম্মাননা ও স্বর্ণপদক দেয়া হয়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- আ.হ.ম মুস্তফা কামাল, মন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়; অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম. হাবিবুর রহমান, প্রাক্তন অধ্যাপক, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক আবু আইয়ুব মোঃ বাকের, উপাচার্য, মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক ড. দুর্গাদাস ভট্টাচার্য, প্রাক্তন উপাচার্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক মোঃ মঈনউদ্দীন খান, প্রাক্তন উপাচার্য, আশা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, প্রাক্তন অধ্যাপক, বিজনেস স্টাডিজ বিভাগ ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক শান্তি নারায়ণ ঘোষ, প্রাক্তন অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মীর নাসির হোসেন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, এফ.বি.সি.সি.আই.; আফতাব-উল- ইসলাম, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিঁ; ইকবাল-ইউ-আহমেদ, প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড;শামছুল আলম, চেয়ারম্যান, জীবন বিমা কর্পোরেশন; এ.এস.এম. নাঈম, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, আই.সি.এ.বি.; রুহুল আমিন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, আই.সি.এম.এ. প্রমুখ।
১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ধূমপান ও রাজনীতিমুক্ত এবং স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত ঢাকা কমার্স কলেজ ১৯৯৬ সালে মাত্র ৭ বছর বয়সে এবং ২০০২ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ঢাকা কমার্স কলেজের উদ্দেশ্য বাণিজ্য বিষয়ক তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষার সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত ও স্বশিক্ষিত করে গড়ে তোলা। কলেজের বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার জন। এ কলেজে উচ্চমাধ্যমিক ব্যবসায় শিক্ষা ছাড়াও ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, মার্কেটিং, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং, ইংরেজি ও অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স রয়েছে। এছাড়া রয়েছে বিবিএ প্রফেশনাল কোর্স। ঢাকা কমার্স কলেজের রয়েছে অত্যাধুনিক কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, যেখানে প্রায় ৩৫ হাজার বই রয়েছে। রয়েছে অত্যাধুনিক ৪টি কম্পিউটার ল্যাব। কলেজের পরীক্ষা ও হিসাব কার্যক্রম সম্পূর্ণ অটোমেশনের মাধ্যমে সম্পাদন করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম-শৃঙ্খলা এবং শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে ঈর্ষণীয় সাফল্য ক্ষয়িষ্ণু সমাজ প্রেক্ষাপটে উজ্জ্বল আশা ও সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেছে।
ব্যবসায় শিক্ষার সেরা প্রতিষ্ঠান ঢাকা কমার্স কলেজের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো শিক্ষার্থীদের পূর্বের চেয়ে ভালো ফল অর্জন করার নিশ্চয়তা। জুৎসই পাঠদান ও পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অবিরাম সাফল্য ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির। অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার ও কোর্স প্ল্যান অনুযায়ী এ কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। অত্র কলেজের এইচএসসি প্রথম ব্যাচ (১৯৯১) বোর্ড পরীক্ষায় শতভাগ পাসসহ মেধাতালিকায় শিক্ষার্থীরা ২য় ও ১৫তম স্থান অর্জন করে। ২০০৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত জিপিএ পদ্ধতিতে এইচএসসি পরীক্ষায় অত্র কলেজের গড় পাসের হার ৯৯.৮% এবং এই ১৩ বছরে ২২০৮৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৯৩২ জন, যা ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় দেশের যে কোনো কলেজের তুলনায় সর্বোচ্চ। সৃষ্টিলগ্ন থেকে কলেজে গড় পাসের হার উচ্চমাধ্যমিকে প্রায় ৯৮%, অনার্স-এ ৯৪% ও মাস্টার্স-এ ৯৭%।
ঢাকা কমার্স কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ‘গ্রন্থকীট’ হিসেবে অভিহিত হয় না। শিক্ষাসম্পূরক কার্যক্রমেও এরা সদা অগ্রগামী। প্রতিবছরই অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বনভোজন, সুন্দরবন ভ্রমণ, নৌবিহার, শিক্ষাসফর, অফিস ও কারখানা পরিদর্শন, বার্ষিক ভোজ ইত্যাদি। শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভা পরিস্ফুটন ও নেতৃত্ব বিকাশে রয়েছে বিভিন্ন ক্লাব কার্যক্রম ও বিএনসিসি। সকল শ্রেণিতে প্রত্যহ প্রথম ঘণ্টায় অতিরিক্ত ১৫ মিনিট সাধারণজ্ঞান ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়।
৬ অক্টোবর ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৫শ’ ৫০ টাকা নিয়ে যে প্রকল্পের পদযাত্রা, ২৫ বছরেই তা বেসরকারিভাবে সম্পদে-শৌর্যে সূর্য ছুঁয়েছে। সরকার বা দাতাদের অনুদান ছাড়াই ঢাকা কমার্স কলেজ কমপ্লেক্স-এর উন্নয়ন কার্য মহীরূহে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ২৫ বছর ঢাকা কমার্স কলেজ বিরামহীন ও নিরবচ্ছিন্নভাবে কৃতিত্ব আর উন্নয়নের মহাসড়কে চলছে আর চলছে; কখনও তাকে থেমে থাকতে হয়নি।