প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে শিক্ষা কর্মকান্ড যথাযথভাবে পরিচালিত হয়, সেদিকে মনোযোগ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা মেধাবী এবং তাদেরকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তাহলে কেন তারা পরীক্ষায় পাস করবে না। তাই আমি মনে করি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে শিক্ষা কর্মকান্ড যথাযথভাবে পরিচালিত হয়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), ইবতেদায়ী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফল গ্রহণকালে এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন।
এর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে মাধ্যমিক পর্যায়ের এক সেট এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান প্রাথমিক পর্যায়ের এক সেট পাঠ্যপুস্তক হস্তান্তর করেন। এ সময় অন্যানের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী প্রি-প্রাইমারি, প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, ইবতেদায়ি, দাখিল-ভোকেশনাল, এসএসসি-ভোকেশনাল, স্মল এনথ্রোপলোজিকেল গ্রুপ এবং ভিজুয়ালিটি-চ্যালেঞ্জের চার কোটি ৩৭ লাখ ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে জানান, শিক্ষার উন্নয়নে তার সরকার যা যা করার সবই করছে। আগামী প্রজন্মকে শিক্ষিত ও মেধাবী করে তুলতে সরকার বিশেষ নজর দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী, ৩৫ কোটি বইয়ের উৎসব
বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি পাঠ্যবই প্রস্তুত করা হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের চার কোটি ৪২ লাখ চার হাজার ১৯৭ জন শিক্ষার্থীর হাতে এসব বই তুলে দেয় সরকার।
নতুন বছরের প্রথম দিন সারা দেশে শিক্ষার্থীদের হাতে এসব পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয় উৎসবের মাধ্যমে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ঢাকায় হয় দু’টি কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান। দুই মন্ত্রণালয়ই জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উৎসব করে বই বিতরণ করবে। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের আগে থেকে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হলেও ২০১০ সাল থেকে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীদের এ সুবিধার আওতায় এনেছে আওয়ামী লীগ সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবি জানিয়েছে, গত বছরের চেয়ে এবার ১০ লাখ ৭০ হাজার ৯৬৬ জন শিক্ষার্থী বেড়েছে। ফলে এবার ৭১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৯টি বই বেশি ছাপানো হয়েছে।
গত আট বছরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২২৫ কোটি ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৭৫০টি বই ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেছে সরকার।
নববর্ষে এসে মোট ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ এক হাজার ৯১২টি বই বিতরণকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, গত বছরের চেয়ে এবার ১০ লাখ ৭০ হাজার ৯৬৬ জন শিক্ষার্থী বেড়েছে। বই বেশি ছাপা হয়েছে ৭১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৯টি। তবে প্রাক-প্রাথমিকের বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাখা হয় বিধায় এবার প্রাক-প্রাথমিকের বই গত বছরের চেয়ে কিছু কম বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, এবারের বইগুলো ভালোমানের কাগজে ছাপা হয়েছে। বইগুলো আকর্ষণীয় ও রঙিন। নবম-দশম শ্রেণির ১২টি সুখপাঠ্য বই দামি কাগজে রঙিন ছবিসহ ছাপা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে দুই কোটি ৪৯ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বই বিতরণ করা হবে। প্রাথমিক স্তরে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ১০ কোটি ৩৬ লাখ ২৫ হাজার ৪৮০টি এবং প্রাক-প্রাথমিকে ৩৪ লাখ ১১ হাজার ৮২৪টি ‘আমার বই’ এবং ৩৪ লাখ ১১ হাজার ৮২৪টি অনুশীলন খাতা মুদ্রণ করা হয়েছে।
এবার জাতীয়ভাবে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উৎসবের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান হয় আজিমপুর গর্ভমেন্ট গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সকাল ১০টায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উৎসবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর, এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা উপস্থিত থাকবেন। এনসিটিবি’র আয়োজনে উৎসবে রাজধানীর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বই বিতরণ উৎসব পালন করেছে। প্রধান অতিথি ছিলেন গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আসিফ-উজ-জামান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল উপস্থিত ছিলেন।