বিশেষ খবর



Upcoming Event

এফবিসিসিআই হবে ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম -এফবিসিসিআই এর নবনির্বাচিত সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন

ক্যাম্পাস ডেস্ক মতামত

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) নতুন সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। গত ১৬ মে নির্বাচনে জয়ী হয়ে তাঁর প্যানেল সম্মিলিত গণতান্ত্রিক পরিষদ ২০১৭-১৯ মেয়াদের জন্য ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটির নেতৃত্বে আসে। এবারে সভাপতির পদটি এসেছে অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে।
মুন্সীগঞ্জের সন্তান শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ঠিকাদারি ব্যবসার মাধ্যমে। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে একে একে গড়ে তোলেন ১২টি কারখানা। পোশাক খাতেই থেমে থাকেনি তাঁর শিল্পোদ্যম। ইট তৈরির প্রতিষ্ঠান, ইনল্যান্ড কার্গো, ফিশিং ট্রলার, ড্রেজিং, সোলার প্যানেল এবং নির্মাণ খাতেও রয়েছে তাঁর উপস্থিতি। বর্তমানে ছয় হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান করেছে তাঁর প্রতিষ্ঠান ওনাস গ্রুপ।
এফবিসিসিআইকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রাণের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান প্রতিষ্ঠানটির নয়া কর্ণধার।
নতুন সভাপতি হিসেবে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শফিউল ইসলাম বলেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মানুষ তার ব্যবসা-বাণিজ্য করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় কোনো না কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তারা। সব বাধাবিপত্তি হয়তো নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদে শেষ করা যাবে না। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে এফবিসিসিআই এ জন্য কাজ করে যাবে, যথার্থ ভূমিকা রাখবে- এটা ব্যবসায়ীদের যেমন প্রত্যাশা, আমারও তাই। আমার বিশ্বাস, ধীরে ধীরে সেই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।
এফবিসিসিআইয়ের গত পরিষদের প্রথম সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন শফিউল ইসলাম। সেই অভিজ্ঞতাকে আরো সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাবার দৃঢ় ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। ভ্যাট বিড়ম্বনার কথা উল্লেখ করে সংগঠনের নতুন এ সভাপতি বলেন, ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের ন্যায়সংগত উদ্বেগগুলো আমলে নিতে আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে দেনদরবার শুরু করি। কিন্তু তারা আমাদের কথা আমলে নিতে চায়নি। ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ২০১৭ সালে এসে সংশোধন ছাড়া এ আইন বাস্তবায়ন করা যৌক্তিক হবে না। আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এটি গ্রহণযোগ্য অবস্থায় আগামী বাজেটে আসবে। তারপর ভ্যাট নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগগুলো আমলে নিতে হবে। ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট লাগবে না। (ভ্যাটযুক্ত) বার্ষিক লেনদেন, যেটা এখন ৮০ লাখ টাকা এটা আমরা পাঁচ কোটি টাকার দাবি জানিয়েছি। আমাদের আশা, এটা এক-দুই কোটি টাকায় নিয়ে আসা হবে। যারা রেয়াত নিতে পারবে না তাদের ৪ শতাংশ করা।
ব্যাংকঋণের সুদের হার এখন কমে এলেও এফবিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি মনে করেন, এখনো তা অনেকটাই বেশি। যদিও বড় বড় উদ্যোক্তারা এক অঙ্ক সুদে ঋণ নিতে পারছেন। ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের এখনো ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ দিতে হয়। সুদের হার সব শ্রেণির ব্যবসায়ীদের জন্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে তাঁর অগ্রাধিকার ও কর্মপরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করে বলেন, অবকাঠামো খাতে যেসব বাধা আছে সেগুলো মোকাবেলা করে নতুন ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নে আরো দ্রুত কাজ করতে হবে। সেগুলো যাতে দ্রুত আলোর মুখ দেখে সে বিষয়ে কাজ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকার যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে, তা ঠিক আছে। এলএনজি পোর্ট নির্মাণসহ ভবিষ্যতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারকে একটি সুপরিকল্পিত নীতিমালা তৈরি করতে হবে। সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সঠিক গবেষণা। আর এই গবেষণাপত্র তৈরিতে এফবিসিসিআই ভূমিকা রাখতে পারে, যদি সরকার মনে করে।
জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সমস্যা নিয়ে এই নেতা বলেন, তাঁতীবাজারের পোদ্দাররা ব্যবসা করেন নগদ টাকায়। ১০০ গ্রাম স্বর্ণ মানুষ বিদেশ থেকে বিনা শুল্কে নিয়ে আসতে পারে। এনে তারা তাঁতীবাজারে বিক্রি করে। তারা (স্বর্ণকাররা) রিসাইকেল করে জুয়েলারি দোকানগুলোতে দেয়। এখন আপনি আমাদানি কাগজ চেয়ে অবৈধ ঘোষণা করে দেবেন, এটা তো হয় না। আপনাকে আগে নীতিমালা করতে হবে। তার পরই আইন প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু এখন কোনো পরিষ্কার নীতিমালা না করে দোষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সমস্যা দেখা হবে বিশেষ অগ্রাধিকার নিয়ে। তাদেরই প্ল্যাটফর্ম হবে এফবিসিসিআই। কারণ বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সব জায়গায় যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। হালকা প্রকৌশল, বিভিন্ন ধরনের কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং পোলট্রি খাতে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলো হলো আমাদের অর্থনীতির মেরুদ-। তারা যদি এগিয়ে যেতে না পারে আমাদের সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে। এ ছাড়া নতুন উদ্যেক্তা তৈরির ব্যাপারে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের কিছু প্রফেশনাল লোক থাকবে। যারা এসব উদ্যোক্তাকে সহায়তা করবে। নীতি সহায়তা এবং গবেষণায় জোর দেয়া হবে।
বর্তমান এফবিসিসিআই গবেষণা ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে উল্লেখ করে মহিউদ্দিন বলেন, এ জন্য আমাদের নিজস্ব গবেষণা সেলকে আরো শক্তিশালী করা, একই সঙ্গে অন্য জায়গায় যারা গবেষণা করছেন তাঁদের সঙ্গে একটি নিবিড় চুক্তি হতে পারে। যেমন বিস, সিপিডি, পিআরআই, ঢাকা চেম্বার, বিল্ড -এ রকম আরো যারা রিসার্চ করছে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি গভীর যোগাযোগের সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। এগুলোর মাধ্যমে আমরা সরকারের নীতিমালা তৈরিতে সহায়তা করতে পারি। ব্যবসা অনুকূল হয়- এমন গবেষণা তৈরি করে আমরা সরকারকে দিতে পারি।
পোশাক খাত নিয়ে আইএলও, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্রের যৌথভাবে আরোপিত নতুন শর্তের বিষয়ে পোশাক খাতের এ সফল উদ্যোক্তা বলেন, তারা বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রশংসা করেছে। আমরা পর্যাপ্ত সংস্কার করেছি। এবং ঠিক পথেই করছি। তবে তাদের উদ্বেগ আছে আশুলিয়া এবং ইপিজেড আইন নিয়ে। ইপিজেড আইন সংসদ থেকে ফেরত আনা হয়েছে প্রয়োজনীয় সংশোধনের জন্য। যদিও ইপিজেডে শ্রমিক অধিকারের চর্চা অনেক ভালো। সরকার ইইউর চার প্যারাগ্রাফ নিয়ে কাজ করছে। বিজিএমইএ এবং এফবিসিসিআই এর সঙ্গে কাজ করছে।
দায়িত্ব নিয়েই নিয়ম না মানা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিভুক্ত (এফবিসিসিআই) প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্তক করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটির সদ্যদায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেছেন, এফবিসিসিআইভুক্ত যেসব অ্যাসোসিয়েশন বা প্রতিষ্ঠান অডিট করে না, এজিএম (বার্ষিক সাধারণ সভা) করে না তাদেরও সহযোগিতা করা হবে। এরপরও যদি তারা অডিট-এজিএম না করে, তবে আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ কিংবা ভোট দিতে পারবেন না।
সম্প্রতি রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবন মিলনায়তনে এফবিসিসিআই’র বিদায়ী কমিটির কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন মহিউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ২০১৭-১৯ মেয়াদের নতুন কমিটির নেতারা। বিদায়ী সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ আনুষ্ঠানিকভাবে নব-নির্বাচিত সভাপতি মহিউদ্দিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। দায়িত্ব বুঝে নিয়েই নব-নির্বাচিত সভাপতি বলেন, ডিরেক্টর নন-ডিরেক্টর সবাই মিলে আগে যেমন কাজ করেছে, তেমনিভাবে আগামী দিনেও কাজ করতে চাই। অনুকূল পরিবেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে সরকারের সহযোগী হয়ে কাজ করবে এফবিসিসিআই।
মহিউদ্দিন আরও বলেন, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে বিশেষ সেল গঠন করা হবে। এছাড়া এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) খাতে বড় সম্ভাবনা রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতির বাজেট প্রতিক্রিয়া উচ্চাভিলাষী বড় বাজেট, অনেক চ্যালেঞ্জ
চার লাখ কোটি টাকার বিশাল বাজেট বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, তাকে বেশ চ্যালেঞ্জিং বলছেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। এতে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি ঘাটতি মোকাবেলায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের পরিকল্পনা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমিয়ে দেবে বলেও আশঙ্কা তাঁর। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, এই বাজেট উচ্চাভিলাষী, বড় বাজেট এবং এতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের নেয়া নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড), বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তবে এসব খাতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিশেষ করে তিনি অবকাঠামো উন্নয়ন সময় এবং গুণগতমানের ওপর সরকারের জোর দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। এ ছাড়া ২০১৮ সালে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে সরকারের ভর্তুকি দেওয়ার পরিকল্পনার জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান।
শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, চার লাখ কোটি টাকার বিশাল বাজেট বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, তাতে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি ঘাটতি মোকাবেলায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের পরিকল্পনা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমিয়ে দেবে। অর্থমন্ত্রী মুহিতের ঘোষণা করা বাজেটের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এফবিসিসিআই সভাপতি আরো বলেন, জাতীয় অর্থনীতির দু’টি মূল উৎস রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি বর্তমানে নিম্নমুখী। এ ছাড়া সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষি ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। এ অবস্থায় রাজস্ব আদায়ের এই উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
নতুন ভ্যাট আইন নিয়েও উদ্বিগ্ন এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হচ্ছে। ভ্যাটের বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ী মহল সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তায়নের পূর্বে আইনের কতিপয় বিষয় সংশোধনের জন্য আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বাজেটে সম্পূর্ণ না হলেও কিছুটা এসবের প্রতিফলন আমরা লক্ষ্য করেছি।
ব্যাংকে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন, এতে আমানতকারী আমানত রাখতে নিরুৎসাহী হবে।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img