॥ সৈকত চন্দ্র দে ॥
এক্সিকিউটিভ
ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র (সিএসডিসি)
আমি তখন ব্র্যাকে কর্মরত। প্রধান কার্যালয় থেকে ব্রাঞ্চ অফিসগুলোতে অফিসিয়াল মেসেজ পাঠানো হয়, তাই ডাউনলোড করতে প্রায় সময়ই নেটে ঢুকতে হয়। অফিসে সেদিন আমার তেমন কোনো কাজ না থাকায় বিডি জবস-এর নেটে বসলাম। খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ চোখে পড়লো The university campus, জুনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে লোক নিয়োগ হবে। আমার কাছে ভালো লাগলো। আগ্রহ জাগলো ক্যাম্পাস’র বিস্তারিত তথ্য জানতে। সার্চ করে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমগুলো মন দিয়ে পড়লাম। পড়েই ক্ষান্ত হলাম না, সাথে সাথেই অফিসের প্রিন্টার থেকে প্রিন্ট দিয়ে নিলাম। বাসায় গিয়ে বিস্তারিত আরও পড়লাম, ইচ্ছে হলো এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে।
পরদিন বাসায় বসে দরখাস্ত ও সিভি তৈরি করলাম। মনে মনে আশংকা ছিলো আমাকে ডাকবে তো, চাকরিটা হবে তো! পরে মনের আশংকা নিয়েই সিভিটা পাঠিয়ে দিলাম। সপ্তাহখানেক পর ৯৫৫০০৫৫ থেকে ফোন আসলো। রিসিভ করে সালাম দিলাম। অপর প্রান্ত থেকে একজন বললেন আপনি কি সৈকত চন্দ্র দে। বললাম-জ্বি। বললেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা থেকে বলছি। আপনি জুনিয়র এক্সিকিউটিভ পদের জন্য আবেদন করেছেন। আগামী ২৫.০৬.১৬ তারিখে ভাইভা পরীক্ষার জন্য আপনাকে ডাকা হচ্ছে, আপনি কি আসতে পারবেন? বললাম জ্বি, আসতে পারবো। যে কথা সেই কাজ। ২৫.০৬.১৬ তারিখে ক্যাম্পাস অফিসে উপস্থিত হলাম। এভাবে ক্যাম্পাস এ আমার পদার্পণ।
অফিসে ঢুকেই দেখলাম নয়নাভিরাম দৃশ্য, ফুল আর গাছগাছালিতে ভরা ক্যাম্পাস অফিস। এ সুন্দর পরিবেশে আমার মন আনন্দে নেচে উঠলো। কিন্তু মনটা কেন সংশয়বিদ্ধ- চাকরিটা হবে তো? কিছুক্ষণ পর আমার সামনে অফিসের এক কর্মকর্তা কয়েকটি পত্রিকা ও বই দিলেন। আমি বইগুলো মন দিয়ে পড়লাম। আনুমানিক ৩০ মিনিট পর আরেক কর্মকর্তা আমাকে কম্পিউটারে বসিয়ে অফিসের বিভিন্ন কার্যক্রম দেখালেন। আমি মন দিয়ে কার্যক্রমগুলো দেখলাম এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কাগজে টুকে রাখার চেষ্টা করলাম। ডক্যুমেন্টারি দেখানো শেষ হলে আমাকে নিয়ে গেলেন ভাইভা বোর্ডে। সালাম দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। পরীক্ষক আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন, আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি। পরীক্ষক আমাকে জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজের কথা এবং জীবনে উন্নতি করার যে স্বপ্ন দেখালেন এতে আমার মনে হলো আমি হয়তো ঠিক জায়গায় এসে পৌঁছেছি। মনে মনে ভাবছি এখানে যদি আমার চাকরিটা হয় তা’হলে আমি উপরে উঠতো পারবো। ভাইভা পরীক্ষা শেষ হলে আমাকে নিয়ে গেল লিখিত পরীক্ষার জন্য।
আমি লিখিত পরীক্ষা দিচ্ছি আর এদিক ওদিক তাকচ্ছি। দৃষ্টিনন্দন পরিবেশের এই অফিস। লিখিত পরীক্ষা শেষ করে খাতা জমা দিলাম, তারপর দুপুর বেলা অফিস আমাকে লাঞ্চ করালো। কিছুক্ষণ পর এক কর্মকর্তা আমাকে বললেন, আপনি এখন আসতে পারেন। পরীক্ষক কর্তৃক খাতা দেখা শেষ হলে আপনাকে পরে জানানো হবে। আমি সম্পাদক মহোদয়ের কাছে খাতা জমা দেয়ার সময় তাঁর কথা শুনে বুঝতে পারলাম আমার চাকুরিটা হতে পারে। ১৯.০৭.১৬ তারিখে আমাকে আবার কল করলো ক্যাম্পাস। আমি গেলাম। সম্পাদক মহোদয়ের কথা শুনে বুঝতে পারলাম চাকরিটা আমার হয়েছে। তারপর ব্র্যাক থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা এবং ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার অফিসে।
২৬.০৭.১৬ তারিখে কাজে যোগদান করি। নতুন পরিবেশে, নতুন কর্মস্পৃহা, নতুন অভিজ্ঞতা। খুঁজে পেয়েছি ভবিষ্যৎ গড়ার নতুন জায়গা। সেদিন অফিসের সবাইকে দেখলাম খুব ব্যস্ত। যার যার কাজ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম কি ব্যাপার ভাই, সবাই দেখি খুব ব্যস্ত! বললেন , বিকালে অনুষ্ঠান আছে। সময় যত গড়ায় আমার অভিজ্ঞতা ততই বাড়ে। অপেক্ষায় থাকলাম অনুষ্ঠান দেখার জন্য। বিকাল ৪ টায় অনুষ্ঠান শুরু হলো। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই প্রথিতযশা কূটনীতিক , শিক্ষাবিদ ও এম্বাসেডর প্রফেসর ড.এ কে এম আব্দুল মোমেন। আরেকজন ভদ্র মহিলাকে দেখলাম। কোথায় যেন দেখেছি? হঠাৎ করে মনে পড়লো টিভির টকশো-তে । একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম তিনি কে? বললেন ড. নাজনীন ম্যাডাম, সম্পাদক মহোদয়ের সহধর্মিণী। আজকে আমার এখানে পদার্পণ না হলে কিংবা কর্মসংস্থান না হলে হয়তো এই দ’ুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বকে সরাসরি দেখা হতো না।
কাজে যোগদানের প্রথমদিনে এমন সুশৃঙ্খল ও বিস্ময়কর ক্যারিশমেটিক অনুষ্ঠান দেখবো তা কখনো ভাবতে পারিনি। সেদিন ছিলো ইংলিশ কোর্সের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের আয়োজন, ডক্যুমেন্টারি প্রদর্শন, নাস্তার ব্যবস্থা সবই ছিল চমৎকার । শুনলাম প্রধান অতিথির বক্তব্য, ড. নাজনীন ম্যাডামের বক্তব্য, আরও শুনলাম সম্পাদক মহোদয়ের বক্তব্য। বক্তব্যে ফুটে উঠেছিল, মানবজীবন সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি কত স্বচ্ছ, কত উদার । মেধাকে তাঁরা কিভাবে লালন করেন, কিভাবে সৃষ্টিশীল ও মানবকল্যাণে ব্যবহার করেন তাঁদের বক্তব্য আমি যতই শুনি তই মুগ্ধ হই। বুঝতে পেরেছি ক্যাম্পাস’র আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কথা। প্রধান অতিথির সারগর্ভ ব্যক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। কিন্তু আমার মনের অনুভূতি তখনও চঞ্চল। সম্পাদক মহোদয় ছাত্র ও যুব সমাজের কল্যাণে যে উদ্ভাবনী শক্তি ব্যয় করছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তাঁর যে সৃজনশীল কার্যক্রম সমাজে প্রদর্শন করেছেন তা ছাত্র ও যুবকদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং আমার মত যুবকদের জন্য ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। কাজকর্মে আসবে গতিশীলতা এবং জীবনমানের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন । আমি বিশ্বাস করি ড. এম হেলালের সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড, জাতি জাগরণের লক্ষ্যমাত্রা এবং সফলতা ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)