বিশেষ খবর



Upcoming Event

চিরতরুণ অর্থমন্ত্রী মুহিত এর একাদশতম বাজেট

ক্যাম্পাস ডেস্ক প্রতিবেদন

২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন চৌদ্দ দলীয় জোট সরকারের চতুর্থ ও দেশের ৪৬তম এ বাজেট পেশ উপলক্ষে সম্প্রতি সংসদ ভবন এলাকায় ছিল উৎসবের আমেজ। অধিবেশন কক্ষে বসে বাজেট বক্তৃতা প্রত্যক্ষ করেন এবং টেবিল চাপড়ে ‘২০১৭-১৮’ অর্থবছরের উত্থাপিত বাজেট সমর্থন জানান রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল।
বাজেট পেশ উপলক্ষে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল অধিবেশন কক্ষ। সংসদ গ্যালারি থেকে ভিআইপি লাউঞ্জ সর্বত্রই ছিল উপচে পড়া ভিড়। সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিজের জীবনের একাদশতম বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ঘড়ির কাঁটায় ১টা ৩৫ মিনিটে বাজেট বক্তব্য শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতার আগেই জাতীয় সংসদের কেবিনেট কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদন করা হয়। রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট মোঃ আবদুল হামিদ সংসদে নিজ কক্ষে বসে বাজেট উপস্থাপন প্রত্যক্ষ করেন। রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভবনে স্বাগত জানান সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া। সংসদ কার্য উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪৫ ঘণ্টা আলোচনার পর আগামী ২৯ জুন ‘২০১৭-১৮’ অর্থ বছরের বাজেট পাস হবে।
আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট -মুহিত
এবারের বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট। তা বাস্তবায়নে সরকারের দক্ষতা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে এখন অনেক ভাল দাবি করে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, গত আট বছরে বাজেটের আকার পাঁচগুণ বেড়েছে। ওই সময় বেড়েছে সরকারের আয়ও। তাহলে বাস্তবায়নের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে? তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর করা হলেও জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। কারণ, অনেক পণ্যে ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে।
প্রিয় পোশাকে বাজেট পেশ
বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অফ হোয়াইট সিল্ক শাড়ি পরে অধিবেশন কক্ষে ঢোকার সময় তাঁর পিছু পিছু প্রিয় পোশাক ধূসর রঙের পাঞ্জাবির ওপর কালো মুজিব কোট পরে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময়ে অর্থমন্ত্রীর সম্বল ছিল একটি কালো সুটকেস। মুখে ছিল উচ্ছ্ব¡াস। বাজেট বক্তৃতার প্রথম ও দ্বিতীয় অংশ অর্থমন্ত্রী পড়ে শোনান। এছাড়া তৃতীয় অংশের কিছু অংশ ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা হয়। বক্তৃতার চতুর্থ অংশের পুরোটাই স্ক্রিনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বসেই বাজেট বক্তৃতা করেন। অধিবেশনের শুরুতে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্পিকার বলেন, আপনি বাজেট উত্থাপনের অনুমতি চাইতে পারেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী প্রথমে নিজের আসনে বসে অনুমতি চাওয়া শুরু করেন।
অর্থ বিল উত্থাপন
বাজেট বক্তৃতা শেষে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে অর্থ বিল- ২০১৭ সংসদে উত্থাপন করেন। সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলি কার্যকরণ এবং কতিপয় আইন সংশোধনের লক্ষ্যে বিলটি উত্থাপন করা হয়। বিলটি আগামী ২৯ জুন পাস হবে।
খসড়া বাজেট অনুমোদন
বাজেট বক্তৃতার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে মন্ত্রিপরিষদের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। প্রতি বছর বাজেট উত্থাপনের আগে রেওয়াজ অনুযায়ী এই বৈঠকটি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন পাওয়ার পর বাজেট বিলে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ।
বিরোধী দলের উপস্থিতি
নবম জাতীয় সংসদে মহাজোট সরকারের পাঁচটি বাজেট বিরোধী দল বর্জন করলেও এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলীয় সদস্যরা বাজেট উত্থাপনের সময় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন বর্জন করে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি। আর সর্বশেষ ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের আগে বিরোধী দল অধিবেশনে যোগ দিলেও বাজেট উত্থাপনের দিন তারা অধিবেশন কক্ষে যাননি। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে বসে তারা বাজেট বক্তৃতা শোনেন
মুহিতের একাদশতম বাজেট
বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ১১ বারের মতো বাজেট প্রস্তাব পেশ করলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট এটি। বর্তমান অর্থমন্ত্রী এর আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের (২০১৬-১৭), (২০১৫-২০১৬), (২০১৪-১৫), (২০১৩-১৪), (২০১২-২০১৩), (২০১১-২০১২), (২০১০-২০১১), ও (২০০৯-২০১০) এবং হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সরকারের আমলে ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে দুটি বাজেট পেশ করেছিলেন।
যেসব পণ্যের দাম বাড়বে, কমবে
২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, আরোপ ও বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন। একই সঙ্গে কয়েকটি সেবা খাত এবং পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। ফলে ওইসব পণ্য ও সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ভোক্তাকে আগের চেয়ে বেশি দাম দিতে হতে পারে। আবার অনেক পণ্য থেকে শুল্ক কমানো বা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।
দাম বাড়বেঃ প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু তৈরি পণ্যের আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে গুঁড়া দুধ, মাখন, শুকনা আঙ্গুর, যেকোন ধরনের তাজা ফল, গোল মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, জিরা, চকলেট, শিশু খাদ্য, পটেটো চিপস, সস, আইসক্রিম, লবণ, জ্বালানি তৈল, পেইন্ট, ভার্নিশ, সৌন্দর্য অথবা প্রসাধনী সামগ্রী, সেভিং কিটস, শরীরের দুর্গন্ধ দূরীকরণে ব্যবহৃত সামগ্রী, টয়লেট সামগ্রী, রুম সুগন্ধি, সাবান, ডিটারজেন্ট, মশার কয়েল, এ্যারোসল ও মশার মারার সামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, প্লাস্টিকের দরজা, জানালা, ফ্রেম, মোটর গাড়ির টায়ার, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ওভেন ফেব্রিক্স, কার্পেট ও অন্যান্য টেক্সটাইল ফ্লোর আচ্ছাদন। এছাড়া শিশুদের গার্মেন্টস পণ্য, বিদেশী জুতা, ইমিটেশন জুয়েলারি, স্টেইলনেস স্টিলের সিঙ্ক, ওয়াস বেসিনের যন্ত্রাংশ, ওয়াটার ট্যাপ, বাথরুমের ফিটিংস, স্টেইনলেস স্টিল বেলট, দুই ও চার স্ট্রোক বিশিষ্ট অটোরিক্সা/থ্রি হুইলার ইঞ্জিন, সিলিং ফ্যান ও এর যন্ত্রাংশ, রঙিন টেলিভিশন, সিম কার্ডের দাম বাড়বে। এছাড়া স্থানীয় বা সরবরাহ পর্যায়ে সম্পূরক শুল্কারোপের ফলে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে তার মধ্যে রয়েছে- সব ধরনের পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, হট ডগ, ফলের রস ও ফ্রুুট ড্রিংক, পাস্তা, লাজারানো, মিনারেল ওয়াটার (৩ লিটার পর্যন্ত), কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংক, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুল, পেইন্টস, সৌন্দর্যবর্ধক প্রসাধনী, পাউডার, শ্যাম্পু, সেভের আগে পরে ব্যবহৃত সামগ্রী, ঘাম দূরীকরণে ব্যবহৃত সামগ্রী, সুগন্ধযুক্ত বাথ সল্ট ও অন্যান্য সামগ্রী, পেপার, সিরামিক, সোলার প্যানেল, দেয়াল টাইলস ও বাথটাব, সিমকার্ড (রিপ্লেসমেন্টসহ) সরবরাহ। এছাড়া নতুন বাজেটে কমমূল্যের সিগারেট ও বিড়ির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বাড়ছে ই-সিগারেট ও এর রিফিলের শুল্ক হারও। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ও সার্কভুক্ত দেশ ব্যতীত এশিয়ার অন্যান্য দেশে প্লেন ভ্রমণে ব্যয় বাড়ছে। ফলে সার্কভুক্ত দেশব্যতিত এশিয়ার অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১ হাজার টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা ও ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যামান ১ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৩ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই শুল্ক টিকেটের সঙ্গে যুক্ত করে আদায় করা হবে।
দাম কমবেঃ বাজেটে শুল্কহার হ্রাস ও কর রেয়াতির প্রস্তাব করায় বেশ কিছু পণ্য ও যন্ত্রপাতির দাম কমতে পারে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চাল, ডাল, ডিম, ফল, মাছ, মাংস, মধু, তরল দুধ, লবণ ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচ, মাংস, মুড়ি, চিঁড়া, চিনি, আলুসহ সব ধরনের শাক সবজিসহ প্রায় ৫৪৯টি পণ্যের উপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া কলা, খেজুর, ডুমুর, আনারস, পেয়ারা, আম, গাব, লেবুজাতীয় ফল, আঙ্গুর, তরমুজ, আপেল, নাশপাতিসহ যেকোন ফল, গোলমরিচ, ভ্যানিলা, দারুচিনি, লবঙ্গ, জায়ফল, জৈত্রী, এলাচ, মৌরী, ফেনেল, ধনিয়া, জিরা, আদা, জাফনার, হলুদ, তেজপাতা, কারি, মসলা, গম, মেসলিন; রাই, বার্লি, জই, ভুট্টা, ধান, সব ধরনের চাল, মুড়ি, সোরঘাম শস্য, বাজরা, ক্যানারাই বীজও ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্যের তালিকায় রয়েছে। ভ্যাট না থাকায় খরচ বাড়বে না দেশের মধ্যে (সরবরাহ) এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যানবাহনের মাধ্যমে পরিবহন সেবা, ভাড়াকৃত পরিবহন ছাড়া ট্যাক্সি, বাস, মিনিবাস, লঞ্চ, স্টিমার, ফেরির মাধ্যমে পরিবহন সেবারও। এয়ারলাইন্স (চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়া প্রদানকারী সংস্থা ব্যতীত) ও খাদ্যশস্য পরিবহন সেবাদাতাদেরও বাড়বে না খরচ। কৃষি পণ্যের মধ্যে বীজ, সব ধরনের সেচ সেবা, বীজ সংরক্ষণ সেবা, মৎস্য, জলজপ্রাণী ও জলজ সম্পদ আহরণ ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত সেবা। সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ভেদে কমবে হাইব্রিড গাড়ির দাম। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে স্থানীয় সংযোজন ও উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে যন্ত্রাংশ ও কাঁচামালের উপর কর ও শুল্ক ছাড় দেয়া হয়েছে। এর ফলে দেশে সংযোজিত ও উৎপাদিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ও ফোনের দাম কমবে। প্রস্তাবিত বাজেটে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ট্যাব উৎপাদনে ব্যবহার হয় এমন প্রায় ৫০টি পণ্যে আমদানি শুল্ক কমিয়ে অভিন্ন ১ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া ৯৩ ধরনের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং গণপরিবহন সেবা, জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা, ও প্রশিক্ষণের ওপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া দেশীয় শিল্পের বিকাশ এবং প্রতিযোগিতামূলক রফতানি বাণিজ্যের লক্ষ্যে রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজ, এসি, পাম ওয়েল, সয়াবিন তেল ও এলপিজি সিলিন্ডার স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম কমবে।
শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ সাড়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকা
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামগ্রিক শিক্ষা খাতে ৫০ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বরাদ্দ চলতি বাজেটের তুলনায় এক হাজার ৪২২ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে ৪৯ হাজার ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এদিকে নতুন বাজেটে শিক্ষার সুষম সুযোগ বাড়ানোর জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেটে দীর্ঘদিন পর নতুন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, যা ছিল জাতীয় সংসদ সদস্যসহ বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি। নতুন বাজেটে মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাসহ উচ্চশিক্ষার প্রসার এবং উৎকর্ষ সাধনে ৫ বছর মেয়াদি সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এ বাজেট পেশ করেন। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গুণগত উৎকর্ষ সাধনে ৫০৩টি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ইন্টারএ্যাকটিভ শ্রেণিকক্ষ তৈরির পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদ্যমান ও জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নে ১৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাসহ উচ্চশিক্ষার প্রসার এবং উৎকর্ষ সাধনে চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ লক্ষ্যে ৫ বছর মেয়াদী সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে শিক্ষার মানোন্নয়ন সময় সাপেক্ষ বিষয়। মুহিত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পাঁচটি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে আমাদের কার্যক্রম আরও জোরদার করব। সাধারণত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মিলে শিক্ষা খাতকে বিবেচনা করা হয়। তবে গত কয়েক বছরের মতো এবারও বাজেটে শিক্ষা খাতের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কেও একীভূত করে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত করা হয়েছে। এ হিসাবে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতেই বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ। এ খাতে ৬৫ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ৫২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। যা ছিল মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫০ হাজার ২৯২ কোটি টাকা করা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনকূলে বরাদ্দ করা হয়েছে ২২ হাজার ২৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ২৩ হাজার ১৪১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের বরাদ্দ ৫ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ২৬ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ও প্রাথমিক স্তরের জন্য ২২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।
এবারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আইসিটি শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সারাদেশের ২৩ হাজার ৩৩১টি মাধ্যমিক এবং ১৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’ স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ২০টি মন্ত্রণালয়-বিভাগ, ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং ৭টি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ইতোমধ্যে চালু হয়েছে ই-ফাইলিং পদ্ধতি। ১৮ হাজার ৫০০ সরকারি অফিস একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করেছি। এর ফলে, দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং ও রিসোর্স সেন্টার স্থাপন, সরকারি বিদ্যালয় নেই এমন ৩১৫টি উপজেলার ২৯৫টি বেসরকারি বিদ্যালয়কে মডেল বিদ্যালয়ে রূপান্তর, ৩ হাজার ৫৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব এবং ২৩ হাজার ৩৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। বিগত বছরসমূহের ধারাবাহিকতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ে প্রায় ৩৮ লাখ শিক্ষার্থীকে ৬৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা উপবৃত্তি ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
শিক্ষায় সরকারের অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন আমাদের লক্ষ্য। এর জন্য মানব সম্পদ উন্নয়নের বিকল্প নেই। তাই শিক্ষা খাতের বিনিয়োগকে আমরা সবসময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’- এ সেøাগানকে সামনে রেখে আমরা সার্বিক শিক্ষা খাতের উন্নয়নে আমাদের কার্যক্রম গ্রহণ করছি। প্রতি জেলায় মৌলিক সাক্ষরতা ও সাক্ষরতা উত্তর জীবিকায়ন দক্ষতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পর্যায়ক্রমে ডিপ্লোমা-ইন-এডুকেশন প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আইসিটি রিসোর্স সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।
এছাড়া ভর্তির হার বৃদ্ধি ও ঝরে পড়া রোধের লক্ষ্যে স্কুল ফিডিং, উপবৃত্তি, নতুন অবকাঠামো ও অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণসহ চলমান অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও আছে জরাজীর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বা পুনঃনির্মাণ কার্যক্রম। শিক্ষার মানোন্নয়নের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষানীতি আমরা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করছি। আমরা প্রথমেই চেষ্টা করেছি শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণে। পরবর্তী অগ্রাধিকার হচ্ছে প্রশিক্ষিত শিক্ষক গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা অনবরত উন্নীত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১২০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ২৮৫টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে। সার্বিক শিক্ষা খাতের মানোন্নয়নে অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার, এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ চলমান কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রাখবো। পাশাপাশি, মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাসহ উচ্চশিক্ষার প্রসার এবং উৎকর্ষতা সাধনে চলমান কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে।
বাজেটে সমস্যা থাকলে সমাধান হবে -প্রধানমন্ত্রী
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সব থেকে বড় চার লক্ষ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট আমরা দিয়েছি। এত বড় বাজেট আর কখনো কেউ দেয়নি। বাজেট পেশ করা হয়েছে, পার্লামেন্টে আলোচনা হবে। হয়তো কারো কিছু সমস্যা থাকতে পারে। নিশ্চয় তা আমরা দেখব, সমাধান করব। সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শিক্ষাখাতে আশানুরূপ বরাদ্দ হয়নি বলে দুঃখ নেই -শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষাক্ষেত্রের জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যায় না-এমন মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বাজেটের আকার বড় হওয়ায় অর্থ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বাজেটের শতাংশ হিসাবে বরাদ্দ কমেছে। তবে আশানুরূপ বরাদ্দ হয়নি বলে দুঃখ নেই। কারণ আমাদের দেশে আরও অনেক দরকারি খাত আছে যেখানে অর্থ বরাদ্দ দরকার। অনেক বড় প্রজেক্ট আছে যেখানে জনগণের স্বার্থেই অর্থ দরকার। আছে পদ্ম সেতুর মতো বড় খাত।
শনিবার বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের অফিস ব্যবস্থাপনাবিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষা খাতে বাজেট নিয়ে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার জন্য মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ কিংবা জিডিপি’র অন্তত ৫ শতাংশ বাজেট দরকার। এটি আন্তর্জাতিক একটি স্বীকৃত দাবি। তবে আমাদের দেশের বাস্তবতাও আমাদের মানতে হবে। আমাদের অনেক প্রাধিকার খাত আছে। সররকারকে সেগুলোর জন্য বিপুর অর্থ বরাদ্দ করতে হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, গত বছর শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ১১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এ বছর তা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও টাকার অঙ্কে বাজেটের আকার বড় হওয়ায় অর্থ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অর্থ দিয়েই পরিকল্পিতভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমানে যে শিক্ষা ব্যবস্থা দেয়া হচ্ছে তা দিয়ে আধুনিক উন্নতমানের দেশ গড়া সম্ভব নয়, দরকার বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img