॥ মাহীর হেলাল ॥
৯ম শ্রেণি, উইল্স লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল
(পূর্ব প্রকাশের পর)
ক্যাম্পাস পত্রিকার ডিসেম্বর ২০১৫ এর ১ম সংখ্যায় আমার ছোট্ট ভাই ওয়াসির’র কিছু মজার ঘটনা সম্পর্কে লিখেছি। তা পড়ে অনেকেই বেশ আনন্দ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তাই, এ সংখ্যায় তার আরও কিছু ঘটনা নিয়ে লিখছি।
৮। ওয়াসির একদিন বেড়াতে যাওয়ার সময় শার্ক অর্থাৎ হাঙর এর ছবির জামা পরেছিল। সে পানি খাওয়ার সময় জামায় একটু পানি পড়ে যায়। এতে মা বিরক্ত হয়ে ওকে বললেন, ইস্ এখন বাইরে যাব, জামাটা ভিজিয়ে ফেললে? উত্তরে ওয়াসির বলল আচ্ছা থাক, অসুবিধা নেই; কারণ শার্কতো পানিতেই থাকে। শার্ক এর একটু পানি খাওয়ার দরকার ছিল, তাই পানি পড়ে গিয়ে ভালোই হয়েছে। ওয়াসির’র কথায় আমরা সবাই হাসতে লাগলাম।
৯। দাদুকে খুব ভালোবাসত ওয়াসির। ২০১৪ সালের ১লা নভেম্বর দাদু ইন্তেকাল করেন। ওয়াসির দাদুকে অনেক মিস করে। মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে সে বলে, দাদুতো অনেকদিন আল্লাহর কাছে থেকেছে, আর সেজন্য কিছুদিন পরই দাদু আল্লাহকে ‘বাই বাই’ বলে আমাদের কাছে চলে আসবেন। এরূপ কথা বলে তারপর দাদুকে ডাকতে থাকে দাদু, তুমি চলে আসো!
ওয়াসির’র এসব কথা যদি সত্যি হতো, তাহলে কতইনা ভালো হতো। দাদুতো না ফেরার দেশে চলে গেছেন, এটা ওয়াসির হয়ত ভালোভাবে বুঝতে পারছে না; সে হয়ত এও জানে না মানুষের জীবনের শেষ আছে। তবে দাদুর ফিরে আসার জন্য তার আকাঙ্খার শেষ নেই যা আমাদের মনকেও গভীরভাবে নাড়া দেয়।
১০। আমি আর ওয়াসির দু’জনেই গাড়ির পোকা। আমি গাড়ি বিষয়ক ম্যাগাজিন ও বই পড়ে ওয়াসিরকে বিভিন্ন গাড়ির ছবি দেখিয়ে গাড়ি চেনাই। যদিও ওয়াসির শব্দ পড়তে পারে না, তবুও শুধু গাড়ির লোগো দেখে অনবরত বলতে থাকে ঐ যে একটা মিটসুবিশি, ঐ যে নিশান, ঐ যে হুন্দাই; কিংবা বলে, দেখো কত টয়োটা গাড়ি! ব্র্যান্ড চিনতে কখনই ভুল হয় না ওয়াসির’র, সেটা মার্সিডিজ হোক কিংবা বিএমডাব্লিউ অথবা আউডি! শুধু তাই নয়, সে গাড়ির বিভিন্ন parts এর নামও জানে। ওয়াসির’র আধো মুখে যখন শুনি, বড় হয়ে আমি ল্যাম্বরগিনি গাড়ি কিনব তখন অবাক হয়ে যাই। কামনা করি ওয়াসির অনেক বড় হোক, তার স্বপ্ন সফল হোক!
১১। ওয়াসিরকে একদিন জিজ্ঞাসা করলাম, বড় হয়ে কী হতে চাও। উত্তরে সে বলল, আমি বড় হয়ে পুলিশ, ড্রাইভার, প্রধানমন্ত্রী, অফিসার সব কিছুই হব। অর্থাৎ যেসব পেশায় স্মার্টনেস ও থ্রিল আছে, তা সে গ্রহণ করতে চায়। তার এসব মজার কথা আমরা বেশ উপভোগ করি।
১২। একদিন ওয়াসির মায়ের সাথে গাড়িতে যেতে যেতে একটি বিশাল জ্যামে পড়ল। তখন বিরক্ত হয়ে মা’কে বলল, মটরসাইকেল কিনলে আমরা বেশি জ্যামে পড়তাম না। মা তাকে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে, মামণি একটা মোটরসাইকেল কিনব, তারপর আমি চালাবো, তুমি আমার পেছনে বসবে। সাথে সাথেই ওয়াসির উত্তর দিল মা, মেয়েরাতো মোটরসাইকেল চালায় না, স্কুটি চালায়। তুমি স্কুটি কিনবে। মা’তো তার কথায় অবাক!
১৩। আমাদের খালামণি রেবা, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ী চলে যাওয়ায় ওয়াসির’র খুব মন খারাপ। তাই সে ঘোষণা দিয়েছে, আমাদের বাসার আর কেউ বিয়ে করবে না; বাবা বিয়ে করবে না, মা বিয়ে করবে না, আপিও না, ভাইয়াও না, আমিও নই। কারণ বিয়ে করলে আরেক বাসায় চলে যেতে হয়। ওর কথায় আমরা হেসে গড়াগড়ি করি।
১৪। ‘বাতিঘর’ নামে একটি সাংস্কৃতিক স্কুলে ওয়াসির সপ্তাহে দু’দিন নানান সাংস্কৃতিক বিষয়ের চর্চা করে। সেদিন ছিল গল্প শোনার ক্লাস। গল্পবলা খালামণি দোয়েল পাখি নিয়ে গল্প শোনাচ্ছিলেন। তাঁর হাতে থাকা বইয়ে তিনি দোয়েল পাখির ছোট্ট ছানার ছবি দেখিয়ে বললেন এই যে দেখ, দোয়েল পাখির ছানা, ঠিক তোমরা যেমন মানুষের ছানা। অমনি ওয়াসির বলে উঠল খালামণি আমরাতো মানুষের ‘বাচ্চা’, ‘ছানা নই’। ওর মন্তব্যে গল্পবলা খালামণি খুব খুশি হলেন এবং নিজ কথার সংশোধনী টেনে সবাইকে বললেন ওয়াসির ঠিকই বলেছে, তোমরা মানুষের বাচ্চা।
এমনি নানা সহজ সরল ও প্রকৃত সত্যি কথায় ও কাজে আমাদের মাতিয়ে রাখে ওয়াসির। ওর জন্য দোয়া করবেন, ও যেন জীবনে বড় হয়ে তার বুদ্ধি মানুষের উপকারে লাগাতে পারে।
লেখকের ওয়েবঃ www.maheer.helal.net.bd
ই-মেইলঃ maheer7helal@gmail.com