চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে ‘গৌরবের ৫০ বছর’ পূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণভবনে থাকলেও আমার মন পড়ে আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এ ক্যাম্পাসের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা সব সময় ছিল, থাকবে। আমি নিজে আসতে পারলে খুব আনন্দিত হতাম। সবার সাথে দেখা হতো। মন পড়ে আছে ক্যাম্পাসে, নিজে কেন গেলাম না।
তিনি বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশে গড়তে হলে দরকার উচ্চশিক্ষায় সুশিক্ষিত জাতি। এ উপলব্ধি থেকে স্বাধীনতার পর জাতির জনক যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষাকে প্রধান অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করি তাকে নিজের মনে করতে হবে। যারা হলে থাকেন তাদের দায়িত্ব হলের সৌন্দর্য ঠিক রাখা।
হল ও ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য রক্ষায় ফলজ ও ফুলের গাছ লাগানোর কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সেশনজট ঠেকাতে শিক্ষকদেরও তৎপর হতে অনুরোধ জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে প্রাক্তনদের সংগঠন ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশগুলোকে এগিয়ে আসারও অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, অ্যালামনাইদের অনুষ্ঠানে খাওয়া-দাওয়া আর উৎসব হয়। এটা তাদের কাজ না। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করলাম তার জন্য কি করলাম। সেটিও দেখতে হবে।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারক ডাকটিকিটও অবমুক্ত করেন।
দুই দিনব্যাপী এই আয়োজন আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ওয়াসিকা নাজনিন প্রমুখ। সুবর্ণজয়ন্তীর বক্তা ছিলেন প্রফেসর ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আবদুস শহীদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি প্রফেসর ড. শিরীন আখতার।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এজেএম নুরুদ্দিন চৌধুরী, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, সংসদ সদস্য ওয়াশিকা আয়শা খান, সাবিহা মুছা, আবু রেজা মোঃ নেজামুদ্দিন নদভী, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক কামরুল হুদা ও প্রক্টর অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরীও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, জাতীয় শিক্ষাঙ্গনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এক মহিরুহে পরিণত হয়েছে। যে ভিশনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা শুরু হয়েছিল, তা অনেকাংশে পূরণ হয়েছে। অ্যালামনাইদের কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি আজ বিশ্বজোড়া। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আজ পাথ অব গ্লোবাল কমিউনিটি।
অনুষ্ঠানস্থলে কেক কেটে চবি’র ৫০তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়। শনিবার নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসব পালন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ ছিল খোলা। প্রায় সব বিভাগ থেকেই সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হয় টি-শার্ট ও ব্যাজ। দুপুর থেকেই কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সন্ধ্যার পর সুবর্ণজয়ন্তী কনসার্টে অংশ নেয় ব্যান্ড দল লালন, ওয়ারফেজ ও আর্টসেল। সার্বিক আয়োজন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন বলেন, সুবর্ণজয়ন্তী নিছক কোনো উৎসবের আয়োজন নয়; এ আয়োজনের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের কাছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবার সম্প্রীতি ও বন্ধনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। দুই দিনব্যাপী অর্ধলক্ষ মানুষের এ আয়োজন সফল করায় সাবেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
এদিকে অর্ধ শতকপূতির্র সুবর্ণচ্ছটায় অংশ নিতে বিপুল সংখ্যক প্রাক্তন শিক্ষার্থী সকাল থেকেই পাহাড়ঘেরা সবুজ ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন। দশকপুরনো সাবেক শিক্ষার্থীরা সহপাঠীদের কাছে পেয়ে হয়ে উঠেন আত্মহারা।
জারুলতলা, কলাভবন ঝুপড়ি, রেল স্টেশনসহ সর্বত্র পুনর্মিলনীর আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন বর্তমান শিক্ষার্থীরাও, মেতে উঠছেন আনন্দ-আড্ডায়। গান, স্মৃতিচারণ আর পুরনো সহপাঠীদের সাথে মিলনের আনন্দে উৎসবের রং নিয়েছে পুরো চবি ক্যাম্পাস।
পুনর্মিলনীতে অংশ নিতে ১০ হাজারেরও বেশি সাবেক শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেন। এর বাইরেও অসংখ্য সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন।
সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে ১ হাজার ৭৫৭ একরের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস পরিণত হয় উৎসবের মেলায়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে ১৭ নভেম্বর।