॥ রাইসা হেলাল ॥
স্নাতক (সম্মান), ১ম বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমার গত দু’টি লেখায় লেখক এম হেলাল রচিত ‘সৃজনশীলতা ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি এবং সাফল্যের শীর্ষ পথে’ বই এর দু’টি অধ্যায় সম্পর্কে লিখেছি। আজ আরও একটি আকর্ষণীয় এবং শিক্ষণীয় অধ্যায় সম্পর্কে লিখছি।
এ অধ্যায়টির নাম বিশ্ব শান্তির জন্য ভালোবাসাময় পারিবারিক শিক্ষা। যেহেতু আমরা সকলেই কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য, তাই এ অধ্যায় থেকে সবারই শেখার আছে অনেক কিছু। লেখক এম হেলাল চমৎকারভাবে পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব এবং এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন এ অধ্যায়ে।
লেখক এ অধ্যায়টি শুরু করেছেন মানুষের জীবনে পরিবারের তাৎপর্য দিয়ে। সামাজিক, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো উন্নয়নের উৎসস্থল হলো পরিবার। অথচ অধিকাংশ মানুষই পারিবারিক সম্পর্কের বিষয়ে উদাসীন। বিশেষত পারিবারিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে -সে বিষয়টি থাকেএকবারেই অবহেলিত।
লেখক এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে যেয়ে বলেছেন, অধিকাংশ শিশুই জন্মের পর থেকে পরিবারের অন্য সদস্যদের নেতিবাচক ও বিভ্রান্তিমূলক আচরণে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে এবং উচ্ছৃঙ্খল-বিশৃঙ্খল নানা বিষয় তাদের মস্তিষ্কে গেঁথে যায় বা প্রোগ্রামিং হয়, পরবর্তীতে নেতিবাচক ধ্যান-ধারণার যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে।
হিংসা, ঈর্ষা, পরনিন্দা-পরচর্চা, টিজিং, অপহরণ, গুম, খুন ইত্যাকার নেতিবাচক ধ্যান-ধারণায় বিষায়িত এখন বাঙালি মানস। পরিবারই এসবের উৎপত্তিস্থল। তাই এম হেলাল’র মতে এসবের পরিত্রাণ আন্দোলনও শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই।
বর্তমান যুগে শিশুদের মেধাশূন্যতার কারণও পরিবার। লেখক বইটিতে বলেছেন- স্বার্থপরতা, হীনম্মন্যতা ও আত্মকেন্দ্রিকতার পারিবারিক শিক্ষালাভ করছে শিশুরা। তাই কোমলমতি শিশু-কিশোরদের মাথায় পড়ালেখার বিষয় কিঞ্চিত খেলা করলেও কল্যাণকর জ্ঞানের বিষয় কাজ করে না মোটেও। সৃজনশীল বিষয় নিয়ে কথা বলে না তারা সহপাঠীর সাথে, এমনকি পিতা-মাতার সাথেও। ফলে পরিবারিক বা সামাজিক কোনো পর্র্যায়েই সন্তানের কাছ থেকে কাঙ্খিত আচরণ পাওয়া যাচ্ছে না।
এর থেকে উত্তরণের পথ সম্পর্কে লেখক বলেছেন, পারিবারিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হবে। সৃজনশীল মানবসম্পদ এবং জ্ঞানভিত্তিক জাতি গড়ে তোলার প্রথম ও প্রধান সোপান পারিবারিক পাঠ। পরিবার হবে জাতীয় ও বিশ্বশান্তির বিদ্যাপীঠ। পারিবারিক পাঠ এখনই শুরু করলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এর ফল পাওয়া যাবে ন্যূনতম ৪০ বছর পর। কাজেই আমাদের সকলেরই উচিৎ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা; পরিবারেই দেশপ্রেম, মানবিকতা, সৃজনশীলতা ইত্যাদি গুণের চর্চা শুরু করা।
সকলকে দেশপ্রেম, যুক্তি, নীতি-নৈতিকতা চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে লেখক এম হেলাল’র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র (সিএসডিসি)। ক্যাম্পাস পরিবারের দর্শন এখন অনেকের কাছেই অনুকরণীয় মডেল। প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ছাড়াও জীবনের এমন কোন দিক-দর্শন নেই, যা ক্যাম্পাস স্টাফদের শেখানো হয় না।
ক্যাম্পাস অফিসে এলে এর কার্যক্রম সম্পর্কে বিরিত জানা যাবে। সকলকে ক্যম্পাস অফিস পরিদর্শনের এবং লেখক এম হেলাল’র সৃজনশীলতা ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি এবং সাফল্যের শীর্ষ পথে বইটি পড়ার অনুরোধ জানিয়ে আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি।
লেখকের ওয়েবঃ www.raisa.helal.net.bd
ই-মেইলঃ nazneen7ahmed@yahoo.com